বীরগঞ্জের এক ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তা ’মমতা’ এখন দিদি হিসেবে পরিচিত
নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
বুধবার, মার্চ ১৬, ২০২২ ১২:২৪ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
বুধবার, মার্চ ১৬, ২০২২ ১২:২৪ অপরাহ্ণ
দিনাজপুর প্রতিনিধি- দিনাজপুরের বীরগঞ্জের এক ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তা হস্তশিল্পের সুঁই-সুতার কাজ করে পাটের তৈরী জিনিস বানিয়ে নিজের ভাগ্য বদলে স্বাবলম্বী হয়ে গড়ে তুলেছেন এলাকার বিভিন্ন নারীকে হস্তশিল্পের কারিগর। তাই সবার কাছে ‘মমতা দিদি’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন তিনি।
উপজেলার নিজপাড়া ইউনিয়নের নতুনহাট এলাকার মাস্টারপাড়া গ্রামের মমতার স্বামী কালীপদ রায় ২০০৫ সালে তিন সন্তান তপন, স্বপন ও পুতুলকে রেখে হার্ডের রোগে মারা যায়। স্বামীর অবর্তমানে মমতার সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। জীবন জীবিকার তাগিদে হাতের তৈরী পাখা পাড়া-মহল্লায় বিক্রি করে খুবই কষ্টে সংসার চালাতো। সন্তানদের পড়ালেখার ও সংসারের খরচ জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। হতাশা দেখা দেয় মমতার জীবনে।
সে সময় মমতা আরডি আর এস এর সাহায্যে হস্তশিল্পের প্রশিক্ষন নিয়ে শুরু করে কারুকাজ। সততা, নিষ্ঠা, শ্রম ও মেধা দ্বারা তার এই কারুকাজ সঠিক ব্যবহারে ভাগ্য বদলাতে শুরু করে। শূন্য থেকে শুরু করে আজ তিনি একজন ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তা। মমতা নিজের জীবন জীবিকা বদলে ফেলে উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত স্থাপন করে এলাকায় পরিচিত লাভ করে। তেমনি মমতা স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলেছেন তার মতো আরও নারীকে। তিনি এখন সবার কাছে ‘মমতা দিদি’ হিসেবে পরিচিত।
প্রতিবেশী চাচা শশুর পুলিন রায় জানায়, তার যে সময় স¦ামী মারা যায় সে সময় তপনের বয়স ছিলো ৮/১০ বছর। বর্তমানে তার বয়স প্রায় ৩২/৩৩ বছর। হস্তশিল্পের কারনে মমতা স¦ামীর বর্তমানে ৩ সন্তানকে মানুষ করেছে। তার তিন ছেলে মেয়েকে এইচ.এস.সি পাশ করিয়ে বিয়ে দিয়ে আলাদা আলাদা সংসার করে দিয়েছে। করেছেন পাকা বাড়ীঘর।
ছোট বৌমা পুতুল জানায়, তার বিয়ের পর হতে সে তার শাশুড়ীর হস্তশিল্পের কাজ দেখে দেখে নিজেও কাজ শিখে গিয়েছেন। শাশুড়ীর নির্দেশনায় সে ও এলাকার মহিলারা পাটের তৈরি পাপস, পাটের ব্যাগ, পাটের ড্রাম, কুশন কাভার, সুতার ম্যাট, নকশিকাঁথা, হাত পাখা বানিয়ে বেশ হস্তশিল্পের প্রশংসা কামিয়েছেন। এগুলী বিভিন্ন দরে বাজারে বিক্রয় করেন।
হস্তশিল্পের ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তা মমতা জানায়, হাত পাখা বানিয়ে প্রথমে শুরু করেন। ২০০৭ সালে ক্ষুদ্র ঋণ ও অন্যের কাছ থেকে ধার-দেনা করে হস্তশিল্পের কাজ শুরু করেন। সেগুলো তৈরি করে বাজারে বিক্রি করেন। এরপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি মমতাকে। গ্রামের নারীদের দিয়ে হস্তশিল্পের কাজ তৈরি করে বর্তমানে বিভিন্ন খ্যাতমান শপিং মলে বিক্রি করা হচ্ছে। সেই কাজ দেখে বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ এসে তাকে অর্ডার দিয়ে যায়। ক্রেতাদের প্রশংসা তার মনোবল ও সাহস বাড়িয়ে দেয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অর্ডার বাড়তে থাকে।
তার তৈরী হস্তশিল্পের কাজ এখন দিনাজপুর, ঠাকুরগাও, রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম এবং ঢাকায় বিক্রয় করা হচ্ছে। হাত পাখা (ভুলনা আমায়, দয়ামায়া যার ভালবাসা তার) ২শত টাকা পযর্ন্ত বিক্রয় করে। পাটের তৈরি পাপস, ম্যাট ১০হাজার টাকা পযর্ন্ত বিক্রয় করে। নকশিকাঁথা ৩হাজার টাকা পযর্ন্ত বিক্রয় করে। সকল খরচ শেষে প্রতি মাসে তার প্রায় ২০/২৫হাজার টাকা থাকে।
চেষ্টা থাকলে যে কোনো নারীই ব্যবসা বা কর্মক্ষেত্রে সফল হতে পারবেন। পরিচিত কোনো মেয়ে যখন চাকরি করার কথা বলেন, আমি তাদের উৎসাহ দিই ব্যবসা করে উদ্যেক্তা হতে। কারণ, আমাদের একটাই লক্ষ্য হওয়া উচিত, চাকরি করব না, চাকরি দেব। শুধু নিজের জীবনের গল্পই নয়, সুঁই-সুতার কারুকাজে বদলে দিয়েছেন বিভিন্ন গ্রামের আরও সহস্রাধিক নারীর জীবন। সংসারের পাশাপাশি বুননের কাজ করে বাড়তি আয় করছেন তারা। সংসারের পাশাপাশি কারুকাজ করলে মহিলাদের অনেক উপকার হবে। অবসর সময় বলে কিছু থাকবে না। হাত খরচের জন্য টাকা কারো কাছে আর চাইতে হবে না।
তিনি আরও বলেন, তার এই কাজে অনেক প্রশংসা পেলেও অদ্যাবধী কোন সরকারী লোক তার কাজ দেখতে আসেনি। কোন সহযগিতার ও হাত বাড়ায়নি। তিনি স্থানীয় সরকারের কাছে দাবি করছেন, যদি তার পাশে দাড়ানো হয় তাহলে তিনি তার মতো আরও অনেক নারী উদ্যেক্তা তৈরি করতে পারবেন।
নিজপাড়া ইউনিয়নের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান আনিস জানায়, নির্বাচন চলাকালে আমি বিভিন্ন গ্রামে ভোটের জন্য যাওয়ার কারনে মমতার হস্তশিল্পের ও ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তা হওয়ার কথা শুনেছি। চেয়ারম্যান হিসাবে তার ব্যপারে আমি সরকারের কাছে সহযোগিতার জন্য আবেদন করবো।