নতুন জোট নয়, যুগপৎ আন্দোলন মুখ্য ইস্যু
নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
রবিবার, জুন ৫, ২০২২ ২:৩৯ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
রবিবার, জুন ৫, ২০২২ ২:৩৯ অপরাহ্ণ

৪ দাবিতেই রাজপথে সোচ্চার থাকবে বিরোধী দল; আন্দোলন সফল হলে নির্বাচনী জোট; নির্বাচনে বিজয়ী হলে জাতীয় সরকার
ডেস্ক নিউজ
সরকারবিরোধী ‘বৃহত্তর আন্দোলন’ গড়ে তুলতে ডান-বামসহ বিভিন্ন মত ও পথের রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বিএনপি যে সংলাপ শুরু করেছে, এর মধ্য দিয়ে নতুন নামে কোনো জোট হচ্ছে না। বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, এই সংলাপের লক্ষ্য হচ্ছে যুগপৎ আন্দোলন, অর্থাৎ প্রতিটি রাজনৈতিক দল ‘সুনির্দিষ্ট’ দাবি আদায়ে আলাদা আলাদাভাবে কর্মসূচি পালন করবে, রাজপথে সোচ্চার থাকবে। এ ক্ষেত্রে কর্মসূচির ধরন ঠিক করা হবে অভ্যন্তরীণ আলোচনার ভিত্তিতে।
বিএনপির চিন্তা অনুযায়ী, চলমান সংলাপ শেষ হলে দাবিগুলো সুনির্দিষ্ট করে যুগপৎ আন্দোলনের একটি রূপরেখা তুলে ধরা হবে। যার ভিত্তিতে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজপথে গড়াবে সর্বাত্মক আন্দোলন।
বিএনপি বর্তমানে ২০ দলীয় একটি জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছে। ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ নামে একটি জোট গঠন করেছিল বিএনপি এবং এই ফ্রন্টের ব্যানারেই তারা নির্বাচনে অংশ নেয়। বর্তমান এই জোট নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকলেও জোটভুক্ত দলগুলোর সাথে বিএনপির যোগাযোগ রয়েছে।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে বিগত দুটি সংসদ নির্বাচনেই বিএনপি আন্দোলন করেছে । দাবি পূরণ না হওয়ায় ২০১৪ সালে দলটি কঠোর কর্মসূচি দিয়ে নির্বাচন বর্জন করে। আর ২০১৮ সালে শক্ত কোনো কর্মসূচির বদলে আলোচনার টেবিলে ছিল বিএনপি। নির্বাচনে অংশ নিয়ে নিদারুণ মন্দ ফলাফলের মুখোমুখি হয় তারা।
২০২৩ সালের শেষ দিকে অথবা ২০২৪ এর শুরুতে হতে পারে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন। বিএনপি সেই নির্বাচন ঘিরে দীর্ঘ সময় ধরেই রাজনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে আসছে। দলটি ফের সরকারবিরোধী বৃহত্তর একটি আন্দোলন গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে। যে পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে তারা ডান-বামসহ বিভিন্ন মতাদর্শের রাজনৈতিক দলের সাথে আনুষ্ঠানিক সংলাপ শুরু করেছে। গত ২৪ মে নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে এই সংলাপ শুরু হয়। এরপর ২৭ মে ২০ দলীয় জোটের শরিক লেবার পার্টি, ৩১ মে গণসংহতি আন্দোলন, ১ জুন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও ২ জুন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সঙ্গে সংলাপ করে বিএনপি। সরকারবিরোধী সব দলের সাথেই বিএনপি পৃথক পৃথকভাবে এই সংলাপ করবে বলে জানা গেছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ প্রসঙ্গে বলেছেন, সব রাজনৈতিক দলগুলোকে সাথে নিয়ে আমরা ঐক্য গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছি। আশা করছি এই প্রক্রিয়া শিগগিরই সফলতায় রূপ নেবে।
তিনি বলেন, বাম-ডান যেটাই হোক, দেশের সব রাজনৈতিক দলকে একখানে নিয়ে এসে যুগপৎ গণ আন্দোলন গড়ে তুলে যে ভয়াবহ দানব সরকার আমাদের বুকের ওপর চেপে বসে আছে, তার থেকে আমরা জাতিকে মুক্ত করতে চাই।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, প্রধানত ৪ দফা দাবি বাস্তবায়নে এই যুগপৎ আন্দোলনের চিন্তা করা হচ্ছে। এক. সরকারের পদত্যাগ, দুই. নির্বাচনকালীন নিরেপক্ষ সরকার, তিন. নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এবং চার. বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি। এর সাথে প্রতিশ্রুতিমূলক কয়েক দফা যুক্ত হয়ে যুগপৎ আন্দোলন মাঠে গড়াতে পারে। প্রতিশ্রুতিমূলক দফাগুলোর মধ্যে শাসনকাঠামোতে গুণগত পরিবর্তনের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে।
বিএনপি নেতাদের সাথে আলোচনায় জানা গেছে, যুগপৎ আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপরেখা ঘোষণার আগ পর্যন্ত বিএনপি সরকারের কোনো ইস্যুর ফাঁদে পা না দিয়ে সতর্কভাবে এগোতে চায়। এ ক্ষেত্রে আন্দোলনের পক্ষে থাকা দলগুলোর মধ্যেও যাতে কোনো ‘নেতিবাচক বার্তা’ না যায় সে দিকেও লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। বৃহৎত্তর স্বার্থে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ছাড় দিয়ে হলেও দলটি আগামীর আন্দোলনে সফল হতে চায়।
বিএনপির তরফ থেকে জানা গেছে, যুগপৎ আন্দোলন সফল হলে নির্বাচনী জোট হবে। আন্দোলনে থাকা দলগুলোকে প্রয়োজনীয় আসন ছাড় দেয়া হবে। নির্বাচনে বিজয়ী হলে গঠন করা হবে ‘জাতীয় সরকার’। যে সরকারে সবদলের প্রতিনিধিত্ব থাকবে।
জানা গেছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের সাথে পরামর্শক্রমে আন্দোলন, নির্বাচন ও নির্বাচনোত্তর দলের কলাকৌশল ঠিক করছেন। তবে এই মুহূর্তে আন্দোলনকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আন্দোলনমুখী একটি নতুন সংগঠন গড়ে তোলার কাজও প্রায় শেষ করে এনেছে দলটি । রাজধানী ঢাকায় আন্দোলন সফল করতে ঢেলে সাজানো হচ্ছে সব পর্যায়ের কমিটি। কমিটিতে অগ্রাধিকার পাচ্ছে তরুণ নেতৃত্ব।
স্বাধীন খবর ডটকম/আ আ
