গুমের শিকার হাবিবুর, রেজোয়ান ও ডা. জনি’র সন্ধান চান স্বজনরা
নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
শনিবার, মে ২৮, ২০২২ ৬:৪৯ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
শনিবার, মে ২৮, ২০২২ ৬:৪৯ অপরাহ্ণ

ফকির শহিদুল ইসলাম,খুলনাঃ
গুমের শিকার বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জের ব্যবসায়ী মো. হাবিবুর রহমান হাওলাদার, সাতক্ষীরার হোমিও চিকিৎসক মোখলেসুররহমান (জনি) এবং যশোরের বেনাপোলের মেধাবী কলেজ ছাত্র মো. রেজোয়ান হোসেনের সন্ধান পেতে তাদের স্বজনরা আকুতিজানিয়েছেন। তারা বলেছেন, অবিলম্বে গুম হওয়া তাদের স্বজনদের খুঁজে বের করে তাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হোক।
গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক সপ্তাহ’ উপলক্ষে শনিবার (২৮ মে) দুপুরে খুলনায় আয়োজিত আলোচনা সভা, মানববন্ধন ও র্যালিতে অংশ নিয়ে সরকারের প্রতি তারা এ দাবি জানান। মহানগরীর খানজাহান আলী রোডস্থ জাতিসংঘপার্কের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ ও মানবাধিকারকর্মীদের সংগঠন ‘হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার নেটওয়ার্ক’ যৌথভাবে এ কর্মসূচির আয়োজন করে।
মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিক মুহাম্মদ নূরুজ্জামান দিবসের বিবৃতি পাঠ এবং সভাপতিত্ব করেন।
মানববন্ধন কর্মসূচি চলাকালীন অনুষ্ঠিত সমাবেশে গুমের শিকার বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জের ব্যবসায়ী মো. হাবিবুর রহমানহাওলাদারের ছেলে কলেজ ছাত্র মো. শাওন হাওলাদার বলেন, তার বাবাকে ২০১১ সালের ৬ জুলাই পুলিশ পরিচয়ে বাড়ি থেকেআটক করে নিয়ে যায়। তারপর থেকে দীর্ঘ ১১ বছরেও তার কোন সন্ধান মেলেনি। এখন তারা পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত। বাবা নাথাকায় তাদের লেখাপড়া ও সংসারের খরচও বহন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তার মাও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তিনি তার বাবাকেফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান।
হাবিবুর রহমানের স্ত্রী মাহমুদা বেগম বলেন, স্বামীর অপেক্ষায় থাকতে থাকতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এমনকি চোখেওঠিকমত দেখতে পান না। তার স্বামী কোন অপরাধ করে থাকলে তাকে আইনের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি তারস্বামীকে ফিরিয়ে দিতে সরকারের প্রতি জোর আহবান জানান।
মানববন্ধনে কর্মসূচীতে অংশ নিয়ে যশোরের বেনাপোলের মেধাবী কলেজ ছাত্র মো. রেজোয়ান হোসেনের বড় ভাই মো. রিপনহোসেন বলেন, ‘তার ছোট ভাই মো. রেজোয়ান হোসেনকে ২০১৬ সালের ৪ আগষ্ট বেনাপোল থানা পুলিশ আটক করে।পরবর্তীতে তাকেও গুম করা হয়। এ ঘটনায় তারা ভয়ে মামলা করার সাহস পাননি। দীর্ঘ ৬ বছরেও তার ভাইয়ের সন্ধান না পেয়েতার বৃদ্ধ মা–বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ভাইয়ের সন্ধান দাবি করেন তিনি।
সাতক্ষীরার হোমিও চিকিৎসক মোখলেসুর রহমান (জনি)’র পক্ষে মানববন্ধনে কর্মসূচীতে অংশ নিয়ে মানবাধিকার কর্মীএ্যাডভোকেট শেখ মো. আলমগীর আশরাফ বলেন, ‘২০১৬ সালের ৪ আগষ্ট সাতক্ষীরা সদর থানার এসআই হিমেলের নেতৃত্বেপুলিশ জনিকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এরপর তার আর খোঁজ মেলেনি। গত ৬ বছরেও তার সন্ধান দিতে পারেনিপুলিশ। তিনি অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তি এবং তার ডা. জনিকে ফিরিয়ে দিতে সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
কর্মসূচীতে বক্তৃতা করেন নাগরিক ঐক্যের খুলনা মহানগর শাখার সভাপতি ড. এ্যাডভোকেট মো. জাকির হোসেন, সদস্য সচিবসিনিয়র সাংবাদিক কাজী মোতাহার রহমান বাবু, বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার খুলনা জেলা সমন্বয়কারীএ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম, গ্লোবাল খুলনার আহবায়ক শাহ মামুনুর রহমান তুহিন, মানবাধিকার কর্মী শেখ আব্দুলহালিম, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ছায়াবৃক্ষের প্রধান নির্বাহী মাহবুব আলম বাদশা। স্বাগত জানান হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার ওসাংবাদিক কেএম জিয়াউস সাদাত।
উপস্থিত ছিলেন মানবাধিকার কর্মী এ্যাডভোকেট মো. শহীদুল ইসলাম, সাংবাদিক এম এ আজিম, নারী ও শিশু অধিকারফোরামের গৌতম দে হারু, মো. শওকত হোসেন, মো. সাকিব হাসান, মো. গালিব হাসান, মো. তামিম হাসান, মো. আরাফাতমিম, মো. রানা সরকার, মো. জাকির হোসেন, মো. ফাহাদ ইসলাম প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বক্তারা আরও বলেন, গুম মানবতা বিরোধী একটি অপরাধ। রাষ্ট্র চাইলেই গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড ওমানবাধিকার লঙ্ঘণের ঘটনা বন্ধ হয়ে যাবে। বক্তারা এখনই গুম বন্ধ এবং গুম হওয়া ব্যক্তিদের তাদের স্বজনদের কাছে ফিরিয়েদেওয়ার আহবান জানান। তারা বলেন, গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের স্ত্রী–সন্তানরা আর্থিক ও সামাজিকভাবে তাদের অধিকারথেকে বঞ্চিত হয়ে চরম কষ্টে রয়েছেন। এতে দেশের সাধারণ নাগরিকরাও নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছেন। এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়েআসতে হলে সুষ্ঠু গণতন্ত্র চর্চা এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
স্বাধীন খবর ডটকম/আ আ
