কুমিল্লা সিটি নির্বাচন ২ হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্পে নজর প্রার্থীদের
নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
সোমবার, জুন ১৩, ২০২২ ৬:০৭ পূর্বাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
সোমবার, জুন ১৩, ২০২২ ৬:০৭ পূর্বাহ্ণ
দলহারা বিএনপির দুই নেতার সঙ্গে মেয়র পদে সরকারি দল আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য শক্ত লড়াই এবার কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের একটি বিশেষ দিক। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এই ভোটের গুরুত্ব অনেক। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্ষমতার হিসাব-নিকাশের বাইরেও এই ভোটের গুরুত্ব স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে আরও বেশি কিছু। আর তা হচ্ছে, সিটি করপোরেশনের ২ হাজার ৩৮ কোটি টাকার অন্তত ২০টি বড় প্রকল্প।
কুমিল্লার একাধিক রাজনীতিক ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা জানান, এবার যিনি সিটি করপোরেশনের মেয়র হবেন, তিনি সিটির অবকাঠামোগত মৌলিক উন্নয়নে বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পাবেন। ফলে এ নির্বাচনে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার বাইরেও মোটা অঙ্কের ওই মেগা প্রকল্পগুলোর দিকেও জনপ্রতিনিধিদের একটা বিশেষ দৃষ্টি থাকছে।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে ১২টি প্রকল্প আছে। এর প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা। প্রকল্পগুলোর মধ্যে আধুনিক নগর ভবন নির্মাণ, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য আবাসিক ব্যবস্থাপনা ‘সেবক কলোনি’ তৈরি, দখলমুক্ত করে পুরোনো গোমতীসহ ডিসি পুকুর ও রাজবাড়ী পুকুরের সৌন্দর্যবর্ধন ও উন্নয়নকাজ, ৩০৫ কিলোমিটার নতুন রাস্তা নির্মাণ, ২০৪ কিলোমিটার নতুন আরসিসি ড্রেন নির্মাণ, ১৩ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার নতুন ফুটপাত নির্মাণ, ভূমি অধিগ্রহণ করে মোস্তফাপুরে ট্রাক টার্মিনাল স্থাপন এবং চকবাজার বাস টার্মিনালের উন্নয়ন, কবরস্থান ও শ্মশানের উন্নয়ন, পাবলিক টয়লেট নির্মাণ উল্লেখযোগ্য। ইতিমধ্যে কয়েকটি প্রকল্পে ৬৩ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ ছাড়া জাপান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থারও (জাইকা) ৪০০ কোটি টাকার প্রকল্প আছে শহরে। বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন, ধর্মসাগরের চার পাড়ে ওয়াকওয়ে তৈরি, বড় নালা নির্মাণ, শাসনগাছা, জাঙ্গালিয়া ও চকবাজার বাস টার্মিনালের সংস্কার ও সম্প্রসারণ। জাইকার অর্থায়নে এই চার প্রকল্পের বাইরে মিউনিসিপ্যাল গভর্ন্যান্স সার্ভিসেস প্রজেক্টের (এমজিএসপি) আওতায়ও শহরের সড়ক, ফুটপাত, নালার সংস্কার ও সড়কবাড়ি স্থাপনে চারটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ১০০ কোটি টাকা।
এ প্রকল্পগুলোর কথা উল্লেখ করে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) কুমিল্লা জেলা সভাপতি শাহ মো. আলমগীর খান বলেন, ‘সামনে শত শত কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ হবে। সিটি করপোরেশন বর্ধিত হয়েছে, কিন্তু সাধারণ মানুষ তো লাভবান হতে পারেনি। লাভবান হচ্ছে ঠিকাদার এবং বিল্ডিং ডেভেলপাররা।’
কথা বলে জানা গেছে, নগরবাসীর মূল অসন্তোষ রাস্তাঘাট, শহরে জলাবদ্ধতা, নালার বর্জ্য এবং ফুটপাতের অব্যবস্থাপনা নিয়ে। এ জন্য প্রার্থীরাও নির্বাচনী প্রচারে এবং ইশতেহারে এসব নাগরিক দুর্ভোগ সমাধান করে সুন্দর নগরী গড়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। এ পর্যন্ত পাঁচজন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে তিনজন ইশতেহার দিলেন।
যদিও নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত এখনো ইশতেহার দেননি। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনকে ‘দুর্নীতিমুক্ত করব, এই ঘোষণা দিয়েই আমি নির্বাচনী প্রচারে নেমেছি। আমাদের সরকার কুমিল্লা সিটির উন্নয়নে মেগা প্রকল্প দিয়েছে, প্রতিটি কাজ নিয়মমতো হবে।’
গতকাল ইশতেহার ঘোষণা করেন সিটি করপোরেশনের সদ্য সাবেক মেয়র মো. মনিরুল হক সাক্কু। তিনি এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে টেবিলঘড়ি প্রতীকে মেয়র পদে লড়ছেন। এবারও মনিরুল কুমিল্লাকে বিশ্বমানের শহরে রূপান্তরিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইশতেহারে মূলত ওই প্রকল্পগুলোর সুবিধাভোগের স্বপ্নই দেখিয়েছেন শহরবাসীকে।
এবারের নির্বাচনী লড়াইয়ে প্রার্থীদের বড় অঙ্কের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর দিকে নজর প্রসঙ্গে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) কুমিল্লা জেলার সাধারণ সম্পাদক শহীদুল হক গতকাল বলেন, এটাকে পজিটিভ-নেগেটিভ দুইভাবে দেখা যায়। কেউ এই টাকা দিয়ে তিলোত্তমা নগরী গড়তে চান হয়তো, আর কেউ কমিশন নেওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকবেন।
এ রকম চিন্তা থেকে কেউ যদি নির্বাচনে জিততে মরিয়া হন, তাহলে নগরবাসী তাঁদের ধিক্কার জানাবেন বলে মন্তব্য করেন স্থানীয় ইতিহাসবিদ ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক আহসানুল কবীর।
গত অর্থবছরে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের বাজেট ছিল ৪৮৪ কোটি টাকার। কিন্তু নাগরিক দুর্ভোগ কমেনি। নাগরিক দুর্ভোগের পাশাপাশি শহরে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, নেশা ও মাদকের সমস্যাও থামেনি।
এ বিষয়ে মনিরুল হক বলেন, ‘১০ বছরের সিটি, যদি সবই কইরালাইতে চান, এইটা ঠিক না। রাস্তাঘাট, ড্রেন, কালভার্ট, ময়লা নেওয়া—যতটুকু পারছি করছি। যেইডা পারছি না, এইটা আমি মানুষকে বলছি যে ভাই কথা দিছিলাম, এতটুকু করছি, এইটুকু করতে পারছি না। আমার সেই সাহস আছে এবং সে সাহস নিয়েই ভোটারদের কাছে যাচ্ছি।’