• আজ সকাল ৬:০১, শুক্রবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৭শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
  • shadinkhobor24@gmail.com
  • ঢাকা, বাংলাদেশ

ঈদ আসলেই পরিবহন ও টিকিট সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে ওঠে: রিজভী

নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ: শুক্রবার, জুলাই ৮, ২০২২ ৭:৪১ পূর্বাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ: শুক্রবার, জুলাই ৮, ২০২২ ৭:৪১ পূর্বাহ্ণ

 

সিনিয়র করেসপডেন্ট

নিশিরাতের সরকারের সিন্ডিকেটে ভাড়া নৈরাজ্য, পথের সীমাহীন মহাদুর্ভোগ তাদের ঈদযাত্রার আনন্দকে ম্লান করে দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, একদিন পরেই ত্যাগের মহিমায় উৎকীর্ন কোরবানীর ঈদ, পবিত্র ঈদুল আজহা। শহরের কস্টক্লান্ত মানুষ প্রিয়জনের সঙ্গে আনন্দ উৎযাপনে ফিরছেন গ্রামে। ঈদ আসলেই আওয়ামী সরকারের পরিবহন ও টিকিট সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে ওঠে। যে যেভাবে পারে দুই-তিনগুন ভাড়া বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের পকেট কাটে। সবকিছু করছে সরকারি দলের লোকেরা। কারণ এই অর্থের ভাগ পায় ক্ষমতাসীনদলের রাঘব বোয়ালরা। পথে পথে যানজট-চাঁদাবাজি-হয়রানি অব্যাহত রয়েছে। পথের ক্লান্তিই শেষ না, দেশের বৃহৎ অঞ্চলজুড়ে ত্রাণ বঞ্চিত বন্যার্ত মানুষের হাহাকার। অন্যদিকে গ্রামীণ জনপদে সরকারি দলের ক্যাডারদের অত্যাচার ওঁৎ পেতে আছে ঈদের আনন্দকে নিরানন্দে পরিনত করতে।

শুক্রবার (৮ জুলাই) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

উন্নয়নের ফানুসের মায়াজাল সৃষ্টির মাধ্যমে মূলত; দুর্নীতির উল্লম্ফন দেশে এক বিকট রুপ ধারণ করেছে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, ‘সরকারপ্রধান ঘরে ঘরে আলো পৌঁছে দেয়ার কথা বলে ঘরে ঘরে এখন ঘুটঘুটে অন্ধকারের আধিপত্য। বারবার পূর্ববর্তী সরকারের ব্যর্থতার মিথ্যা বয়ান দিয়ে বিদ্যুতের বাম্পার উৎপাদনকারী সরকারের আমলে এই ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কথা শুনতে হচ্ছে কেন? এটি কি সেই কৃচ্ছতার জন্য বেলী ফুলের মালা দিয়ে বিবাহের আহবান জানানোর মতো হবে না তো ? যেখানে কারো কারো বিয়ে সোনার মুকুট পরে হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘এখন প্রধানমন্ত্রী নির্দ্বিধায় বলছেন লোডশেডিং হবেই, এটি এড়ানো যাবে না। আওয়ামী মন্ত্রীরা এখন লোডশেডিংয়ের জন্য জনগণকে ধৈর্য ধারণের কথা বলছেন। বছরব্যাপী কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে বিশাল বিশাল অনুষ্ঠানের নামে করা হয়েছে ঝাড়বাতির আলোক ঝলকানি। বিশাল আলোকসজ্জা করে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর এখন মন্ত্রীরা বলছেন বিয়ের অনুষ্ঠান সন্ধ্যা ৭ টার মধ্যে শেষ করতে হবে, করা যাবে না কোন আলোকসজ্জা। কোন ধর্মীয় উৎসবেও আলোকসজ্জা করা যাবে না। বিদ্যুৎ সংকটের কারণে সরকার এখন অফিস টাইম কমিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশ যে শ্রীলংকার মতো এক মহা দেওলিয়াত্বের দিকে ধাবিত হচ্ছে, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ থাকলো না। এর পাশাপাশি বৃদ্ধি করে যাচ্ছেন একের পর এক জনগণের অতি প্রয়োজনীয় উপযোগিতা সেবা অর্থাৎ জ্বালানী, গ্যাস-বিদ্যূৎ-পানির মূল্য। মূল্যের সর্বগ্রাসী আগুনের উত্তাপে চারিদিক বিপন্ন হয়ে গেছে। যেমন গতকালই পানির দাম ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিমন্ত্রী বলেছেন জ্বালানী তেলের দাম বাড়বে। এর আগে বৃদ্ধি করা হয়েছে বিদ্যূৎ ও গ্যাসের দাম। সরকারের প্রতি সেক্টরে দুর্নীতির সমান্তরাল বিচ্ছুরণ ছাড়া আর কিছু নেই। দেশের ওপর মূলত; আওয়ামী শাসকগোষ্ঠীর সামষ্টিক দখলদারী চলছে।

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘বাংলাদেশ জনগণের টাকায় এই লুটপাটের সরকার আকাশে স্যাটেলাইট পাঠায়, নিচে রাস্তা বন্ধ করে উপরে মেট্রোরেল- ফ্লাইওভার বানায়, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের জন্য কোটি টাকার আতশবাজি পুড়ায়। গ্যাস উত্তোলন বন্ধ রেখে বিদেশ থেকে মূল্যবান এলএনজি আমদানি করে বিদ্যুৎ তৈরি করাও লুটপাটের জন্য। অথচ মানুষের এখন খাদ্য নেই, কর্ম নেই, ঘরে ঘরে কোটি শিক্ষিত বেকার, অনাহারক্লিষ্ট মানুষ খাদ্যের সন্তান হত্যা করছে বা বিক্রি করছে।

ইভিএম নির্বাচনের জালিয়াতির কোচিং সেন্টার মন্তব্য করে রিজভী বলেন, ইতিমধ্যেই এই অবৈধ সরকার ডিজিটাল ভোট ডাকাতির আয়োজন চূড়ান্ত করেছে। তারা আগামী নির্বাচন ইভিএম এ করার পায়তারা করছে। নির্বাচন কমিশনক আওয়ামী লীগের ভোটে চুরির সহযোগী। নির্বাচন কমিশন জনগণের কাছে এখন একটি হাসি-তামাশার প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। তাদের কাজ হলো একদিকে রাতের অন্ধকারে ভোট ডাকাতি অন্যদিকে সারাবিশ্বে বাতিল হয়ে যাওয়া ভোট চুরির ডিজিটাল যন্ত্র ইভিএম কেনার নাম করে শত শত কোটি টাকা লুটপাট। বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ অনেক গণতান্ত্রিক দেশেই নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মূলত: ইভিএম দিয়ে নির্বাচন কমিশন আগামী নির্বাচনের জালিয়াতির কোচিং সেন্টার হিসেবে কাজ করবে।

আমেরিকায় দুএকটি রাজ্যের নির্বাচনে পরীক্ষামূলক ইভিএম ব্যবহার করলেও ক্যালিফোর্নিয়ার মতো অনেক বড় বড় রাজ্যে নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার নিষিদ্ধ। পরীক্ষা নীরিক্ষার পর আয়ারল্যান্ডে নির্বাচনে ইভিএম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। জার্মানীর সুপ্রিম কোর্ট ইভিএমকে অসাংবিধানিক এবং জনস্বার্ধবিরোধী হওয়ায় অবৈধ ঘোষণা করেছে। পরীক্ষামূলক ব্যবহার করে ইভিএমে ফলাফল বদলানোর উপসর্গের কারনে ইতালি এবং প্যারগুয়ে ইভিএম ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। হলান্ডে নির্বাচনে ইভিএম নিয়ে পরীক্ষায় ফলাফলে স্বচ্ছতার অভাবে এটি নিষিদ্ধ করেছে ডাচ কাউন্সিল। যুক্তরাজ্যে ইভিএম ব্যবহার নিষিদ্ধ। সুইজারল্যান্ড, রুমানিয়া, স্পেন সহ কিছু দেশে প্রবাসী ভোট গ্রহনের ক্ষেত্রে পাইলট প্রকল্পে ইভিএম ব্যবহার করা হলেও ইন্টারনেট সিকিউরিটির সমস্যার কারণে তা বাতিল করা হয়। নরওয়েতে ভোটারের গোপনীয়তা নষ্ট হওয়ার অভিযোগে ইভিএম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রতিবেশী দেশেও নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হলে দেশটির পার্লামেন্টে বিরোধী দল ইভিএম দিয়ে কিভাবে ভোটের ফল পাল্টানো যায় সেটি উন্মুক্ত প্রেজেন্টেশেনের মাধ্যমে দেখিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ইভিএম দিয়ে সহজেই ভোট ম্যানুপুলেট করা সম্ভব। আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালে বিনা ভোটে এবং ২০১৮ সালে নিশিরাত্র ভোট ডাকাতি করে বন্দুকের নলের মুখে ক্ষমতায় রয়েছে। এবার তারা “ইভিএম” এর মাধ্যমে কারচুপি করে ক্ষমতায় থাকতে চায়।

ইভিএম হচ্ছে- স্বয়ংক্রিয়ভাবে নীরবে ভোট চুরির মেশিন। তাই ইভিএম দেশের জনগণ মানে না। ভোট হতে হবে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ব্যালট পেপারে।
আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট, কিসের ইভিএম ? এই সরকারকেই আগে পদত্যাগ করতে হবে। এই ভুয়া সরকার ও নির্বাচন কমিশনকেই জনগণ মানে না। তারা সিদ্ধান্ত নেয়ার কে ? শেখ হাসিনা এবং ইভিএম, ভোট ডাকাতির এই দুইয়ের একটির উপরও জনগণের আস্থা নেই। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনও ব্যবহার করা যাবেনা, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনেও নির্বাচন হবে না।

কোনো ইভিএম-টিভিএম মানি না, ‘গণতন্ত্রের মা’ গণতন্ত্রের প্রতীক বেগম খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি দিয়ে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন দিতে হবে। ভোট ডাকাতির ইভিএম জনগণের উপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে সেটির পরিণাম শুভ হবেনা।

 
 
স্বাধীন খবর ডটকম/আ আ
 

জনপ্রিয় সংবাদ

 

সর্বোচ্চ পঠিত সংবাদ