নজরুল জন্মজয়ন্তীতে নিয়ম ভঙ্গ করায় বাঙালিসহ কয়েকটি সংগঠন ব্লাকলিস্ট
নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
সোমবার, মে ৩০, ২০২২ ১১:৫৮ পূর্বাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
সোমবার, মে ৩০, ২০২২ ১১:৫৮ পূর্বাহ্ণ

আনিসুর রহমান ফারুক
ময়মনসিংহের ত্রিশালে অনুষ্ঠিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৩ তম জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে নিয়ম ভঙ্গ করায় ব্লাকলিস্ট করার সিদ্ধান্ত হয়েছে ‘বাঙালি সাংস্কৃতিক সংগঠন’ ছাড়াও কয়েকটি ভূঁইফোড় সংগঠনকে। এই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রহিমুজ্জামান খান রোকনের বিষয়ে নারী কেলেঙ্কারীরও বহু অভিযোগ রয়েছে। নারীদের সাথে ঘোরাফেরা, রেস্টুরেন্টে খাওয়া ও আড্ডা এবং রাত কাটানোর প্রস্তাব দেওয়ার মতো ঘটনাও আছে। সূত্র মতে, ৩ দিনের অনুষ্ঠানে নিয়ম ভঙ্গ করায় সংগঠনগুলোকে ব্লাকলিস্ট করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকাসহ নানান কারণে সতর্ক করা হয়েছে ডজনখানেক সংগঠনকে। সাংস্কৃতিক উপ-কমিটির আহবায়ক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোঃ সফিকুল ইসলাম সোমবার বিকালে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, বিজ্ঞ বিচারকদের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পাওয়ার পর অভিযুক্তদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নজরুল সংগীত নয় এমন গান, মডার্ণ ও রিমিক্স করা নজরুল সংগীতের সাথে নাচ, একই শিল্পী একাধিক সংগঠনের হয়ে গান ও নাচ করা এবং অনুষ্ঠান তালিকায় গানের স্থলে নাচ ও নাচের স্থলে গান করার মতো ঘটনা ঘটেছে। বিচারক প্যানেলের বিজ্ঞ বিচারকরা সরাসরি বিষয়গুলো দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেন। সাংস্কৃতিক পর্বে এ ধরণের ঘটনার কারণে নজরুল ভক্তরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সূত্র মতে, ৩ দিনের অনুষ্ঠানে ময়মনসিংহ, ত্রিশাল, ভালুকা এবং ফুলবাড়িয়া থেকে ৮০ টি সংগঠন অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও অন্তত: ১৫ টি সংগঠন অনুপস্থিত ছিলো। প্রস্তুতি পর্যায়ে অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার জন্য কয়েকটি ভূঁইফোড় সংগঠন দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছে অব্যাহত তদবির চালায়।
সরেজমিন জানা যায়, নজরুল জন্মজয়ন্তীর সমাপনী দিন শুক্রবার রাতে বাঙালি সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পীদের নজরুল সংগীত পরিবেশন করার কথা ছিলো। রাত ১০ টার একটু আগে ঘোষণা মঞ্চ থেকে বলা হয় সংগঠনটি নৃত্য পরিবেশন করবে। মাইশা আনজুম প্রমী ‘প্রিয় যাই যাই বলো না’ এবং তানিয়া জামান আঁচল ‘দূর দ্বীপ বাসিনী’ গানের সাথে নাচ পরিবেশন করে। ‘দূর দ্বীপ বাসিনী’ গানটি মডার্ণ হওয়ায় বিচারকদের নজরে পড়ে। এর পর ‘বাগিচায় বুলবুলি তুই’ রিমিক্স গানের সাথে শেষ নাচ করে মাইশা আনজুম প্রমী। বিচারকদের মধ্যে আবারও শুরু হয় কানাঘুষা। নাচ শেষ হওয়ার পরই ঘোষণা মঞ্চ থেকে কড়া ভাষায় ধিক্কার জানিয়ে সংগঠনটিকে ব্লাকলিস্ট করার কথা জানানো হয়। ঘোষক সারওয়ার জাহান দৃঢ় কন্ঠে আগামীতে সংগঠনটিকে নজরুল জন্মজয়ন্তীতে সুযোগ না দেওয়ার ঘোষণা দেন। একই ধরণের অভিযোগের প্রেক্ষিতে অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া কয়েকটি সংগঠনকে ব্লাকলিস্ট করা হবে। অন্যদিকে যারা তদবির করে সংগঠনের নাম তালিকাভূক্ত করার পরও দল নিয়ে উপস্থিত থাকেন নি তাদের বিষয়েও ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৯ সালের শেষ দিকে প্রতিষ্ঠিত ‘বাঙালি সাংস্কৃতিক সংগঠন’ লোক দেখানো ৩-৪ টি কর্মসূচি পালন করে। এর পরই রহিমুজ্জামান খান রোকন নিজেকে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে জাহির করতে থাকেন। তার নারী কেলেঙ্কারী টের পেয়ে সংগঠনের অনেক কর্মকর্তা ও সদস্য মুখ ফিরিয়ে নেন। দ্বন্দ্ব শুরু হয় সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের পুরুষ ও নারীদের সাথে। পেশায় আর্টিস্ট রোকন বলতে গেলে এখন একা। সূত্র মতে, একাধিক নারী কেলেঙ্কারীর নায়ক ধূর্ত রোকন নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে তালিকাভূক্তির জন্য ১৬ থেকে ১৮ মে পর্যন্ত জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে এবং সাংস্কৃতিক উপ-কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কাছে ধর্ণা দেন। এ সময় তার সাথে পরিচয় হয় সুন্দরী এক সিনিয়র সংগঠকের সাথে। ধূর্ত রোকন একদিনের মধ্যেই ‘ম’ অদ্যাক্ষরের ওই নারীর সাথে ঘনিষ্ঠ হন। নারী ম্যানেজ করার মন্ত্র দিয়ে সুন্দরীকে পুরোপুরি আয়ত্বে নেন। ফেসবুক মেসেঞ্জারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলার পাশাপাশি রেস্টুরেন্টে খাওয়া এবং আড্ডা দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। রোকনের সংগঠনকে প্রাধান্য দেওয়ার জন্য ওই নারী নিজের সংগঠনের অনুষ্ঠান বন্ধ রাখেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ত্রিশাল যাওয়ার জন্য ওই নারী শুক্রবার বিকাল ৪ টায় রোকনের মহারাজা রোডের দোকানে যান। সেখানে এবং পাটগুদাম ব্রিজ মোড়ে রোকনের বাসার কাছে দীর্ঘ দেড় ঘণ্টা আড্ডা দিয়ে পৌণে ৬ টায় ত্রিশাল যাওয়ার জন্য বাসে উঠেন। বাসে উঠার আগে গ্রুপ ছবি ছাড়াও রোকন ওই নারীর একক ছবি তোলেন। ত্রিশালে অনুষ্ঠান শুরুর আগেও তারা এক সাথে ছবি তোলেন এবং ঘোরাফেরা করেন। ময়মনসিংহ থেকে ত্রিশাল দীর্ঘ ৫ ঘণ্টা চলে মাখামাখি। সুন্দরী নারীর সাথে থাকা ‘আ’ অদ্যাক্ষরের আরেক নারী তাদের মাখামাখিতে সরাসরি সহযোগিতা করেন। ওই নারীর স্বামী খবর পেয়ে ত্রিশাল উপস্থিত হলে তাদের অন্তরঙ্গতা থেমে যায়। ‘আ’ অদ্যাক্ষরের নারী ‘ম’ অদ্যাক্ষরের নারীর স্বামীকে অনুষ্ঠানস্থলে দেখার পরই রোকনকে সাবধান করে তাদের কাছ থেকে দূরে থাকতে বলেন। পরবর্তী দেড় ঘণ্টা হয়েছেও ঠিক তাই। পরে ধূর্ত রোকন এবং সুন্দরী নারী সাংস্কৃতিক টিমের পৃথক বাসে ময়মনসিংহ ফিরেন। সূত্র মতে, সুন্দরী নারীর স্বামী অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হওয়ার কারণে অনুষ্ঠানের বাকি অংশ না দেখে এবং মিশন বাস্তবায়ন করা ছাড়াই তিনি ত্রিশাল ছাড়েন। তবে তিনি রোকনের সংগঠনের ত্রুটিপূর্ণ ফিগারের মডার্ণ এবং রিমিক্স নাচ উপভোগ করেন।
স্বাধীন খবর ডটকম/আ আ
