তারেক রহমানকে আ’লীগ ভয় পায় এটা বাস্তব : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
সোমবার, মার্চ ৭, ২০২২ ৪:৫৪ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
সোমবার, মার্চ ৭, ২০২২ ৪:৫৪ অপরাহ্ণ
সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
অতি অল্প সময়ের মধ্যেই তারেক রহমানের নেতৃত্বেই ‘ক্ষমতার পরিবর্তন’ আসবে বলে প্রত্যাশা করছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ সোমবার দুপুরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কারাবন্দি দিবসের এক আলোচনা সভায় তিনি এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মিলনায়তনে উত্তরাঞ্চল ছাত্র ফোরাম ও বাংলাদেশ ছাত্র ফোরামের যৌথ উদ্যোগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ১৬তম কারাবন্দি দিবস উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়। ‘সেনা সমর্থিত’ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৭ সালের ৭ মার্চ তারেক রহমানকে ঢাকা সেনানিবাসের শহীদ মইনুল সড়কের বাসা থেকে গ্রেফতার করে যৌথবাহিনী। এরপর থেকেই বিএনপি এই দিনটি কারাবন্দি দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। তারেক রহমান টানা ১৮ মাস কারাগারে থাকার পর ২০০৯ সালে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে চিকিৎসার জন্য সপরিবারে লন্ডনে যান। বর্তমানে তিনি সেখানেই রয়েছেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং গণতন্ত্র, একই সঙ্গে বাংলাদেশের সমৃদ্ধি- এই জিনিসগুলোকে সামনে নিয়ে জিয়াউর রহমান সাহেব রাজনীতি শুরু করেছিলেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সেই পতাকা হাতে তুলে নিয়েছিলেন এবং এখন সেই পতাকা তারেক রহমানের হাতে। তারেক রহমান সাহেব একজন ব্যক্তি নন। তিনি হচ্ছেন একটা রাজনীতির প্রতীক, তিনি হচ্ছেন একটি দর্শনের প্রতীক। আমরা বিশ্বাস করি শুধু নয়, আমরা এখন আস্থাশীল যে, অতি অল্প সময়ের মধ্যে তারেক রহমানের নেতৃত্বে ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রত্যক্ষ-সক্রিয় অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে ইনশাল্লাহ আমরা এই দেশকে মুক্ত করতে সক্ষম হবো। বাংলাদেশকে যদি সত্যিকার অর্থেই একটা সুখী-সমৃদ্ধ-গণতান্ত্রিক দেশে পরিণত করতে হয় তাহলে এখানে যে জিনিসটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সেটা হচ্ছে আমাদের জনগণের ঐক্য সৃষ্টি করা। সেই ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে অবশ্যই আমাদের বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে এবং আমাদের নেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে।
তিনি বলেন, এখন আর সময় ক্ষেপণ করার সময় নেই। আসুন আমরা সবাই নিজেদেরকে সংগঠিত করি, সমস্ত রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ করি, সমস্ত রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ঐক্যবদ্ধ করি। একটা জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে আমরা অবশ্যই যেন তাদেরকে পরাজিত করতে পারি সেই জন্য উদ্যোগ নেই-এই আহবান জানাচ্ছি।
মির্জা ফখরুল বলেন, তারেক রহমানকে তারা (আওয়ামী লীগ) ভয় পায়- এটা বাস্তব। কেনো ভয় পায়? তারেক রহমানের যে অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতা রয়েছে সেই সাংগঠনিক দক্ষতার কারণে তিনি অতি অল্প সময়ের মধ্যে আজকে সারা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করতে শুরু করেছেন। এটা তারা অতীতেও দেখেছেন। যখন তিনি দলের সিনিয়র যুগ্ম সচিবের দায়িত্ব নেন এবং যখন তিনি তৃণমূল পর্যায়ের সংগঠন গড়ে তোলার কাজ শুরু করেন তখন থেকে তাদের মনে হয়েছে যে, এই মানুষ যদি দেশে থাকে তাহলে তাদের কোনো অবস্থান থাকবে না। সেই কারণে তারা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যত অপপ্রচার, যত মিথ্যা মামলা একটার পর একটা দিয়ে যাচ্ছে।
এক-এগারো চক্রান্তের অংশ বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, তারেক রহমানের গ্রেফতার কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিলো না। এটা ছিলো দীর্ঘকালের সুগভীর চক্রান্ত যে, বাংলাদেশে সেই শক্তির উত্থান যেন না ঘটে যে শক্তি বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থেই একটা স্বাধীন-সার্বভৌম-গণতান্ত্রিক সমৃদ্ধ বাংলাদেশে পরিণত করতে পারে, যার স্বপ্ন আমাদেরকে দেখিয়েছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তার যে রাজনৈতিক দর্শন ছিলো বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ এই দর্শনই হচ্ছে বাংলাদেশের যারা শত্রু, বাংলাদেশেকে যারা সবসময়ে একটা নতজানু রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চায় অথবা ফেইল্ড স্টেট হিসেবে দেখতে চায় তাদের এই দর্শনই হচ্ছে বড় একটা শত্রুর মতো। জিয়াউর রহমান এই দর্শন আনার ফলে তিনি একই শত্রুতে পরিণত হয়েছিলেন এবং তাকে হত্যার মধ্য দিয়ে তারা বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ধারণাটাকেই নিশ্চিহ্ন করে দিতে চেয়েছিলো। প্রকৃতপক্ষে তারেক রহমান সাহেব গ্রেফতার, পরবর্তীতে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার গ্রেফতার এবং সেই সময়ে সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার, পরবর্তীকালে দুই বছরের চক্রান্তের মধ্য দিয়ে নির্বাচনে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিকে ক্ষমতায় নিয়ে আসা- এই সবই ছিলো চক্রান্তের অংশ। ১/১১’র যে ঘটনা হয়েছিলো সেই ঘটনা হয়েছিলো শুধু বিএনপির বিরুদ্ধে নয়, এটা ছিলো সমগ্র বাংলাদেশি জাতির বিরুদ্ধে। মূল লক্ষ্যটি ছিলো এখানে এই জাতিকে বিরাজনীতিকরণের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সম্পূর্ণভাবে ডি-পলিটিসাইজড একটা স্টেট হিসেবে তৈরি করা।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এরা (মন্ত্রীরা) উন্নয়নের কথা বলে, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির কথা বলে কিন্তু এতো মিথ্যা কথা বলে যে, মিথ্যাগুলো সত্যে পরিণত করতে চায়। কয়েকদিন আগে তারা বলেছে যে, এখানে নাকি কুঁড়ে ঘর শুধু কাব্যের মধ্যে, দারিদ্র্য নাকি খুঁজে পাওয়া যায় না বাংলাদেশে। অথচ পরিসংখ্যান বলছে, ডাটা বলছে যে, বাংলাদেশে দারিদ্র্যের পরিমাণ- এটা শুধু আমাদের কথা নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে সংস্থাগুলো আছে তাদের জরিপ বলছে যে, বাংলাদেশে দারিদ্রের পরিমাণ ২% আরো বেড়েছে। অর্থাৎ মানুষ ২% আরো গরীব হয়েছে।
তিনি বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে কাদের? অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের। তারা এতো বেশি অর্থশালী হয়েছে, তারা এতো বেশি লুট করেছে, তারা এতো বেশি ডাকাতির মধ্য দিয়ে অর্থ-সম্পদকে বিদেশে পাঠিয়ে ব্যবসা তৈরি করেছে যে, তাদের একেবারে গ্রামের ইউনিটের নেতা থেকে শুরু করে শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত তারা এখন দারিদ্র্য দেখতে পায় না। দুঃখ হয়, কষ্ট হয় যে, আমরা যারা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, আমরা যারা পরবর্তীকালে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছিলাম ১৯৯০ সালে, তারা আজকে তাদের সমস্ত অর্জনগুলোকে এই দেশ এই জাতি হারিয়ে ফেলেছে এবং সেই স্বপ্নগুলো মানুষের ছিলো, সেই আকাক্সক্ষাগুলোকে চুরমার করে দিয়েছে তারা। লক্ষ্য একটাই তারা চিরদিন ক্ষমতায় থাকবে এবং তার জন্যে তারা আজকে গণতন্ত্র বলুন, জনগণের ভোটের অধিকার বলুন সমস্তগুলোকে ধবংস করে দিয়ে এখানে একদলীয় শাসনব্যবস্থার জন্য তাদের মতো করে একটা নির্বাচন করতে চায়। সেই কারণে তাদের মতো করে ইসি গঠন করে, সার্চ কমিটি করে সব কিছু প্রতারণার মধ্য দিয়ে করতে চায়।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের দাবিগুলো খুব পরিষ্কার- গণতন্ত্রের মাতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তাঁকে মুক্তি দিতে হবে। দেশনেত্রীকে মুক্তি দেয়ার পরে এই সরকারকে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে এবং সেই নিরপেক্ষ সরকার একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের মধ্য নিয়ে যে নির্বাচন পরিচালনা করবেন সেই নির্বাচনে জনগণের একটি পার্লামেন্ট ও সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। তারা বাংলাদেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তাই এই মুহূর্তে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ করা উচিত, নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা উচিত।
বিরোধীদলকে মাঠ ধরে রাখতে হবে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘ইয়াকুবের বেটা বেকুব এই সিইসি। বিরোধীদলকে উস্কানি দিচ্ছেন যে, তোমরাও সন্ত্রাস করো’। তিনি সিইসির প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, বিরোধী দল মাঠ ধরে রাখার কে? মাঠ তো সমান থাকবে, স্বচ্ছ থাকবে, সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকার এবং তার নির্বাচন কমিশনের। কিন্তু এই লুটেরা, ডাকাত সরকারের আমলে কি মাঠ সমান থাকবে? সেটা কি আপনি জানেন না? এখন কাব্যের মধ্যে আছে কুঁড়ে ঘরের কথা গতকাল দেয়া তথ্যমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে রিজভী বলেন, এটা তো আপনি বলবেন কারণ আপনি তো বিনা ভোটের মন্ত্রী। মানুষের দরিদ্রতা নিয়ে উপহাস করছেন। আপনি তো গ্রামে যান না, হাটবাজারে যান না, রেললাইনের ধারে যান না, আপনি প্লেনে-প্লেনে উড়ে বেড়ান, দামি গাড়িতে করে বাড়ি যান। কড়াইল বস্তিতে তারা বানু কিভাবে জীবন যাপন করছে সেটি আপনার চোখে পড়ে না তথ্যমন্ত্রী? আপনি (তথ্যমন্ত্রী) মানুষের দরিদ্রতা নিয়ে উপহাস করছেন। সরকারের সমালোচনা করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, আপনি ফ্লাইওভার দেখান, আপনি উড়াল সেতু দেখান, আপনি মেট্রোরেল দেখান, এটা অতীতেও স্বৈরশাসকরা দেখিয়েছেন। এটা মিশরও দেখিয়েছে। তারপর কি দেখলাম নিরন্ন মানুষ যাদের জন্য হাসপাতাল নাই, স্কুল নাই। এইভাবে লুটপাটের রাজত্ব হয় স্বৈরশাসকদের আমলে। যেটার আমরা টোটাল প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি শেখ হাসিনার আমলে। ১/১১-এর প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বিএনপির এই নেতা বলেন, জুন মাসে শেখ হাসিনা গ্রেফতার হলেন। আমি ম্যাডামকে (খালেদা জিয়া) টেলিফোন করলাম। ম্যাডাম আমি কি স্টেটমেন্ট দিবেন? তিনি বললেন, দিতে পারো, অবশ্যই দাও। তারপরে আমি দিলাম। পরে দেখি গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, হান্নান শাহ তারাও স্টেটমেন্ট দিলেন। অথচ আওয়ামী লীগের লোকেরাও তখন স্টেটমেন্ট দেয়নি শেখ হাসিনার মুক্তির জন্য। আর শেখ হাসিনা তার প্রতিদান দিয়েছেন দেশের একজন অবিসংবাদিত নেত্রীকে মিথ্যা মামলায় কারাবন্দি করে। আজও তিনি মুক্ত নন। এখন তিনি নানাভাবে বেগম খালেদা জিয়াকে নির্যাতন করছেন। এটাই হচ্ছে পার্থক্য।
বিএনপির সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সাবেক সংসদ সদস্য জহিরউদ্দিন স্বপন, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম, ওবায়দুর রহমান চন্দন, সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন প্রমুখ।