মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গঠন করা পুলিশকে জনবান্ধব হতে হবে
নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
মঙ্গলবার, মার্চ ১৫, ২০২২ ১১:১২ পূর্বাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
মঙ্গলবার, মার্চ ১৫, ২০২২ ১১:১২ পূর্বাহ্ণ
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গঠন করা পুলিশকে জনবান্ধব হতে হবে বলে জানিয়েছেন আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ। তিনি বলেন, পুলিশ নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাবনার বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। শহরের সুযোগ সুবিধা গ্রামে পৌঁছে গেছে। তাই নিরাপত্তার বিষয়েও পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে হবে।
মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ পুলিশ নির্মিত গ্রাফিক নভেল ‘দুর্জয়ের ডায়েরি’ ও অ্যানিমেটেড ফিল্ম সিরিজের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে র্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) অতিরিক্ত আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম, পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম ও পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আইজিপি বেনজীর আহমেদ বলেন, পুলিশ ছাড়া গ্রামকে শহর করা যাবে না। প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনা অনুযায়ী গ্রামকে শহর করতে হবে।
তিনি বলেন, গ্রামকে শহর করার লক্ষ্যে বিট পুলিশিং জোরদার করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষে বিট পুলিশের কার্যালয় করা হয়েছে। বিট পুলিশিংয়ের কারণে মামলা জট কমেছে।
বিট পুলিশ কর্মকর্তার দায়িত্ব সম্পর্কে তাদের জ্ঞান থাকা জরুরি। এ ছাড়া নাগরিকদেরও জানা দরকার তারা কী সেবা পাচ্ছেন অথবা পাবেন।
বেনজীর আহমেদ বলেন, এসব সেবা সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করতেই ‘দুর্জয়ের ডায়েরি’র যাত্রা। আ্যনিমেশন ফিল্মের মাধ্যমে সেবা সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করা সম্ভব। সেবা দেওয়া ও পাওয়ার বিষয়ে উপযুক্ত জ্ঞান না থাকায় ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে। এজন্য সর্বক্ষেত্রে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
আইজিপি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন প্রতিটি গ্রামই হবে শহর। যে সুযোগের আশায় মানুষ শহরে আসে, সে সুযোগ-সুবিধা গ্রামেই তৈরি হবে। শিক্ষা ও চিকিৎসাসেবাসহ অবকাঠামোগত বিষয়গুলো গ্রামে তৈরি করতে পারলে মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যাবে। আগামী ২০৩০ সালের দিকে এ চিত্র দেখা যাবে।
ড. বেনজীর বলেন, গ্রামগুলো শহরের আদলে গড়ে উঠলে তখন নিরাপত্তাও একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হবে। নিরাপত্তা ছাড়া গ্রাম শহর হবে না। নিরাপত্তা অক্সিজেনের মতো। মানবদেহ যেমন অক্সিজেন ছাড়া জীবিত থাকতে পারে না, নিরাপত্তা ছাড়াও একটি সমাজ চলতে পারে না। গ্রাম তখনই দ্রুত শহর হয়ে উঠবে, যখন নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে। এজন্য সারাদেশে আমরা বিট পুলিশিং নিয়ে কাজ করছি। এর মাধ্যমে গ্রামে সাধারণ মানুষের কাছে পুলিশি সেবা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি।
আইজিপি বলেন, একটা সময় ছিল, যখন বিপদে পড়লেই দৌড়ে থানায় যেতে হতো। এখন বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে আমরা লোকাল এলাকায় পুলিশি সেবা নিশ্চিতের চেষ্টা করছি। সরকারের কাছে চিঠি লিখে প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে একটি করে কক্ষ নিয়েছি। আমাদের বিট অফিসার ইউনিয়নে গেলে সেই কক্ষে বসতে পারেন। বিট অফিসাররা সুযোগ পেলেই নির্ধারিত তারিখে থানা থেকে ইউনিয়নে যান। আমরা প্রথমবার দেখেছি, বিট পুলিশিংয়ের কারণে ২০-২৫ হাজার মামলা কমে গিয়েছিল।
বিট পুলিশিং সম্পর্কে পুলিশ ও নাগরিকদের ভালোভাবে জানতে হবে উল্লেখ করে ড. বেনজীর বলেন, বিট পুলিশিং সেবার ক্ষেত্রে বিট পুলিশ ও নাগরিক উভয়পক্ষে আগে ভালো করে জানতে হবে, তারা কি সেবা নিতে এবং দিতে পারবেন কি না। এ কারণেই আমরা গ্রাফিক নভেল ও অ্যানিমেটেড ফিল্ম সিরিজ উদ্বোধন করেছি। এসবের মাধ্যমে দ্রুত তথ্য মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়। গ্রাফিক নভেলের মাধ্যমে আমরা নিরাপত্তাজনিত বার্তাগুলো মানুষকে দিতে চাই। আমরা চাই সেবা নেওয়ার বিষয়ে সেবাগ্রহীতার যেন স্পষ্ট ধারণা থাকে। যিনি সেবা দেবেন কাজের বিষয়ে তার ধারণাও যেন স্পষ্ট থাকে।
সঠিক ধারণা না থাকলে পুলিশি সেবা দিতে ও নিতে সমস্যা সৃষ্টি হয় উল্লেখ করে পুলিশপ্রধান বলেন, অনেক সময় দেখা যায় সেবা কোথায় থেকে পেতে পারি সে ধারণা না থাকার কারণে সমস্যা হয়। এমন অনেক অভিযোগও আসে। যেমন- জমি জমা সংক্রান্ত বিষয় অর্থাৎ দেওয়ানি সংক্রান্ত বিষয় পুলিশের কাজের মধ্যে পড়ে না। অনেকে এ ধরনের সমস্যা নিয়ে এলে আমরা তাদের সেবা দিতে পারি না। সঠিক তথ্য না থাকার কারণে দেওয়ানি সমস্যা নিয়ে আমাদের এলেও আমরা সেবা দিই না। তখন সেবা না পেয়ে ধারণা করেন, পুলিশ অন্য পার্টির কাছ থেকে টাকা খেয়েছে।
ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, বিগত বছরগুলোতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। যদিও এর মাঝে কিছু বছর গেছে গ্রহণকাল। সেই গ্রহণকাল শেষে আমরা যখন সত্যের আসল দিশা পেয়েছি, তখন থেকে বঙ্গবন্ধুর কার্যক্রম নিয়ে গবেষণা ও লেখালেখি আবারও শুরু হয়েছে। এসব গবেষণার মাধ্যমে আমরা প্রচুর তথ্য জানতে পেরেছি। পুলিশের পক্ষ থেকেও আমরা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গবেষণার উদ্যোগ নিই। পুলিশের গবেষণাটি বেশ উন্নতমানের। এটি খুব দ্রুত আমরা প্রকাশ করতে চাচ্ছি।
‘পুলিশের গবেষণায় দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে থানা করার স্বপ্ন দেখতেন। উনার স্পষ্ট ধারণা ছিল- স্বাধীনতা পরবর্তী পুলিশ কলোনিয়ান বা সেমি-কলোনিয়ান পুলিশ হবে না। স্বাধীনতা পরবর্তী পুলিশ হবে জনবান্ধব পুলিশ। উনি স্বল্প সময়ে বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রার সব বিষয় স্পর্শ করেছেন। এমন এমন আইন ও পরিকল্পনা করেছেন যেগুলো এ মুহূর্তেও কারো মাথায় আসবে না’- বলেন আইজিপি।