দেশে খুনি-যুদ্ধাপরাধীদের রাজত্ব শুরু হয়েছিল : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
শুক্রবার, মার্চ ১১, ২০২২ ৭:১৭ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
শুক্রবার, মার্চ ১১, ২০২২ ৭:১৭ অপরাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন ‘১৫ আগস্টের ঘটনায় হয়তো আমরা বেঁচে গিয়েছিলাম। কিন্তু ওরা আমাদের পাসপোর্টটা পর্যন্ত আটকে রেখেছিল। প্রবাসে রিফিউজি হিসেবে আমাদের থাকতে হয়েছে। একদিকে পরিবারের শোক, অন্যদিকে এই কঠিন পরিস্থিতিতে নিজেদের পরিচয়টা পর্যন্ত দিতে পারিনি। যে দেশে আমার বাবা-মা, ভাই-বোনকে হত্যা করা হয়েছিল, আমাদের কোনো অধিকার ছিল না বিচার চাইবার। কারণ খুনিদেরকে পুরষ্কৃত করা হয়েছিল। তাদের কোনো বিচার করা যাবে না। তাদের বাঁচাতে ইন্ডেমনিটি আইন জারি করা হয়।
অপরাধ করা স্বত্তেও তাদেরকে মুক্ত করে, পুরষ্কৃত করে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেয়া হয়েছিল। তাদেরকে রাজনীতি করার সুযোগ দেয়া হয়েছিল। জনগণের ভোট চুরি করে তাদেরকে পার্লামেন্টে বসানো হয়েছিল। যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার দেশের নাগরিককে পাশবিক অত্যাচার করে, ঘরবাড়ি লুট করে, অগ্নিসংযোগ করে, গণহত্যা চালিয়েছিল, তাদেরকে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা করা হয়েছিল। অর্থাৎ রাজত্ব শুরু হয়েছিল খুনি, যুদ্ধাপরাধীদের।’
সংযুক্ত আরব আমিরাতে সফরকালে স্থানীয় নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমরা যদি নিজেদের দেশে, আমি বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান করেছিলাম- আমাদের মাটি আছে, যে যা পারেন আপনারা ফসল ফলান। এক ইঞ্চি জমি যেন অনাবাদি না থাকে। আমি আবারও বলবো, যারা প্রবাসে আছেন তারা আপনাদের পরিবারের মানুষদের বলবেন এক ইঞ্চি জমিও যেন তারা খালি না রাখে। কিছু না কিছু যেন আবাদ করে। একটা ঝালের গাছ লাগালেও যেন লাগাই। অন্তত নিজেরটা যেন নিজে করে খেতে পারে। তাহলে বিশ্বব্যাপী যতই মন্দাবস্থা আসুক খাদ্য ঘাটতি নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের অসুবিধা হবে না।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমিরাত সফর উপলক্ষে এ আয়োজন করা হয়। শুক্রবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় আমিরাত সফরকালীন আবুধাবির আবাসস্থল থেকে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর আবাসস্থল প্রান্তে আরও উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ.কে আব্দুল মোমেন। আরব আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত মো. আবু জাফরের সঞ্চালনায় আমিরাত সফরকালে প্রধানমন্ত্রীর আবাসস্থল, আবুধাবি থিয়েটার, বাংলাদেশ কনস্যুলেট দুবাই, বাংলাদেশ প্রাইভেট স্কুল ও কলেজ রাস আল খাইমাতে একযোগে এ আয়োজনে অংশ নেন প্রবাসীরা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন রাষ্ট্রদূত মো. আবু জাফর।
প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে আবুধাবি থেকে বক্তব্য রাখেন আইয়ুব খান, দুবাই কনস্যুলেট প্রান্ত থেকে মিলন হাওলাদার ও বাংলাদেশ ইংলিশ স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী অর্থি রাণী দাস। তারা বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের দাবি ও সুযোগ-সুবিধার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহ্বান জানান।
এর আগে ভার্চুয়াল মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রাদেশিক শহর রাস আল খাইমার বাংলাদেশ ইংলিশ প্রাইভেট স্কুল অ্যান্ড কলেজে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভবনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ সময় তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার দেশে-বিদেশে বাংলা ভাষার উন্নয়নে দৃঢ় ভাবে কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়েছে। যে সমস্ত অঞ্চলে প্রবাসীরা রয়েছেন, প্রবাসে ব্যবসায়ীরাসহ পরিবার পরিজন ও সন্তানদের নিয়ে রয়েছেন সেখানে তাদের ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার সুবিধার জন্য বাংলাদেশি স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা বহুদিন ধরে প্রচেষ্টা চালাচ্ছিলাম। স্কুলগুলোর উন্নয়নের জন্য কিছু কিছু জায়গায় আমরা সহযোগিতা দিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০১৯ সালে যখন আমি আরব আমিরাতে এসেছিলাম তখনও এখানে বাংলাদেশি স্কুল চালুর ব্যাপারে আলোচনা হয়েছিল। পরবর্তীতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রী বিষয়টি আমাকে জানিয়েছিলেন স্কুলটির কিছু উন্নয়ন দরকার। স্কুলটা যেন বন্ধ না হয় তার জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া দরকার। তার জন্য আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি। এখন সেখানে নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। আজ আরব আমিরাতে উপস্থিত থেকে এরকম একটি কার্যক্রমের উদ্বোধন করতে পেরে আমি আনন্দিত।’
রাসেল খাই মাহ প্রান্তে বঙ্গবন্ধু ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়কমন্ত্রী ইমরান আহমেদ, বাংলাদেশ ইংলিশ প্রাইভেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের সভাপতি তাজ উদ্দিন, প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান, সাবেক সভাপতি পেয়ার মোহাম্মদ।
দুবাইস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট প্রান্তে অতিথি হিসেবে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, কনস্যুলেট জেনারেল বিএম জামাল হোসেন। আবুধাবি প্রান্তে ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা, পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সহধর্মিণী অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।