ফিরিয়ে দাও বাংলাদেশ : স্বপ্ন পূরণে তারেক রহমান
নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
শুক্রবার, মে ২৭, ২০২২ ৯:৩৭ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
শুক্রবার, মে ২৭, ২০২২ ৯:৩৭ অপরাহ্ণ

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্ম রাজনৈতিক পরিবারে আজ থেকে ৫৭ বছর আগে।পিতা দলের প্রতিষ্ঠাতা ও সফল রাষ্ট্রনায়ক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম। মা হলেন বিএনপি‘র চেয়ারপার্সন ওতিন বারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তাই জন্ম সূত্রেই তিনি বিরল ভাগ্যের অধিকারী।
যেদিন থেকে বুঝতে শিখেছেন, সেদিন থেকেই প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক কর্মকণ্ড কিভাবেপরিচালিত হয়েছে, তা তিনি প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পেয়েছেন। বহু প্রতিভার অধিকারী পিতা জিয়াউর রহমান কিভাবে চড়াই–উতরাই মোকাবেলা করে দেশকে সামগ্রিক ভাবে বিপর্যস্ত একটি অবস্থা থেকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। তাও তিনিপ্রত্যক্ষ করেছেন।
মা খালেদা জিয়া হলেন তাঁর দ্বিতীয় গুরুপূর্ণ রাজনৈতিক শিক্ষা গুরু। রাষ্ট্রনায়ক জিয়াউর রহমানের শাহাদাত বরণের মাত্র ১০মাসের মধ্যেই স্বৈরাচারী এরশাদ নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট কে সরিয়ে দীর্ঘ সময়ের জন্য রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করেন। তখন বিএনপি‘রখুব দুঃসময়। হাল ধরলেন বেগম খালেদা জিয়া।
তারেক রহমান প্রত্যক্ষ করেছেন, রাজনীতিতে নবাগত তাঁর জন্মদাত্রী মা কিভাবে নানা ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা করে বাংলাদেশজাতীয়তাবাদী দলকে সুসংগঠিত করেছেন। রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন নির্যাতনের বিরুদ্ধে জনগণের পক্ষের শক্তি তথা রাজনৈতিক দলহিসেবে কিভাবে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে হয় এবং অপশক্তির বিরুদ্ধে গঠনমূলক ও আপোষহীন লড়াই করে কিভাবেবিজয় ছিনিয়ে আনতে হয়, তাও প্রত্যক্ষ করেছেন। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে বেগম খালেদা জিয়া বিজয়ী হবার পাশাপাশিআপোষহীন নেত্রী হিসাবে নন্দিত হয়েছিলেন কি কারণে, তাঁর সেটিও প্রত্যক্ষ করার সৌভাগ্য হয়েছে। প্রত্যক্ষ করেছেন, শহীদজিয়ার সবুজ বিপ্লবের কর্মমুখী রাষ্ট্র দর্শন কিভাবে বেগম খালেদা জিয়ার হাত ধরে সাফল্যের প্রত্যাশিত লক্ষ্য অর্জনে সক্ষমহয়েছে।
বিরল ভাগ্যের অধিকারী তারেক রহমানের ভাগ্য বিড়ম্বনার ইতিহাসও লোমহর্ষক। তাঁর জীবন যেন “জন্ম থেকেই জ্বলছে“! স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সন্তান হিসেবে সীমাহীন অনিশ্চয়তার মধ্যে শৈশব কেটেছে। ঐতিহাসিকস্বাধীনতার ঘোষণার পর মেজর জিয়া তারেক রহমান সহ পরিবারের অন্য সদস্যদের চট্টগ্রামে অরক্ষিত অবস্থায় রেখে স্বাধীনতাযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। শুরুতে কিছুদিন মা খালেদা জিয়ার চাচার বাসায় আত্মগোপনে থাকার পর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছদ্মবেশেনৌপথে নারায়ণগঞ্জ হয়ে ঢাকায় আসেন এবং এক আত্মীয়ের বাসায় গিয়ে আত্মগোপন করেন। কিন্তু ২ জুলাই পাকিস্তনিসেনাদের হাতে ধরা পড়েন এবং সেদিনই তাদের গ্রেফতার করে চোখ বেঁধে ক্যান্টনমেন্ট আর্মি অফিসার্স মেসে নিয়ে যাওয়া হয়।
মা খালেদা জিয়া চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বন্দী অবস্থায় দুই শিশু সন্তান তারেক রহমান ও আরাফাতরহমানকে নিয়ে ছোট্ট একটি কামরায় দেশ স্বাধীন হওয়ার আশায় নির্ঘুম প্রহর গুনতে থাকেন। শ্বাসরুদ্ধকর এই মৃত্যু আতঙ্কেরঅবসান ঘটে ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে লাখো মা–বোনের ইজ্জত ও শহীদদের রক্তের বিনিময়ে যেদিন বাংলাদেশ স্বাধীনহয়েছিল। তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান এবং মা খালেদা জিয়ার আত্মগোপন ও বন্দিদশা যে নিদারুন মানসিক যন্ত্রণা ওআতঙ্কে দিন অতিবাহিত হয়েছিল, এর মূল্য প্রত্যক্ষ রণাঙ্গনে অংশ নেয়া মুক্তিযোদ্ধার তুলনায় কোন অংশে কম নয়।
রক্তার্জিত স্বাধীন দেশে জনগন আজ পরাধীন। বর্তমানে যা ঘটছে তা সবার জানা। গুম–খুন, নারী–শিশু নির্যাতন, অপহরণ ওহত্যা ইত্যাদি অনাচার ও আতঙ্ক মানুষের নিত্যসঙ্গী। গণতন্ত্র নেই। আইনের শাসন নেই। জীবনের নিরাপত্তা নেই। এখনজিজ্ঞাসা হল, তারেক রহমান নেতৃতের পারিবারিক ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বর্তমানে যে দুঃশাসন চলছে তা থেকে দেশকেউদ্ধার করে গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে কতটা প্রস্তুত আছেন?
এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য পেছন ফিরে দেখা দরকার। বাংলাদেশের জনগণ বহুবার নানা ভাবে দুঃসময় অতিক্রম করেছেন।কিন্তু বর্তমান অবস্থা জনভোগান্তির বিবেচনায় অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় নজিরবিহীন, অধিকতর উদ্বেগজনক ওঅনিশ্চয়তায় পরিপূর্ণ। গণতন্ত্র উদ্ধারে অন্যতম নির্ভরযোগ্য আপোষহীন নেত্রী খালেদা জিয়া ভিত্তিহীন মামলায় অসুস্থঅবস্থায় কারাভোগ করছেন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে তিলে তিলে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছেন। সঙ্গত:কারণে আপসহীননেএী খালেদা জিয়ার কারামুক্তি ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সংগ্রাম রচনার নেতৃত্বের দায়িত্ব বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলেরভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ওপরই বর্তায়। এই গুরুদায়িত্ব পালনে ইতোমধ্যে তাঁর রাজনীতিক অভিজ্ঞতা ও গণতন্ত্রপূনরুদ্ধার–আন্দলনের কর্মপন্থা নির্ধারনে প্রাজ্ঞতা দেশবাসীর দৃষ্টি গোছর হয়েছে। তাঁর একান্তিক চেষ্টায় দলের সাংগঠনিককর্মকান্ডে গতিশীলতা এসেছে। নেতৃত্বের এই সাফলের পেছনে রয়েছে রাজনীতির সাথে তাঁর দীর্ঘ দিনের সম্পৃক্ততা।
আনুষ্ঠানিক ভাবে তারেক রহমানের রাজনৈতিক পথচলা শুরু হয় ১৯৮৯ সালে পৈএিক নিবাস বগুড়া জেলায় দলের প্রাথমিকসদস্য পদ গ্রহনের মাধমে। তৃণমূল সম্মেলন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের চাওয়া পাওয়ার সাথে পরিচিত হন, যা ছিলতার জন্য মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতা। এই অভিজ্ঞতা তাঁর পরিবার থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতার ঝুলিকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।সাংগঠনিক ভাবে দলকে শক্তিশালী করার কাজে সেই অভিজ্ঞতাকে তিনি কাজে লাগিয়েছেন। অতঃপর এই অঙ্গণে তাঁর কর্মকান্ডছিলো নিরন্তর প্রবাহমান। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশব্যাপী প্রচারনা–কার্যক্রম পরিচালনার পাঠগ্রহন এবং২০০১ সালের নির্বাচনে আধুনিক ও কার্যকর প্রচারনা কৌশল প্রনয়ণে কেন্দ্রিয় ভূমিকা পালনের মাধ্যেমে সবার দৃষ্টি আকর্ষনকরেন এবং বিএনপি’র অমীত সম্ভাবনাময় নেতা হিসেবে তাঁর অভ্যুদয় ঘটে।
২০০১ সালে নির্বাচিত হন দলের সিনিয়র যুগ্ন মহাসচিব হিসেবে। ২০০৯ সালে দলের কাউন্সিলের মাধ্যমে সিনিয়র ভাইসচেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন। অল্প সময়ের মধ্যেই তৃনমূল পর্যায়ে ব্যাপক গণসংযোগ ও যুব সমাজকে রাজনীতির প্রশিক্ষণদিয়ে নেতা–কর্মী ও সমর্থকসহ দেশবাসীর নিকট জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। সাংগঠনিক দক্ষতাতাঁকে দলের ভিতরে ও দেশবাসীর নিকটঅধিকতর গ্রহণ যোগ্য করে তোলে। পরবর্তিতে রাষ্ট্রীয় জুলুমের শিকার কারাবন্ধী দেশনেএী বেগম খালেদা জিয়ার স্থলে ফেব্রুয়ারী২০১৮ সালে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করেন।
সমাজ পরিবর্তনের সংগ্রামে রয়েছে অনেক চড়াই–উত্রাই। কখনও সংগ্রাম সফলতার মুখ দেখে, আবার কখনও বা সংগ্রামেরনেতৃত্ব দিতে গিয়ে নেতাকে অপশক্তির রোষানলে পড়তে হয়। কৈশোরের অনুরুপ তারেক রহমানের রাজনৈতিক অঙ্গনে পথ চলাসরল রৈখিক হয়নি। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি তারিখে দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আড়ালে যে সেনা সরকার এসেছিল তাজরুরী অবস্থা জারি করে বিরাজনীতি করণের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়। বিশেষ করে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে সকল পর্যায়েরনেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে যৌথ বাহিনী এবং টাস্ক ফোর্সের নামে হামলা–মামলা, জুলুম ও নির্যাতন চালায়।
দেশনেত্রী কে গ্রেফতার করে কারাগারে নিক্ষেপ করে। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, এই নির্যাতন ও জুলুমের শিকার নেতা–কর্মীদেরমধ্যে তারেক রহমানের ওপর নেমে আসা নির্যাতনের মাত্রা ও ধরন ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। ৭ মার্চ ২০০৭ তারিখে গ্রেফতারের পরতাঁর ওপর নেমে আসে পৈশাচিক নির্যাতন। এই আক্রমণ তার প্রাণ কেড়ে নেওয়ার জন্যই করা হয়েছিল। তিনি ভাগ্যক্রমে এবংদেশবাসীর দোয়ায় বেঁচে গেছেন। ৭ মার্চ ২০০৭ থেকে ৩ সেপ্টেম্বর ২০০৮ পর্যন্ত তিনি কারারুদ্ধ ছিলেন। ১১ সেপ্টেম্বর ২০০৮তারিখে তিনি চিকিৎসার জন্য বিলেতে গমন করেন। এটি তার জন্য একদিক থেকে যেমন নির্বাসনের যন্ত্রণা ভোগের সামিল, অন্যদিক থেকে দু:সময়ের মুখোমুখি হয়ে তাঁর নিজের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিকে আরো দৃঢ় করার একটি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়া।রাজনৈতিক জীবনের এই আঁকা–বাঁকা পথ চলায় তিনি যে জীবনমুখী অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন তা তার বর্তমান পথ চলারক্ষেত্রে পাথেয় হিসাবে ভূমিকা রাখছে। ভবিষ্যতে দেশের দায়িত্ব পালন করার সময় তাঁর এই অভিজ্ঞতার সুবাদে সূচিত হতে পারেবাংলাদেশে সুস্থ রাজনীতির গতিধারা।
পৃথিবীর স্বনামধন্য রাজনীতিক গণের জীবন ইতিহাস পাঠ করলে দেখা যায়, তাদের অনেকেরই রাষ্ট্র পরিচালনায় সফল হবারপেছনে রয়েছে অনেক সুখ–দুঃখের অভিজ্ঞতার ও চড়াই–উত্রাই পার হবার করুন কাহিনী। সুখ–দুঃখের এই মিশ্র অভিজ্ঞতা গুলোতাঁদের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিকে আরো জোরালো করেছে। তারেক রহমানের রয়েছে নির্যাতনের দুঃসহ যন্ত্রণা ভোগ করারঅভিজ্ঞতা। রয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাসে সফলতম রাষ্ট্রনায়ক পিতা জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎ বরণের করুণ কাহিনী প্রত্যক্ষকরার অভিজ্ঞতা। আরো রয়েছে তার মা খালেদা জিয়ার ৪০ বছর যাবত বসবাস করা নিজ বাসস্থান থেকে বিতাড়িত হবার করুণঅভিজ্ঞতা। প্রতিনিয়ত নেতা–কর্মীদের উপর ঘটে যাওয়া অসংখ্য নিপীড়ন নির্যাতনের কাহিনীতো রয়েছেই। এই অভিজ্ঞতা গুলোতারেক রহমানকে করে তুলেছে এক সর্বংসহা রাজনীতিক হিসেবে। তাঁর মধ্যে এমন এক বোধ তৈরি হয়েছে যা তাঁকে বাংলাদেশেররাজনীতির জন্য অপরিহার্য করে তুলেছে।
সুতরাং বলা যায়, যে অভিজ্ঞতা গুলো একজন মানুষকে ব্যক্তি, রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনের অন্তর্নিহিত মর্মার্থ উপলব্ধিতেসাহায্য করে, তারেক রহমান সেই অভিজ্ঞতার আলোকে প্রায় অর্ধশত বছরের বেশী সময় ধরে রাজনীতির পঙ্কিল পথে নিজেকেসামলে নিয়ে এগিয়ে চলেছেন। বাংলাদেশে গণতন্ত্র পূনরুদ্ধার–আন্দলনের কর্মপন্থা নির্ধারনে এর চাইতে বেশি অভিজ্ঞতারপ্রায়োজন আছে কি? বোধ করি নেই। এখন প্রয়োজন হলো, এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সেই বাংলাদেশ বিনির্মাণে সচেষ্টহওয়ার স্বপ্ন নিয়ে এদেশ রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হয়েছিল, যার সূচনা করেছিলেন তাঁরই পিতা শহীদ রাষ্ট্রপতিজিয়াউর রহমান ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চে চট্টগ্রামের কালুর ঘাট বেতার কেন্দ্রে থেকে মহান স্বাধীনতার ঘোষণা ও পরবর্তিতে দেশেবহুদলীয় গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ প্রদানের মাধ্যমে।
অভিজ্ঞতার পাশাপাশি তারেক রহমানের রাজনৈতিক প্রাজ্ঞতাও প্রশংসার দাবিদার। দায়িত্ব গ্রাহণের পর জিয়া পরিবারেররাজনৈতিক ভাবাদর্শ চর্চায় তিনি ক্রমাগত সাফল্যের পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন। আজকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার অনেক বক্তব্য আমাদের কানে পৌঁছায় কিন্তু হৃদয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেনা। ৭ নভেম্বর জাতীয়বিপ্লব ও সংহতি দিবস উদযাপন উপলক্ষে সম্প্রতি লন্ডনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তারেক রহমান দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারেরবিষয়ে হৃদয়স্পর্শী যে বক্তব্যটি দিয়েছেন তা দল–মত নির্বিশেষে সবার অন্তঃকরণে হতাশার মাঝে আশার আলো ছড়িয়েছে।
তিনি বলেন, “আমি দেশে অবস্থিত নতুন প্রজন্মের ভাইবোনদের প্রতি আহ্বান জানাতে চাই– যেভাবে তোমরা নিরাপদ সড়কআন্দোলন সফল করেছো, একই ভাবে ভোটাধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনকেও সফল করেবাংলাদেশকে নিরাপদ করতে পারো“। তিনি আরো বলেন,” গত ১০–১২ বছর কোনো নির্বাচনে নতুন কিংবা পুরাতন কোনপ্রজন্মই ভোট দিতে পারেনি। তাই বিএনপি’র প্রতিজ্ঞা হোক – আপনার ভোট আপনি দিবেন, যাকে ইচ্ছা তাকে দিবেন“। তিনিবক্তব্য শেষ করেন এই বলে যে, “আমার হাতকে শক্তিশালী করুন, যাতে আমি আপনাদের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতেপারি – Take Back Bangladesh”। দেশবাসীর প্রতি তাঁর এই নিবেদন স্মরণ করিয়ে দেয় এভেলিন বিয়াত্রি চেহল–এর “ফ্রেন্ডঅফ ভলতেয়ার” গ্রন্থে উল্লেখিত ফরাসি দার্শনিক ভলতেয়ারের স্বাধীন ভাবে মত প্রকাশ বিষয়ক সেই অমর বাণীর কথা। যাতেবলা হয়েছে, “ÒI disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say” (Hall, Evelyn Beatrice ,1907, The Friends of Voltaire, G. P. Putnam’s Sons)। জিয়া পরিবারের দ্বিতীয় প্রজন্মের নেতা তারেকরহমানের এই বক্তব্য বাংলাদেশের দুঃসময়ে জিয়া পরিবারের ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনেরই ধারাবাহিকতা। বর্তমান দূঃশাসন, নিপীড়ন ও গণতন্ত্রহীনতা থেকে দেশকে গণতন্ত্রমুখী করার তাঁর এই উচ্চারিত প্রতিজ্ঞা জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা, একদলীয় শাসন ব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দেশকে ফিরিয়ে আনা এবং এরশাদের স্বৈরশাসন থেকে দেশকেরক্ষা করার জন্য গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করার ক্ষেত্রে বেগম খালেদা জিয়ার আপোষহীন সংগ্রামের কথাও স্মরণ করিয়েদেয়।
২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যখন আইএসআইএল (ISIL) এর বিরুদ্ধে ‘War onTerror` প্রতিজ্ঞা পুনর্ব্যক্তকরেন, তখন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ নিয়েছিল মিশর, সৌদি আরব এবং পাকিস্তান। এ ধরনের একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে মন্তব্য করতেগিয়ে তারেক রহমান বলেন, “রাজনীতি ধর্ম’ দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে কিন্তুু রাজনীতির কাঠামো (Framework) ধর্ম ভিত্তিকনা হওয়াই বাঞ্চনীয় ”(Hasan, M., ‘Tarique Rahman and Liberal Politics in Bangladesh’ Daily Star, Mar 8, 2015)। এই বক্তবে জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উদারনীতিক রাষ্ট্র দর্শন সম্পর্কে তারেক রহমানের বোঝাপড়া ও উপস্থাপনেজিয়াউর রহমানের ভাবাদর্শের সুস্পষ্ট প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়। এতে তাঁর রাজনৈতিক বিচক্ষণতা স্পষ্ট হয়ে উঠে।
তারেক রহমানের রাজনৈতিক নেতৃত্বের গুণাবলীর অন্যতম আরেকটি দিক হলো রাজনৈতিক শিষ্টাচার। তিনি সারা দেশব্যাপীতৃণমূল পর্যায়ে সম্মেলনে অংশ গ্রহণের এক পর্যায়ে টুঙ্গি পাড়ায় অবস্থিত শেখ মুজিবর রহমানের মাজার জিয়ারত করেন এবংজাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করেন। এই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গী বহুদলীয় গণতন্ত্রের চর্চার ক্ষেত্রে কেবলমাত্রসহায়কই নয় বরং আবশ্যক। তারেক রহমান পরমত সহিষ্ণুতা ও গণতন্ত্রের চর্চায় কতোটা আগ্রহী এই শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদনের মাধ্যমেতিনি তাঁর প্রমাণ রেখেছেন।
গণতন্ত্রের পথ হারা বাংলাদেশ তারেক রহমানের অর্ধ শতাধিক বছরের মিশ্র অভিজ্ঞতা, রাজনৈতিক প্রাজ্ঞতা ও শিষ্টাচার চর্চারওপর ভর করে গণতন্ত্র পূনরুদ্ধারের স্বপ্নপূরণে সফল হবে, তাঁর ৫৭ তম শুভ জন্মবার্ষিকীতে দেশবাসীর পক্ষ থেকে রইল এইপ্রত্যাশা ও নিরন্তর শুভকামনা।
লেখক: ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান, অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
স্বাধীন খবর ডটকম/আ আ
