নারায়ণগঞ্জে বিদ্যুৎ গিলে খাচ্ছে ৫০ হাজার অটোরিকশা
নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
বুধবার, জুলাই ২০, ২০২২ ৬:২৫ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
বুধবার, জুলাই ২০, ২০২২ ৬:২৫ অপরাহ্ণ

এম আর কামাল, নারায়ণগঞ্জ
নারায়ণগঞ্জ জেলা শহরগুলোতে বিদ্যুৎ চুরির অন্যতম প্রধান কারণ নিষিদ্ধ ইজিবাইক বা অটোরিকশা বন্ধ করা উচিত বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সরকার নানা সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা নিলেও এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহবান জানিয়েছেন তারা।
জেলা প্রশাসন বা ট্রাফিক বিভাগের কাছে সংখ্যার কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও ধারণা করা হয় পুরো নারায়ণগঞ্জ জেলার ৫টি উপজেলায় বর্তমানে কমপক্ষে ৫০ হাজারের বেশি অটোরিকশা চলাচল করছে। বিশেষ করে ব্যস্ত নগরী নারায়ণগঞ্জ, শিল্পাঞ্চল ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ ও বন্দর এলাকায় এর সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ৩০ হাজারের মতো।
জানা গেছে, ৮০ শতাংশ গ্যারেজেই নিষিদ্ধ এসব অটো বাইকের ব্যাটারি চার্জ করতে ব্যবহার করা হচ্ছে অবৈধ বিদ্যুৎ লাইন। অনেক স্থানে চলছে মিটার টেম্পারিং এর মতো ঘটনা। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নতুন করে ইজিবাইক আমদানি বন্ধ ও পুরনোগুলো পর্যায়ক্রমে তুলে নেওয়ার কথা থাকলেও তা কার্যকর হয়নি গত কয়েক বছরেও।
এমনকি মহাসড়কগুলোতে এই যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। স্থানীয় সরকার দলীয় নেতা, নামধারী সাংবাদিক, ডিপিডিসি, পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ, জেলা ট্রাফিক বিভাগ ও হাই ওয়ে পুলিশকে নিয়মিত মাসোহারা দিয়েই রাস্তায় চলছে অটোরিকশা।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, সাধারণত একটি ইজিবাইকের জন্য চার থেকে পাঁচটি ১২ ভোল্টের ব্যাটারি প্রয়োজন। আর প্রতি সেট ব্যাটারি চার্জের জন্য গড়ে ৯০০ থেকে ১১০০ ওয়াট হিসেবে পাঁচ থেকে ছয় ইউনিট (দিনে বা রাতে কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা) বিদ্যুৎ খরচ হয়। সে হিসেবে জেলার প্রায় ৫০ হাজার ইজি বাইক বা ব্যাটারিচালিত রিকশা চার্জের জন্য জাতীয় গ্রিড থেকে প্রতিদিন অন্তত ৫৫ মেগাওয়াট এবং মাসে ১৬৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হওয়ার কথা। কিন্তু ৮০ ভাগ গ্যারেজে চুরি করে ও লুকিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে এসব ব্যাটারি রিচার্জ করায় সরকার প্রায় ১৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
তবে ভাড়া অন্যান্য যানের চেয়ে তুলনামূলক কম হওয়ার কারণে মূল শহরে এবং তার বাইরে এখন যাত্রীদের প্রধান বাহনে পরিণত হয়েছে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও রিকশা। আর এগুলোর বেশিরভাগ চালকই সামান্য অর্থের বিনিময়ে অবৈধভাবে বৈদ্যুতিক লাইন থেকে গাড়িগুলোতে চার্জ করিয়ে নিচ্ছেন। তারা এই গাড়িগুলো যে গ্যারেজে রাখছেন সে জায়গা থেকেই রাতভর একটি গাড়ির শুধুমাত্র চার্জের জন্য গ্যারেজ মালিককে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা করে দিচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৮ সালে নারায়ণগঞ্জ শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন স্থানে অটোরিকশার গ্যারেজগুলোতে অভিযান চালিয়ে অর্ধশতাধিক অটোরিকশার গ্যারেজের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নের পাশাপাশি কোটি টাকার উপরে জরিমানাও করেছে ডিপিডিসি ও টাস্কফোর্স। কিন্তু করোনা কালের পর এই অভিযান থেমে গেছে।
বেশ কয়েকটি এলাকার অটোরিকশা গ্যারেজে ঘুরে জানা গেছে, এসব গ্যারেজে ব্যাটারি চার্জ দিতে গিয়ে অনেক বিদ্যুৎ বিল দিতে হয়। যে কারণে গ্যারেজ মালিকরা খরচ কমিয়ে বাড়তি টাকা আয়ের জন্য অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে থাকে। তবে এসব অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ নেয়ার পেছনে রয়েছেন সরকার দলীয় প্রভাবশালী নেতা, ডিপিডিসি ও পল্লী বিদ্যুতের একদল অসাধু কর্মকর্তা।
এ ব্যাপারে ডিপিডিসি ফতুল্লা জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাইন উদ্দিন জানান, আমরা প্রায় সময়ই অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছি। তবে শেষ কবে কোথায় অভিযান হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অভিযান একটি চলমান প্রক্রিয়া, এটি চলবেই।
এ ব্যাপারে বন্দর পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম মিজানুর রহমান জানান, আমরা প্রায় সময়ই অভিযান চালাচ্ছি, জরিমানা করছি। তবে শেষ কবে অভিযান হয়েছিল- এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারেননি তিনি।
তবে সাধারণ মানুষের মতে, যেখানে বিদ্যুতের ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে সেখানে এই যানগুলোতে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার বিদ্যুতের অপচয় ছাড়া আর কিছুই না। বিদ্যুৎ বিভাগের উচিত স্পেশাল টাস্কফোর্সের মাধ্যমে এসব বিদ্যুৎ চুরি বন্ধ করা অথবা সরকারের বিশেষ প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে অটোরিকশার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা।
স্বাধীন খবর ডটকম/আ আ
