বৃহত্তর ঐক্য নিয়ে আশাবাদী বিএনপি সব মত ও পথকে এক সুতোয় আনার চেষ্টা
নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
শুক্রবার, জুন ৩, ২০২২ ৭:১১ পূর্বাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
শুক্রবার, জুন ৩, ২০২২ ৭:১১ পূর্বাহ্ণ

অন্য দলের দাবিগুলো নেওয়া হবে আমলে * সংলাপের পরই ঐক্যের রূপরেখা ঘোষণা*সব মত ও পথকে এক সুতোয় আনার চেষ্টা
ডেস্ক নিউজ
সরকারবিরোধী আন্দোলনে বৃহত্তর ঐক্যের পথে বিএনপি। সব মত ও পথকে একই সুতায় বাঁধতে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেছে।
তাতে বৃহত্তর ঐক্যের ব্যাপারে অনেকটাই আশাবাদী দলটির নীতিনির্ধারকরা। সরকারবিরোধী সব দলের সঙ্গে সংলাপের পর একটি রূপরেখা জাতির সামনে তুলে ধরা হবে।
আপাতত সুনির্দিষ্ট কিছু দাবি নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে এখনো দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হয়নি।
বিএনপি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গেলে সংবিধান সংশোধন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্যসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দাবি সংলাপে তুলে ধরেছে কয়েকটি দল।
ক্ষমতায় গেলে যৌথ আলোচনার মাধ্যমে এসব দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছে বিএনপি। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিএনপিও রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন চায়। ক্ষমতায় গেলে প্রতিহিংসার রাজনীতি বাদ দিয়ে সবাইকে নিয়ে রাষ্ট্র বিনির্মাণে কাজ করবে তারা।
বৃহত্তর ঐক্যের ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত ২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামী বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। সংলাপে অংশ নেওয়া বিএনপির এক নেতা বলেন, আপাতত আমরা যুগপৎ আন্দোলন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জামায়াত তাদের মতো করে কর্মসূচি পালন করবে। আমাদের এমন অবস্থানে সংলাপে অংশ নেওয়া দলগুলোও সায় দিয়েছে।
জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং ভোটাধিকার ফেরাতে আন্দোলনের বিকল্প নেই। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ছাড়া এ দানব সরকারকে হটানো যাবে না। তাই আমরা বৃহত্তর ঐক্যের লক্ষ্যে কাজ করছি।
ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি দলের সঙ্গে সংলাপ হয়েছে। সবার কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি। বাকি দলগুলোর কাছ থেকেও একই ধরনের সাড়া পাব বলে আশা করি।
কারণ, সবার লক্ষ্য একই। আপাতত আমরা যুগপৎ আন্দোলন করার কথা ভাবছি। সবার সঙ্গে আলোচনা করে আমরা একটি বৃহত্তর ঐক্যের রূপরেখা তৈরি করে তা জাতির সামনে তুলে ধরব বলে জানান তিনি।
দীর্ঘদিন ধরে ডান-বাম ও ইসলামপন্থি দলগুলোকে নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য গঠনে কাজ করছে বিএনপি। প্রাথমিকভাবে সরকারবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন দলটির নেতারা।
এসব বৈঠকে সরকারবিরোধী আন্দোলনের পক্ষে সবাই ইতিবাচক সাড়া দেন। এরপর দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সংলাপের সিদ্ধান্ত নেয় হাইকমান্ড। ২৪ মে নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে প্রথম সংলাপ করে দলটি।
এরপর ২৭ মে ২০ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ লেবার পার্টি, ৩১ মে গণসংহতি আন্দোলন, ১ জুন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও সর্বশেষ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সঙ্গে সংলাপ করে। পর্যায়ক্রমে সরকারবিরোধী সব রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের সঙ্গে সংলাপ করার কথা রয়েছে দলটির।
সূত্র জানায়, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বিএনপির পক্ষ থেকে তিনটি দাবি তুলে ধরা হচ্ছে। এগুলো হলো-সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর, সংসদ বাতিল ও নতুন ইসি গঠন করে তাদের অধীনে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ এবং সবার অংশগ্রহণে নির্বাচনের আয়োজন করা। পাশাপাশি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি। এ পর্যন্ত সংলাপে অংশ নেওয়া সব দলই বিএনপির এসব দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেছে। পাশাপাশি তাদের পক্ষ থেকেও বেশকিছু দাবি তুলে ধরা হচ্ছে। ভবিষ্যতে বিএনপি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গেলে এসব দাবি বাস্তাবায়নে বিএনপির অবস্থান জানতে চান তারা। গণসংহতির পক্ষ থেকে ৭০ অনুচ্ছেদের সংস্কার, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য, সংসদে উচ্চ ও নিুকক্ষ গঠন, ডিজিটাল সিকিউরিটিসহ সব কালা আইন বাতিলসহ সাত দফা দাবি তুলে ধরা হয়। সংকট উত্তরণে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকে তুলে ধরা হয় ৩১ দফা দাবি। এর মধ্যে রয়েছে-সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের পরিবর্তন, ডিজিটাল সিকিউরিটিসহ সব কালা আইন বাতিল, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বন্ধ, নির্বাচনি ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পুলিশি হামলা রোধ প্রমুখ।
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা জানান, আরও বেশ কয়েকটি দলের সঙ্গে তারা বসবে। সেখান থেকেও আরও প্রস্তাব আসবে। এরপর প্রস্তাবের একটি খসড়া তৈরি করা হবে। সবার সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত করা হবে বৃহত্তর ঐক্যের রূপরেখা।
নেতারা আরও বলেন, ভবিষ্যতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গেলে যেসব পরিবর্তনের দাবি আসছে তার অনেকগুলোর সঙ্গে বিএনপি ইতোমধ্যে একমত পোষণ করেছে। যেমন ক্ষমতা গেলে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টসহ সব কালা আইন বাতিলের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সংবিধান পরিবর্তনসহ আরও গুরুত্বপূর্ণ যেসব দাবি রয়েছে সেগুলো বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্টজনের পরামর্শ নেওয়া হবে। সবার মতামত নিয়েই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিএনপির সঙ্গে সংলাপ ও বৃহত্তর ঐক্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বিএনপি একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক দল। তারা একটি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের প্রস্তুতি নিয়েছে। তাদের এ উদ্যোগে আমরা খুশি, আশাবাদী। কারণ, যে কোনো ভাবে একটি বৃহৎ ঐক্য ছাড়া এ স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটানো যাবে না। এ উদ্যোগের সফল পরিণতি দেখার জন্য দলীয়ভাবে আমাদের যা করা প্রয়োজন আমরা তা করার চেষ্টা করছি। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, জামায়াত আমাদের কাছে কোনো ইস্যুই নয়। এটা নিয়ে কোনো আলোচনাও হয়নি। তারা যেখানে খুশি থাক।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে সংলাপেও গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। সূত্র জানায়, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির নেতারা জানান, যে সমালোচনা বর্তমান সরকার সম্পর্কে রয়েছে তার অনেকগুলো বিএনপি সরকারেরও ছিল। অর্থ পাচার, বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ অনেক বিষয়ে বিএনপির আত্মসমালোচনা থাকা দরকার। জামায়াত প্রশ্নে বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট করা প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে বিএনপি নেতারা বলেন, জামায়াত রাজনীতিতে ততটা সক্রিয় নয়। জোটে তাদের সক্রিয় করা হবে না। তারা নিজেদের মতো করে কাজ করবে। তারপরও জামায়াত নিয়ে বিএনপির অবস্থা মানুষের কাছে পরিষ্কার করা উচিত বলে জানায় বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি। দলটির নেতারা বলেন, তাহলে আমাদের সঙ্গে আপনাদের বোঝাপড়ার জায়গাটা বাড়বে। মানুষেরও আস্থা বোধের জায়গাটা বাড়বে।
জানতে চাইলে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, বিএনপির সঙ্গে কথা বলে মনে হচ্ছে বৃহত্তর ঐক্যের ব্যাপারে তাদের আন্তরিকতা রয়েছে। তারা উপলব্ধি করছেন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে যদি এক জায়গায় আনা না যায় তাহলে মানুষকেও রাস্তায় নামানো যাবে না। তাদের উদ্যোগটা লোক দেখানো বা প্রচারসর্বস্ব মনে হয়নি। আমাদেরও আন্তরিক উদ্যোগ আছে। সরকারবিরোধী লড়াইয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে যার যার জায়গা থেকে রাজপথে দাঁড়ানো উচিত। আমরা এক মঞ্চে নয়, আপাতত যুগপৎ আন্দোলন করার পক্ষে মত দিয়েছি।
তিনি বলেন, আন্দোলনটা যে শুধু গদির পরিবর্তন নয়। রাষ্ট্র, সরকার, সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের জন্য এ আন্দোলন-তা মানুষ যেন অনুভব করতে পারে।
লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিএনপির নেতৃত্বে আমরা আন্দোলন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। সংলাপে আমরা স্পষ্ট জানিয়েছি, লেবার পার্টিও সরকারবিরোধী আন্দোলনে বৃহত্তর ঐক্যের পক্ষে। তবে ঐক্য করতে গিয়ে জোটের মধ্যে যাতে অনৈক্য সৃষ্টি না হয় সেদিকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছি।
স্বাধীন খবর ডটকম/আ আ
