পলাতকরা আড়াল থেকে দিচ্ছে হুমকিও এ কারণে ভয়ে আছে মারুফের পরিবার
নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
বৃহস্পতিবার, মার্চ ৩, ২০২২ ৬:১২ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
বৃহস্পতিবার, মার্চ ৩, ২০২২ ৬:১২ অপরাহ্ণ

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
টগবগে তরুণ ছিল মারুফ আহমদ। নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছিলো। এলাকার মানুষের কাছেও সে ছিল শান্ত স্বভাবের। নির্বাচনী সহিংসতাকালে প্রভাবশালীরা তাকে কুপিয়েছিলো। অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছিলো মারুফের ওপর। গুরুতর আহত হওয়ার ৫ দিন পর মারা যায় মারুফ। ঘটনার এক মাস হতে চললো। আইনি লড়াইয়ে নেমেছে পরিবার।
এরমধ্যে ১৪ জন আসামি কারান্তরীণ হয়েছে। এরপরও স্বস্তি নেই পরিবারে। প্রভাবশালী হওয়ার কারণে নানা ভাবে চোখ রাঙাচ্ছে আসামিদের পরিবার। পলাতকরা আড়াল থেকে দিচ্ছে হুমকিও। এ কারণে ভয়ে আছে মারুফের পরিবার। মারুফের বাড়ি সিলেট শহরতলীর কামালবাজারের গুপ্তের গাঁওয়ে। পিতা ছোয়াব আলী। ৩১শে জানুয়ারির কামালবাজার ইউপি নির্বাচনে ৬নং ওয়ার্ড থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন। ইউপি নির্বাচন নিয়ে টান টান উত্তেজনা ছিল এলাকায়। গোষ্ঠীভিত্তিক দ্বন্দ্ব দেখা দেয় এলাকায়। নির্বাচনের দিন ভোটের ফলাফলে ছোয়াব আলী ফুটবল প্রতীকে ১১২ ভোট পান। তার প্রতিদ্বন্দ্বী আমির আলী তালা প্রতীকে সমান সংখ্যক ভোট পান। গুপ্তের গাঁওয়ের বাসিন্দা মাহমুদুল হাসান রাজু ছিলেন ইউপি সদস্য প্রার্থী। তিনি আপেল প্রতীকে ভোট পান ১১০টি। কিন্তু ভোটের ফলাফল ঘোষণার পর রাজু ফলাফল মেনে নিতে পারেননি। রাজু হচ্ছে অপর সদস্য প্রার্থী ছোয়াব আলীর প্রতিবেশী। ফলে ভোট গণনা শেষে তিনি স্থানীয় হাফিজিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে গোলযোগের চেষ্টা করেন। কিন্তু প্রশাসনের কড়াকড়ির কারণে পারেননি। পরবর্তীতে ভোটকেন্দ্র থেকে বাড়ি আসার পথে ইউপি সদস্য প্রার্থী রাজু ও তার সহযোগীরা ইউপি সদস্য প্রার্থী ছোয়াব আলীর লোকজনের ওপর হামলা চালায়। এ সময় রাজুর পক্ষের লোকজন ছোয়াব আলীর ছেলে মারুফ আহমদকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে এবং ইট দিয়ে বুকে আঘাত করে গুরুতর আহত করে। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হন। ঘটনার পর গুরুতর আহত অবস্থায় মারুফ আহমদকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এতে তার অবস্থা গুরুতর হওয়ায় সিলেটের পার্কভিউ ও ইবনে সিনা হাসপাতালের আইসিইউতে রাখা হয়। ২রা ফেব্রুয়ারি এয়ার এম্বুলেন্সযোগে মুমূর্ষু অবস্থায় মারুফকে ঢাকার নিউ লাইফ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে ৫ই ফেব্রুয়ারি মারা যায় মারুফ। ১লা ফেব্রুয়ারি মারুফের পিতা দক্ষিণ সুরমা থানায় ১৮ জনকে আসামি করে মামলা করেন। পুলিশ এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করলেও মারুফ মারা যাওয়ার আগেই দু’জন জামিনে বেরিয়ে যায়। প্রধান আসামি কারান্তরীণ রয়েছে। এদিকে- মারুফ মারা যাওয়ার পর আসামিরা বাড়ি থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলো। তারা আড়ালে থেকে হুমকি অব্যাহত রাখে। এই অবস্থায় পুলিশি অভিযান জোরদার করা হলে গত ২৮ শে ফেব্রুয়ারি ১৩ আসামি এসে আদালতে আত্মসমর্পণ করলে সবার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়ে দেন আদালত। কারান্তরীণ হওয়া আসামিরা হচ্ছে- মারুফ হত্যা মামলার আসামি আব্দুর রশিদের পুত্র জহুর আলী, আব্দুস সোবহানের পুত্র নুরুল আমীন, আমির আলীর পুত্র কাইয়ুম আহমদ ও শরিফ উদ্দিন, জহুর আলীর পুত্র জয়নাল আহমদ, জায়েদ আহমদ, জসিম উদ্দিন ও জাবেদ আহমদ প্রকৃত নাম জাকির হোসেন, মোহাম্মদ আলীর পুত্র নজরুল ইসলাম, আকবর আলীর পুত্র সোহাগ আহমদ, সেলিম আহমদের পুত্র শামীম আহমদ, আমির আলীর পুত্র বাবুল আহমদ ও মোহাম্মদ আলীর পুত্র জিকরুল ইসলাম। বাদীপক্ষের আইনজীবী এডভোকেট তাপস ভট্টাচার্য জানিয়েছেন- আদালত ১৩ আসামিকে কারাগারে পাঠিয়েছেন। ঘটনাটি মর্মান্তিক। শুনানি শেষে আদালত সকল আসামিকে জেলে পাঠান। তারা বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। এদিকে- এখনো আরও ৪ জন আসামি পালিয়ে বেড়াচ্ছে। মামলার বাদী ও নিহত মারুফের পিতা ছোয়াব আলী জানিয়েছেন- মারুফ খুনের ঘটনার পর থেকে তাদের পরিবারে শোকের ছায়া বইছে। এখনো পরিবারের কেউ স্বাভাবিক হতে পারেননি। আসামিদের মধ্যে সবাই এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। তিনি ঘটনার ন্যায়বিচার দাবি করেন। বলেন- নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এমন ঘটনা কোনো মানুষ ঘটাতে পারেন না। আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে আমরা শান্তি পাবো। এলাকায় স্বস্তি ফিরে আসবে। নিহত মারুফ আহমদের চাচা ও কবি নোয়াব আলী জানিয়েছে- আসামি পক্ষের লোকজন খুনের ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে নানাভাবে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। তারা আড়ালে থেকে চোখ রাঙানি ও হুমকি অব্যাহত রেখেছে। এ কারণে এখন পরিবারের সদস্যরা ভয়ে আছেন। তিনি জানান- পলাতক থাকা আসামিরা গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত স্বস্তি ফিরবে না। এজন্য তিনি পলাতকদের গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর দাবি জানান। একইসঙ্গে দ্রুততম সময়ে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে তিনি দ্রুত বিচার আইনে মামলাটির রায় ঘোষণার দাবি করেন।
স্বাধীন খবর ডটকম/আ আ
