ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক পুলিশকে চাঁদা দিয়ে দাপটে চলছে নিষিদ্ধ বাহন
নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
রবিবার, নভেম্বর ৬, ২০২২ ৬:৪৯ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
রবিবার, নভেম্বর ৬, ২০২২ ৬:৪৯ অপরাহ্ণ

রুট পারমিট নেই। ফিটনেস নেই। অধিকাংশ চালক শিশু। রয়েছে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা। মানা হচ্ছেনা সড়ক পরিবহন ও মোটরযান আইন। তবু ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশের নাকের ডগা দিয়ে দাপটের সঙ্গে চলছে লেগুনাসহ যাত্রীবাহী বিভিন্ন নিষিদ্ধ বাহন। হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়নে কার্যকরী কোন প্রদক্ষেপ নিচ্ছেন না হাইওয়ে পুলিশ। ফলে মহাসড়কে দেখা দিচ্ছে বিশৃঙ্খলা। প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা। প্রাণ হারাচ্ছে যাত্রী ও পথচারীরা।
জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড ও শিমরাইল মোড়ে মহাসড়ক দখল করে গড়ে উঠেছে লেগুনাসহ নিষিদ্ধ যানবাহনের স্ট্যান্ড। ফিটনেস বিহীন লক্কর-ঝক্কর লেগুনা ও ব্যাটারি চালিত তিন চাকার বাহন মহাসড়কে চলছে নির্বিগ্নে। অথচ মহাসড়কে লেগুনা চলাচলে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। হাইওয়ে পুলিশ হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়নে উদাসীন। ফলে রুটপারমিট না থাকা সত্তেও চলছে এসব গাড়ি। প্রয়োজনের তাগিতে শিশু চালকদের হাতে জীবন বাজি রেখে এসব বাহনে চড়ছে যাত্রীরা। বাধা না থাকায় লেগুনা ও থ্রি-হুইলার চালকরা হয়ে পড়েছে বেপরোয়া। এতে সড়কে দেখা দিয়েছে বিশৃঙ্খলা।
অভিযোগ রয়েছে, সঙ্গবদ্ধ চাঁদাবাজ চক্র হাইওয়ে পুলিশকে ম্যানেজ করে সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড় থেকে ঢাকার যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত দেড় শতাধিক লেগুনা চালাচ্ছে। শিমরাইল এক্সপ্রেস লিমিটেড (এস,ই,এল) নামক কোম্পানির ব্যানারে গাড়িগুলো চললেও নিয়ন্ত্রন করছেন যাতাবাড়ীর পলাশ নামে একজন চাঁদাবাজ। পলাশ নিজেই সভাপতি হয়ে লেগুনা মালিক সমিতি নামে মনগড়া একটি কমিটি করে গাড়িপ্রতি দৈনিক ৫৭০ টাকা করে চাঁদা আদায় করছে। চাঁদার টাকার একটি অংশ পাচ্ছেন হাইওয়ে পুলিশ।
রফিকুল ইসলাম নামে একজন লেগুনা চালক জানায়, মহাসড়কে গাড়ি চালাতে চাঁদা দিতে হচ্ছে। গাড়ি প্রতি দৈনিক জিপি চাঁদা ৪৫০ টাকা, দিনে রাতে লাইনম্যান চাঁদা ১২০ টাকা। আগে সিদ্ধিরগঞ্জ ও যাত্রাবাড়ীতে চাঁদা নিতে হত। এখন সিদ্ধিরগঞ্জের চাঁদাও যাত্রাবাড়ীতে তোলা হয়। চাঁদা আদায়ের জন্য হাসিব ও তারেক নামে দুইজন লোক রয়েছে। তাছাড়া ষ্টিকার লাগানোর জন্য গাড়িপ্রতি মাসে ১ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। দৈনিক ৫৭০ টাকা চাঁদা, ১ হাজার টাকা মালিক জমা ও প্রায় দেড় হাজার টাকা তেল খরচ দেওয়ার পর কোনদিন শূন্য পকেটে বাসায় যেতে হয় কলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
লেগুনা মালিক জুলহাস বলেন, লেগুনা চালকরা কন্ট্রাকে গাড়ি চালায়। চাঁদা, তেল খরচ ও মালিক জমা দিয়ে যা থাকে সবই চালকদের। তবে পুলিশ গাড়ি আটক করলে ছাড়িয়ে আনার টাকা মালিকদের দিতে হয়। নিয়মিত চাঁদা দিলেও পুলিশ গাড়ি আটক কিংবা রেকার লাগালে চাঁদাবাজরা কোন সহায়তা করেনা। অথচ চাঁদা না দিলে যাত্রাবাড়ীতে গাড়ি আটকিয়ে রাখে।
শিমরাইল এক্সপ্রেস লিমিটেডের এমডি হাসানুজ্জামান পরশ বলেন, সিদ্ধিরগঞ্জে কোন চাঁদাবাজি হয়না। চাঁদা নেয়া হয় যাত্রাবাড়ীতে।
লাইনম্যান সাঈদ বলেন,চাঁদা ছাড়া কোন পরিবহন চলে না। সবাইকে ম্যানেজ করেই পরিবহন লাইন চালাতে হয়।
চাঁদা আদায়কারী হাসিব বলেন, আমি বেতনভূক্ত কর্মচারী। কিছু জানতে চাইলে পলাশ ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সমিতির সভাপতি পলাশের মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
সিদ্ধিরগঞ্জের দায়িত্বে থাকা হাইওয়ে পুলিশের টিআই (প্রশাসন) সরফুদ্দিন আর্থিক সুবিধা পাওয়ার বিষয়টি সঠিক নয় দাবি করে বলেন, মহাসড়কে লেগুনা চলাচলের বৈধতা নেই। আমরা প্রতিনিয়তই লেগুনা ও ব্যাটারি চালিত গাড়ি আটক ও রেকার করছি। এসব পরিবহন বন্ধে সর্বাত্বক চেষ্টা করা হচ্ছে।
হাইওয়ে পুলিশের নারায়ণগঞ্জ সের্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার আব্দুল কাদের জ্বিলানী বলেন, মহাসড়কে লেগুনা ও থ্রি-হুইলার চলাচল বন্ধে পুলিশ তৎপর। চাঁদার বিষয়টি আমার জানা নেই।
স্বাধীন খবর ডটকম/আ আ
