• আজ ভোর ৫:২৭, শনিবার, ৭ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৫ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
  • shadinkhobor24@gmail.com
  • ঢাকা, বাংলাদেশ

মেক্সিকোতে ‘গুম’ সংশ্লিষ্টরা বিচারের কাঠগড়ায়

নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ: সোমবার, অক্টোবর ৩, ২০২২ ৫:৩১ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ: সোমবার, অক্টোবর ৩, ২০২২ ৫:৩২ অপরাহ্ণ

 

আলী রীয়াজ,
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর, আটলান্টিক কাউন্সিলের অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো এবং আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট। তাঁর ফেসবুক পেজে অক্টোবর ৩, ২০২২,একটি লেখা প্রকাশিত হয়েছে।
লেখাটি বাংলাদেশ সহ সমগ্র বিশ্বের “গণতন্ত্র ও মানবাধিকার” রক্ষায় সক্রিয় সকলের জন্য খুবই উৎসাহব্যঞ্জক।
এতে দীর্ঘ ০৮ বছর পূর্বে ২০১৪ সনে মেক্সিকোর রাষ্ট্রীয় বাহিনী সমূহের সক্রিয় সংশ্লিষ্টতায় ৩৪ জন শিক্ষার্থীর ‘গুম’ হওয়ার ঘটনাকে মিথ্যা তথ্য প্রদান করায় সাবেক এটর্নি জেনারেল হিসাস মুরিলো কারাম’কে বিচারের মুখোমুখি করার আদালতের সিদ্ধান্ত সহ অন্যান্য বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।
জনাব আলী রীয়াজের অনুমোদন সাপেক্ষে লেখাটি প্রকাশ করা হলো।

মেক্সিকোর আদালতে ২৫ আগস্ট যা ঘটেছে সেই রকম ঘটনা অহরহ ঘটেনা, তার তাৎপর্য কেবল যে মেক্সিকোর জন্যেই গুরুত্বপূর্ণ তাও নয়। সম্ভবত তার তাৎপর্য সারা বিশ্বের জন্যেই আছে।
২৫ আগস্ট দেশের একজন বিচারক এই রায় দেন যে, ২০১৪ সালে সংঘটিত অপরাধের জন্যে দেশের সাবেক এ্যাটর্নি জেনারেল হিসাস মুরিলো কারাম’কে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে এবং বিচারের সময় তাকে আটক অবস্থায়ই থাকতে হবে। পাঁচ দিন আগে ২০ আগস্ট হিসাস মুরিলো কারামো-কে আটক করা হয়। তাঁর অপরাধ হচ্ছে ২০১৪ সালে ৩৪জন শিক্ষার্থীর ‘গুম’ হয়ে যাওয়ার সঙ্গে তাঁর সংশ্লিষ্টতা এবং ক্ষমতাসীন থাকা অবস্থায় এই বিষয়ে মিথ্যা তথ্য প্রদান। তাকে বিচার করা হবে গুম, নির্যাতন এবং বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ করার অভিযোগে। দেশের ফেডারেল জুডিসিয়ারি কাউন্সিল এক শুনানীর পরে স্পষ্ট করেই বলেছে যে এই ঘটনার ব্যাপারে ক্ষমতাসীন থাকা অবস্থায় হিসাস মুরিলো যে বিবৃতি দিয়েছিলেন, যাকে তখন বলা হয়েছিলো ‘হিস্টোরিকাল ট্রুথ’ তা ছিলো মিথ্যাচার।
মিস্টার কারামো এক সময়ের ক্ষমতাসীন পিআরআই দলের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা, আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত। এই রায়ের আগের সপ্তাহে ২০১৪ সালের ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ৮০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে, কমপক্ষে ৫০ জন আটক আছে।
এই ঘটনার ব্যাপারে দেশের ট্রুথ কমিশন আগস্ট মাসে বলেছে যে, ২৬ জুলাই ২০১৪ কলেজ ছাত্রদের গুম হবার ঘটনা হচ্ছে ‘রাষ্ট্র সংঘটিত অপরাধ’ (স্টেট ক্রাইম)। ট্রুথ কমিশনের এই বিষয়ে প্রতিবেদনটি প্রকাশ্য না হলেও দেশের বর্তমান এ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে তা পেশ করা হয়েছে এবং তা ‘রিফর্মা’ নামের একটি সংবাদপত্র প্রকাশ করেছে। ২৫ আগস্টের পরে এ পর্যন্ত সেনাবাহিনীর তিনজন শীর্ষ পর্যায়ের সাবেক কর্মকর্তাকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে হোসে রড্রিগাজ পেরেজ, তিনি এই ঘটনার সময়ে যে এলাকায় এই ঘটনা ঘটে – ইগুয়ালা – সেখানকার কমান্ডার ছিলেন। তাঁর পদমর্যাদা ছিলো কর্নেল, পরে তিনি সেনাবাহিনীর জেনারেল পদে ছিলেন। এখন অবসরপ্রাপ্ত অবস্থায় তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। এর বাইরে ২০২০ সালে এই ঘটনার সূত্রে আটক হন একজন ক্যাপ্টেন – হোসে মার্টিনাজ ক্রেসপো।
কী ঘটেছিল ২৬ জুলাই ২০১৪? সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী এই শিক্ষার্থীরা একটি রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে হাঙ্গামা করতে যাচ্ছে এই সন্দেহে পথে পুলিশ তাঁদের আটক করে এবং মেক্সিকোর একটি ড্রাগ গ্যাং-এর হাতে তুলে দেয়। এই মাদক ব্যবসায়ীরা শিক্ষার্থীদের হত্যা করে, তাঁদের মৃতদেহ পুড়িয়ে দেয় এবং সেগুলো নদীতে ফেলে দেয়। এই ভাষ্যকেই ‘ঐতিহাসিক সত্য’ বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে ২০১৫ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান এনরিকে পেনা নেইটোর সরকার। দেশের ট্রুথ কমিশন বলেছে এই মিথ্যা ভাষ্যের কারুকার ছিলেন তৎকালীন এ্যাটর্ণি জেনারেল। কমিশনের প্রধান বলেন যে, ঘটনা মোটেই এই রকম ঘটেনি, বরঞ্চ এই শিক্ষার্থীদের হত্যার ব্যাপারে দেশের ফেডারেল সরকারের উচ্চ-পর্যায়ে পরিকল্পনা করা হয়েছিল। গুম হয়ে যাওয়া ৩৪ জনের মধ্যে মাত্র তিন জনের মৃতদেহ পাওয়া গেছে।
ঘটনার বিস্তৃত বর্ণনা এখনও পাওয়া যায়নি, কিন্ত যা জানা গেছে তাতে দেখা যায় যে, এই শিক্ষার্থীরা মেক্সিকো সিটিতে একটি বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দিতে বাসে করে যাচ্ছিলো। এও জানা যায় যে, তাঁদের আটকের ব্যাপারে সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা ছিলো। জানা গেছে যে, এই তরুণদের আটকের পরে তাঁদের ভাগ করে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। এর মধ্যে কয়েক জনকে সেনাবাহিনীর স্থানীয় ঘাটিতেও নেয়া হয়। এঁদের কেউ কেউ বেশ কিছুদিন বেঁচেও ছিলেন।
সেনাবাহিনীর প্রধান ২০১৫ সালে বলেছিলেন যে, এই ঘটনার সঙ্গে সেনাবাহিনীর কোন ধরণের সংশ্লিষ্টতা ছিলোনা। কিন্ত ট্রুথ কমিশন তাঁদের প্রতিবেদনে যে সমস্ত তথ্য এবং যোগাযোগের প্রমাণ সংগ্রহ করেছে তাতে দেখা যায় যে, সেনাবাহিনীর সঙ্গে কথিত অপরাধীদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিলো। মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মেক্সিকোর সেনাবাহিনীর যোগাযোগের অনেক ধরণের ইতিহাস এবং প্রমাণ আছে। কিন্ত তা স্বত্বেও রাষ্ট্রীয় উচ্চ পর্যায় থেকে গুম, হত্যা, অস্বীকার এবং তা ধামাচাপা দেবার এই ঘটনা এখন অনেক বেশি আলোচিত। এই ঘটনার প্রাথমিক তদন্তের জন্যে যিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন টামাস জেরনকে এখন তদন্তের জন্যে ইসরাইল থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে মেক্সিকো সরকার।
এই ঘটনার সঙ্গে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সংশ্লিষ্টতার পাশাপাশি এ্যাটর্নী জেনারেলের অফিসের কার্যকলাপ নিয়ে এই সব প্রশ্নের আরেকটি উৎস হচ্ছে গত শনিবার স্পেনের সংবাদপত্র এল পায়েস-এর প্রতিবেদন। তাতে বলা হচ্ছে যে, ২০২০ সালে এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে ক্যাপ্টেন ক্রেসপো’কে আটকের সময় এ্যাটর্নী জেনারেলের অফিস একজন বিচারককে অনুরোধ করেছিলো যেন সেনাবাহিনীর ১৬ জনের বিরুদ্ধে জারি কারা গ্রেফতারি পরোয়ানা যেন বাতিল করে দেয়া হয়।
২০১৪ সালের এই ঘটনার বিচার এখনও শুরু হয়নি, ভুক্তভোগী পরিবারগুলো তাঁদের দাবি এবং সক্রিয়তা অব্যাহত রেখেছেন, দেশের মানবাধিকার সংস্থাগুলো সক্রিয় আছে। কিন্ত মেক্সিকোর এই ঘটনা স্মরন করিয়ে দেয় যে, এই ধরণের অপরাধ তামাদি হয়ে যায়না, উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিরা তা থেকে দায়মুক্তি পেতে পারেনা, এবং ন্যায় বিচারে যারা বাধা দেয় তাঁরাও অপরাধী বলেই বিবেচিত হয়।

আলী রীয়াজ এর ফেইসবুক থেকে

Print Friendly, PDF & Email
 
 
স্বাধীন খবর ডটকম/আ আ
 

জনপ্রিয় সংবাদ

 

সর্বোচ্চ পঠিত সংবাদ

error: Content is protected !!
error: Content is protected !!