দুবাই প্রবাসীর লাগেজের মালামাল গায়েব শাহজালাল বিমানবন্দরে
নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
মঙ্গলবার, জুলাই ১৯, ২০২২ ৫:৪৭ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
মঙ্গলবার, জুলাই ১৯, ২০২২ ৫:৪৮ অপরাহ্ণ

এম এনাম হোসেন, দুবাই
মির্জা সেলিম ১৩ বছর ধরে থাকেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে। বিয়ে করবেন বলে পরিকল্পনা অনুযায়ী ১ মাসের ছুটি নিয়ে দেশে গিয়েছেন গত ৮ জুলাই। বিয়ে উপলক্ষে বিদেশে কেনা নানান জিনিসপত্রে ভর্তি ছিল লাগেজ। কিন্তু ঢাকায় হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে সেই লাগেজ খুঁজে পাননি সেলিম। চার দিন পর লাগেজ ফিরে পেলেও প্রায় ১০ কেজি ওজনের জিনিসপত্র গায়েব।
ভুক্তভোগী মির্জা সেলিম এই প্রতিবেদককে জানান, ৮ জুলাই আমি দুবাই থেকে এয়ার এরাবিয়ার ফ্লাইটে (G9516) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসি। বিমানবন্দরের লাগেজ বেল্টে আমার লাগেজ পাইনি। সেদিন বিমানবন্দরে সন্ধ্যা পর্যন্ত ছিলাম, কিন্তু লাগেজ আর পাইনি। এয়ার এরাবিয়ার কর্মকর্তারা সেদিন আমাকে বলেছিল, লাগেজ পরেরদিন বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে।
বিয়ের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসছে কিন্তু লাগেজ না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েন সেলিম। লাগেজ পেতে তাকে ১২ জুলাই পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। তিনি বলেন, আমি এয়ার এরাবিয়ার দেওয়া মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করার জন্য চেষ্টা করেছি, কিন্তু তারা কেউ ফোন ধরেনি। ১২ জুলাই আমার মোবাইল নম্বরে কুরিয়ার সার্ভিস এসএ পরিবহন থেকে ফোন আসে, তারা তাদের অফিসে থেকে আমাকে লাগেজ সংগ্রহ করতে বলে।
রাজধানীর দনিয়া এলাকায় থাকেন প্রবাসী মির্জা সেলিম। যাত্রাবাড়ী এলাকায় এসএ পরিবহনের অফিসে গিয়ে নিজের লাগেজ নিয়ে আসলেন বাড়িতে, বাড়িতে গিয়ে দেখেন রূপার অলংকার, মেয়েদের ঘড়ি, কসমেটিকসহ প্রায় ২৫ হাজার টাকার জিনিসপত্র গায়েব। লাগেজের চেইন ভাঙ্গা।
মির্জা সেলিম বলেন, এসএ পরিবহনের অফিসে গেলে তারা বিভিন্ন কাগজে আমার স্বাক্ষর নেয়। দেখলাম আমার লাগেজ প্লাস্টিক দিয়ে র্যাপিং করা, কিন্তু আমি লাগেজ র্যাপিং করিনি। এসএ পরিবহনের কর্মীরা জানালেন, এভাবেই নাকি বিমানবন্দর থেকে লাগেজ এসেছে তাদের কাছে। লাগেজে র্যাপিং করা থাকায় তৎক্ষণাত আমি আর কোনও বিষয় খেয়াল করতে পারিনি। বাড়ি গিয়ে দেখি আমার লাগেজের চেইন ভাঙ্গা, জিনিসপত্র নেই।
ক্ষোভ প্রকাশ করে এই প্রবাসী বলেন, বিয়ে উপলক্ষে পরিবার-পরিজনের জন্য কিছু জিনিসপত্র আনলাম, সেগুলো গায়েব। এমন যদি হতো পুরো লাগেজ হারিয়েছে, তাহলে ভিন্ন কথা। লাগেজে কিছু আছে, কিছু নেই মানে কী? কেউ না কেউ খুলে জিনিসপত্র নিয়ে গেছে। আমাদের টিকিটের টাকা থেকে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা, উন্নয়নসহ নানা রকম চার্জ সরকার নেয়। এটাই কি নিরাপত্তার নমুনা। আমি প্রথম এমন ভুক্তভোগী তা নয় শত শত প্রবাসী হয়রানির শিকার ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আমি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালককে লিখিতভাবে এ বিষয়ে জানিয়েছি। আমি লিখিতভাবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি।
শুধু সেলিম নন, প্রতিনিয়ত এমন ভোগান্তিতে পড়ছেন তার মতো অনেক প্রবাসী। জানা গেছে, সম্প্রতি ব্যাগেজ লেফট-বিহাইন্ড বেড়ে যাওয়ায় অসংখ্য যাত্রীকে এ ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। সাধারণত বাজেট (লো কস্ট ক্যারিয়ার) এয়ারলাইন্সগুলোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যাগেজ লেফট-বিহাইন্ড হয়। বর্তমানে শুধু বাজেট এয়ারলাইন নয়, সবধরনের এয়ারলাইনের ক্ষেত্রে ব্যাগেজ লেফট-বিহাইন্ড বেড়েছ মাত্রাতিরিক্ত। এরমধ্যে জাজিরা এয়ারওয়েজ, সালাম এয়ার, কাতার এয়ারওয়েজ, সৌদি এরাবিয়ান এয়ারলাইন্স, ফ্লাই দুবাই, এয়ার এরাবিয়া, ওমান এয়ার, গালফ এয়ার, কুয়েত এয়ারওয়েজের ক্ষেত্রে ব্যাগেজ লেফট-বিহাইন্ড বেশি হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী এয়ারলাইন লেফট-বিহাইন্ড হওয়া লাগেজ যাত্রীর বাড়িতে কুরিয়ার করে পাঠিয়ে দিবে।
তবে অনেক যাত্রী অভিযোগ করছেন কুরিয়ার থেকে সংগ্রহ করা লাগেজে থেকে মাল চুরি হচ্ছে। এতে করে প্রবাসীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। এই ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ভাবে এভিয়েশন নিয়ম নীতি থাকলেও বাংলাদেশের প্রায় বিমানবন্দর গুলোতে এই নিয়মনীতি মানা হচ্ছেনা। যার ফলে যাত্রীদের ভোগান্তির কোন শেষ হচ্ছেনা। বিমান বন্দরে প্রবাসী যাত্রীদের সাথে এই প্ররোচনা মূলক আচরনে পুরো প্রবাসী কমিউনিটি ক্ষুদ্ধ। যদিওবা এই ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য তাদের দাবী দীর্ঘদিনের, তারপরে ও কর্তৃপক্ষের উদাসীন মনোভাবের ফলে দূর্ণীতি পরায়ণ কিছু কর্মকর্তাদের যোগসাজেশে এই ঘটনাগুলোর কোন সুরাহা হচ্ছেনা বলে প্রবাসীদের দাবী। বাংলাদেশে ভ্রমন করতে আসা বিদেশীরাও যদি এই পরিস্থিতির শিকার হয় তাতে করে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। কাজে বিমানবন্দর সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে যথারীতি ব্যবস্থা নিবেন এই প্রত্যশা প্রবাসী সহ সচেতন মহলের।
স্বাধীন খবর ডটকম/আ আ
