কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া চক্রের হোতা সহ ৫ জন গ্রেফতার
নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
রবিবার, মার্চ ১৩, ২০২২ ১২:৪৮ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
রবিবার, মার্চ ১৩, ২০২২ ১২:৪৮ অপরাহ্ণ
এম আর কামাল, স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ : র্যাব-১১ শনিবার রাতে নরসিংদী জেলার সদর থানাধীন ভেলানগর এলাকায় থেকে গ্রাহকের প্রায় ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া প্রতারক চক্রের হোতা শাহ আলম (৫০) ও তার ৪ সহযোগী দেলোয়ার হোসেন শিকদার (৫২) কাজী মানে উল্লাহ (৪৪) সুমন মোল্লাহ(৩৩) এবং আঃ হান্নান মোল্লাহ (৩০) গ্রেফতার করেছে।
রবিবার (১৩ মার্চ) দুপুরে র্যাব-১১ এর আদমজী নগর কার্যালয়ে অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল তানভীর মাহমুদ পাশা সংবাদ সম্মেলনে জানান, গত ২০১০ সালে নরসিংদী জেলার সদর থানাধীন চিনিশপুর ইউনিয়নের ঘোড়াদিয়া এলাকায় একটি শরিয়াভিত্তিক শাহ সুলতান মাল্টিপারপাস কোম্পানী আর্থিক প্রতিষ্ঠান এর প্রধান কার্যালয় স্থাপন করে একটি প্রতারক চক্র। প্রতারকচক্রটি অতি সুকৌশলে ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে সুদ মুক্ত ব্যবসায় প্রলুব্ধ করে বিভিন্ন পেশাজীবি মানুষের নিকট হতে আমানত সংগ্রহ করে। ধর্মের দোহাই দিয়ে ধর্মপ্রাণ সাধারণ জনগণকে ভুল বুঝিয়ে তাদের সংস্থার সদস্য করা হত। সুদমুক্ত জীবন যাপন ছিল তাদের প্রতিষ্ঠানের লোক দেখানো মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। উক্ত চক্রের অন্যতম হোতা শাহ আলম নিজে কোম্পানীর চেয়ারম্যান হিসেবে ০৪টি ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে এবং ২৪ জন জনবলের সমন্বয়ে পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে ও অতিরিক্ত ২০ জন পরিচালক নিয়োগ দেয়। আত্মীয় বা পরিচিতদেরকে তারা পরিচালক ও পরিচালনা পর্ষদে নিয়োগ দিত। পরবর্তীতে নরসিংদী জেলার বিভিন্ন থানার জনবহুল ও ব্যবসায়ীক এলাকায় জাঁকজমকপূর্ণ শাখা অফিস স্থাপন করে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো; শাহ সুলতান এম.সি.এস. কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ, স্বদেশ টেক্সটাইল লিঃ, শাহ সুলতান টেক্সটাইল লিঃ ও শাহ সুলতান প্রপার্টিজ লিঃ।
তিনি আরো জানান, মাঠ পর্যায়ে গ্রাহক ও অর্থ সংগ্রহের জন্য গ্রেফতারকৃতদের প্রায় ৩ শতাধিক কর্মী রয়েছে। যাদেরকে কোন প্রকার বেতন প্রদান করা হয় না। তাদেরকে গ্রাহকদের বিনিয়োগের মাধ্যমে এককালীন ১০% ও বছরান্তে ৬% অর্থ প্রাপ্তির প্রলোভন দেখানো হত। গ্রেফতারকৃতরা বিনিয়োগকারীদেরকে বার্ষিক ১২-১৬% মুনাফার প্রলোভন দেখাত। এছাড়াও তারা গ্রাহকদের নিকট হতে উচ্চ মুনাফায় মাসিকভিত্তিতে ডিপিএস এর মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করত বলে জানায়। ফলশ্রুতিতে তারা গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধিতে সক্ষম হন। তারা বেশকিছু গ্রাহককে উচ্চ মুনাফায় লোন প্রদান করে। ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান না হলেও তারা ব্যাংকের মতই গ্রাহকদের নিকট হতে আমানত সংগ্রহ ও ঋণ প্রদানের কার্যক্রম পরিচালনা করত। গ্রাহকদের সংগৃহীত অর্থ ল্যান্ড প্রজেক্ট টেক্সটাইল ও নিজস্ব অন্যান্য ব্যবসায় বিনিয়োগের মাধ্যমে সাধারণ গ্রাহকদের কষ্টার্জিত অর্থ আত্মসাৎ করেছে। তারা এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে বলে জানায়। গ্রাহকদের তথ্যমতে সংগৃহীত টাকার পরিমান আরো বেশি হতে পারে।
র্যাব-১১ এর অধিনায়ক জানান, করোনার ক্রান্তিলগ্নে যখন মানুষের টাকার প্রয়োজন হয় তখন ভুক্তভোগীরা তাদের আমানতকৃত টাকা শাহ সুলতান এম.সি.এস. কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ এর নিকট উত্তলনের আবেদন করে। তখনই তারা করোনা মহামারীসহ বিভিন্ন অযুহাতে গচ্ছিত টাকা ফেরত না দিতে গড়িমসি শুরু করে। প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ওমর ফারুক ও ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মাসুদ রানা গ্রাহকদের লগ্নিকৃত টাকা দিয়ে নরসিংদীর বিভিন্ন স্থানে ৫-৬ একর জমি নিজেদের নামে ক্রয় করে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির নামে নরসিংদীসহ বিভিন্ন স্থানে ৭-৮ একর জমি রয়েছে বলে জানা যায়। টাকা ফেরতের জন্য গ্রাহকদের ক্রমাগত চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা প্রতিষ্ঠানটিতে তালা ঝুলিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায়। বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক ব্যবসায় খুব সহজেই উদ্ধুদ্ধ হয় বিধায়, সুদ বিহীন ব্যবসার প্রলোভন দ্রুত মানুষের মনে আস্থার জায়গা তৈরী করে। শরিয়া ভিত্তিক ব্যবসাকে প্রতারণার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে অর্থ আত্মসাতের কুটকৌশল খুব সহজেই সাধারণ মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে। গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
উল্লেখ, সাম্প্রতিক সময়ে সমবায় সমিতির নামে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় ভুক্তভোগীরা নরসিংদীসহ বিভিন্ন এলাকায় মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে। দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমেও বর্ণিত প্রতারণার ঘটনা প্রচারে দেশব্যাপী চাঞ্চল্য ও আলোড়নের সৃষ্টি হয়। বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিকট অভিযোগ দায়ের করে। নরসিংদী জেলার প্রায় সকল থানার ৫-৬ হাজার সাধারণ পেশাজীবি মানুষ একটি প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে ব্যবসায়ে অতিরিক্ত লভ্যাংশ প্রাপ্তির আশায় শত শত কোটি টাকা অর্থ বিনিয়োগ করে সর্বশান্ত হয়েছেন। বেশির ভাগ মানুষ তাদের সারাজীবনের কষ্টার্জিত জমানো অর্থ হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। প্রতারক চক্রের সদস্যরা সাধারণ মানুষের প্রায় ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায়।