• আজ সন্ধ্যা ৬:৪৮, রবিবার, ১৬ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২রা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ই রমজান, ১৪৪৬ হিজরি
  • shadinkhobor24@gmail.com
  • ঢাকা, বাংলাদেশ

ড্রাগন চাষে লাভবান নিয়ামতপুরের এটম

নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ: শুক্রবার, জুন ১০, ২০২২ ১০:৪৫ পূর্বাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ: শুক্রবার, জুন ১০, ২০২২ ১০:৪৫ পূর্বাহ্ণ

 

ড্রাগন চাষের অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনায় নওগাঁর নিয়ামতপুরের শ্রীমন্তপুর ইউনিয়নের ঘুলকুড়ি গ্রামের মৃত সাইফুদ্দিন মন্ডল এর ছেলে আনোয়ার হোসেন রিজভী এটম দুই বিঘা জমিতে ৪শ গাছের চারা রোপন করেন। বর্তমানে বাগানে ঝুলছে ছোট-বড় অনেক লাল-সবুজ, কাঁচা-পাকা ড্রাগন ফল। নিজের জমিতে ড্রাগন চাষ করে তাতে ফল ধরিয়ে এখন লাভের স্বপ্ন দেখছেন তিনি ফলে ড্রাগন ফল চাষির চোখে মুখেও যেনো আনন্দের ঝিলিক।

ড্রাগন বিদেশি ফল হলেও বর্তমানে বাংলাদেশের উত্তরা অঞ্চলের বরেন্দ্র ভ’মি নিয়ামতপুরের মাটিতে এ ফলের চাষ এতটা বেড়েছে যে, ধীরে ধীরে দেশি ফলে রূপ নিয়েছে। ড্রাগন গাছে দৃষ্টিনন্দন সাদা-হলুদ অসংখ্য ফুল এলাকার মানুষের দৃষ্টি আকর্ষন করেছে ফলে পরিচিতির সংখ্যাও বাড়ছে। এর ফলে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ড্রাগন ফলের ক্রেতা-বিক্রেতা। নিয়ামতপুরের কৃষকরাও ড্রাগন চাষে পিছিয়ে নেই। কৃষিবিদরা বলছেন, চাষাবাদে তুলনামূলক খরচ অনেক কম ও লাভ বেশি হওয়ায় নওগাঁ জেলায় ড্রাগন চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের মাঝে।

জানা যায়, ড্রাগন ফণি মনসা প্রজাতির উদ্ভিদ। এর ফুল রাতে ফোটে, তাই একে নাইট কুইনও বলা হয়। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ ও চীনে এই ফলটির বাজার রমরমা। সে দিক থেকে ড্রাগন ফল বাংলাদেশে নতুনই বলা চলে। থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম ও চীনেও বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন চাষাবাদ জনপ্রিয়। বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিক চাষাবাদ শুরু হয় ২০০৭ সালে।

এর চাষ পদ্ধতি জানতে চাইলে আনোয়ার হোসেন রিজভী বলেন, ড্রাগন ফলের ক্যাকটাস বেড়ে উঠার জন্য প্রতিটি ঝোপে একটি করে কংক্রিটের পিলার স্থাপন করা হয়। এই পিলারের ওপর একটি রাবারের টায়ার বেঁধে দেওয়া হয়। এতে ভর করেই ড্রাগন ফল গাছের ক্যাকটাসগুলো বেড়ে ওঠে। অন্য ক্যাকটাসের ফুলের মতই ড্রাগন ফলের ক্যাকটাসেও রাতারাতি ফুল ফুটে। ভোরের আলো পড়তেই এর ফুল সতেজতা হারিয়ে ফেলে। রাতের বেলা চলাফেরা করে এমন মথ ও বাদুর ড্রাগন ফলের পরাগায়নের কাজটি করে। ফুল ফোটা থেকে ফল সংগ্রহ করা পর্যন্ত পাঁচ মাসের মত সময় লাগে।

গাছের পরিচর্যা নিয়ে আনোয়ার হোসেন রিজভী এটম জানান, গাছে অধিক পরিমাণে জৈব সার ও অল্প পরিমাণে ইউরিয়া, ফসফেট ও পটাশ সার প্রয়োগ করতে হয়। খরা মৌসুমে সেঁচ দিতে হয়। এছাড়া বাড়তি কোনো যত্ন নিতে হয় না। ড্রাগন গাছে সাধারণত ভাইরাসজনিত রোগ, পাতা মোড়ানো ও ছত্রাকজনিত রোগ দেখা যায়। ফল আসলে পিঁপড়া ও মিলিবাগ পোকার আক্রমণ হতে পারে। এজন্য ক্যারাইটি, কপার অক্সিক্লোরাইড ও সাইফারম্যাথিন নামক কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। তিনি আরও বলেন, বাগান পরিচর্যার কাজে নিয়োজিত কৃষকদের সঙ্গে তিনি নিজেও কাজ করছেন। আর খরচের প্রসঙ্গে বলেন, প্রথম দিকে গাছ বেড়ে উঠার প্রয়োজনীয় পরিবেশ সৃষ্টি করতে একটু বেশী খরচ হলেও বাগানে যে পরিমান ফুল ফল এসেছে তাতে খরচের টাকা উঠে আসবে। আগামী মৌসুম থেকে তিনি ড্রাগরনর বাগান থেকে ভাল মুনাফা পাবেন বলে আশা করেন। তবে ড্রাগন ফল চাষ প্রথম দিকে (কংক্রিটের পিলার, লোহার রিং ও তাতে টায়ার পরাতে) একটু বেশী খরচ হলেও তা অত্যান্ত লাভজনক।

সাংবাদিককে আনোয়ার হোসেন রিজভী এটম আরো বলেন, নিয়ামতপুরের মাটি ও আবহাওয়া ড্রাগন চাষের জন্য উজ্জল সম্ভাবনা রয়েছে। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলে জেলার কৃষিতে বৈপ্লবিক উন্নতি ঘটবে। সরকারী সহযোগীতা পেলে ড্রাগন চাষে আর উদ্বুদ্ধ হতো এলাকার যুব সমাজ বলে মনে করেন তিনি। “ড্রাগন ফল এখনও অনেকের কাছেই অজানা। তিনি এ ফলটিকে গ্রামীন মানুষের কাছে পরিচিত করাতে চান। তাই এ ফলটির সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে তিনি বাগানের প্রথম ফল ( যেগুলোর ওজন প্রায় ৩৫০- ৪০০ গ্রাম) পার্শ্ববর্তী পাড়াগুলোর বাড়ীতে বাড়ীতে একটি করে বিনামূল্যে বিতরণ করেন। এসময় তিনি ফলটির পরিচয় ঘটান ও এর পুষ্টিগুন জানান এলাকার মানুষ ও চাষিদের কাছে। সাথে সাথে ফলটি চাষে চাষীদের উদ্বুদ্ধও করেন তিনি।”

নিয়ামতপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, নিয়ামতপুরে তিনটি বড় ড্রাগন ফলের বাগান আছে। কৃষকদের ড্রাগন চাষে আগ্রহী করতে মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। বাড়ির আঙিনা ও অনাবাদি জমিতে চাষ করে সহজে কৃষকরা লাভবান হতে পারেন।

 

 
 
স্বাধীন খবর ডটকম/আ আ
 

জনপ্রিয় সংবাদ

 

সর্বোচ্চ পঠিত সংবাদ