আমিনুর রহমানের সহযোগীদের খুঁজছে পুলিশ
নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
বুধবার, মার্চ ২, ২০২২ ৮:৫৫ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
বুধবার, মার্চ ২, ২০২২ ৮:৫৫ অপরাহ্ণ
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
সিলেটের আলোচিত আমিন ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী আমিনুর রহমানের সহযোগীদের খুঁজছে পুলিশ। এ ব্যাপারে মুখ বন্ধ আমিনের। গ্রেপ্তারের পর নানা কথা বলে পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের বিষয়টিও পুলিশের কাছে অস্বীকার করে। এ কারণে ইউরোপে লোক পাঠানোর নামে প্রতারক চক্রকে খুঁজে বের করতে পুলিশ ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে আমিনুর রহমানকে। গতকাল সিলেটের আদালতে হাজির করে পুলিশ তার ৭ দিনের রিমান্ড চায়। আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। পুলিশ ফের তাকে তাদের হেফাজতে নিয়ে যায়।
পুলিশ বলছে; সিলেটে আদম পাচারের একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। এই চক্র গোটা সিলেটজুড়েই জাল বিস্তার করে আছে। ওদের সন্ধান খুঁজে বের করতে রিমান্ডে থাকা আমিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। সিলেট হচ্ছে প্রবাসী শহর। নানাভাবে সিলেট থেকে প্রবাসে যায় লোকজন। আগে সাইপ্রাস, জর্জিয়া, লাটভিয়া, ফ্রান্স সহ ইউরোপের নানা দেশে লোকজন যেতেন। এছাড়া স্টুডেন্ট ভিসায় বৃটেন, কানাডা ও আমেরিকায় যাচ্ছেন অনেকেই। এর বাইরেও শ্রমিক ভিসায় লোকজন ইউরোপ যাচ্ছেন। ভিসা প্রসেসিং, ব্যাংক ব্যালেন্স দেখানো, কলেজের সঙ্গে যোগাযোগ সহ বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা করতে শতাধিক কনসালটেন্সি ফার্ম গড়ে উঠেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের অনেকের মধ্যে নেই কোনো অনুমোদন। কেউ কেউ লন্ডন ও ঢাকার কনসালটেন্সি ফার্মের শাখা খুলে বসেছেন। এর বাইরে ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে নানা সময় লোকজনকে বিদেশ পাঠানোর নামে প্রতারণা করা হয়। সম্প্রতি সিলেট থেকে ইউরোপের দেশ রোমানিয়া যেতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন সিলেটের যুবকরা। এর কারণ- রোমানিয়া হয়ে তারা সহজেই ফ্রান্স, ইতালি সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যেতে পারেন। এ কারণে রোমানিয়ায় যেতে আগ্রহীদের সংখ্যা বেশি। এই সুযোগে সিলেটে রোমানিয়া নেওয়ার কথা বলে নগরীর হক সুপার মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় আমিন ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী আমিনুর রহমান জালিয়াতির ফাঁদ পেতেছিলেন। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন- আমিনুর রহমান ডিসেম্বরে হঠাৎ করেই পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে যুবকদের আকৃষ্ট করেন। এরপর তার কাছে দলে দলে আসতে থাকেন যুবকরা। শতাধিক যুবক তার কাছে রোমানিয়া যাওয়ার জন্য টাকা, পাসপোর্ট সহ আনুষঙ্গিক কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার নিয়ে ১১ যুবককে রোমানিয়া পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু তার আগে হঠাৎ করে আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় তাকে নিয়ে ধূম্রজাল দেখা দেয়। যোগাযোগ করতে না পেরে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগীরা। এরপর বিদেশ পালিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ আমিনকে গ্রেপ্তার করে। কোতোয়ালি থানার ওসি মুহাম্মদ আলী মাহমুদ জানিয়েছেন- প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমিন তার প্রতারক চক্রের অনেক কিছুই গোপন করে গেছেন। এ কারণে পুলিশ তাকে ৫ দিনের রিমান্ডে এনেছেন। তিনি বলেন- আমিন বলেছে সে প্রতারণা করেনি, বিদেশ পাঠাতেই কাজ করেছে। তাদের দেয়া টাকা দিয়েই সে কাজ করেছে। তার এই বক্তব্য অনেক ক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্য নয়। জিজ্ঞাসাবাদ করলে তার চক্রের সন্ধান পাওয়া যাবে বলে জানান ওসি। এদিকে- গ্রেপ্তারের পর আমিন নিজেও সাংবাদিকদের কাছে প্রতারণার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন- আমি টাকা নিয়ে ভিসা প্রসেসিংয়ের কাজে ব্যবহার করেছি। একটু সমস্যা হওয়ার কারণে ফ্লাইট দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে- এরই মধ্যে প্রতারক আমিনের নানা ঘটনা চাউর হতে শুরু করেছে। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন- আমিনের প্রতিষ্ঠান আমিন ট্রাভেলসের কোনো বৈধ লাইসেন্স নেই। প্রতারণার ফাঁদ পাততে কয়েক মাস আগে সে নগরীর জিন্দাবাজারের হক সুপার মার্কেটে ট্রাভেলস খুলেছে। আর ট্রাভেলসে বসেই সে একের পর এক প্রতারণা করে গেছে। এর আগে বৈধ ট্রাভেলস এজেন্সির সহযোগী, পাসপোর্ট অফিসের নানা কাজ করে বেড়াতেন। দক্ষিণ সুরমার বানেশ্বরপুরের বাসিন্দা ভুক্তভোগী ফখরুল ইসলাম বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় যে মামলা করেন সেখানে ১৮ জন ভুক্তভোগী তাদের নগদ ১ কোটি ১৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেন। সর্বমোট ১৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করা হয় এজাহারে। মামলায় আমিনুর রহমান ছাড়াও তার আরও দুই ভাই সিদ্দিকুর রহমান ও জিয়াউর রহমানকে আসামি করা হয়। এদিকে- ইউরোপ পাঠানোর নামে প্রতারণার অভিযোগে সিলেটের একাধিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি প্রতারণা করেছে। মাল্টা লোক নেয়ার নামে এর আগে প্রতারণার শিকার হয়েছেন কয়েকজন যুবক। গত ২২শে নভেম্বর প্রতারক চক্রের সদস্য লায়েক আহমদ, নুর মিয়া সহ তিনজনকে আসামি করে সিলেটের আদালতে মামলা দায়ের করেছিলেন সাহেদ আহমদ নামের এক ভুক্তভোগীর স্বজন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে সিলেটের কোতোয়ালি থানাকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এ ঘটনায় এখনো গ্রেপ্তার হয়নি লায়েক, নুর মিয়া সহ আদম ব্যবসায়ীরা। এছাড়া- উলামা ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনালের বিরুদ্ধে প্রতারণার শিকার হওয়ায় কয়েকজন মামলা করেছিলেন। বছর খানেক আগে সিলেটের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগে উলামা ট্রাভেলসে অভিযানও চালানো হয়। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন- সিলেটের ওয়েস্ট ওয়ার্ল্ড, ইদ্রিস মার্কেট, সুরমা টাওয়ার, মিলিনিয়াম, গ্যালারিয়া, কাকলি, ব্লু-ওয়াটার, সিটি সেন্টার, সিটি মার্কেট, উপ-শহরের রোজভিউ নিচে ও গার্ডেন টাওয়ার, আম্বরখানা এলাকার কয়েকটি মার্কেটে এসব প্রতারণার ফাঁদ খুলে বসেছে অনেকেই।