মেলায় এসে চাকুরি পেল ৫২ প্রশিক্ষিত প্রতিবন্ধী ব্যক্তি
নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
রবিবার, মার্চ ২০, ২০২২ ১০:৩২ পূর্বাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
রবিবার, মার্চ ২০, ২০২২ ১০:৩২ পূর্বাহ্ণ
ঢাকা- প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আইসিটি বিভাগের নেতৃত্বে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) আয়োজিত চাকুরি মেলায় এসে চাকুরি পেয়েছে ৫২ জন প্রশিক্ষিত প্রতিবন্ধী ব্যক্তি। এছাড়াও এ চাকুরি মেলায় কর্মসংস্থানের জন্য আরও ৩১০ জনকে সংক্ষিপ্ত তালিকায় রাখা হয়েছে। এ তালিকা থেকে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলো পর্যায়ক্রমে চাকুরির জন্য আহ্বান জানাবে। ২০ মার্চ ২০২২ তারিখ রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় অবস্থিত এনজিও বিষয়ক ব্যুরোতে দিনব্যাপী এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
মেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে উদ্বোধন করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জনাব জুনাইদ আহমেদ পলক, এমপি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব জনাব এন এম জিয়াউল আলম, পিএএ, এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক কে. এম. তারিকুল ইসলাম এবং সিএসআইডি’র নির্বাহী পরিচালক খন্দকার জহুরুল আলম, সূচনা ফাউন্ডেশনের চিফ অপারেটিং অফিসার ডা. সাকী খন্দকার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক ড. মোঃ আব্দুল মান্নান, পিএএ।
বিসিসি আয়োজিত এ চাকুরি মেলায় তথ্যপ্রযুক্তি খাতের চাকুরীদাতা প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন, KFC, Chaldal, Foodpanda, walcard, My out sourcing, Digicon, Metronet, BACCO, BCS, FBCCI, CCOAB, e-CAB, WE এবং এনজিওসহ মোট ৫২ টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। সারা দেশ থেকে এ চাকরি মেলায় অংশ নেন পাঁচ শতাধিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি। যারা তাদের নিজ যোগ্যতায় কাজ পেতে বায়োডাটা জমা দেন।
সেন্টার ফর সার্ভিসেস এন্ড ইনফরমেশন অন ডিজ্যাবিলিটি (সিএসআইডি) ও এনজিও বিষয়ক ব্যুরো এবং বিসিসি’র “তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে এনডিডিসহ সব ধরণের প্রতিবন্ধী ব্যক্তির ক্ষমতায়ন” প্রকল্পের সহযোগিতায় এবারের মেলার আয়োজন করা হয়। তাছাড়া এবারের চাকুরি মেলায় পিআর পার্টনার হিসেবে কাজ করছে বাংলাদেশের অন্যতম পিআর প্রতিষ্ঠান মিডিয়া কোয়েস্ট বাংলাদেশ।
মেলায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, এমপি বলেন, “ দশ বছর আগেও অধকিাংশ পরিবারে মনে করা হতো প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা, তবে সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপ ও প্রযুক্তির কল্যানে সেই ধারণা অনেক পাল্টে গেছে। এখন আর বোঝা নয়, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা অন্য সবার মতই দেশ গড়ার কারিগর। তারা দেশের জন্য বড় সম্পদ।’ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অক্ষমতা না দেখে তাদের সুপ্ত প্রতিভাকে খুঁজে বের করতে হবে। এজন্য ব্যক্তির ও সমাজের মনোভাবের পরিবর্তন জরুরি। বর্তমান সরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও চাকরি উভয় জায়গায় তাদের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করছি আমরা। বুদ্ধি প্রতিবন্ধী, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীসহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধিতা অনুযায়ী চাকরির ব্যবস্থা করছে সরকার।”
তিনি আরও বলেন, “প্রযুক্তি শুধু স্বাভাবিক মানুষের জন্য নয়, বিশেষ ভাবে সক্ষম মানুষের জন্যও। তারই অংশ হিসেবে আমরা ‘এম্পোরিয়া’ নামে নতুন প্রকল্প গ্রহণ করছি। যেখানে মোট ১০,৬০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। যার মধ্যে থাকবে উদ্যোক্তা উন্নয়ন ৫৬০, ফ্রিল্যান্সার তৈরী ১০০০ এবং জব ওরিয়েন্টেড ইন্টার্নশীপ প্রোগ্রামের আওতায় ১০০০ জন। অনলাইনে শুধুমাত্র প্রতিবন্ধী উদ্যোক্তা ভাই-বোনদের তৈরী পণ্য কেনা বেচার জন্য ই-ট্রেডিং পোর্টাল উন্নয়ন করা হবে। প্রকল্পের এ কার্যক্রম ১০ টি আইসিটি রিসোর্স সেন্টারসহ প্রত্যেক জেলায় এর কার্যক্রম বিস্তৃত হবে। প্রতিবন্ধীদের পাশে দাঁড়াতে শুধু সরকার নয়, দেশের সর্বস্তরের মানুষকে এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে। সচেতন নাগরিকরা যদি তাদের কাজে লাগাতে পারে তাহলে তারা দেশের সম্পদে পরিণত হবে।”
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক ড. মোঃ আব্দুল মান্নান বলেন, “চাকুরিদাতা প্রতিষ্ঠান ও চাকুরি প্রার্থীদের মাঝে পারস্পরিক সর্ম্পক তৈরি করতেই আমাদের এই চাকুরি মেলার আয়োজন। আমরা আশা করি, এই মেলার মাধ্যমে যে সম্পর্ক তৈরি হবে, এতে অধিকাংশ চাকুরি প্রার্থীরা চাকুরি পাবে। আমাদের মোট ৭টি আঞ্চলিক কার্যালয় রয়েছে। যার মাধ্যমে আমরা প্রতিবন্ধীদের বিভিন্ন সেক্টরে দক্ষ করে তুলি। ইতোমধ্যে আমরা চার হাজার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। যার মধ্য থেকে সাত শতাধিকেরেও বেশি প্রতিবন্ধী চাকরি পেয়েছে। এছাড়াও এসব প্রশিক্ষণের মাধ্যমে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতেও পারবে প্রতিবন্ধীরা।”
অন্যান্য অতিথিবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য প্রদান করেন এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক জনাব কে. এম. তারিকুল ইসলাম, সিএসআইডি’র নির্বাহী পরিচালক খন্দকার জহুরুল আলম, এবং স্বাগত বক্তব্য রাখবেন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের পরিচালক (প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন) জনাব মোহাম্মদ এনামুল কবির। এছাড়া আরও বক্তব্য রাখেন সূচনা ফাউন্ডেশনের চিফ অপারেটিং অফিসার ডা. সাকী খন্দকার।
এদিকে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বৈষম্যহীন সোনার বাংলা গড়তে দেশের প্রথম সারির আইটি প্রতিষ্ঠান সিনেসিস আইটি এবছরের প্রতিবন্ধীদের ‘চাকুরী মেলা ২০২২’ এ অংশগ্রহণ করেছে। এই আয়োজনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা তাদের সিভি জমা দিয়ে নিজেদের বিভিন্ন ফিল্ডের দক্ষতা প্রদর্শন করে চাকুরী জোগাড় করতে সক্ষম হচ্ছে। প্রতিবন্ধীদের প্রতি বৈষম্য দূরীকরণের পাশাপাশি সিনেসিস আইটি নারী বৈষম্য নিয়েও সোচ্চার, যারই ধারাবাহিকতায় তাদের প্রতিষ্ঠানে রয়েছে ৪০ শতাংশ নারী শক্তি । ‘চাকুরী মেলা ২০২২’ এ সিনেসিস আইটি এর স্টলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সিভি জমা দেয়ার সুবিধার্থে তৈরী করেছে নতুন QR Code, যা স্ক্যান করলেই গ্রাহক চলে যাবে সিভি ফরম ওয়েব পেইজে৷ এই পেইজে গিয়ে আনুষাঙ্গিক তথ্য প্রদানের পাশাপাশি সিভিও জমা দেয়া যাবে। লিংক https://docs.google.com/forms/d/e/1FAIpQLSc-9fLOtzGABQAD470RJWkn2iSJY_6_2H0mnRGeho2nTZ3LIg/viewform
উল্লেখ্য, সূচনা ফাউন্ডেশন ও সিএসআইডি’র বিশেষজ্ঞ সহায়তায় বিসিসি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য তথ্য প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ পরিচালনা করে আসছে। এ প্রশিক্ষণ বিসিসি’র মোট ৭টি কেন্দ্রে (ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, সিলেট ও ফরিদপুর) পরিচালনা করা হয়। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য আইসিটি প্রশিক্ষণসহ চাকুরী মেলা, জাতীয় যুব আইটি প্রতিযোগিতা আয়োজন, আন্তর্জাতিক যুব আইটি প্রতিযোগিতায় সহযোগিতা প্রদান এবং আইসিটি বিভাগের পক্ষ থেকে গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে সভা, বিভাগীয় সেমিনার ও স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপকভাবে প্রচারের লক্ষ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্যাম্পেইন আয়োজন করা হয়। এসকল কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য বিগত জুলাই ২০১৭ থেকে জুন ২০২২ মেয়াদে “তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে এনডিডিসহ সব ধরণের প্রতিবন্ধী ব্যক্তির ক্ষমতায়ন” শীর্ষক একটি প্রকল্প বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এ পর্যন্ত বিসিসি হতে মোট ১৬৭১ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি আইসিটি প্রশিক্ষণ লাভ করেছে। এছাড়া প্রকল্পের অধীনে আরো প্রায় ২৭০০ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্যে ২০১৫ সাল হতে এ মেলার মাধ্যমে এ পর্যন্ত সাত শতাধিক আইসিটিতে দক্ষ প্রতিবন্ধী ব্যক্তির কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।