চেতনা’র ফাঁদে গ্রাহকের ৩০০ কোটি টাকা হাওয়া
নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
বুধবার, মার্চ ২৩, ২০২২ ৭:২২ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
বুধবার, মার্চ ২৩, ২০২২ ৭:২২ অপরাহ্ণ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
ঢাকার আশুলিয়ায় জামগড়া এলাকায় অবস্থিত চেতনা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড নামক একটি প্রতিষ্ঠান ১ হাজারের মতো গ্রাহকের ৩০০ কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে। ২০০৮ সাল থেকে তারা এই প্রতারণা করে যাচ্ছিল। গ্রাহকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটির সহ-সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- ইকবাল হোসেন সরকার (৩৫), মাজহারুল ইসলাম (৩৫), মমিন হোসেন (৩৫), জাহাঙ্গীর আলম (৩৫), ইব্রাহিম খলিল (৩৫), এসএম মকবুল হোসেন (৪০), মিজানুর রহমান (৩৮), আল আমিন হোসেন (২৮), ফজলুল হক (৩৫) ও নূর হোসেন (২৭)।
গতকাল দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব’র মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৪ এর অধিনায়ক পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক জানান, উচ্চ মুনাফার আশা দেখিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সঞ্চয়ী প্রকল্প, ডিপিএস, এফডিআর, পেনশন পলিসি, হজ পলিসি, প্রজেক্ট, বাগান, ডেইরি ফার্ম ও ফ্ল্যাট দেখিয়ে গ্রাহকদের কাছে থেকে লাখ প্রতি মাসে টাকার পরিমাণ ও মেয়াদ অনুযায়ী ১ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা লভ্যাংশ দেয়ার প্রলোভন দেখায়।
তিনি জানান, এ ঘটনায় প্রায় ১ হাজার গ্রাহক তাদের জমাকৃত টাকা ফেরত পেতে গত ১৯শে মার্চ প্রতিষ্ঠানটির জামগড়া অফিসের সামনে মানববন্ধন করেন। ২০০৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ৩০ সদস্য বিশিষ্ট গভর্নিং বডি নিয়ে চেতনা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড প্রতিষ্ঠা হয়, যার রেজিস্ট্রেশন নম্বর-১৯৩। প্রথমদিকে তারা স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও স্বল্প আয়ের মানুষকে অধিক মুনাফায় সঞ্চয় ও ক্ষুদ্রঋণের প্রতি আকৃষ্ট করতো।
ধীরে ধীরে এই সংস্থা বড় পরিসরে কাজ শুরু করে। এক্ষেত্রে তাদের মূল টার্গেট ছিল আশুলিয়া ও সাভারের শিল্প এলাকার মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তরা। তাদের অতি উচ্চ মুনাফা দেয়ার আশ্বাসে কোম্পানিতে সঞ্চয়ী পলিসি, এফডিআর, ডিপিএস, পেনশন পলিসি, শিক্ষা পলিসি, হজ পলিসি, রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী পার্টনার পলিসিতে আকৃষ্ট করতো।
তিনি আরও জানান, ভিকটিমদের বিশ্বাস অর্জনের জন্য, সংস্থাটি গ্রাহকদের প্রথমদিকে কয়েক মাস চুক্তি অনুযায়ী লভ্যাংশ দিতো। যা দেখে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আরও বেশি বিনিয়োগে আগ্রহী হতো। অনেকে নিজের পেনশনের টাকা, গ্রামের ভিটেবাড়ি বিক্রি করা টাকা, বিদেশ থেকে কষ্ট করে অর্জিত অর্থ উক্ত সংস্থায় জমা রাখতো। তবে পূর্ব-পরিকল্পনা অনুসারে গত ১৬ই মার্চ অফিসে তালা দিয়ে লাপাত্তা হয়। অনুসন্ধানে জানা যায়, সংস্থার অংশীদারগণ বিভিন্ন জায়গায় নামে-বেনামে জায়গা-জমি কেনা, বহুতল ভবন নির্মাণ, বিভিন্ন ছোট বড় কারখানা করেছে এবং একই সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে নামে-বেনামে বিভিন্নভাবে অর্থ বিদেশে পাচার করেছে।
তিনি আরও জানান, পলাতক মুহাম্মাদউল্লাহ আশুলিয়ার নরসিংহপুরে বসবাস করলেও তিনি মূলত ভোলার বাসিন্দা। তিনি ডিগ্রি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। আশুলিয়াতে তার পাঁচতলা বাড়ি এবং একাধিক ফ্ল্যাটের সন্ধান পাওয়া গেছে। গ্রেপ্তার ইকবাল হোসেন সরকার মুহাম্মাদউল্লাহর বন্ধু ও সমিতির সহ-সভাপতি।
তিনি জানান, প্রতারক চক্রের মাঠ পর্যায়ের কর্মী বা সদস্য রয়েছে। তারা ঢাকা জেলার আশুলিয়া, সাভার ও ধামরাই এলাকার মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত, গার্মেন্টসকর্মী, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, অটোচালক, সবজি ব্যবসায়ী, ফল ব্যবসায়ীসহ নিম্ন আয়ের মানুষদের টার্গেট করে প্রতি লাখে ১ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা মাসিক লভ্যাংশ এবং স্বল্প সময়ে মাসিক মেয়াদ শেষে অধিক মুনাফা লাভের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী করতো। ভিকটিমদের প্রলুব্ধ করতে তারা বিভিন্ন প্রজেক্ট, গাছের বাগান, ডেইরি ফার্ম, ফ্ল্যাট ও প্লটের প্রলোভন দেখিয়ে ভুলিয়ে নানান কৌশলে প্রতারক চক্রের অফিস কার্যালয়ে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হতো।
তারা ভিকটিমদের বুঝাত যে, তাদের কাছে এফডিআর করলে লাখ টাকায় মাসে ১৮শ’ টাকা লভ্যাংশ দেয়ার প্রলোভন দেখানো হয়। যা প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান দিতে পারে না। তিনি আরও জানান, ২০ হাজার টাকা মাসিক কিস্তিতে ফ্ল্যাট বরাদ্দের লোভনীয় অফার আশুলিয়া থানাধীন গণবিশ্ববিদ্যালয়ের নিকট ঘোড়াপীর প্রকল্পে অনেক জমি রয়েছে বলা হলেও সেখানে তাদের ব্যক্তি নামে মাত্র ১০ শতাংশ জমি রয়েছে। যা ইতিমধ্যে বিক্রি করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- র্যাব’র আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের সহকারী পরিচালক এএসপি মো. আল আমিনসহ ঊর্র্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
স্বাধীন খবর ডটকম/আ আ
