বাড়ছেই শিশুখাদ্যের দাম
নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
শুক্রবার, মে ২৭, ২০২২ ৭:২৪ পূর্বাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
শুক্রবার, মে ২৭, ২০২২ ৭:২৪ পূর্বাহ্ণ

দেশের বাজারে বিদ্যমান ভোগ্যপণ্যের চড়া দামে রীতিমতো অসহায় সাধারণ মানুষ। এর মধ্যেই অস্থির হয়ে উঠছে শিশুখাদ্যের দাম। রমজানের শুরুতে একদফা দাম বৃদ্ধির পর বাজারে ফের বেড়েছে আমদানিকৃত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিশেষ করে তিন বছরের কম বয়সি শিশুদের গুঁড়া দুধের দাম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানি কমাসহ সরবরাহ সংকট ও চলমান মুদ্রাবাজার পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে শিশুখাদ্যে। এদিকে, আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে দুধের দাম বাড়তে পারে- এমন আশঙ্কায় বাজারে বেশকিছু ব্র্যান্ডের গুঁড়া দুধের মজুত প্রবণতা ও তীব্র সরবরাহ সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে নির্দিষ্ট কিছু ব্র্যান্ডের দুধের জন্য দোকানে দোকানে ঘুরতে দেখা গেছে অভিভাবকদের। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাজারগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, তিন বছরের নিচের শিশুদের বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ডের গুঁড়া দুধের সরবরাহ সংকটসহ ১৫০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। এতে এক মাসের ব্যবধানে প্রতি ৪০০ গ্রামে বিভিন্ন গুঁড়া দুধে গড়ে ১০০ এবং দুই মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে প্রায় ১৫০-২০০ টাকা পর্যন্ত। ক্রেতারা জানান, গত মাসে প্রায় সব ধরনের শিশুখাদ্যের দাম ৫০-১০০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। এক মাস না যেতেই বাজেট ও আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির অজুহাতে ফের ৬০-১০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়াও চাহিদা রয়েছে- এমন কিছু ব্র্যান্ডের সরবরাহ সংকটে সন্তানের জন্য দুধ কিনতে না পেরে রীতিমতো দিশেহারা হয়ে পড়ছেন অনেক অভিভাবক। এদিকে অনেক ক্ষেত্রেই শিশুদের অভিভাবকদের নির্দিষ্ট কিছু ব্র্যান্ডের গুঁড়া দুধ খাওয়ার পরামর্শ দেন ডাক্তাররা। মান ও উপাদানের বৈচিত্র্যের কারণে সব ব্র্যান্ডের গুঁড়া দুধ শিশুরা খেতে পারে না। এতে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। কিন্তু বিশেষ ব্র্যান্ডের এসব দুধের তীব্র সংকটসহ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। জানা গেছে, যেসব শিশু বুকের দুধ পায় না এবং বয়সও দুই বছরের কম, তাদের জন্য গুঁড়া দুধই একমাত্র খাবার। তার দেড় বছরের সন্তানের মাসে অন্তত দুই কেজি গুঁড়া দুধ প্রয়োজন হয়। যার বর্তমান দাম প্রায় সাড়ে চার হাজার টাকার বেশি। অথচ মার্চ মাসেও দুই কেজি গুঁড়া দুধের দাম ছিল সাড়ে তিন হাজার টাকা। মিরপুরের আরেকজন ক্রেতা বলেন, এক মাস আগে ল্যাকটোজেনের ১৮০০ গ্রামের কৌটা দুই হাজার ৪০০ টাকায় কিনলেও এখন তা ২৫০ টাকা বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এ ছাড়াও দুই মাসের ব্যবধানে এই ব্র্যান্ডের দুধের দাম বেড়েছে প্রায় ৩৫০ টাকা। রাজধানীর বিভিন্ন দোকান ও ফার্মেসির বিক্রেতারা জানান, গত এক মাসের বেশি সময় ধরেই বাজারে নির্দিষ্ট কিছু বয়সের শিশুদের আমদানিকৃত বেশকিছু ব্র্যান্ডের গুঁড়া দুধের সংকট রয়েছে। ঈদের আগে সরবরাহ কিছুটা স্বাভাবিক হলেও গত সপ্তাহ থেকে আবার সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে, নান, ল্যাকটোজেন, বায়োমিল, বেবিকেয়ারসহ কয়েকটি ব্র্যান্ডের দুধের দাম বেড়েছে। এদিন রাজধানীর বিভিন্ন দোকানে বায়োমিলের ৪০০ গ্রামের প্যাকেটজাত দুধ বিক্রি হয়েছে ৬৫০ টাকা দরে, যা এক মাসের ব্যবধানে প্রায় ৮০ টাকা এবং দুই মাসের ব্যবধানে প্রায় ১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। নান ১, নান ২ ও নান ৩-এর ৪০০ গ্রামের প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ৯২০ টাকা, যা এক মাস আগেও বিক্রি হয়েছে ৮৫০ এবং দুই মাস আগে ৭৯০ টাকা। এ ছাড়াও দুই বছর বয়সি নান ২-এর সংকট দেখা গেছে মিরপুর এলাকায়। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, চাহিদা বেশি থাকায় পাইকারিতে বাড়তি দামের কারণে এই নান ২-এর সরবরাহ কম। তবে শ্যামলী এলাকায় কয়েকটি দোকানে বিক্রি হলেও বেশি দাম নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়াও নিডো মিল্কের ১৮০০ গ্রামের টিনের কৌটা এদিন বিক্রি হয়েছে ৩২৫০ টাকা দরে, যা এক মাস আগেও বিক্রি হয়েছে ২৮০০ টাকা এবং দুই মাস আগে বিক্রি হয়েছে ২৪০০ টাকা দরে। এসব দুধের আমদানিকারকরা বলছেন, বেশিরভাগ গুঁড়া দুধই চীন থেকে আমদানি করা হয় বা চীন হয়ে আসে, কিন্তু গত এপ্রিলের শুরুতে চীনে হঠাৎ লকডাউন ঘোষণায় পণ্যবাহী জাহাজ না আসায় দাম বেড়েছিল। এবার আমদানি ব্যয় বৃদ্ধিতে, মুদ্রাবাজারের অস্থিরতায় এক নতুন এলসি খোলার পরিমাণ কমায় দাম কিছুটা বেড়েছে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, আমদানি হ্রাস ও বাজেটে পণ্যের দাম বৃদ্ধির আশায় বাজারে খুচরা ব্যবসায়ীদের মধ্যে মজুতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। শ্যামলীর কেয়ার ফার্মেসির ম্যানেজার জসিম জানান, গত দুই মাসে প্রায় সব ধরনের আমদানিকৃত গুঁড়া দুধ কেজিতে গড়ে ২০০ টাকা বেড়েছে। এ ছাড়াও নানের মতো গুঁড়া দুধের ব্যাপক চাহিদা সত্ত্বেও আমদানিকারকরা সরবরাহ করছে না। যার ফলে আমদানিকারক ছাড়াও পরিবেশকরা মজুতসহ খুচরা পর্যায়ে বাড়তি দামে বিক্রি করছেন। এদিকে শিশুখাদ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সরকারের কাছে সহজশর্তে ঋণ চেয়েছিলেন আমদানিকারকরা। পরিস্থিতি বিবেচনায় গত মাসে শিশুখাদ্য আমদানিতে ৫ শতাংশ মার্জিনে ঋণপত্র খোলার অনুমতি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। আমদানিকারকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১০০ কোটি টাকা ঋণ দিতে রাজিও হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ফুডস্টাফ ইম্পোটার্স অ্যান্ড সাপস্নায়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফিসা) তথ্য মতে, বর্তমানে প্রতি মাসে দেশে শিশুখাদ্যের চাহিদা প্রায় দেড় হাজার টন। যার ৮০ শতাংশই আমদানি-নির্ভর।
স্বাধীন খবর ডটকম/আ আ
