একজন সৎ ও অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ত্ব জনাব মাহবুব তালুকদার
নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
বুধবার, আগস্ট ২৪, ২০২২ ৫:৫৯ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
বুধবার, আগস্ট ২৪, ২০২২ ৫:৫৯ অপরাহ্ণ
সাবেক নির্বাচন কমিশনার, একজন সৎ ও অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ত্ব জনাব মাহবুব তালুকদার কিছু সময় আগে ইন্তেকাল করেছেন।
ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন! আসুন আমরা সবাই এই সৎ ভদ্র ও অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব সম্পূর্ণ মানুষটার জন্য দোয়া করি, মহান আল্লাহ যেন তাঁকে মাফ করেন এবং জান্নাতের সুউচ্চ স্হান দান করেন। আমিন।।। ,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
,,,,,,, বঙ্গভবনে এক অনুষ্ঠানে আমার স্ত্রী রুবীকে এক মহিলার সঙ্গে দীর্ঘ সময় আলাপ করতে দেখি। এধরনের অনুষ্ঠানে একজনের সঙ্গে আলাপ না করে অনেকজনের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে আলাপ করা সমীচিন। কিন্তু কথাটা তখন রুবীকে বলার অবকাশ পাইনি। এক সময় সুযোগ পেয়ে রুবীকে বললাম, একজনের সঙ্গে এতক্ষন এমন কী কথা?
কথার কি শেষ আছে? রুবী বলল, ভদ্রমহিলা খুব ভাল।
কে এই মহিলা?
উনার নাম খালেদা। তাঁর স্বামী আর্মীতে আছেন। তুমি তাকে চিনতে পার।
কি নাম তাঁর স্বামীর?
জিয়াউর রহমান।মুক্তিযুদ্ধের সময় মেজর জিয়া নামে রেডিওতে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
বললাম, চিনি। একবার তাঁর সঙ্গে আমার আলাপ পরিচয় হয়েছে। তবে তিনি একটু রিজার্ভ প্রকৃতির। বেশী কথা বলেন না।
এর আগে কর্নেল জিয়াউর রহমানকে কখনও বঙ্গভবনে বা কখনও বঙ্গবভনের বাইরে দেখেছি। তাঁর সঙ্গে তেমন কথা হয়নি। পরে একদিন তাঁর সঙ্গে বঙ্গভবনে আলাপ করার সুযোগ পেয়েছিলাম। দুপুরে সামরিক সচিব লেফটেন্যান্ট কর্ণেল ফিরোজ সালাহউদ্দীনের অফিসে বসে আলোচনা করছি। এমন সময় জিয়াউর রহমান এলেন।ঘরে ঢুকে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে সামরিক সচিবকে স্যালুট করলেন। বললেন, আসতে পারি স্যার?
আস। জিয়া।বস। সামরিক সচিব বললেন।
আমার একটা ।এ্যাপোয়েন্টমেন্ট ছিল। কর্ণেল জিয়া জানালেন।
হ। জানি। তয় একজন মন্ত্রী হঠাৎ কইরা রাষ্ট্রপ্রধানের সাথে সাক্ষাৎ করতে আইছেন। একটু বইতে হইব।
কর্ণেল সালাহউদ্দীন কর্ণেল জিয়ার সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দিলেন। আমি বললাম, উনার সঙ্গে আমার আগেই পরিচয় হয়েছে।
চা খেতে খেতে কিছুক্ষন কথা হল। রাষ্ট্রপ্রধানের অফিসের সাংকেতিক বাতি নিবছেনা।অর্থাৎ মন্ত্রী মহোতদয় বেশী সময় নিচ্ছেন। আমি কথা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমানের প্রসংশা করলাম।তাঁর মুখে বুঝলাম কথাগুলো তাঁর পছন্দ করেছেন। কিন্তু কোন রকম উষ্ঞনতা প্রকাশ করলেন না।
কিছুক্ষন আলাপচারিতার পরে আমি আবার বললাম,আপনাকে একটা কথা বলতে চাই। যদি কিছু মনে না করেন।
বলুন।
আসলে কথাটা মনের মধ্যে চাপ সৃষ্টি করেছে।এজন্য না বলে থাকতে পারছি না। বললাম, দেশে গণতান্ত্রিক সরকার না থাকলে অথবা আপনি আর্মী অফিসার না হলে, আমি বলতাম যে, আপনি বাংলাদেশের প্রধান ব্যক্তি হবেন। কর্ণেল জিয়া মুখ ফিরিয়ে তাকালেন এবং চশমার ফাঁকে দৃষ্টি মেলে রইলেন। কোন কথা বললেন না।
ফিরোজ সালাহউদ্দীন বললেন, এই কথা কেমতে কইতাছ?।
উনাকে দেখে আমার এমনটা মনে হয়েছে। মনের মধ্যে কথাটা ধরে রাখতে পারলাম না।
ইতোমধ্যে এডিসি ক্যাপ্টেন এনাম ঘরে ঢুকে কর্ণেল জিয়াকে জানাল, রাষ্ট্রপ্রধান তাঁর জন্য অপেক্ষা করছেন। উনি উঠে যেতেই কর্ণেল ফিরোজ সালাহউদ্দীন প্রায় ক্ষেপে উঠলেন, আমার ওপর। বললেন, এরকম এম্বারাসিং কথাবার্তা কওন তো উচিৎ হয় নাই।
বললাম ,কথাটা শুনে উনি তো কোনরকম রিআক্ট করলেন না।
সামরিক সচিব বললেন, জিয়ার কথা কইতাসি না। বঙ্গবন্ধুর কানে গেলে কি অবস্থা হইব ,ভাইবা দেখ। বঙ্গবভনের ;দেয়ালেরও কান আছে। কে কখন রিপোর্ট কইরা দিব,তার ঠিক কি? বঙ্গভবনের অফিসার হইয়া লুজটক করা তোমার উচিৎ না।
কথাটার পেছনে অন্য কোনো কার্যকারণ ছিলো না। আমার ইনটুইশন থেকে বলছি—
আর কখনো এরকম কইবানা। সামরিক সচিব ঠান্ডা হলেন।
কয়েক বছরের মধ্যে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হন।
ব্রিগেডিয়ার ফিরোজ সালাহ উদ্দীন তার সামরিক সচিব।
©®
লেখক – মাহবুব তালুকদার,সাবেক নির্বাচন কমিশনার ; বঙ্গভবনে পাঁচ বছর ॥
[ ইউপিএল- তৃতীয় মুদ্রণ, ২০০৫ । পৃ: ৩১-৩২ ]
(কালেক্টেড)
সায়েক এম রহমানের ফেইসবুক থেকে