খুলনায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও দুই কিলোমিটার নদীশাসনের কাজ শেষ পর্যায়
নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
মঙ্গলবার, এপ্রিল ৫, ২০২২ ১০:১২ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
মঙ্গলবার, এপ্রিল ৫, ২০২২ ১০:১২ অপরাহ্ণ

ফকির শহিদুল ইসলাম,খুলনা
খুলনা দাকোপ উপজেলার ৩২ নম্বর পোল্ডারের ৫০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও দুই কিলোমিটার নদীশাসনের কাজ আগামী জুনে শেষ হওয়ার কথা। এই প্রকল্পের ব্যয় প্রায় ১৫০ কোটি টাকা। এখন একই বাঁধ সংস্কারে প্রায় ১৫২ কোটি টাকার একটি প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রস্তাব অনুযায়ী আরো ছয় কিলোমিটার নদীশাসন করা হবে।
প্রকল্পটি ঠিকাদার নিয়োগ ও কার্যাদেশের অপেক্ষায় আছে।
স্থানীয়রা বলেছে, ঘূর্ণিঝড় সিডর ও আইলায় ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় এলাকায় বাঁধ নির্মাণে স্থানীয় মানুষের মতামত না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে সরকার যেমন আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছে, তেমনি সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা আরো ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, আগের প্রকল্প চলাকালেই উপকূলের নদীর গতি-প্রকৃতি পরিবর্তন হয়ে গেছে। এ জন্য দরকার নদীশাসন।
সিটিজেন চার্টার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্প প্রথম পর্যায়ে বিশ্বব্যাংক তিন হাজার ২৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, বরগুনা, পিরোজপুর ও পটুয়াখালীর জেলায় পোল্ডারভিত্তিক ৪১২ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণ করছে। ২০১৬ সালে তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পটি শুরু হয়। দুই দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়। সে অনুযায়ী, চলতি বছরের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। প্রকল্পে বনায়ন, বাঁধের ঢাল প্রতিরক্ষা, নদীতীর সংরক্ষণ ও বনায়ন করা হবে। এরই মধ্যে খুলনার ৩২ ও ৩৩ নম্বর পোল্ডারে কাজ শেষ হয়েছে। ৩২ নম্বর পোল্ডারে ৫০ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ ও নদীর ভাঙন রোধে (নদীশাসন) বিভিন্ন স্থানে দুই কিলোমিটার ব্লক ডাম্পিং ও জিও ব্যাগ স্থাপন করা হয়েছে। এই পোল্ডারে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড়
সিডর ও ২০০৯ সালের ২৫ মে আইলার আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয় পড়ে দাকোপ উপজেলা। আইলার পর ৩২ নম্বর পোল্ডারটি দীর্ঘদিন পানিতে ডুবে ছিল। এই পোল্ডারে সুতারখালী ও কামারখালী নামে দুটি ইউনিয়ন। এখানে প্রায় ৪৫ হাজার মানুষের বসতি। আর ৩৩ নম্বরে পাঁচটি ইউনিয়ন—দাকোপ, বাজুয়া, কৈলাসগঞ্জ, বানিশান্তা ও লাউডোব। এখানেও ৬০ হাজারের অধিক মানুষের বসতি। বিশ্বব্যাংকের প্রকল্পে বাঁধ নির্মাণ হওয়ায় এসব এলাকায় নতুন করে কৃষিকাজ শুরু হয়েছে। অথচ প্রকল্প শেষ না হতেই ৩২ নম্বর পোল্ডারের জাইলেখালী, খাটখোলা, ভিটেভাঙ্গা, কেওড়াতলা, কামারখোলা, চাঁদনী চক ও জয়নগরসহ ১০-১২টি স্থানে বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। কোথাও কোথাও জিও ব্যাগ নষ্ট হয়ে গেছে। ব্লকগুলো সরে গেছে। এতে স্থানীয়রা দুশ্চিন্তায় পড়েছে।
কামারখোলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা কৃষি শ্রমিক শিকু রায় (২৬) বলেন, ‘সিডর, আইলা, বুলবুলের কথা মনে পড়লে এখনো নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। কত আশা করছি, বেড়িবাঁধ হলে বাঁচব। বাঁধও হয়েছে, কিন্তু ভাঙন তো কাছাকাছি। কখন আবার সব শেষ হয়ে যাবে জানি না। ’
বটবুনিয়া মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক নিতাই রায় বলেন, ‘বাঁধের জন্য আমার তিন একর জমি গেছে। বাঁধ হয়েছে, কিন্তু আমাদের দুশ্চিন্তা কাটছে না। নদী ভেঙেই চলছে। এ অবস্থা চললে সরকারের কোটি কোটি টাকা জলে যাবে। স্থানীয় তরিকুল গাজী (২৬) বলেন, ‘খাটখোলায় এক বছরে নদী ভাঙতে ভাঙতে বাঁধের কাছাকাছি এসে গেছে। বর্ষা মৌসুমে নদী আরো ভয়ংকর হলে আমাদের বিপদের শেষ থাকবে না। ’
কামারখোলা ইউপির চেয়ারম্যান পঞ্চানন কুমার মণ্ডল বলেন, অনেক আন্দোলন-সংগ্রামের পর আমাদের বাঁধ হয়েছে, কিন্তু নদীশাসন পুরোপুরি না হলে যেকোনো সময় আবার বড় বিপদ ঘটবে। ৫০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের দুই কিলোমিটার ব্লক ডাম্পিং হলেও ঝুঁকিতে রয়েছে আরো সাড়ে সাত কিলোমিটার বাঁধ। প্রথম থেকেই আমরা এ বিষয়ে বলে আসছি, কিন্তু কেউ আমলে নেয়নি। ফলে পরিকল্পনার ঘাটতি রয়ে গেছে। ’ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম কালের বলেন, বিশ্বব্যাংকের প্রকল্পটি ২০১৩ সালের দিকে সার্ভে হয়েছে। তখন দুই কিলোমিটার নদীশাসনের কথা বলা হয়েছে, যা এরই মধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে, কিন্তু এই সময়ের মধ্যে নদীর গতি-প্রকৃতি পরিবর্তন হয়েছে। ফলে আরো ছয় কিলোমিটার জায়গা নদীশাসনে আনা প্রয়োজন। এ বিষয়ে প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এতে প্রায় ১৫২ কোটি টাকা ব্যয় হবে। ঠিকাদার নিয়োগ ও কার্যাদেশ দেওয়া হলে প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।
বাঁধের চেয়ে সংস্কারকাজে ব্যয় বেশি, এ বিষয়ে জানতে চাইলে আশরাফুল আলম বলেন,নদীশাসন একটি ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া। সেই হিসাবে ছয় কিলোমিটার নদীশাসন করতে হবে। বাঁধের অনেক স্থানে নদী কাছাকাছি অবস্থান করছে। ফলে নদীশাসনে বেশি ব্যয় হবে। নদীশাসনের কাজ শেষ হলে উপকুলে আর বাঁধের ঝুঁকি থাকবে না।
স্বাধীন খবর ডটকম/আ আ
