আমরা গণমানুষের দাবি নিয়ে নিয়ে দূর্বার আন্দোলন গড়ে তলবো : চুন্নু
নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
বৃহস্পতিবার, মার্চ ৩, ২০২২ ৯:৫৪ পূর্বাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
বৃহস্পতিবার, মার্চ ৩, ২০২২ ৯:৫৪ পূর্বাহ্ণ
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মোঃ মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, যদি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা না হয়, যদি দেশের দুর্নীতি বন্ধ করা না হয়, যদি দেশের টাকা পাচার বন্ধ না হয়, টেন্ডারবাজি, দলবাজি আর চাঁদাবাজি বন্ধ না হয় তাহলে জাতীয় পার্টি আর রাজপথ ছাড়বে না। আমরা গণমানুষের দাবি নিয়ে গণমানুষকে সাথে নিয়ে দূর্বার আন্দোলন গড়ে তলবো।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগর থেকে পল্টন পর্যন্ত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। চাল, ডাল, আটা, সয়াবিন তৈল, গ্যাস সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির প্রতিবাদে জাতীয় পার্টি এ মানববন্ধনের আয়োজন করে।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশ এক কঠিন সময় অতিবাহিত করছে, যখন দেশে দ্রব্যমূল্য লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। সংসার চালাতে মানুষ হিমশিম খাচ্ছে। বিশেষ করে করোনাকালে যারা কর্মহীন হয়ে পড়েছে তাদের সবার কর্মসংস্থান হয়নি। সব মিলিয়ে দেশে বেকারের সংখ্যা কমপক্ষে পাঁচ কোটি। এমন বাস্তবতায় যেভাবে দ্রব্যমূল্য বাড়ছে তাতে মনে হয় দেশের মানুষের প্রতি সরকারের কোনো দরদ নেই। সরকার মানুষের কষ্ট বোঝে না, মানুষের মনের ভাষা বোঝে না।
মোঃ মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, সাধারণ মানুষের অভিযোগ, যারা সরকারি দল করে তারাই শুধু ভালো আছে। দেশে টেন্ডারবাজী, চাঁদাবাজী আর দলবাজী করে একটি শ্রেণি ধনী থেকে আরো ধনী হচ্ছে। আর দেশের বেশিরভাগ মানুষ দিনদিন আরো গরীব হচ্ছে। মানুষের আয় নেই কিন্তু ব্যায় বেড়েছে কয়েক গুন।
তিনি আরো বলেন, সাধারণ মানুষ প্রতিদিনের বাজার করতে পারছে না, প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনতে পারছে না। অর্থের অভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে পারছে না। শুধু অর্থের অভাবে অনেক সন্তান তার পিতা-মাতার খোঁজ নিতে পারে না। যেখানে দু’মুঠো ভাত তুলে দিতে মানুষকে যুদ্ধ করতে হয়, সেখানে সন্তানের বায়না মেটানো যেন স্বপ্নের মত।
জাপা মহাসচিব বলেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যখন রাষ্ট্রক্ষমতা ছেড়ে দেন তখন প্রতি কেজি চালের দাম ছিলো ৮ থেকে ১০ টাকা। এখন গেলো ৩১ বছরে প্রতি কেজি চালের দাম বেড়ে বর্তমানে ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। পল্লীবন্ধুর সময় যে সয়াবিন তেল ২০ থেকে ২৫ টাকা লিটার বিক্রি হয়েছে এখন তা ১৮০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। আবার পেট্রোলের দাম ছিলো ৭ থেকে ১০ টাকা লিটার, এখন ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতি লিটার পেট্রোল।
‘গত তিন বছরের মূল্য বৃদ্ধি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে যে সয়াবিনের দাম প্রতিলিটার ছিলো ১০৪ টাকা তার বর্তমান মূল্য ১৮০ টাকা। এভাবে চার বছরে প্রতি কেজি চিনি ৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৮০ টাকা, মোটা চাল ৪০ থেকে বেড়ে ৫০ টাকা, আটা ২৮ থেকে বেড়ে ৩৮ টাকা, মসুরডাল ৫৫ থেকে বেড়ে ১০৫ টাকায় দাঁড়িয়েছে।’
‘আবার রান্না জন্য এলপি গ্যাসের বর্তমান মূল্য ৯৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২১০০ টাকা করতে প্রস্তাব করা হয়েছে। আবার বিদ্যুতের দাম ৬৬ থেকে ৭৯ শতাংশ বাড়াতে প্রস্তাব করা হয়েছে। একইভাবে পানির দাম ২০ ভাগ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে করে সকল ধরনের পণ্য ও সেবার আরেক দফা মূল্য বৃদ্ধি হবে।’
তিনি বলেন, ‘এভাবে নিত্য পণ্যের দাম বাড়লে মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। এমন প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন হলে হাহাকার উঠবে দেশের ৯০ ভাগ ঘরে। নিত্য পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি আর পানি, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হবে গণবিরোধী সিদ্ধান্ত। এদেশের মানুষ এমন গণবিরোধী সিদ্ধান্ত মেনে নেবে না। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের হাতে গড়া জাতীয় পার্টি এমন বাস্তবতায় ঘরে বসে থাকবে না। আমরা মানুষের সকল অধিকার সুরক্ষিত করতেই রাজনীতি করছি। আমরা মাঠে আছি, মাঠে থাকবো। গণমানুষের স্বার্থ রক্ষার আন্দোলনে আমরা কখনো আপোষ করবো না ‘
এ সময় জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও জাতীয় পার্টি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি বলেন, দেশের মানুষ ভালো নেই। রাজধানীর অলিগলিতে টিসিবির গাড়ির পেছনে লাইন দেখলেই বোঝা যার কতটা দুঃসহ জীবন যাপন করছে দেশের মানুষ।
তিনি বলেন, আমরা মানুষের সাথে ছিলাম, মানুষের মাঝে আছি, মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে কখনোই পিছপা হবো না।
সকাল থেকেই জাতীয় পার্টির বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে মিছিল নিয়ে মানববন্ধনে যোগ দেন। নেতা-কর্মীরা এসময় বিভিন্ন ইস্যুতে শ্লোগান দেয়।
এসময় আরো বক্তৃতা করেন জাতীয় পার্টির কো চেয়ারম্যান সালমা ইসলাম এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম, সাইফুদ্দিন মিলন, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, গোলাম কিবরিয়া টিপু এমপি, আহসান আদেলুর রহমান এমপি, নাজমা আক্তার এমপি প্রমুখ।