মানুষের দুর্দশা দেখতে রাস্তায় আসুন : মন্ত্রী-এমপিদের মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
মঙ্গলবার, মার্চ ১৫, ২০২২ ৪:২৬ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
মঙ্গলবার, মার্চ ১৫, ২০২২ ৪:২৬ অপরাহ্ণ
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
নির্বাচন কমিশন আলোচনার নামে ‘নতুন নাটক’ শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দেখার জন্য মন্ত্রী-এমপিদের এসি রুম ছেড়ে রাস্তায় নামুন। হাজার কোটি টাকার মালিকের সঙ্গে শ্রমিকের তুলনা করে জনগণকে বোকা বানাচ্ছে সরকার।
আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের উদ্যোগে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এই মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ইলেকশন কমিশন একটা নতুন নাটক শুরু করেছে। এই নাটকটা হচ্ছে তারা এখন বিভিন্ন পেশার বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে কথা বলছেন। গত পরশু হয়েছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা। ৩০ জনকে জানিয়েছিল আমন্ত্রণ এসেছেন মাত্র ১২ জন। সেখানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক তিনি বলছেন যে, এই তামাশাগুলো কেনো করছেন? কারণ এই নির্বাচন কখনোই সুষ্ঠু-অবাধ হবে না যদি সেখানে নিরপেক্ষ সরকার না থাকে নির্বাচনকালীন সময়ে। এটা আমার কথা নয়, এটা একজন শিক্ষকের কথা, শিক্ষাবিদের কথা। তারা খুব ভালো করেই জানেন, যেকোনো চিন্তাশীল মানুষ যারা দেশকে ভালোবাসেন তারা জানেন যে, এখন যেটা প্রয়োজন সেটা হচ্ছে যে, একটা জনগণের সরকার।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, জনগণের সরকার করতে হলে আপনাকে অবশ্যই একটা নিরপেক্ষ সরকার করতে হবে। আর নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হলে নির্বাচনকালীন সময়ে একটা নিরপেক্ষ সরকার লাগবে। আওয়ামী লীগের অধীনে হবে না। আমরা যেমন চাল-ডাল নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছি, হাটে-বাজারের সর্বত্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি ঠিক তেমনিভাবে আমাদের ভোটের অধিকারকে ফিরিয়ে আনার জন্য, আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবার জন্য, তাঁর সুচিকিৎসার জন্য, আমাদের নেতা তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনবার জন্য, আমাদের ৩৫ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করার জন্য, আমাদের কারাগারে বন্দি নেতাদের মুক্ত করবার জন্য আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। গত ১৩ মার্চ প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিুবল আউয়ালের নেতৃত্বে নতুন নির্বাচন কমিশন অংশীজনের সাথে আলোচনার অংশ হিসেবে শিক্ষাবিদদের সাথে বৈঠক করেন। কমিশনের এটা প্রথম বৈঠক।
সরকার মস্করা করছে বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, চাল-ডাল-তেল-লবণ-চিনি-এ জিনিসগুলোর দাম কোথাও একশ ভাগ, কোথাও তিনশ ভাগ বেড়ে গেছে। গোটা দেশে একটা নীরব দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে। আপনি যদি দেখেন আমাদের শ্রমিক ভাইয়েরা, রিকশা চালকরা যে পরোটা-ভাজি খান তার দামও বেড়ে গেছে। আগে যে পরোটা ছিলো ৫ টাকা, সেই পরটার দাম ১০ টাকা, যে ভাজির দাম ছিলো ৫ টাকা সেটা হয়েছে ১০ টাকা। কিন্তু আয় বাড়েনি। এই সরকারের মন্ত্রী সাহেবরা বলছেন মানুষের আয় বেড়েছে। তারা বলে যে, মাথাপিছু আয় বেড়ে গেছে। কথাটা ঠিক না। এক হাজার কোটি টাকা আয় যার মাসে, আর ১৫ হাজার টাকা আয় যার মাসে- এটা কি সমান হলো? সরকার জনগণের সঙ্গে রসিকতা করে, মস্করা করে বলছে, জনগণের আয় বাড়ছে, জনগণ ভালো আছে। আমি বলি, এভাবে মাথাপিছু আয়ের এই শুভঙ্করের ফাঁকি দিয়ে মানুষকে বোকা বানিয়ে আপনারা (সরকার) আর কতদিন চলবেন?
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার যখনই ক্ষমতায় এসেছে এই দেশকে তারা দুর্ভিক্ষে ফেলেছে। ৭৪ সালে দুর্ভিক্ষ হয়েছে..। আজকে একই অবস্থা পত্রিকায় দেখলাম, মা তার সন্তানকে খেতে দিতে না পারার জন্য সন্তানের মুখে বিষ তুলে নিজে মৃত্যুবরণ করছে, আত্মহত্যা করছে, গলায় ফাঁসি দিচ্ছে। বাংলাদেশে সমস্ত অর্জনগুলো ধ্বংস করেছে, আমাদের বেঁচে থাকার অধিকার কেড়ে নিয়েছে, আমাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে, আমাদের কথা বলার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। আমাদেরকে পুরোপুরিভাবে ক্রীতদাসে পরিণত করবার জন্য সমস্ত কাজ তারা করে চলেছে।
জাতীয়তাবাদী তাঁতীদলের আহবায়ক আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, উলামা দলের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম তালুকদার, তাঁতী দলের সদস্য সচিব মজিবুর রহমান, মহিলা দলের পারভীন আখতার প্রমুখ।