ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নাপা সিরাপ পানে দুই শিশু সহোদরের মৃত্যু
নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
রবিবার, মার্চ ১৩, ২০২২ ৭:২২ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
রবিবার, মার্চ ১৩, ২০২২ ৭:২২ অপরাহ্ণ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন ও লিমা বেগম দম্পতির প্রথম সন্তান জন্মের তিনদিনের মাথায় মারা যায়। সেই সন্তানকে হারানোর বেদনা ভুলিয়ে রেখেছিল পরবর্তী দুই সন্তান ইয়াছিন খান, ৭, ও মোরসালিন খান, ৫, কিন্তু তাদেরও শেষ রক্ষা হলো না। একসঙ্গে দুই সন্তানকে হারিয়ে এখন পাগলপ্রায় এই দম্পতি।
ইসমাইল হোসেন সিলেটের একটি ইটভাটায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। তার স্ত্রী লিমা বেগম কাজ করেন আশুগঞ্জের একটি চাল কলে। অভাবের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। টাকার অভাবে জ্বরে আক্রান্ত দুই শিশু সন্তানকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে পারেন নি তারা। বাড়ির পাশের একটি ফার্মেসি থেকে নাপা সিরাপ এনে খাওয়ান। সেই সিরাপ খাওয়ানোর পরপরই অসুস্থ হয়ে পড়ে শিশু ইয়াছিন ও মোরসালিন। পরে তাদের দুজনেরই মৃত্যু হয়।
দুই শিশুর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, কয়েকদিনেও জ্বর না কমায় মার্চ ১০, ২০২২, বিকেলে ছোট ছেলে মোরসালিন তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলে মা লিমা বেগমকে। তখন মা তাকে আশ্বাস দেয়, চাল কল থেকে কাজের টাকা পাওয়ার পর ভালো চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাবে। পরে মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে দুই শিশুর দাদি লিলুফা বেগম পাশের বাজারের মা ফার্মেসি থেকে এক বোতল নাপা সিরাপ কিনে আনেন। এরপর সেই সিরাপ আধা চামচ করে ইয়াছিন ও মোরসালিনকে খাওয়ানো হয়। এর কিছুক্ষণ পরই তারা বমি শুরু করে।
কাঁদতে কাঁদতে দুই শিশুর মা লিমা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, “ওইদিন আমার ছেলে বলল, ‘আম্মা আমাকে ভালো ডাক্তারের কাছে নিবা না?’ আমি তখন বলেছি, ভালো ডাক্তারের কাছে এখন নিতে পারব না, আমার কাছে এখন টাকা নেই। আপাতত দুই ভাইকে একটা নাপা সিরাপ এনে খাওয়াই। সিরাপ খাওয়ানোর ১৫-২০ মিনিট পরই দুজনেই বমি শুরু করে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে ডাক্তাররা অক্সিজেন দিয়ে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে।”
লিমা বেগম অভিযোগ করে বলেন সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর ডাক্তার জানায়- ‘আপনার ছেলেরা সম্পূর্ণ সুস্থ। বাড়িতে নিয়ে টক আর পানি খাওয়ান বেশি করে।’ কিন্তু বাড়িতে আনার পথেই আমার এক ছেলে মারা যায়। বাড়িতে এসে আরেকজনের মৃত্যু হয়।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ডাক্তাররা তাহলে কী দেখল? আমার ছেলেগুলোকে একটু চিকিৎসাও তারা দিল না কেন?’
এ দিকে, নাপা সিরাপ খেয়ে দুই শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ ওঠার পর থেকে সপরিবারে গা ঢাকা দিয়েছেন দুর্গাপুর গ্রামের সড়ক বাজারের মা ফার্মেসির মালিক মো. মঈনউদ্দিন।