বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে চিরঘুমে গাফ্ফার চৌধুরী
নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
শনিবার, মে ২৮, ২০২২ ১:২৮ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
শনিবার, মে ২৮, ২০২২ ১:২৮ অপরাহ্ণ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন ভাষা সৈনিক, দেশবরেণ্য সাংবাদিক ও কলাম লেখক বীর মুক্তিযোদ্ধাআবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। দুই দফা জানাজা শেষে শনিবার (২৮ মে) বিকালে মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে স্ত্রীর কবরেরপাশে সমাহিত করা হয় তাকে।
গত ১৯ মে ভোর ৬টা ৪০ মিনিটে লন্ডনের বার্নেট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। ৮৮বছর বয়সে মারা যাওয়া আব্দুল গাফফার চৌধুরী বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন।
নয় দিন পর শনিবার (২৮ মে) বেলা ১১টা ৫ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তার মরদেহ ঢাকার হযরতশাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। সরকারের পক্ষে মরদেহ গ্রহণ এবং শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীআ ক ম মোজাম্মেল হক।
দেশে পৌঁছার পর শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য মরদেহ নেওয়া হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে তাকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়। পরেমরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সামরিক সচিবরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিনচৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আক্তারুজ্জামান, উপ–উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ কামাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবমেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, ১৪ দলের পক্ষে সম্মান রাশেদ খানমেনন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, বাংলাদেশ জাসদ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাপ (ভাসানী), বাংলাদেশপ্রেস কাউন্সিল, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বরিশালের মেয়র সাদিকআবদুল্লাহ, রাজশাহীর মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, পিএসসি, খেলাঘর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাইঅ্যাসোসিয়েশন, আবৃত্তি পরিষদসহ সর্বস্তরের হাজারো জনতা শ্রদ্ধা নিবেদনে অংশ নেন।
শ্রদ্ধা জানানোর পর বিকাল সাড়ে ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে মরহুমের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানথেকে মরদেহ নেওয়া হয় জাতীয় প্রেস ক্লাবে। বিকাল চারটার দিকে প্রেস ক্লাব চত্বরে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর জানাজা সম্পন্নহয়।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম, প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, জাতীয় প্রেস ক্লাবেরসাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক নেতা, বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক, সাংবাদিক নেতা ও বিভিন্নগণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরা জানাজায় অংশ নেন।
জানাজার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, বাংলাভাষা যতদিন থাকবে ততদিন আব্দুল গাফফার চৌধুরীকে মনে রাখব। বিভিন্ন পত্রিকায় তার কলাম প্রকাশ হত। পাঠকরাঅপেক্ষা করতেন কখন তার কলাম প্রকাশ পাবে। তার লেখনী আমরা মিস করব। সাংবাদিক সমাজ তার চলে যাওয়ার এ ক্ষতিকখনও পূরণ করতে পারবে কিনা তা জানি না।
সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান বলেন, আবদুল গাফফার চৌধুরী দেশের বাইরে ছিলেন, কিন্তু তার মন পড়েছিল এদেশে। শুধুবাংলাদেশ নয়, সমগ্র বাঙালির মণিকোঠায় থাকবেন তিনি। আমি তার পরিবারের প্রতি গভীর সমাবেদনা জানাই। জানাজাশেষে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম, সংগঠন ও সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে মরহুমের কফিনে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
জানাজার পর মরদেহ নেওয়া হয় মীরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে। সেখানে শত শত মানুষ তাকে শেষ বিদায় জানান।
১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর বরিশাল জেলার উলানিয়া গ্রামের চৌধুরী বাড়িতে জন্ম নেন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। তার বাবাহাজি ওয়াহিদ রেজা চৌধুরী ও মা জহুরা খাতুন।
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী একজন সুপরিচিত বাংলাদেশি গ্রন্থকার, কলাম লেখক। তিনি ভাষা আন্দোলনের স্মরণীয় ‘আমারভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানের রচয়িতা। স্বাধীনতাযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে নিবন্ধিত স্বাধীনবাংলার প্রথম পত্রিকা সাপ্তাহিক ‘জয় বাংলা’র প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক ছিলেন।
স্বাধীন খবর ডটকম/আ আ
