• আজ রাত ২:০১, শনিবার, ৭ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৫ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
  • shadinkhobor24@gmail.com
  • ঢাকা, বাংলাদেশ

উন্নয়ন-সমৃদ্ধির পথে আমাদের এই যাত্রা কেউ দমাতে পারবে না: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ: সোমবার, মার্চ ২১, ২০২২ ৮:৪১ পূর্বাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ: সোমবার, মার্চ ২১, ২০২২ ৮:৪১ পূর্বাহ্ণ

 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

পটুয়াখালির কলাপাড়া উপজেলায় দেশের বৃহত্তম কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র রোজার ঈদে দেশবাসীর জন্য বিশেষ উপহার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সবার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেওয়ায় আলোর পথে যাত্রা সফল হয়েছে; সেটিই আজ প্রমাণিত। দেশের একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না, বিদ্যুতের মতো সবাই ঘরও পাবেন।।

সোমবার (২১ মার্চ) বাংলাদেশ-চীন পাওয়ার কোম্পানি (প্রাইভেট) লিমিটেড কর্তৃক নির্মিত ‘পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় মুজিববর্ষ, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, রমজান ও ঈদ উপলক্ষে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রকে উপহার হিসেবেও ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গত ১৩ বছরে গণতান্ত্রিক যাত্রা অব্যাহত আছে, ঝড় ঝাপটা যে আসেনি, তা কিন্তু নয়। সেগুলো আমরা মোকাবেলা করেছি। মানুষের সব চাহিদা পূরণে কাজ করছি। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেওয়ার কার্যক্রম হাতে নিয়েছিলাম। আমাদের লক্ষ্য- কোনো ঘর অন্ধকার থাকবে না। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে সবার ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। আলোর পথে যাত্রা সফল হয়েছে।

স্বজনহারা শোক সয়েও দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুবসমাজকে নিজেদের এগিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা থাকতে হবে। এই অগ্রযাত্রা যাতে আর না থেমে যায়।

তিনি বলেন, আলোর পথে উন্নয়ন-সমৃদ্ধির পথে আমাদের এই যাত্রা কেউ দমাতে পারবে না। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা অর্জনের অনেক পূর্বেই এ অঞ্চলে বিদ্যুতায়নের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে অনুধাবন করেছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে বন্ধ শিল্প কারখানাগুলো চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

তিনি আরও বলেন, ১৯৯৬ সালে আমরা সরকার গঠন করার পর বিদ্যুৎ পেয়েছিলাম ১৬০০ মেগাওয়াট, ২০০০-২০০১ অর্থবছরে তা ৪৩০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করেছিলাম। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের মাধ্যমে ৫৪ হাজার ৪৮৯ কি. মি. বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন নির্মাণ করে ১৩ হাজার ৭১৩টি গ্রামকে বিদ্যুতায়িত করি এবং আরও ৩৪ হাজার গ্রামকে বিদ্যুতায়িত করার পরিকল্পনা নেই। আমরা ৩২ হাজার নতুন সেচ পাম্পে বিদ্যুৎ সংযোগ দেই।

সরকারপ্রধান বলেন, ২০০৯ সালে সরকারে এসে আমরা বিদ্যুৎ পেয়েছি মাত্র ৩,২৬৭ মেগাওয়াট। বর্তমানে দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৫,৫১৪ মেগাওয়াট। ১৩ বছরে ৩০,৬৬৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৫৬টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। এ সময়ে আমদানিসহ মোট ১৯,৬২৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করেছি ও ১৪৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করেছি।

তিনি বলেন, পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি এখন পর্যন্ত স্থাপিত দেশের সর্ববৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্র। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ১৩-তম আলট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহারকারী দেশ। এই কেন্দ্রে জ্বালানি সাশ্রয়ী পরিবেশবান্ধব ক্লিন কোল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশবাসীর সুন্দর ভবিষ্যৎ, সুস্বাস্থ্য ও মঙ্গল কামনা করে আমি, পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র (১ম পর্যায়) এর শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করছি।

এর আগে, সোমবার (২১ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টা ৪৮ মিনিটে পটুয়াখালির কলাপাড়া উপজেলায় দেশের বৃহত্তম কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

উপজেলার ধানখালীর পায়রাতে দেশের বৃহত্তম ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ হিসেবে প্রথম সারা দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নেরও ঘোষণা দেন তিনি।

এর আগে, সকাল সাড়ে ১০টায় হেলিকপ্টার যোগে ঢাকা থেকে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। বেলা ১১টায় কোল জেটিতে ২০০ নৌকা থেকে পতাকা নাড়িয়ে ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে তাকে অভিবাদন জানানো হয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি মূল নিয়ন্ত্রণ কক্ষ পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি।

করোনা মহামারির মধ্যে টুঙ্গিপাড়ার বাইরে এই প্রথম দেশের কোথাও সফর করছেন শেখ হাসিনা। তার রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি পূরণে পটুয়াখালির কলাপাড়ার ধানখালীর পায়রাতে সর্বাধুনিক আলট্রা সুপারক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন করেন তিনি।

গতকাল রবিবার (২০ মার্চ) বিকেলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে সারা দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন হবে। প্রতিটি ঘর বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হবে।

গত ৫০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো দেশে এমন একটি অতি আধুনিক বৃহত্তম প্রকল্প বাস্তবায়ন করা ‘আমাদের সবার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটি একটি আল্ট্রা সুপারক্রিটিক্যাল টেকনোলজি পাওয়ার প্ল্যান্ট।’

তিনি বলেন, ‘আমরা কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণে আল্ট্রা সুপারক্রিটিক্যাল টেকনোলজি ব্যবহার করেছি, দক্ষিণ এশিয়ার তৃতীয় এবং সারা বিশ্বে ১১তম দেশ হিসেবে।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করেছে।

পাওয়ার প্ল্যান্টের প্রথম ৬৬০ মেগাওয়াট ইউনিটটি ২০২০ সালের মে মাসে বাণিজ্যিকভাবে চালু হয়, এটি ৪০০ কেভি পায়রা-গোপালগঞ্জ পাওয়ার ট্রান্সমিশন ব্যবহার করে এবং দ্বিতীয়টি গত বছরের ডিসেম্বরে উৎপাদন শুরু করে।

বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো. আমিন উল আহসান বলেন, পায়রা সমুদ্রবন্দর সংলগ্ন পায়রা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে এ এলাকার মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেগবান হয়েছে।

এলাকায় একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে জায়গা নির্বাচন করা হয়েছে এবং জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে কেন্দ্র করে সরকারের একটি বিশাল পরিকল্পনা রয়েছে।

কমিশনার বলেন, ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়াও আরও একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে এবং এখানে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র ও একটি সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এই অঞ্চলটি আগামী পাঁচ থেকে দশ বছরের মধ্যে একটি পাওয়ার হাবে পরিণত হবে।

Print Friendly, PDF & Email
 
 
স্বাধীন খবর ডটকম/আ আ
 

জনপ্রিয় সংবাদ

 

সর্বোচ্চ পঠিত সংবাদ

error: Content is protected !!
error: Content is protected !!