মৌলভীবাজারে টিসিবি’র পণ্য বিক্রি, দুর্ভোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
সোমবার, মার্চ ২১, ২০২২ ৬:৪৯ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
সোমবার, মার্চ ২১, ২০২২ ৬:৪৯ অপরাহ্ণ

মৌলভীবাজার থেকে
রোববার থেকে মৌলভীবাজার জেলার ৭টি উপজেলায় ২৪ জন ডিলারের মাধ্যমে একযোগে শুরু হয়েছে টিসিবি’র পণ্য বিক্রি কার্যক্রম। ৪৬০ টাকায় ১ম প্যাকেজে ২ কেজি চিনি, ২ কেজি মসুর ডাল, ২ লিটার তেল পাবে ৭২ হাজার ৪শ’ ২৪টি পরিবার। এই কার্যক্রমের ১ম ও ২য় দিনের পণ্য বিক্রির বিষয়ে উপকারভোগীরা জানান, গ্রাম কিংবা ওয়ার্ড পর্যায়ে প্রকৃত গরিব ও হতদরিদ্র অনেকেই এই কার্ড পাননি। ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য কিংবা চেয়াম্যানের সঙ্গে যাদের সুসম্পর্ক রয়েছে কেবল তারাই পাচ্ছেন সরকারের এই বিশেষ কার্ড। এছাড়া নির্দিষ্ট দিনে কেবল ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে এই টিসিবি’র পণ্য বিক্রি করায় প্রচন্ড রোদে বিপুল জনসমাগোমে দূর্ভোগ চরমে উঠছে। আবার অনেকেই ইউপি চেয়ারম্যান, সদস্য, ডিলার কিংবা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সম্পর্ক থাকায় লাইনে না দাঁড়িয়েই পণ্য সহজেই পেয়ে যাচ্ছেন। অনেকেই জানান- পণ্য বিক্রি কার্যক্রম যদি শুধুমাত্র ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে না হয়ে প্রতিটি ইউনিয়নের ২-৩টি স্থানে দেয়া যেত, তাহলে তাদের জন্য অনেক সুবিধা হতো। কারণ ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকার লোকজন দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ৬ কেজি পণ্য ক্রয় করে যে টাকা সাশ্রয় হচ্ছে, তা তাদের যাতায়াত খরচ বাবতই চলে যাচ্ছে।
তাছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে একসঙ্গে এত লোকের ভিড় হওয়ায় ওই দিন ইউনিয়ন পরিষদের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনায়ও চরম ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদে আসা ট্যাক্স, জন্ম -মৃত্যু সনদ, পরিচয়পত্রসহ এ জাতীয় কাজের উপকারভোগীরাও অনেকটাই বিড়ম্বনায় পড়ছেন।
এদিকে টিসিবি পণ্য বিক্রয় কার্যক্রমের ১ম দিনে জেলার সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট ইউনিয়নে অনিয়ম ধরা পড়েছে। ওই ইউনিয়নে টিসিবি পণ্য বিক্রিতে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে। একই পরিবারে দু’টি কার্ড ও দরিদ্র পরিবারের পরিবর্তে স্বচ্ছল ব্যক্তিরাও এই সুবিধার আওতায় এসেছেন। ওই দিন শহরতলী চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের বর্ষিজোড়া এলাকার ব্যবসায়ী মামুনুর রশীদ মোটরসাইকেল চালিয়ে নিজ ও স্ত্রীর নামে কার্ড নিয়ে এসেছিলেন টিসিবি’র পণ্য সংগ্রহ করতে। একই পরিবারে দু’জন ও সচ্ছল থাকায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরিনা রহমান বাঁধন তাৎক্ষণিক তার দু’টি কার্ড বাতিল করে পণ্য আটকানোর নির্দেশ দেন। একইভাবে রিক্সাচালক মামুন মিয়া এসেছিলেন ইংল্যান্ড প্রবাসী মিছবাহ ও শিক্ষার্থী জয়ের নামে দু’টি কার্ড নিয়ে। কিন্তু তিনি নিজেই জানেন না ওই দুই ব্যক্তি কে। এই অনিয়মের অভিযোগের প্রেক্ষিতে চাদঁনীঘাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আখতার উদ্দীন গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, আমার ইউনিয়নের প্রত্যেক সদস্যদের দ্রুত সময়ে এই কার্ড করতে বলেছিলাম। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে তারা দু’-এক জায়গায় একটু সমস্যা করেছেন। আমরা এই সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে অবশ্যই সমাধান করবো।
এবিষয়ে মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরিনা রহমান বাঁধন জানান, অভিযোগের প্রেক্ষিত সরজমিন অনিয়মের বিষয়টি ধরা পড়ে। তাৎক্ষণিক এক সচ্ছল ব্যক্তি দু’টি কার্ড নিয়ে পণ্য নিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে দাঁড় করিয়ে তার নেয়া পণ্য আটকানো হয় এবং দু’টি কার্ড বাতিল করা হয়। বাতিলকৃত দু’টি কার্ড দু’জন অসচ্ছল মানুষকে দেওয়ার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, যাতে প্রান্তিক দরিদ্র লোকজনেরা সহজেই এ সেবাটি পান সেজন্য আমরা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে না রেখে তা একেবারেই ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত নিয়ে গেছি। আপাতত এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হচ্ছে না। পরবর্তীতে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখবো। আর উপকারভোগী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অনিয়মের বিষয়টি আমার জানা ছিলো না। যখন জেনেছি এ বিষয়টি যাতে আরও স্বচ্ছ ও সঠিক হয় সে বিষয়ে প্রত্যেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের আরও সতর্ক থেকে বিষয়টি মনিটরিংয়ের জন্য নির্দেশনা দেবো।
স্বাধীন খবর ডটকম/আ আ
