• আজ সকাল ৮:৫০, রবিবার, ১৩ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৯শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৮ই মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি
  • shadinkhobor24@gmail.com
  • ঢাকা, বাংলাদেশ

মরহুম আ, স, ম হান্নান শাহ ও কিছু স্মৃতিচারণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ: মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২২ ১০:২২ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ: মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২২ ১০:২২ অপরাহ্ণ

 

আজ ২৭শে সেপ্টেম্বর ২০২২। বি,এন,পি নেতা মরহুম ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আ,স,ম হান্নান শাহের ৬ষ্ট তম মৃত্যু বার্ষীকি। ২০১৬ সালের এই দিনে সেই ১/১১ এর পরের বি,এন,পি এবং শহীদ জিয়া পরিবারের উপর কঠিন দুঃসময় ও অঘোর অমানীষা কালীন সময়ের অকুতোভয় বিপ্লবী কান্ডারী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আ,স,ম হান্নান শাহ বি,এন,পি ও জিয়া পরিবার ও সারা দেশের কোটি কোটি মানুষকে কাঁদিয়ে চিরদিনের জন্য না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছেন। আজ আমি আমার প্রানপ্রিয় নেতা , রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক অভিভাবক মরহুম হান্নান ভাইয়ের বিদেহি আত্মার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে হ্রদয়ের বিষাদ বেদনা ও রক্তক্ষরণ নিয়ে কিছু স্মৃতি চারণ তুলে ধরছি। মরহুম ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আ,স,ম হান্নান শাহের মৃত্যু সংবাদে সারা দেশেই মুহুর্তের মাঝে এক গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছিল। যে শোকের ছায়া ভাষায় অবর্ণনীয়।
১৯১৪সালে গাজীপুরের কাপাসিয়ার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে মরহুমের জন্ম করেন। বাবা ফকির আব্দুল মান্নান ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৮পর্যন্ত তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। তাঁর ছোট ভাই শাহ আবু নঈম মোমিনুর রহমান বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের জেষ্ঠ বিচারপতি ছিলেন। স্ত্রী নাহিদা হান্নান ( বর্তমানে প্রয়াত ) ও এক কন্যা শারমিন হান্নান সুমি, দুই ছেলে শাহ রেজাউল করীম হান্নান ও শাহ রিয়াজুল ইসলাম সহ তাঁর নিজ জন্মস্থানে এবং সমগ্র বাংলাদেশে বি,এন,পি ও বি,এন,পি পরিবারের অজস্র গুনাগ্রাহী রেখে গেছেন। এক বর্নাঢ্য সামরিক জীবনের অধিকারি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আ,স,ম হান্নান শাহ ১৯৬২ সালে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমি থেকে কমিশন লাভ করেছিলেন। তৎকালিন পাকিস্তানের সেনানিবাসে তিনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে হান্নান শাহ সহ অন্যান্ন সামরিক কমকর্তার সাথে তিনিও পাকিস্তানে কারাবন্দী ছিলেন। ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করে স্বধীন সার্বভৌম দেশে প্রত্যাবর্তন করে বাংলাদেশ সেনাবাহীনিতে যোগদান করেন। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আ,স,ম হান্নান শাহ পার্বত্য চট্টগ্রামে বিগ্রেড কমান্ডার ও চট্টগ্রাম মিলিটারি একাডেমির কমান্ডেন্ট ছিলেন। এবং যশোরের স্কুল অব ইনফ্যান্টি এ্যান্ড ট্যাক্টিসের চীফ ইন্সট্যাক্টর ছিলেন। ১৯৮১ সালের ৩০শে মে চট্টগ্রপাম সার্কিট হাউজের দেশ-বিদেশি গভীর ষড়যন্ত্রে বিপথগামী কিছু সেনা কর্মকর্তার হাতে শাহাদাত বরণ করেছিলেন তৎকালিন রাস্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। সেই সময়ের চরম উত্তপ্ত পরিস্থিতি মোকাবেলা করে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আ,স,ম হান্নান শাহ এক দুঃসাহসিক অভিযান চালিয়ে চট্টগ্রাম রাঙ্গুনীয়া ইন্জিনিয়ার কলেজের পার্শ্ববর্তি পাহাড়ের পদতল থেকে শহীদ জিয়ার মরদেহ ঢাকায় নিয়ে এসেছিলেন। তরেই প্রতিহিংসায় সেনা প্রধান এরশাদ সুকৌশলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আ,স,ম হান্নান শাহকে বাধ্যতামুলক অবসরে পাঠিয়েছিলেন। এবং তাঁকে অবসর দেয়ার পর বাংলাদেশ সরকারের সংস্থাপন মন্ত্রনালয়ের যূগ্ন-সচিব পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন। পরবর্তিতে তিনি বি,এ,ডি,সির চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। নিজেকে যথাযতভাবে সামলিয়ে তিনি ১৯৮৩ সালে ঐ পদ থেকে পদত্যাগ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে যোগদান করেন। রাজনৈতিক জীবনের শুরুতেই হান্নান শাহ ঢাকা মহানগরী যুগ্ন-আহ্বায়কের দায়িত্বভার গ্রহন করে একজন সুদক্ষ রাজনৈতিক ও সংগঠক হিসেবে নিজেকে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। সেই সময়ের সৈরাচার এরশাদ বিরোধি আন্দোলনের সময় বারবার তাকে কারাবরণ করতে হয়েছিল। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত তিনি দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা বিভাগ) হিসেবে দলকে সুসংগঠিত করেছিলেন। হান্নান শাহ তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতা ও নৈপুনতাঁর কারনে দলের চেয়ার পার্সন বেগম খালেদা জিয়া তাকে বি,এন,পির উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য নির্বাচিত করেছিলেন। ২০০৯ সালে দলের পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে হান্নান শাহকে বি,এন,পির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারিত ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য করা হয়েছিল। পরবর্তি সষ্ঠ কাউন্সিলেও তিনি একই পদে পুণনির্বাচিত হয়েছিলেন। তাঁর নির্বাচনি এলাকা গাজীপুর ৪নং আসন থেকে দুই দুই বার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবং বি,এন,পি সরকারের পাঠ ও বস্ত্র মন্ত্রীর দায়ত্বে নিয়োজিত ছিলেন। সেই সময়ে দেশের পাঠ ও বস্ত্র শিল্পের ক্ষেত্রে তিনি বিশাল সফলতাঁর দ্বার উম্মোচিত করেছিলেন।
আসছি মরহুম হান্নান শাহের সংক্ষিপ্ত কিছু স্মৃতিচারণ নিয়ে: বি,এন,পির কঠিন ক্লান্তিকালীন সময়ে ১/১১ পরবর্তি দেশি ও বিদেশি ষড়যন্ত্র বি,এন,পি ও জিয়া পরিবারের প্রতি নেমে এসেছিল একমহা সাইক্লোন। সেই সাইক্লোনের মূল লক্ষ্য ছিল বি,এন,পি ও জিয়া পরিবারকে সমূলে উচ্ছেদ করা। তাঁরই নিরিখে সেনা সমর্থিত তত্বাবোধক সরকার সর্বপ্রথম ২০০৭ সালের ৭ই মার্চ বি,এন,পির সিনিয়র যুগ্ন মহাসচিব জনাব, তারেক রহমান ও তাঁর সহোদর মরহুম আরাফাত রহমান কোকো কে গ্রেপ্তার করের কারাগারে নিক্ষেপ করে। তাঁর পরপরেই সেনাপ্রধান মঈন ইউ আহমেদ ও ফখরুদ্দিন আর মেজর জেনারেল মাসুদ চৌধুরি গং ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রয়ের মদদপুষ্ট আওয়ামী বাকশালিদের সাথে আতাত করে দেশনেত্রি বেগম খালেদা জিয়া গৃহবন্দি করে। এবং বেগম জিয়ার সাথে বি,এন,পির সকল দলীয় নেতা কর্মী ও তাঁর আত্মীয় স্বজনের সাথে সকল ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। অন্যদিকে তারেক রহমান ও কোকোকে ডি,বি হেফাজতে জিঙ্গাসাবাদের নামে এনে শারিরিক ও মানসিক অকত্য নির্যাতন চালিয়ে যায়। সেনাপ্রধান মঈন ইউ আহামেদ ও জেনারেল মাসুদ চৌধুরি ও ফখরুদ্দীনদের নীল নকশায় বি,এন,পিতে সংষ্কারপন্থীদের একটি ভন্ডদলের উত্থান ঘটিয়ে বি,এন,পিকে খন্ড-বিখন্ড করার নিখুত চাল তৈরি করে। ঐসময়ের বি,এন,পির তৎকালীন মহাসচিব সহ অধিকাংশ নেতারাই নিশ্চুপ ও নিস্তব্ধ ছিলেন। অনেকেই সংষ্কারপন্থিদের উত্থানে সক্রিয় হয়েছিলেন। সেই মহাদুর্যোগের সময় চুপ থাকতে পারেন নি বি,এন,পি নেতা মরহুম ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আ,স,ম হান্নান শাহ। তিনি মঈন-ফখরুল গংদের বিরুদ্ধ সিংহ গর্জনদিয়ে আন্দোলনের ডাক দিয়ে বি,এন,পির দুর্দিনের কান্ডারি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। সেই সময়ে যদি হান্নান শাহ দেশ ও দলপ্রেমের অবস্থান থেকে বি,এন,পির হাল না ধরতেন তবে আজকের প্রেক্ষাপট হত ভিন্ন। ১/১১এর পর বি,এন,পির দুসময়ের মহাকান্ডারি অকুতোভয় মহান সিপাহশালার হান্নান শাহ নিজের জীবন বাজি রেখে বি,এন,পি ও জিয়া পরিবারকে রক্ষার জন্য সেনা সমর্থিত তত্বাবোধয়ক সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন। গৃহবন্দি খালেদা জিয়ার সাথে হান্নান ভাইয়ের পরামর্শ অনুযায়ি দেখা করার জন্য আমি জীবনবাজি রেখে উদ্যেগ গ্রহন করেছিলাম। পরপর পাচদিন তাঁর বাসভবনের নিরাপত্তা প্রহরী ও ডি,বি সদস্যদের নিপীড়নের কারনে দেখা করতে ব্যার্থ হই। হান্নান ভাই মিডিয়াতে দলের নেত্রীর সাথে দলের নেতা কর্মী সহ সর্বস্তরের লোকজনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখার তীব্র প্রতিবাদ করেন। ঐ সময় আমি হান্নান ভাইয়ের বাসায় পরিচিত হয়েছিলাম হান্নান ভাইয়ের অপর দুই সেনা সমর্থিত তত্বাবোধয়ক সরকারের কঠিন বিরোধী সৈনিক অব: মেজর মিজান ও মেজর হানিফ ভাইয়ের সাথে । এই দুজন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত হান্নান ভাইয়ের সাথে বি,এন,পি ও জিয়া পরিবারকে রক্ষা করে দেশের গনতন্ত্রকে সুরক্ষার জন্য জীবন বাজী রেখে কাজ করছিলেন। আমি হান্নান ভাইয়ের সাথে সেই সময়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছায়ার মত আকড়ে ছিলাম। হান্নান ভাই যেদিন রয়টার্সের টেলিফোন সাক্ষাতকারে বেগম জিয়ার সাথে সর্বস্তরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার অভিযোগটি উত্থাপিত করেছিলেন। কিন্তু রয়টার্স বলছিল সরকার তা অস্বীকার করছে। এটাকে তিনি সরকারের ভাওতাবাজি ও মিথ্যাচার বলে উল্লেখ করে বলে ছিলেন “যারা বেগম জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করতে ব্যার্থ হয়েছে তাদের মধ্যে আশির দশকের এক ছাত্রনেতা আমার এখানে উপস্থিত আছেন । রয়টার্স আমার সাথে কথা বলেছিলেন। আমি দ্ব্যার্থ ভাষায় বলেছিলাম পরপর পাঁচ দিন আমি চেষ্টা করেও নেত্রির সাথে দেখা করতে ব্যার্থ হই।
হান্নান ভাইয়ের নির্দেশেই আমি নেত্রীর সাক্ষাৎ ও খোজ খবরের চেষ্টা অব্যাহত রেখে ছিলাম। ষষ্ঠ দিনের মাথায় আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি নেত্রীর সাথে দেখা করতে সক্ষম হই । যাহা পরদিন দেশের প্রায় জাতীয় পত্রিকায় “ফেনী জেলার ছাত্র দলের সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরির বেগম জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ” শিরোনামে খবর ছাপানো হয়েছিল। পরদিন থেকে হান্নান ভাইয়ের বিশেষ প্রতিনিধ্বি হিসেবে আমি প্রতিদিন সন্ধ্যার পর বিভিন্ন খবরা খবর আদান প্রদানের কাজে বেগম জিয়াকে কারাগারে প্রেরণের পূর্বদিন পর্যন্ত তাঁর বাসায় যাতায়াত অব্যাহত রেখেছিলাম। যেদিন রাতে মেডামকে কারাগারে প্রেরন করা হয়েছে সেই রাতের সেই মুহুর্তেও আমি বেগম জিয়ার প্রধান ফটকের সামনে প্রহারারত ছিলাম। অকুতোভয় বি,এন,পির দুর্দিনের কান্ডারী সরকারের অরাজনৈতিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধাচারন কেবল ঘরে বসেই করেননি। দেশের এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত পর্যন্ত বি,এন,পির সকল স্তরের নেতৃবিন্দ ও তৃণমুল সকলকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য চারনের বেশে ঘুড়ে বিড়িয়ে ছিলেন। আমি তাঁর সাথে সেই সময়ের সার্বক্ষনিক সফরসঙ্গী হিসেবে যাদেরকে পেয়েছিলাম তাদের মধ্যে ছিলেন (জনাব/জনাবা) মেজর মিজান, মেজর হানিফ, রাজশাহীর মহিলা এম,পি জাহান পান্না, আশির দশকের ছাত্র নেতা কাজী খসরু, স্বপন চৌধুরী, খন্দকার বাবুল চৌধুরি, সরোয়ার আজম খান (মরহুম), ঈসা ভাই, ফোরকানি আলম, গাজীপুরের আতিক , জান্নতুল করমি ফেদৌস, শাহ জাহান সিরাজী, আবুল হোসেন আবু, সৈয়দ রবিউল হক্ব শিমুল সহ আরো অনেকেই । তখন সকলেই মনে করতেন আমি হান্নান শাহের রাজনৈতিক পি, এস । আসলে কিন্তু তা নয়। হান্নান ভাইয়ের সাথে আমার রাজনৈতিক সম্পর্ক নিবীড় হয়েছিল সেই ১৯৮৫সালের স্বৈরাচারি এরশাদ সরকার বিরোধী আন্দোলনের কোন এক অসাধ্য কাজকে সাধ্য করার মাধ্যমে । সেই দুর্বার আন্দোলনে হান্নান ভাইয়ের দেয়া অসাধ্য কাজ সাধনের ফলেই আমি তাঁর নিকট বিশ্বস্থতা ও আস্থাভাজন হয়েছিলাম। এবং হান্নান ভাইয়ের মৃত্যুর পুর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত ছিলাম একজন আস্থাভাজন এবং একজন প্রিয়জন হিসাবে।
১/১১পরবর্তি আরেকটি স্মৃতিচারন তুলে না ধরলেই নয়। সেই সেনা সমর্থিত তত্বাবোধক সরকারের অমানুষিক নির্যাতনের সময় হান্নান ভাইকে অসংখ্যবার কারাবরণ করতে হয়েছিল। অবিশ্বাষ্য হলেও সত্য যে, হান্নান ভাইয়ের নিপুন প্রশিক্ষনের নিরিখে আমি নারায়নগঞ্জের কারাগারে নেত্রী ও তাঁর চিরকুট সহ নানাহ খবারাখবর আদান-প্রদান করতে সক্ষম হয়েছিলাম। যখন হান্নান ভাই এবং বেগম জিয়ার খবরা খবরের যোগসাজশ গুরুত্বপূর্ন হয়ে পরত তখন কারাগার থেকে চিকিৎসার ছলে হান্নান ভাই ছুটে আসতেন পি,জি হাসপাতালে। আমি নিশ্চিত যে, সম্মানিত পাঠক গন চমকে উঠবেন ! হান্নান ভাই পি,জি হাসপাতালে চিকিৎসকের সহকারি হিসেবে আমি নিরিক্ষারুমেই অবস্থান নিতাম। সেখানেই চিরকুট ও খবরাখবরের আদান প্রদান হত। যাহা আমি দেশনেত্রির কাছে সরবরাহ করতাম। এসকল স্মৃতি সম্পর্কে হান্নান ভাইয়ের পি,এ জনাব. বাবুল, এ,পি,এস জনাব. সিরাজ সহ তাঁর মরহুমের দুই পুত্রগন অবগত আছেন। একবার হান্নান ভাই ও তাঁর সকল সফর সঙ্গী সহ রাজশাহী, দিনাজপুর ও নেত্রোকোণায় তিন দিনের সফর শেষে ঢাকাতে তাঁর ডি,ও,এইচ,এসস্থ বাসভবনে কোন এক সন্ধ্যায় ফিরে আসি। আমি হান্নান ভাইকে তাঁর বাসায় পৌছে দিয়ে মহাখালির মাসিক ভাড়া করা অবকাশ হোটেলে ফিরে আসছিলাম। খুবই ক্লান্তিতে আস্তে আস্তে পায়ে হেটে যাচ্ছিলাম। অর্ধপথ যেতে না যেতেই হান্নান ভাই আমাকে ফোন দিয়ে বল্লেন “যেখানে যেই অবস্থায় থাকেন না কেন আমার নিকট আসুন। (উল্লেখ্য যে, মরহুম হান্নান ভাই আমাকে সবসময় নজরুল সাহেব বলে ডাকতেন) আমি রাওয়া ক্লাবের নিকটবর্তি স্থান থেকে পুনরায় বাসায় ফিরে আসি। আসা মাত্রই আমাকে একটি চিরকুট ধরিয়ে দিয়ে বল্লেন : তীরগতিতে মেডামের বাসায় গিয়ে তিনার হাতে হাতে দিবেন। এবং বলবেন – অল্প সময়ের মধ্যে মেডামের জন্য কোন এক ব্যাক্তি এবং এক মহিলা ফলের ঝুড়ি নিয়ে আসবেন। নেত্রী যেন কোন অবস্থাতেই ঐ ফলের ভেতর ডাবের পানি এবং পাকা পেপে না খান”। আমি চিরকুট টি মেডামের হাতে হস্তান্তর করে এবং কথাটি ওনাকে অবহিত করে ফেরার পথেই বাসার প্রধান ফটকের সামনে একটি কালো গ্লাসের দামী গাড়ী দাড়ানো অবস্থায় দেখলাম। গাড়ী থেকে কোন এক মহিলা বিশাল এক ফলের ঝুড়ি নিয়ে বেগম জিয়ার বাস ভবনের দিকে যাচ্ছিল । গাড়ীতে যিনি বসেছিল তাঁর মেডামের বাসায় প্রবেশের অনুমুতি ছিল না। যাহা ছিল সম্পূর্ন এক নাটক। আর সেই কারনেই মেডাম কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর প্রানে রক্ষার জন্য আমাকে হান্নান ভাইয়ের সান্নিধ্য থেকে দীর্ঘদিন বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়েছিল। কিন্তু যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল না। প্রায় এক বৎসর পরে পরিস্থিতির আলোকে আমার সাথে হান্নান ভাইয়ের পূনঃ যোগসাজোশ শুরু হয়।
হান্নান ভাই অসুস্থ হওয়ার তিনদিন পূর্বে ৩রা সেপ্টেম্বর তাঁর বাসায় দীর্ঘক্ষন সময় কাটিয়েছিলাম। আমাকে দেখে বড়ই আফসোস করে বলেছিলেন আমাকে ক্ষমা করবেন, আপনার প্রতিভা এবং একাগ্রতার কোন মূল্যায়ন আমি করতে পারিনি। তাঁর অফিসে আমি ছাড়া আর কেউ ছিল না। রুদ্ধদ্বর কক্ষের মতোই অতীতের মত নানাহ বিষয়ে একান্তে আলাপ হয়েছিল সেদিন সে আলাপ প্রসংঙ্গে এখানে না যাওয়াই শ্রেয়।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আ,স,ম হান্নান শাহ শহীদ জিয়ার মতই আমার রাজনৈতিক ও সাংগঠিনক জীবনের আরেক মহান আদর্শ। আমি তাঁর রুহ-জগৎের মাগফিরাত কামনা করছি। মহান রাববুল আলামীন যেন তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌসের সর্বশ্রেষ্ঠ মোকাম নসীব করেন এই দোয়া করছি। যে দোয়া আমরন থাকবে ইনশাআল্লাহ্ ।
নজরুল ইসলাম চৌধুরী
সাবেক সভাপতি
জাতীয়তাবাদি ছাত্রদল ফেনী জেলা শাখা

 
 
স্বাধীন খবর ডটকম/আ আ
 

জনপ্রিয় সংবাদ

 

সর্বোচ্চ পঠিত সংবাদ