বর্তমান ইসির অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না: মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
রবিবার, জুলাই ১৭, ২০২২ ১০:৪৯ পূর্বাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
রবিবার, জুলাই ১৭, ২০২২ ১০:৪৯ পূর্বাহ্ণ
সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রবিবার সকালে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে নির্বাচন কমিশনের ধারাবাহিক সংলাপ শুরুর পর দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘‘দেশের মানুষ চায় না যে, এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচন হোক বা এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হোক। সেই কারণেই আমরা এই কমিশনের কোনো সংলাপই বলেন বা তাদের কোনো আলোচনা বলেন বা ইভিএম বলেন, আমরা কোনো কমেন্টই করছি না।”
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, আমরা বিশ্বাস করি না যে, এই নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে। সরকার যদি পরিবর্তন না হয়, নিরপেক্ষ সরকার যদি না আসে এদেশে কোনো নির্বাচন হবে না।”
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘২০১৪ ও ২০১৮ সালে নির্বাচনের দায় বর্তমান নির্বাচন কমিশন নেবে না, তারা আগামীতে সুষ্ঠু নির্বাচন করবে’ প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের এরকম বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ লাভ নেই তো ভাই উনারা যতই কথা বলুক। প্রশ্নটা হচ্ছে যে, নির্বাচনকালীন সরকার। এটাই মূল প্রশ্ন। পুরো জায়গাটা ওখানে।”
তিনি আরও বলেন, ‘সেই সরকার যদি ওরা থাকে এবং শেখ হাসিনা যদি প্রধানমন্ত্রী থাকেন তাহলে কোনো মতেই সেই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। এটা আমরা দেখেছি গতবার, তার আগে দেখেছি।’
‘ড়্রাইভিং সিটে সরকারই’ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘নিরপেক্ষ সরকারের বিষয়ে আওয়ামী লীগ তো আলোচনা করার সুযোগই রাখে নাই। তারা তো সরকারে। ড্রাইভিং সিটে স্ট্যায়ারিং তাদের হাতে। পুরোটাই তাকেই (প্রধানমন্ত্রী) করতে হবে। দেশে যখন এই বিষয়ে একটা রাজনৈতিক বড় সংকট আছে। রাজনৈতিক দলগুলোর বেশির ভাগই বলছে যে, আমরা দলীয় সরকারের অধিনে নির্বাচনে যেতে চাই না, আমরা একটা নিরপেক্ষ সরকার চাই।”
তিনি আরও বলেন, ‘‘তিনি (আওয়ামী লীগের প্রধান) তো উদ্যোগ নিচ্ছেন না। বরং তিনি পরিস্কার বলে দিচ্ছেন যে, না ওইভাবে নির্বাচন হবে। তাহলে আপনি সুযোগ রাখছেন কোথায়? স্পেস রাখছেন কোথায়? আপনি পলিটিক্যাল পার্টিগুলোকে স্পেস দিচ্ছেন কোথায়? কোনো মিনিমাম ডেমোক্রেটিক দিচ্ছেন দিচ্ছে না। মিটিং করতে গেলেই এবং কি মিলাদ পড়তে গেলেও বাধা দিচ্ছেন পুলিশ দিয়ে। গতকালও মুন্সিগঞ্জে আমাদের একটা দোয়া মাহফিল করতে দেয়নি পুলিশ। এই সমস্ত ভন্ডামির মানে হয় না। এটা তো হিপোক্রেসি।”
‘আমরা আপনাদেরকে আশা জাগাতে চাই এদেশের মানুষ অবশ্যই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করবে’ এই আশাবাদের কথাও বলেন বিএনপি মহাসচিব।
নড়াইলের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা মনে করি, সাম্প্রদায়িকতা কোনো মতেই এদেশে কাম্য না এবং এগুলো কখনোই কোনো ভালো বিষয় নিয়ে আসে না এবং এটা অন্যায়।”
তিনি বলেন, ‘সবাইকে অনুরোধ করব যে, এমন কোনো কথা না বলা বা স্ট্যাটাস না দেয়া যাতে আপনার অন্য সম্প্রদায়ের লোকেদের ধর্মের অনুভূতিতে আঘাত করে।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘‘আমরা মনে করি যে, ইট ইজ এ টোটাল ফিলিউর অব দ্যা গভার্মেন্ট। দেশে এই যে একটা সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করছে এটা সম্পূর্ণ এই সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি হয়েছে। আপনারা নিশ্চয় দেখেছেন, রামুর ঘটনা দেখেছেন, নাসিরাবাদের (ব্রাক্ষনবাড়ীয়া) ঘটনা দেখেছেন, অন্যান্য জায়গায় দেখেছেন সবসময়ই সাম্প্রদায়িকতার ঘটনা, বাড়ি-ঘর পুঁড়ে দেয়া- এই ঘটনাগুলো দেখেছেন।”
শ্রীলংকার চিত্র তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আওয়ামী লীগের চরিত্রগত একটা ব্যাপার আছে। সেটা হচ্ছে দুর্ণীতি। তারা যখনই ক্ষমতায় আসে তখন চরম দুর্নীতিতে লিপ্ত হয়ে যায়। আজকে গোটা দেশের চিত্র যেটা দেখছেন, শুধুমাত্র দুর্নীতি। শ্রীলংকার মতো দুর্নীতি বাংলাদেশেও এমন একটা জায়গায় চলে গেছে- যে জায়গায়টায় নো রিটার্ণ হয়ে গেছে।”
তিনি আরও বলেন, ‘‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত তিনি খুব সুন্দর উত্তর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে, আধুনিক বিশ্বের এটা হচ্ছে একটা নিয়মিত রুটিন ব্যাপার, সৌজন্যবোধ। সমস্ত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমরা কথা বলি, নট দেট বিএনপির সঙ্গে বলি, আমরা সব দলের সঙ্গে কথা বলি।”
‘‘এটা আজকে নয় তো, বহুদিন ধরে হয়ে আসছে এটা। আওয়ামী এই বিষয়ে সবচেয়ে বেশি পারঙ্গম। তারা যতরকমের মিথ্যা কথা বলে যা কিছু করেছে, তারা ফলস চিঠিও আনিয়েছিলো ইউনাইটেড নেশন থেকে। তবে আমরা খুব পরিস্কার করে বলেছি যে, আমরা বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করি, আমরা বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থ বিষয় নিয়ে কথা বলি। তার বাইরে তো আমরা কথা বলি না।”
সম্প্রতি জাতিসংঘের ঢাকার আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্র চার্লস হোয়াইটলি বিএনপি মহাসচিবের সাথে সাক্ষাত করেন আলাদা আলাদাভাবে। এ নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা নানারকম বক্তব্য রাখেন।
সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময়ে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি উপস্থিত ছিলেন।