চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়: ব্যয় বৃদ্ধি সত্ত্বেও এখনও ৫০ শতাংশ কাজ বাকি রয়েছে।
নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
শনিবার, নভেম্বর ২, ২০২৪ ৪:২১ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
শনিবার, নভেম্বর ২, ২০২৪ ৪:২১ অপরাহ্ণ
অবকাঠামো উন্নয়নের এই প্রকল্পে ৩৬০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। এর মেয়াদ দুবার বাড়ানো হয়েছে এবং ব্যয় প্রায় ৪০ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পটি সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়াই গ্রহণ করা হয়েছিল। এই প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের জুনে শেষ হয়েছে, কিন্তু এখনও ৫০ শতাংশ কাজ বাকি রয়েছে।
২০১৭ সালের ১৬ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এই উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পের আওতায় একাডেমিক ভবন, ছাত্রছাত্রী হল, ডরমিটরি, চিকিৎসাকেন্দ্র, মসজিদ এবং গবেষণাকেন্দ্রসহ ২৬ ধরনের নির্মাণ কাজ করা হবে।
প্রাথমিকভাবে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছিল, যা পরবর্তীতে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এর ফলে ব্যয় প্রায় ৪০ কোটি টাকা বেড়ে যায়। কাজের অগ্রগতি না থাকায়, দ্বিতীয় দফায় চলতি বছরের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়।
প্রকল্পের নথি অনুযায়ী, তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান—মেসার্স আইএস ট্রেডিং, মেসার্স জে জে ট্রেডার্স এবং এনকে ট্রেডার্স—মিলে ১৯১ কোটি টাকার কাজ করছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলি আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। এছাড়া, অন্তত ৩৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ১৫৩ কোটি টাকার কাজ করছে, এবং প্রায় ১৬ কোটি টাকার কাজ এখনও শুরু হয়নি।
কাজ সম্পন্ন করতে ব্যর্থতার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকেরা প্রশাসন ও ঠিকাদারদের গাফিলতিকে দায়ী করেছেন। তাঁদের মতে, সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়া প্রকল্প গ্রহণের কারণে প্রতিটি ধাপে জটিলতা তৈরি হয়েছে, যা দলীয় ঠিকাদারদের কারণে আরও বেড়েছে। বড় দুই ঠিকাদার বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছেন।
পুর ও পরিবেশ প্রকৌশল অনুষদের ডিন সুদীপ কুমার পাল জানান, সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়া পছন্দের ঠিকাদারদের দিয়ে নির্মাণকাজ করানো হয়েছে। তিনি সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেছেন, অভ্যন্তরীণভাবে চুয়েট কর্তৃপক্ষ অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী যাচাই-বাছাই করে প্রকল্পটি গ্রহণ করেছে। তাঁর দাবি, কাজের ৬০ শতাংশ শেষ হয়েছে, তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলীদের মতে, কাজ হয়েছে মোট ৫০ শতাংশ।
বাকি কাজের জন্য নতুন করে দুই বছর এবং ৪০ কোটি টাকার ব্যয় বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে, কিন্তু এখনও সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়া যায়নি।
প্রকল্পটি রাউজান উপজেলার পাহাড়তলী ইউনিয়নে অবস্থিত চুয়েট ক্যাম্পাসের জন্য। চট্টগ্রাম-৬ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন আওয়ামী লীগের এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী।
চুয়েটের পাঁচজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চুয়েটে কে কী কাজ করবে, তা নিয়ন্ত্রণ করতেন এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী ও তাঁর অনুসারীরা। বাইরের ঠিকাদাররা সাধারণত দরপত্রে অংশ নিতে পারতেন না।
নথিপত্র অনুযায়ী, প্রকল্পে সবচেয়ে বেশি কাজ করছে মেসার্স আইএস ট্রেডিং ও মেসার্স জে জে ট্রেডার্স। তারা যৌথভাবে চারটি ও আলাদাভাবে পাঁচটি কাজ করছে, যার মোট ব্যয় ১০৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে মাত্র দুটি কাজ শেষ হয়েছে।
মেসার্স আইএস ট্রেডিংয়ের মালিক মোহাম্মদ রোকন উদ্দিন, যিনি পাহাড়তলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং রাউজান উপজেলা আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক। আওয়ামী লীগের পতনের পর তিনি আত্মগোপনে চলে গেছেন।
মেয়াদ বাড়ানোর পরও কাজ সম্পন্ন করতে ব্যর্থতার পেছনে তদারকির অভাব ও প্রশাসনের গাফিলতিকে দায়ী করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, বিগত প্রশাসনের অজ্ঞতার কারণে প্রকল্পের কাজ এগোয়নি এবং ঠিকাদারদের কাছ থেকে কাজ আদায় করতে তাঁরা ব্যর্থ হয়েছেন।