• আজ সন্ধ্যা ৭:১৮, রবিবার, ১৬ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২রা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ই রমজান, ১৪৪৬ হিজরি
  • shadinkhobor24@gmail.com
  • ঢাকা, বাংলাদেশ

জাপান ও ওইসিডির দেশগুলোর সহযোগিতা চাইলেন প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ: শুক্রবার, মে ২৭, ২০২২ ১২:৩৯ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ: শুক্রবার, মে ২৭, ২০২২ ১২:৩৯ অপরাহ্ণ

 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

বাংলাদেশকে সহজে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা(এসডিজি) অর্জনে অন্তত ২০২৯ সাল পর্যন্ত অগ্রাধিকারমূলক সুবিধাগুলো অব্যাহত রাখতে জাপান এবং অর্থনৈতিকসহযোগিতা উন্নয়ন সংস্থাওইসিডির দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা গভীরভাবে কৃতজ্ঞ থাকবো যদি জাপান এবং অন্যান্য ওইসিডির দেশগুলো কমপক্ষে ২০২৯সাল পর্যন্ত অগ্রাধিকার সুবিধাগুলো প্রসারিত করে। যাতে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়নের সর্বোচ্চ লক্ষ্য অর্জনআমাদের পক্ষে সম্ভব হয়।

শুক্রবার (২৭ মে) এশিয়ার ভবিষ্যৎ বিষয়ক ২৭তম আন্তর্জাতিক নিক্কেই সম্মেলনে এক ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রী এসবকথা বলেন।

দুই দিনব্যাপী সম্মেলনটি জাপানের রাজধানী টোকিওতে স্ট্রিমিং এবং অনসাইট উপস্থিতি উভয় ক্ষেত্রেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে।কারণ অনুষ্ঠানটি এই বছরের সম্মেলনের সাথে একটি হাইব্রিড বিন্যাসে হচ্ছে, যার শিরোনাম হচ্ছেবিভক্ত বিশ্বে এশিয়ারভূমিকা পর্যালোচনা করা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার স্নাতক অর্জন করেজাতিসংঘের স্বীকৃতি পেয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে সুষ্ঠুভাবে স্নাতক অর্জনে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিচ্ছি।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ জাতিসংঘের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বন্ধুদেশ অংশীদারদের প্রতি ২০২৬ সালের পরও বর্ধিতসময়ের জন্য বাংলাদেশকে অগ্রাধিকারমূলক সুযোগসুবিধা বাড়ানোর কথা বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছে। তিনিবলেন, ‘বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি দেশের সাথে এফটিএ নিয়ে আলোচনার বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে এবং জাপানসহ অন্যান্যদেশের সাথে এফটিএ এবং সিইপিএ নিয়ে আলোচনার দ্বার উন্মুক্ত করেছে।

প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনে স্মরণ করিয়ে দেন যে, বাংলাদেশ মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আতিথ্যদিচ্ছে এবং তাদের অবশ্যই মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিজ বাসভূমে নিরাপদ, নিরাপত্তা মর্যাদার সাথে ফেরত পাঠাতেহবে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা এই সংকটের একটি  গ্রহণযোগ্য মীমাংসা খুঁজে পেতে অবদান রাখতে এবং আমাদের সাহায্যকরার জন্য আপনাদের সকলকে অনুরোধ করছি।

এশিয়াকে বিশ্বের সর্ববৃহৎ জনবহুল মহাদেশ হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, এখানে বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় ৬০শতাংশ বাস করে। এটি বিশ্বের অধিকাংশ দরিদ্র মানুষেরও আবাসস্থল। অতএব, আলোচনার মাধ্যমে মতপার্থক্য মিটিয়েবিরোধপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে শান্তি নিশ্চিত করা অপরিহার্য। শুধু শান্তি স্থিতিশীলতার পরিবেশ সৃষ্টি করেই এশিয়ারদেশগুলো জনগণের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।

প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পররাষ্ট্র নীতিসকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব এবংকারও সঙ্গে বৈরিতা নয়পন্থা অনুসরণ করে। তিনি বলেন, এটি জাতিসংঘের একটি প্রস্তাব দ্বারা স্বীকৃত, ‘শান্তির সংস্কৃতিযা ১৯৯৯ সালে গৃহীত হয়েছে এবং এর পর থেকে প্রতি বছর এটাকে স্বীকৃতি দেয়া হচ্ছে।

এশিয়ার দেশের সরকার হিসেবে তিনি বলেন, তারা এই বছরের সম্মেলনের প্রতিপাদ্যএশিয়ার ভবিষ্যৎকে সম্বোধন করায়তাদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এখানে জড়ো হয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী ভবিষ্যৎ এশিয়া গড়ার জন্য সম্মেলনে পাঁচটি ধারণা শেয়ার করে বলেন, ‘আপনাদের প্রতিফলনের জন্য কিছুধারণা আপনাদের সাথে শেয়ার করে শেষ করছি।

শেখ হাসিনা তাঁর প্রথম প্রস্তাবে বলেন, এশিয়ার দেশগুলোকে একে অপরের প্রতি বন্ধুত্ব, বোঝাপড়া সহযোগিতার হাতবাড়িয়ে দিতে হবে এবং বিভাজন মোকাবেলায় সংহতি প্রচার করতে হবে।

দ্বিতীয় এবং তৃতীয় প্রস্তাবে, তিনি বলেন, কীভাবে আইসিটির সফট পাওয়ারকে আমাদের দেশ এবং এশীয় দেশগুলোন্যায্যতা, সম্মান, ন্যায়বিচার, অন্তর্ভুক্তি এবং অন্তর্ভুক্তি রক্ষার প্রয়োজনীয়তার মধ্যকার ব্যবধান পূরণের জন্য একটিশক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে সর্বোত্তমভাবে ব্যবহার করতে পারে। আমাদের কাজের মধ্যে সমতা আনয়ন করতে পারে এবংতারা তা অন্বেষণ করতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর চতুর্থ এবং পঞ্চম ধারণার বর্ণনা করার সময় অভিমত ব্যক্ত করেন যে, এশিয়ার ভবিষ্যৎ নির্ভর করবেটেকসই ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার উন্নতি এবং উভয় পক্ষের জন্য সুবিধাজনক আন্তর্জাতিক সম্পর্কস্থাপনের ওপর এবং এশিয়ার দেশগুলোর অভিন্ন উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ রয়েছে এবং তাদের তা ঐক্যবদ্ধভাবে এবং সম্মিলিতভাবেমোকাবেলা করা উচিত।

শেখ হাসিনা বলেন, এশিয়াপ্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আমাদের অভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সাহায্য করার জন্য ভালোঅনুশীলন, জ্ঞান প্রযুক্তি ভাগ করে নিতে আমাদের বাহিনীকে একত্রিত করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ, টেকসই বিশ্ব এবং আরও গুরুত্বপূর্ণভাবেএকটি শান্তিপূর্ণ, টেকসই সমৃদ্ধ এশিয়া নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সব বন্ধু অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করার জন্য সর্বদাসচেষ্ট থাকবে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সবে মাত্র তার স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুররহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন সম্পন্ন করেছে।

১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ জাপানের মধ্যে চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে তিনিবলেন, ‘আমরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় স্কুলশিশুসহ জাপান সে দেশের জনগণের অমূল্য সমর্থন অবদানের জন্যগভীরভাবে কৃতজ্ঞ। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দেওয়া দেশগুলোর অন্যতম জাপান, তারা ১৯৭২ সালের ১০ফেব্রুয়ারি এই স্বীকৃতি প্রদান করে।

তাঁরা বাংলাদেশে গত ১৩ বছরে উন্নয়নকে জনমুখী অন্তর্ভুক্তিমূলক করেছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জ্ঞানভিত্তিক, সমৃদ্ধ আধুনিক জাতি গঠনের লক্ষ্যে নেতৃত্ব দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে যেতে আমরা আমাদের আর্থসামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পুননির্ধারণ করেছি। তিনি বলেন, ‘যেমন, আমরা ভিশন ২০২১ এবং ভিশন ২০৪১ এর পরে ডেল্টাপ্ল্যান ২১০০ প্রণয়ন করেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি এবং এশিয়াপ্যাসিফিক অঞ্চলের বৃহত্তর অর্থনীতিরএকটিতে পরিণত হয়েছে। এই যাত্রা জাপান এবং আমাদের বন্ধু এবং অংশীদারদের দ্বারা সমর্থিত।

বিশ্বের অন্যান্য অংশের মতো বাংলাদেশও চলমান কোভিড১৯ দ্বারা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উল্লেখ করে তিনিবলেন, ২০১৯ সালে মহামারির আগে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল দশমিক ১৫ শতাংশ। ২০২০ সালে এটি দশমিক ৫১ এবং ২০২১ সালে দশমিক ৯৪ শতাংশ। তিনি বলেন, ‘আমরা চলতি অর্থবছরে শতাংশের বেশিপ্রবৃদ্ধির হার অর্জনের আশা করছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহামারির প্রভাব মোকাবেলা করার সময় তাঁরা জীবন এবং জীবিকার মধ্যে ভারসাম্য তৈরি করার চেষ্টাকরেছেন। প্রকৃতপক্ষে, তুলনামূলকভাবে আমরা সফলভাবে মহামারির চ্যালেঞ্জগুলো পরিচালনা করতে পেরেছি।

তিনি সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের প্রচেষ্টা ২০২২ সালের এপ্রিলের জন্য নিক্কেইএর কোভিড১৯ পুনরুদ্ধার সূচকেস্বীকৃত হয়েছে। যেখানে বাংলাদেশ ১২১টি দেশের মধ্যে পঞ্চম স্থানে রয়েছে এবং কোভিড ব্যবস্থাপনা পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রেদক্ষিণ এশিয়ার সেরা পারফরম্যান্সকারী দেশ হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ২০২২ সালের জুনে শেষ হওয়া অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি ৪৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেপৌঁছানোর, পণ্য রফতানি আয় ৫২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি, রেমিট্যান্স ২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং মাথাপিছুআয় ,৮২৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত হওয়া প্রত্যাশিত।

সাম্প্রতিক কপ২৬ সহ সকল আলোচনায় জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে বাংলাদেশ সক্রিয় এবং সোচ্চার হয়েছে উল্লেখ করেতিনি বলেন, ‘আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে থাকা ৪৮সদস্যের দেশগুলোর একটিকণ্ঠস্বর হিসেবে কাজ করতে ২০২০২০২২ সালের জন্য ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের সভাপতিত্ব গ্রহণকরেছিলাম।তিনি বলেন, বাংলাদেশ সার্ক, বিমসটেক, আইওআরএ, ওআইসি, ন্যাম, এআরএফ, আসেম, সিকা, কমনওয়েলথের মতো আঞ্চলিক বহুপাক্ষিক প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সহযোগিতার জন্য সংলাপ প্রচারে সক্রিয় রয়েছে। সূত্র: বাসস

 
 
স্বাধীন খবর ডটকম/আ আ
 

জনপ্রিয় সংবাদ

 

সর্বোচ্চ পঠিত সংবাদ