গ্যাসের দাম বাড়ায় আবার খড়িতে ফিরে যাবেন ফেরদৌস মিয়া
নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
শুক্রবার, মার্চ ৪, ২০২২ ৯:৫২ পূর্বাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
শুক্রবার, মার্চ ৪, ২০২২ ৯:৫২ পূর্বাহ্ণ
গাইবান্ধা থেকে
এক লাফে প্রায় তিন শ’ টাকা দাম বৃদ্ধি করার ফলে এলপিজি গ্যাস ব্যবহারকারীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে হতাশা। গোটা দেশের মতো গাইবান্ধাতেও চাল, ডাল, তেল, পিয়াজ, লবন, বিদ্যুৎ, শাক সবজিসহ সকল দাম অতিরিক্ত বৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
গ্যাসের দাম বাড়ায় আবার খড়িতে ফিরে যাবেন দোকান কর্মচারী ফেরদৌস মিয়া। তিনি বলেন, সারা মাস গতর খেটে বেতন পাই ১০ হাজার টাকা। অন্তত বাড়ির বউকে যাতে দোকানের কর্মচারী না হতে হয় সেজন্য ছেলেসহ কাজ করি কাপড়ের দোকানে। বউ ছেলে ও ২ মেয়ে নিয়ে সংসার। কোনমতো চলে। বাপ বেটায় দুজনের ইনকাম ১৫ হাজার টাকা। এই টাকায় পড়ালেখা, বাড়ি ভাড়া ২ হাজার দিয়ে যা থাকে তাতে কোন মতো চলে।
কিন্তু এই গ্যাস আমাদের পরিবারকে আরও পিছিয়ে দিলো। কাকে বলবো দু:খের কথা? সব কিছুর দাম বেশি চলি কিভাবে? আরও গ্যাস কেনা? এখন বাধ্য হয়ে স্কুলে যাওয়া বাদ দিয়ে মেয়ে দুটোকে খড়ি টোকাতে পাঠাতে হবে। তাছাড়া আর টানতে পারছিনা ।
সারাজীবন খড়ি কিনে বাড়িতে ভাত তরকারি রান্না হতো। কিন্তু আশেপাশের লোকজন কয় ভাবি কি করেন এসব? এখন খড়ি দিয়ে রান্নার প্রচলন উঠে গেছে। এখন ধনি গরিব সকলেই গ্যাসে রান্না করে। আমিও ওর বাপকে বলে গ্যাস কিনেছি বছর খানেক হলো। তাতে হাতে কালি লাগেনা, বাসন কোসন ময়লা হয়না। ভালো আরামেই কাজ করা যায়। আর থাকে কোথায়। মাইনসের কথা শুনে বউ ধরে বসলো, আমার তো কাজের লোক নাই। আমি একাই কাজ করি। খড়িতে চলেনা। কথাটাতো সত্য। তাই বেতনের আগেই গ্যাস ডিলিন্ডার কিনে বাড়িতে আনলাম । তখন এলপিজি গ্যাসের দাম ছিলো ৮ শ’ ৫০ টাকা।
সকালে খেয়ে আসি আর দুপুরে বাড়ি থেকে ভাত নিয়ে দোকানে বসে খাই বাপ-বেটায়। বাধ্য হয়েই খড়ির বদলে গ্যাস সিলিন্ডার কিনেছিলাম বউ নাজমাকে একটু শান্তিতে কাজ করার জন্য। কয়েক বছর ভালোই গেলো। আস্তে আস্তে গ্যাসের দাম বাড়তে শুরু করলো। কিন্তু আমার বেতন তো আর বাড়ে না। তাও কষ্ট করে গ্যাস কিনেই চালিয়ে নিচ্ছিলাম। কিন্তু এবার কাম সারা। এভাবেই বলেন ফেরদৌস মিয়া।
তিনি আরও বলেন, সকালে গ্যাস শেষ হলো এখন টাকা কোথায় পাই? আমার তো আর সুদের ব্যবসা নেই যে যখন তখন টাকা দিয়ে গ্যাস কিনে আনবো। কিন্তু এদিকে তো আমার রান্না বন্ধ। আজ শুক্রবার কি একটু শান্তিতে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাবো তা আর হলোনা। বাড়িতে গ্যাসের প্যাচাল শুনে বের হয়ে এলাম। বউ বললো গ্যাস না এলে রান্নাও বন্ধ।
এই কথা শুনে হাতে ৮শ’ টাকা নিয়ে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে মসজিদের সামনে জিন্না মিয়ার দোকানে এলাম দেখি বাকিতে গ্যাস পাওয়া যায় নাকি। ম্যানেজার দোকানের এক পাট খুলে মুখ বের করে বললেন গ্যাসের দামতো এখন ১৩৯০ টাকা। আপনি যে ৮শ’ টাকা দিলেন? হেসে বললাম, ভাই শনিবারে বাকি টাকাটা দিয়ে দেবো। দুপুরের রান্না ক্যাবল শুরু হলো। কখন খাবো তার ঠিক নেই।
ফেরদৌস মিয়া বলেন আবার খড়িতে ফিরে যাবো। আমার পোষাবে না। শুধু তো আর গ্যাস নয়, সব কিছুর দাম চড়া, ক্যামন করে চলি ? স্ত্রী নাজমা বললো ,আমরা বাঁচবো ক্যামন করে ?