• আজ সকাল ৭:৫১, সোমবার, ২১শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৩শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
  • shadinkhobor24@gmail.com
  • ঢাকা, বাংলাদেশ

ব্যালট বিপ্লব-২০২৩ : ড. আবদুল লতিফ মাসুম

নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ: বুধবার, মার্চ ২৩, ২০২২ ৫:৪৭ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ: বুধবার, মার্চ ২৩, ২০২২ ৫:৪৭ অপরাহ্ণ

 

গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় নির্বাচন হচ্ছে একমাত্র ক্ষমতা অদল-বদলের মাধ্যম। একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য একটি রাজনৈতিক সরকার নির্বাচিত হয়। সময়ান্তরে তাদেরকে জনগণের সম্মতি নবায়ন করার জন্য জনগণের কাছেই যেতে হয়। সংসদীয় শাসনব্যবস্থা অথবা রাষ্ট্রপতি শাসনব্যবস্থা- সর্বত্রই একই নিয়ম। আর এই দু’টি ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলই নিয়ামকের ভূমিকা পালন করে।

বাংলাদেশ যেহেতু সংসদীয় শাসনব্যবস্থাকে তাদের জীবনপদ্ধতি হিসেবে গ্রহণ করেছে, সে ক্ষেত্রে বিগত ৫০ বছর ধরে নিয়মমাফিক নির্বাচন হয়ে আসছে। বিশেষ কারণে ব্যতিক্রম হয়েছে। ব্যতিক্রমকে ব্যতিক্রম হিসেবেই দেখতে হবে। এসব নির্বাচন যে সবটাই গ্রহণযোগ্য হয়েছে, তা নয়। হিসাব নিয়ে দেখা গেছে যে, দেশে অনুষ্ঠিত ১৮টি নির্বাচনের ১১টি হয়েছে দলীয় সরকারের অধীনে। আর সেসব নির্বাচনে সরকারি দল কখনোই পরাজিত হয়নি। অন্য দিকে যে সাতটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হয়েছে, তার কোনোটিতেই ক্ষমতাসীন দল জয়লাভ করেনি। আর ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের নিদারুণ অভিজ্ঞতা এই জাতির রয়েছে। তাই আগামী ২০২৩ সালের সম্ভাব্য নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক মহলে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার শেষ নেই।

সরকারি দল নির্বাচনের লক্ষ্যে তাদের প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। গত দু’টি নির্বাচনেও তারা বেশ আগ থেকেই নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করে। তবে স্বাভাবিকভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ করার সৌভাগ্য তাদের হয়নি। তার কারণ তারা স্বাভাবিক অবস্থায় না গিয়ে অস্বাভাবিক পথ বেছে নিয়েছে। তাদের ধরন-ধারণ ও প্রস্তুতি দেখে বোঝার উপায় ছিল না যে, ‘উস্তাদের মার বিহান রাতে’। একটি জাতীয় নির্বাচনকে যেভাবে গ্রহণ করতে হয়- মেনিফেস্টো, মনোনয়ন, জনসভা ও প্রচার অভিযান সবটাই তারা করেছে। বাইরে থেকে সে ভোজবাজি দেখে বোঝা যাবে না যে, ডাল মে কুচ কালা হ্যায়।

নির্বাচনব্যবস্থা সম্পর্কে শাসকদলের সুনাম নেই। ১৯৭৩ সালে যখন তাদের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে, তখনো তারা কারচুপি করেছিল। খন্দকার মোশতাককে জিতিয়ে আনার জন্য হেলিকপ্টারে ব্যালট বাক্স ঢাকায় আনা হয়েছিল। বরিশালে মেজর জলিল ভোটে এগিয়ে থাকলে ফলাফল পাল্টে দিয়ে হরনাথ বাইনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। আর ভোলার জনপ্রিয় নেতা মেজর হাফিজের বাবাকে হাইজ্যাক করে নিয়ে যাওয়া হয়, যাতে তিনি নমিনেশন পেপার দাখিল করতে না পারেন। সেখানে স্থানীয় প্রার্থীর ভরাডুবি নিশ্চিত হওয়ায় বঙ্গবন্ধু সেখানে প্রার্থী হন। ওই নির্বাচনে সরকার বদল হতে পারত, এমন নয়। জাসদ হয়তো ফেয়ার নির্বাচন হলে ২০-৩০ সিট পেত। তাও শাসকদলের সহ্য হয়নি। অন্যান্য দলের ব্যাপারেও একই নীতি গ্রহণ করা হয়। এতে প্রমাণিত হয়, রাজনৈতিকভাবে তারা এবসলিউটইজম বা সর্বাত্মকবাদে বিশ্বাস করে। রাজনীতি ও শাসনের ভাগ তাদের শতভাগ চাই। বর্তমান সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্ব ৯৭ শতাংশ। সংসদে যে আচরণ তারা করে, তাতে প্রমাণিত হয়, বাকি ৩ শতাংশ ছাড় দিতে তারা রাজি নয়।

২১ বছর পর ছলে-বলে-কলে তারা ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে। মেয়াদ শেষে ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তারা ভেবেছিল নির্বাচন কমিশনার সাবেক সচিব তাদের জিতিয়ে দিতে পারবেন। কিন্তু সাঈদ বলেছিলেন, ‘আমি নিরপেক্ষ নই, কিন্তু নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা আমার দায়িত্ব’। আওয়ামী লীগ তাকে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছিল। অবশ্য তাদের তরফ থেকে এ ধরনের অভিযোগ নতুন নয়। বিচারপতি সাহাবুদ্দীনকে তারা অনুরোধ করেছিল ২০০১ সালের নির্বাচনী ফলাফল বাতিল করার জন্য। তিনি তা না করায় একই ধরনের বিশেষণ প্রয়োগ করা হয় তার বিরুদ্ধেও। বিচারপতি সাহাবুদ্দীন নিজে এই বোমাটি ফাটিয়েছিলেন। সে সময় থেকে সাহাবুদ্দীন সাহেব তাদের ব্যাডবুকে রয়েছেন। গত সপ্তাহে তার অসুস্থতার খবর প্রকাশিত হওয়ার পর, সরকারের তরফ থেকে কোনো সৌজন্য প্রদর্শনেরও খবর পাওয়া যায়নি। যাই হোক, ২০০১ সালে হেরে গিয়ে তারা অনুশোচনা করেছিল এই বলে যে, তারা একটি বিরাট ভুল করেছে। জনগণ যে তাদের প্রতি বিরূপ হয়ে আছে, তারা তা বিশ্বাস করতে চায় না। ২০১৪ সালে তারা আর ঝুঁকি নিতে চায়নি। নির্বাচনের প্রাক্কালে পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যখন বিএনপি বিজয় লাভ করে, তখনই তারা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয় যে, কোনোভাবেই কোনোক্রমেই তারা বিএনপিকে ক্ষমতায় আসতে দেবে না। সে সিদ্ধান্তকে কার্যকর করার জন্য যে নাটকীয়তা এবং প্রতারণা করতে হয় তা তারা করেছিল।

১৫৩ জন সংসদ সদস্য যখন বিনাভোটে নির্বাচিত হয় এবং নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা যখন প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তখন বলা হয়- এটি ছিল সাংবিধানিক নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। অল্প সময়ের মধ্যেই আরেকটি সর্বগ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিদেশী রাষ্ট্রদূতরা প্রধান বিরোধী দলকে আশ্বস্ত করে। বিএনপি আন্দোলন প্রত্যাহার করে। সে নির্বাচন আর কখনো অনুষ্ঠিত হয়নি। ২০১৮ সালেও একই ঘটনার অবতারণা ঘটে। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিরোধী দল সংলাপে গেলে সরকারের তরফ থেকে একটি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রকাশ্য প্রতিশ্রুতি আসে। কিন্তু বিরোধী দলের বাঘা বাঘা নেতারা কোনো কিছু টের পাওয়ার আগেই নিশিথ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দেশে এবং বিদেশে এই নির্বাচনের ভয়ানক কারচুপির কথা প্রকাশিত হলেও সরকারি দলের তরফ থেকে শতভাগ সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলা হয়।

চোরের মায়ের বড় গলার মতো হুদা কমিশনও ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার সার্টিফিকেট দেয়। জাতীয় নির্বাচনে এই অবস্থা এবং ব্যবস্থা গ্রামবাংলা পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়। ২০১২ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। জনগণের প্রতি সরকারি দলের আস্থা শূন্যে নেমে আসে। যে কায়দায় জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, সে একই সন্ত্রাসী কায়দায় স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন দলীয় প্রার্থীর কথা প্রচার করা হলেও আসলে এটি ছিল একক দলীয় প্রতীকের নির্বাচন। প্রতীকী নির্বাচন বলতে গেলে বাকশালী নির্বাচন। সবাই নৌকা চায়। এ নিয়ে মারামারি, কাটাকাটি, খুনাখুনি, গ্রামবাংলাকে রক্তাক্ত করে তোলে। সর্বশেষ ২০২১ সালের ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনী ফলাফল বিশ্লেষণ করলেও একই সত্যতার প্রমাণ মিলবে।

রাজধানী থেকে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে যখন এই অবস্থা, বিগত ১২ বছর ধরে যখন এই ব্যবস্থা- তখন মানুষ কী করে আগামী নির্বাচনে আস্থা স্থাপন করবে? স্থানীয় নির্বাচনে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভোটাররা না আসায় খোদ প্রধানমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। আসলে ভোটাররা নিশ্চিত হয়েছিল যে, ‘জাতির বৃহত্তর প্রয়োজনে’ তাদের আর ভোট দেয়ার দরকার নেই। আওয়ামী নেতারা প্রকাশ্যেই বলে বেড়াচ্ছিলেন যে, যাকেই ভোট দেয়া হোক না কেন, জিতবে নৌকা। গ্রামাঞ্চলে স্লোগান শোনা গেল ‘চেয়ারম্যান ওপেনে, মেম্বার গোপনে’।

সরকারের নির্বাচন নিয়ে এই কারসাজির প্রভাব সর্বত্রই পড়েছে। বিগত ডাকসু নির্বাচনে তারা এই অপকৌশল করেও নুরের বিজয় ঠেকাতে পারেনি। সে দিন অনুষ্ঠিত চলচ্চিত্র কলাকুশলীদের নির্বাচনেও কারচুপি করার অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে মামলা হয়েছে। বিজেএমই-এর নির্বাচন নিয়ে একই অভিযোগ। এসব সংগঠনে সরকারি দলের খোলামাঠে গোল দেয়ার অপচেষ্টার অনেক উদাহরণ রয়েছে। এমনকি খেলাধুলার মতো নির্ভেজাল বিনোদন ক্ষেত্রেও পলিটিক্স ঢুকে গেছে। জাতীয় নির্বাচন থেকে সমিতির নির্বাচন পর্যন্ত সব কিছুকে তামাশায় পরিণত করা হয়েছে। এক কথায়, নির্বাচন নির্বাসনে গেছে।

যেহেতু নির্বাচনই পরিবর্তনের একমাত্র বৈধ পন্থা, সেহেতু সব জনগোষ্ঠী নির্বাচনের মাধ্যমে পরিবর্তন-উন্মুখ হয়ে রয়েছে। অন্যায়-অত্যাচার, নিপীড়ন-নির্যাতন, গুম-খুন ও হামলা-মামলা রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। ঘুষ-দুর্নীতি, নিকৃষ্ট দলীয়করণ, বেকার সমস্যা ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সাধারণ মানুষের জীবনকে অসহায় করে তুলেছে। মানুষ পরিবর্তন চায়। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার সাথে সঙ্গতি রেখে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার উৎখাতে সক্ষম নয়। সরকার শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে সব আন্দোলন দমন করছে। এমনকি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে আহূত বিক্ষোভ ও সমাবেশকে পুলিশ পণ্ড করে দিয়েছে।

এটাও সত্য কথা যে, জনগণ আগুন জ্বালো আগুন জ্বালো ¯স্লোগান আর শুনতে চায় না। জনগণ অন্যায়-অত্যাচার সইতে সইতে নির্বিকার হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় আগামী ২০২৩ সালের নির্বাচন তাদের সামনে একটি আশার আলো নিয়মতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা বদলের সেই তো পথ। সে পথে হাঁটতে চায় সাধারণ মানুষ। কিন্তু শাসকদলের কারচুপি, শক্তি প্রয়োগ ও প্রতারণা তাদের লক্ষ্য অর্জনে বাধা। জনগণ মনে করে, যেনতেন প্রকারে সরকার ২০২৩ সালের নির্বাচন জয়ের জন্য মরণকামড় দেবে। ক্ষমতাচ্যুতিকে তারা তাদের জীবন-মরণ সমস্যা মনে করে। আওয়ামী লীগ নেতারা অনেকবার প্রকাশ্যে বলেছেন, সরকার পরিবর্তন হলে তাদের পাঁচ লাখ নেতাকর্মী মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়বে। সে কারণে যত কিছুই হোক তাদের ক্ষমতা ধরে রাখতেই হবে। ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার আকার-ইঙ্গিত শীর্ষ নেতারা দিচ্ছেন।

জনসাধারণ মনে করে, হাজার বছর ধরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও তাদের আপত্তি নেই; কিন্তু সেটি হতে হবে জনগণের স্বচ্ছ সম্মতির ভিত্তিতে। পাঁচ বছর পরপর যে নির্বাচনটি হচ্ছে তাতে অবশ্যই জনমতের প্রতিফলন থাকতে হবে। পৃথিবীর অনেক রাষ্ট্রে এ ধরনের দল, গোষ্ঠী ও জোট অনেক বছর ধরে ক্ষমতায় থাকছে। যেমন- জাপানের এলডিপি, মালয়েশিয়ার পাকাতান হারাপান। বাংলাদেশে ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগ সামরিক সরকারকে ডেকে না আনলে একটি চমৎকার দ্বিদলীয় ব্যবস্থার বিকাশ হতে পারত। ১৯৯১ সালে বিএনপি, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ, ২০০১ সালে আবার বিএনপি, ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগ- এভাবে দ্বিদলীয় ব্যবস্থাটি যদি প্রাতিষ্ঠানিকতা অর্জন করত, তাহলে বাংলাদেশে সুন্দর, সমন্বিত ও ভারসাম্যপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিকাশ হতে পারত। বাংলাদেশের মতো দুর্নীতি ও দারিদ্র্যপীড়িত দেশে দ্বিদলীয় ব্যবস্থা উভয় দলকে সংযমী এবং জনকল্যাণমুখী করতে পারত।

কথায় বলে, ঘর পোড়া গরু সিঁদুর দেখলে ভয় পায়। আওয়ামী লীগের প্রতি জনগণের এবং রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো আস্থা ও বিশ্বাস নেই। ন্যাড়া নাকি একবারই বেলতলায় যায়। ২০২৩ সালের নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দল স্বাভাবিকভাবেই অংশগ্রহণ করবে বলে বিশ্বাস করা কঠিন। বিএনপি যে কোনো মতেই দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না, তা স্পষ্টতর হয়েছে। জাতীয় পার্টির বিজ্ঞ নেতা জি এম কাদের দলটিকে গণমুখী করার চেষ্টা করছেন। রওশন এরশাদ ও বিদিশা দিশাহীনভাবে সরকারের আনুক‚ল্য পাবেন বলেই ধারণা করা যায়। জামায়াতে ইসলামী নিবন্ধন হারিয়েছে। ২০ দলীয় জোটের প্রতিটি দল পৃথক পৃথকভাবে বলেছে- তারা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। বাম দলগুলোও একই মত প্রকাশ করেছে। সে ক্ষেত্রে ২০২৩ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে ২০০৬ সালের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়া অসম্ভব নয়। একটি অস্বাভাবিক অবস্থা তৈরি হতে পারে। দেশে যে অরাজকতা চলছে, তাতে হঠাৎ করে জনগণ ক্ষিপ্ত হতে পারে। দ্রব্যমূল্যের দুর্দশায় মানুষ দিশেহারা। তারা উপযুক্ত নেতৃত্ব পেলে জ্বলে উঠতে পারে। আওয়ামী লীগ এরকম বেকায়দায় পড়লে জাতীয় সরকার কবুল করতে পারে। তার কারণ, জাতীয় সরকার তাদেরকে যেমন রক্তপাত থেকে রক্ষা করবে, তেমনি অসাংবিধানিক পথও রুদ্ধ করে দেবে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করে, আওয়ামী লীগ স্বাভাবিকভাবে কোনোমতেই নির্বাচনকালীন সরকার মেনে নেবে না। তাদেরকে গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে এ ফর্মুলা গ্রহণে বাধ্য করতে হবে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ অস্বাভাবিক আচরণ করতে পারে। তারা এই সংসদের মেয়াদ দ্বিতীয়বারের জন্য বাড়িয়ে দিতে পারে। জরুরি অবস্থা জারি করতে পারে। সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে পারে। এসবই তাদের ক্ষমতায় থাকা ও নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের ভাবনা। এর বিপরীতে নাগরিক সমাজ পেশাজীবী সম্প্রদায়, রাজনৈতিক নেতারা একত্রিত হয়ে গণ-আন্দোলনকে নির্বাচন পর্যন্ত পৌঁছাতে পারলে একটি কাক্সিক্ষত ভোটবিপ্লব হয়ে যেতে পারে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো পাকিস্তান আমলের সম্মিলিত বিরোধী দল গড়ার উদ্যোগ নিতে পারে। সেখানে ডান-বাম ও পূর্ব-পশ্চিম ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে একাট্টা হতে পারে। যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে তারা ১৯৯০ সালের কর্মকৌশল অনুসরণ করতে পারে। এ কর্মকৌশল অনুযায়ী একই লক্ষ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের পৃথক পৃথক আন্দোলন হতে পারে। এভাবে বৈচিত্র্যের মাঝে ঐক্য সাধন অস্বাভাবিক বিষয় নয়। আর সাধারণ নির্বাচনে সমঝোতার মাধ্যমে প্রার্থী নির্বাচনে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হলে ব্যালট বিপ্লব অবশ্যম্ভাবীভাবে সফল হবে। সেখানে বড় বড় দলগুলোর বড় ধরনের ছাড় দিতে হবে। এখনকার অবস্থায় বিষয়টি অসম্ভব মনে হলেও অবাস্তব নয়।

বিএনপির শীর্ষ নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ রকম সম্ভাবনার কথা ব্যক্ত করেছেন। তিনি তার ‘ফখরুদ্দীন-মইন উদ্দিনের কারাগারে ৬১৬ দিন’ গ্রন্থে পৃথিবীর অন্যান্য দেশে এ ধরনের ব্যালট বিপ্লবের উদাহরণ দিয়েছেন। ২০১৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানে স্বৈরশাসক পারভেজ মোশাররফের বিরুদ্ধে পিপিপি ও নেওয়াজ মুসলিম লীগ জয়লাভ করে। একইভাবে ওই বছরই থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার সামরিক বাহিনীকে হটিয়ে জনগণের বিজয় নিশ্চিত করেন। বাংলাদেশে জনগণের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচন পরিচালনা করলে কাক্সিক্ষত ব্যালট বিপ্লব ঘটতে পারে। এ ক্ষেত্রে একটি মাত্র শর্ত- জনগণ ও রাজনীতিবিদদের সুদৃঢ় ও নিঃশর্ত ঐক্য। টি এইচ গ্রিনের মতো আমরাও বিশ্বাস করি, ‘ডেমোক্র্যাসি মে বি ডিফিটেড ইন মেনি ব্যাটলস, বাট ইট উইনস দ্য লাস্ট’।
লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Mal55ju@yahoo.com

 
 
স্বাধীন খবর ডটকম/আ আ
 

জনপ্রিয় সংবাদ

 

সর্বোচ্চ পঠিত সংবাদ