• আজ ভোর ৫:৩১, মঙ্গলবার, ১৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১২ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
  • shadinkhobor24@gmail.com
  • ঢাকা, বাংলাদেশ

বিয়ানীবাজারে এখন নানা প্রশ্নের মুখোমুখি নাহিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ: বৃহস্পতিবার, জুন ১৬, ২০২২ ৬:৩৫ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ: বৃহস্পতিবার, জুন ১৬, ২০২২ ৬:৩৫ অপরাহ্ণ

 

ডেস্ক নিউজ

নুরুল ইসলাম নাহিদ। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। নিজ শহর
বিয়ানীবাজারে এখন নানা প্রশ্নের মুখোমুখি তিনি। বুধবার শেষ হয়েছে পৌর নির্বাচন। নৌকার প্রার্থী হেরেছেন বিদ্রোহীর কাছে। এরপর থেকে তিনি আলোচনায়। কেন হারলো নৌকার প্রার্থী- এ নিয়েও চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। একটা সময় মনে করা হতো এলাকায় নাহিদের বিকল্প নেই। হবেও না।

কিন্তু সময়ে পাল্টেছে দৃশ্যপট। অনেক নেতাই আছেন লাইমলাইটে। ১২ বছর ধরে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সরওয়ার হোসেন। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খানের বাড়িও ওখানে। পাশের উপজেলা গোলাপগঞ্জে বাড়ি বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়া সিনিয়র নেতা ও সাবেক সচিব ইনাম আহমদ চৌধুরীর। সব মিলিয়ে এ আসনে সরকার দলের রাজনীতির মাঠে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছেন অনেকেই। এবারের পৌর নির্বাচন নিয়ে জল্পনার অন্ত নেই। আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক মেয়র আব্দুস শুক্কুর। সাবেক মন্ত্রী বলয়ের নেতা। সম্পর্কও ভালো। তেমন বিতর্কও নেই তাকে নিয়ে। এরপরও আব্দুস শুক্কুর জয়ী হতে পারলেন না। ভোটাররা জয়ী করলো বিদ্রোহী ফারুকুল ইসলামকে।
আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ নেতাই ভেতরে ভেতরে ছিলেন ফারুকুলের পক্ষে। আমেরিকা প্রবাসী এ আওয়ামী লীগ নেতা এক সময় বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজে ছাত্রলীগের রাজনীতি করতেন। ওই কলেজের ছাত্র সংসদে জিএস নির্বাচিত হয়েছিলেন। দীর্ঘদিন ছিলেন দেশের বাইরে। এরপরও তার পক্ষেই জনগণ দিলেন রায়। বিদ্রোহী ছিলেন আরও দু’জনও। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন- আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদের নিজের কেন্দ্র ছিল পিএইচজি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। সেই কেন্দ্রেও নৌকার পরাজয় হয়েছে। সেখানে বিদ্রোহী ফারুকুল প্রায় দ্বিগুণ ভোট পান। এর আগে উপজেলা নির্বাচনেও একই ঘটনা ঘটেছিল।

নৌকা সুবিধা করতে পারেনি নুরুল ইসলাম নাহিদের বাড়ির পাশের কেন্দ্রে। এবারের পৌরসভা নির্বাচনের আগে দাবি উঠেছিল প্রার্থী বদলানোর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা মেনে নেয়া হয়নি। রানিং মেয়রই পেলেন নৌকার মনোনয়ন। তবে- আলোচিত হচ্ছে উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কাশেম পল্লবের অবস্থান। সব নির্বাচনেই মাঠে তিনি নৌকার বিরোধী থাকলেও এবারই প্রথমবার ছিলেন পক্ষে। তিনি নিজেও নির্বাচন করেছেন বিদ্রোহী হয়ে। এ কারণে এবারের নির্বাচনে তার ভূমিকা নিয়েও ভোটের মাঠে নানা আলোচনা। তবুও জয় পেলেন না নৌকার প্রার্থী। সুপাতলা ভোটকেন্দ্র হচ্ছে উপজেলা চেয়ারম্যানের নিজের কেন্দ্র। ওই কেন্দ্রের ভোটেও নৌকা জয়লাভ করতে পারেনি। ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে- পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডে নৌকার প্রার্থী ৪র্থ, ২নং ওয়ার্ডে ৩য়, ৩নং ওয়ার্ডে ২য়, ৪নং ওয়ার্ডে ২য়, ৫নং ওয়ার্ডে ৩য়, ৬নং ওয়ার্ডে ৩য়, ৭নং ওয়ার্ডে ২য়, ৮নং ওয়ার্ডে ৪র্থ ও ৯নং ওয়ার্ডে ৩য় সর্বোচ্চ ভোট পায়। এরমধ্যে ২, ৩ ও ৪নং ওয়ার্ড নৌকার প্রার্থী শুক্কুরের নিজ এলাকা। ৫নং ওয়ার্ড এমপি নাহিদের নিজ ভোটকেন্দ্র।

প্রতিটি ওয়ার্ডে নৌকার এমন শোচনীয় পরাজয়ে তোলপাড় চলছে। এ পৌরসভার নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা মো. আব্দুস শুক্কুুর স্থানীয় এমপি’র খুব ঘনিষ্ঠ। মূলত: এমপি নাহিদের পরামর্শে ২০১৭ সালে শুকুর লন্ডন থেকে ফিরে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে মেয়র নির্বাচিত হন। এরপর স্থানীয় রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার ও নাহিদ বলয় ভারি করতে তৎপরতা শুরু করেন তিনি। উপজেলা আওয়ামী লীগের শেষ কাউন্সিলে তিনি যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। অবশ্য এর আগেও নাহিদের প্রভাবে শুক্কুর পৌর আওয়ামী লীগের দাপুটে সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এমপি নাহিদ-শুক্কুর বলয় এখানকার রাজনীতিতে বেশ শক্তিশালী। যদিও এই বলয়ের গোপন বিরোধীরাও বিয়ানীবাজারে মজবুত অবস্থানে। তারা নাহিদকে দুর্বল করতে শুক্কুরকে পরাজিত করার ভিন্ন মিশনে নামে। এই মিশনে জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতাও জড়িত। স্থানীয় রাজনীতিতে প্রভাবশালী অনেকেই এমন ষড়যন্ত্রে ইন্ধন দিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে।

আগামীতে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নিয়ে জাতীয় নির্বাচন করতে আগ্রহী একাধিক প্রার্থীও নৌকার পরাজয়ে তৎপর ছিলেন। তারা প্রকাশ্যে নৌকার সেøাগানে রাজপথ কাপালেও ভোটারদের দিয়েছেন অন্যমন্ত্র। গত ইউপি নির্বাচনের ন্যায় এরা এখানকার আওয়ামী লীগকে দুর্বল করতে এবং এমপি নাহিদকে বিতর্কিত করতে অন্ধকার গলি বেছে নেয় বলে মন্তব্য করেন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবাদ আহমদ। এছাড়াও পৌরসভার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আরও ৩ প্রার্থী বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচন করেন। তারাও ভোটের মাঠে প্রভাব ফেলতে পেরেছেন বলে মনে করেন মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাবেক সহ-সভাপতি মজির উদ্দিন আনসার। তিনি বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থীরা এবং বিরোধী জোটের বৃহৎ অংশের ভোট নৌকার পরাজয়ের বড় কারণ।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) উপজেলা শাখার সভাপতি এডভোকেট মো. আমান উদ্দিন জানান- নির্বাচনে সরকারের নানা কর্মকাণ্ডের প্রভাব পড়েছে। তাছাড়া বিরোধী মতের কোন প্রার্থী না থাকায় ভোটাররা নৌকার বিকল্প প্রার্থী বেছে নিয়েছেন। এদিকে- এবারের পৌর নির্বাচনে প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা অতি-উৎসাহী মনোভাব দেখিয়ে নৌকা ডুবাতে সহায়তা করেছেন। তারা নৌকার এজেন্ট, কর্মী, ভোটারদের কেন্দ্রের পাশেও ঘেঁষতে দেননি। প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা নৌকার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা অপর প্রার্থীদের কৌশলে সহায়তা করেছেন। কসবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট সকাল থেকে কেন্দ্রে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে রাখেন। তিনি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের কেন্দ্রের ভিতরে প্রচারণা চালানোর সুযোগ দিলেও নৌকার কর্মীরা কাছে ভিড়তে পারেনি। এ রকম পরিস্থিতি ছিল অন্তত: ৬টি কেন্দ্রে। নিরপেক্ষতার অজুহাতে প্রশাসন ছিল আওয়ামী লীগের বিপক্ষে- এমন অভিযোগ করেছেন ছাত্রলীগ নেতা এসি পল্লব। বিয়ানীবাজার পৌরসভায় নৌকার প্রার্থী মো. আব্দুস শুক্কুুর অভিযোগ করেছেন- কালো টাকার প্রভাব খাটিয়ে অপর প্রার্থীরা ভোটারদের প্রভাবিত করেন।

মূলত: কালো টাকার দৌরাত্ম্যে তার পরাজয় হয়েছে। দলীয় নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে ছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন- বিচ্ছিন্ন এবং সুবিধাভোগীরা হয়তো ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিতে পারে। বিয়ানীবাজার পৌরসভার নির্বাচনে ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ আরও একাধিক সহযোগী সংগঠন নিষ্ক্রিয় ছিল। প্রায় একযুগের বেশি সময় থেকে কমিটিবিহীন এই সংগঠনগুলো এলোমেলো থাকায় নৌকার পক্ষে কর্মী সংকট ছিল প্রচারণার শুরু থেকে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আতাউর রহমান খান জানান, নৌকার বিরোধী বলয় সক্রিয় ছিল। তারা নৌকা ডোবাতে বাইরে ভোট দিয়েছে। বিয়ানীবাজার পৌরসভার মেয়র পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ফারুকুল হক জয়লাভ করেছেন। নৌকার প্রার্থীর অবস্থান ছিল ৩য়। ২য় অবস্থানে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুছ ছবুর। এখানকার ৯টি ওয়ার্ডের ৫টিতে জিতেছে বিএনপি-জামায়াতের সমর্থক ৫ জন কাউন্সিলর। তিন বিজয়ী মহিলা কাউন্সিলারের রাজনৈতিক পরিচয় নেই।

Print Friendly, PDF & Email
 
 
স্বাধীন খবর ডটকম/আ আ
 

জনপ্রিয় সংবাদ

 

সর্বোচ্চ পঠিত সংবাদ

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
error: Content is protected !!
WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
error: Content is protected !!