• আজ সকাল ৮:৩১, বুধবার, ১১ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৭শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
  • shadinkhobor24@gmail.com
  • ঢাকা, বাংলাদেশ

‘ম্যাডামের’ পাশে থেকো, বললেন খোন্দকার দেলোয়ার

নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ: মঙ্গলবার, মার্চ ১৫, ২০২২ ৭:৫০ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ: মঙ্গলবার, মার্চ ১৫, ২০২২ ৭:৫০ অপরাহ্ণ

 

সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল 

আকাশে অজস্র তারকারাজির মধ্যে শুকতারা কিংবা ধ্রুবতারা যেমন স্বমহিমায় উজ্জ্বল, বিএনপির রাজনৈতিক আকাশে তেমনি অবস্থান খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের। তার ঔজ্জ্বল্য যেমন নষ্ট হয় না, তেমনি ঘন আঁধারে দিকহারা নাবিকের পথ চলাও তার সাহায্যেই বন্ধ হয় না। ঘনঘোর একটা অমানিশারকালে বেগম খালেদা জিয়া তার দুই সন্তানসহ কারাগারে গেলে সুবিধাভোগী গুবরে পোকাগুলো পেশী প্রদর্শনসহ লোভের বড়শি নিয়ে বিএনপির পরিবারের অনেকের দরজায় হানা দিলো। অনৈতিক সুবিধার লোভ ও ভীতি প্রদর্শন দুই-ই চলছিল। মরহুম আবদুল মান্নান ভূঁইয়াকে সামনে রেখে শীতের পাখির সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছিল। অনেকে মূল ভিত্তি ধরে রাখা কিংবা পরিস্থিতি আরো দেখার অপেক্ষায় আত্মগোপন করল। সাহসী হাতেগোনা যারা অভয়বাণী শোনাতে লাগলেন, কর্মীরা তাদের পাশে ধীরে ধীরে জড়ো হতে লাগল। দূরদর্শী বেগম জিয়া চড়বিৎ ড়ভ অঃঃড়ৎহবু দিলেন খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে। এক সময়ের ভালো সাঁতারু-দুর্দান্ত হা-ডু-ডু খেলোয়াড়, মহান ভাষা সংগ্রামী-’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সৈনিক মরহুম দেলোয়ার তার নীতিনির্ভর দৃঢ়তা-বিশ্বস্ততা-সাহস এবং কৌশল দিয়ে হাল ধরলেন। জাহাজ সুযোগ্য নাবিক পেয়ে তরতর করে এগিয়ে চলল নির্দিষ্ট লক্ষ্যে। জাহাজের ক্রু হলেন আরো অনেকে। আজ তাদের কেউ কেউ জীবিত এবং অনেকে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। জাতীয় সংসদ ভবনের ঠিক দক্ষিণে ন্যাম ভবনে থাকতেন খোন্দকার দেলোয়ার। নেতাকর্মীরা কেউ চাচা, কেউ ভাই বলে সম্বোধন করতেন। দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মুখচ্ছবি।

এক দিন সন্ধ্যার পরে তাকে উদ্দেশ করে ন্যাম ভবনে ঢুকতেই দেখি পরনে লুঙ্গি-পাঞ্জাবি, হাতে ছড়ি নিয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে বেরিয়ে যাচ্ছেন। জিজ্ঞেস করায় কোনো উত্তর না দিয়ে বললেন, তুমি সরে যাও, সাবধানে থেকো, গ্রেফতার করবে কিন্তু। পরে শুনেছি গোয়েন্দারা তার পুত্র পবনকে গ্রেফতার-নির্যাতনকালীন তার আর্তচিৎকার শুনিয়ে দেলোয়ার ভাইকে বেগম জিয়ার কাছ থেকে সরাতে চেয়েছে। না পেরে বড় পুস্কারের লোভও দেখিয়েছে। কোনো কিছুই তাকে টলাতে পারেনি। অথচ নেত্রীর নির্দেশে বেশ ক’জন ডাকসাঁইটে নেতার কাছে গোপনে গিয়েছিলাম, তারা ই.ই.ঈ বাংলার একটি অনুষ্ঠানের মতো ণবং, ইঁঃ, ওভ ইত্যাদির বাইরে যেতে সক্ষম হননি। এক হরতালের দিনে বিএনপির পল্টন অফিসে আমরা কিছু লোক অবরুদ্ধ। অফিস ঘিরে রাস্তায় র‌্যাব-পুলিশ-গোয়েন্দা গিজগিজ করছে। ইচ্ছে করে, দূরে রিকশা থেকে নামলেন দেলোয়ার। ‘বুক চিতিয়ে সোজা হয়ে হাতের ছড়িটা দিয়ে সামনে আসা বাহিনীগুলোকে সরে যাওয়ার ইঙ্গিত করছেন আর দৃঢ় পদক্ষেপে হেঁটে যাচ্ছেন’। এই ছবি বহুকাল প্রেরণা জোগাবে ঈমানদার নেতৃত্বকে। পাজামা আর গোল গলার হাফহাতা সাদা গেঞ্জি ছিল তার ঘরোয়া পোশাক।

সাধাসিধে বেশভূষা আর পরিচিত স্বাভাবিক খাবার দেলোয়ার ভাইয়ের। বুকের পাটা-মাপার যন্ত্র বোধহয় আবিষ্কৃত হয়নি। একান্ত পরিবেশে প্রায়ই বলতেন, দেড় থেকে দু’বছরের বেশি অস্বাভাবিক সরকার টিকবে না। আত্মগোপনে যেতেন নিভৃতে। সঠিক সময়ে হাজির হতেন সংবাদ মাধ্যমে জাতির কাছে। বয়স, শরীর, রক্তচক্ষু বা প্রলোভন কোনো কিছুই তাকে টলাতে পারেনি আমানত পাহারা দেয়া থেকে। হাসপাতাল থেকেও ভোর রাতে গেরিলা কায়দায় আত্মগোপনে চলে গেলেন গোয়েন্দাদের অভিযানের মুখে। ওই দিন দুঃসাহসী ভূমিকা না নিলে পরবর্তী বিএনপি আরো বিপর্যয়ে পড়ত। তার নির্দেশনাগুলো পালন করতে গিয়ে খুব কাছে অনেক নেতার সাথে মনোমালিন্য হলো আমার; যদিও তারাও বেগম জিয়ার প্রতি ছিলেন অবিচল। দেশনেত্রীর মুক্তির পর নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোর বিরোধী ছিলেন দেলোয়ার ভাই। অনেকের কাছে বলেছেন, ২৫-৩০ আসন দেবে। শুধু শুধু এদের বৈধতায় শরিক হবো কেন’? এই ইস্যুতে নীতিনির্ধারণী ফোরামে তার মতবিরোধ স্পষ্ট করলেন তিনি। অস্বাভাবিক সরকারের বিদায়ের পর ২০০৯-এ বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হলো। কাউন্সিলে লোগো ছিল দেশনেত্রীর হাত তুলে অভিনন্দন জানানোর ছবি আর স্লোগান ছিল ‘দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও’।

নতুন জাতীয় কমিটিতে মহাসচিব পদ নিয়ে খানিকটা নাটকীয়তা করল অতি উৎসাহী কেউ কেউ। দেলোয়ার ভাই কষ্ট পেয়েছিলেন। মুখ ফুটে কিছু বলেননি। সূর্য যেমন মেঘের আড়ালেও হাসে, মনের জমানো মেঘ রেখেই তিনি হাসতেন। একবার তার জীবদ্দশায় সহযাত্রী হয়ে মানিকগঞ্জের পাঁচুরিয়া গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলাম। লুঙ্গি-গেঞ্জি পরিহিত নেতা মাটিতে বসে আমাদের নিয়ে বাঙালির দুপুরের ভাত-মাছ ব্যঞ্জন খেয়েছিলেন। কি তৃপ্তি, কি আন্তরিকতা, অনানুষ্ঠানিক আত্মীয়তার কি বন্ধন! অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী অবস্থায় হাসপাতালে বহুবার গেছি। তার প্রাণশক্তি যে, কি মোহনীয় তা ভাষায় প্রকাশ করা দুঃসাধ্য। উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার আগে যখন দর্শনার্থী প্রবেশ নিষেধ, তখন এক দিন দূর থেকে দেখে ফিরে আসছিলাম- তিনি হাত ইশারায় কাছে ডাকলেন।’

ইশারায় তার মুখের কাছে কান পাততেই শুনলাম ‘ম্যাডামের’ পাশে থেকো। গোটা দেশটাকে পরিবার বানিয়ে নিজ পরিবারে দেশনেত্রী বড় একা। হাজারো মাইল দূরে তার সন্তানরা। ঈমানী পরীক্ষা আরো আসবে। জাতীয়তাবাদী সাচ্চা নেতৃত্বের বন্ধু খুব কম, দেশে বড় সঙ্কট আসবে। দৃঢ় এবং অবিচল থেকো’। আরো কিছু কথা…। অরৎ অসনঁষধহপব এ ওঠার পথে সাংবাদিকদের বললেন, ‘জিয়া পরিবারের কাছে আমি চিরঋণী। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া-তারেক রহমান আমার জন্য অনেক কিছু করেছেন। আপনারা দোয়া করবেন’। এরপর আর তার কণ্ঠ শুনিনি। পাঁচুরিয়ায় তাঁর কবরটির কাছে গেলে সব দুঃসময়ের স্মৃতিগুলো ভেসে ওঠে মানসপটে। বলতে ইচ্ছে করে, হে বিশাল মনের নেতা, আমরা আপনার কাছে চিরঋণী। বিএনপি আপনার কাছে ঋণী। মহান রাব্বুল আলামিন আপনাকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসিব করুন- আমিন।

Print Friendly, PDF & Email
 
 
স্বাধীন খবর ডটকম/আ আ
 

জনপ্রিয় সংবাদ

 

সর্বোচ্চ পঠিত সংবাদ

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
error: Content is protected !!
WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
error: Content is protected !!