যে কারণে ক্ষুব্ধ সিলেটের সিএনজি পাম্প মালিকরা
নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
শুক্রবার, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২২ ৭:১৫ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
শুক্রবার, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২২ ৭:১৫ অপরাহ্ণ
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
সিলেট বিভাগের অধর্শতাধিক সিএনজি ফিলিং স্টেশনের মালিক ক্ষুব্ধ। জালালাবাদ গ্যাস কর্তপক্ষের আচরণের কারণে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বিষয়টি জানিয়েছেন জেলা প্রশাসককেও। ইতিমধ্যে তারা সার্বিক বিষয়টি অবগত করে চিঠি দিয়েছেন। সিএনজি পাম্পের মালিকরা জানিয়েছেন- সড়কে গাড়ি বেড়েছে। খোদ বিআরটিসি গাড়ি বাড়িয়েছে। সবাইকে গ্যাস দিতে হচ্ছে। এই অবস্থায় বারবার গ্যাসের লোড বাড়ানোর জন্য আর্জি জানালেও বিষয়টি নজরে আনা হচ্ছে না।
এখন লোড বাড়ানোর অজুহাতে পাম্প বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। ২০১০ সাল থেকে সারা দেশে সিএনজি ফিলিং স্টেশনের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথমে স্বল্প পরিসরে চালু হলেও চাহিদা বিবেচনায় আরও কয়েকটি সিএনজি পাম্প চালু হয়। বর্তমানে সব মিলিয়ে সিলেট বিভাগে ৫২টি সিএনজি পাম্প রয়েছে। সিএনজি ফিলিং স্টেশন এসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০১০ সালে প্রথম পর্যায়ে যখন কার্যক্রম শুরু করা হয় তখন তারা সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। তখন সিএনজি বিক্রির জন্য ১২ ঘণ্টায় দিন ও ২৬ দিনে মাস ধরা হতো। পাশাপাশি নির্ধারিত লোডের মধ্যে গ্যাস বিক্রির নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। প্রথমদিকে ব্যবসায়ীরা চাহিদা বিবেচনার বিষয়টি বুঝতে পারেননি। কিন্তু ব্যবসা শুরু করার দু’এক বছরের মাথায় চাহিদা বেড়ে যায়। এসোসিয়েশন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, লোড বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে তারা একাধিকবার বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান সিলেটের জালালাবাদ গ্যাস লিমিটেডকে জানিয়েছেন। পাশাপাশি তারা লোড বাড়ানোর দাবি তুলে পত্রও দেন। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা এ ব্যাপারে কোনো ইতিবাচক সাড়া দেননি। তবে কয়েক বার সতর্ক করার পর এসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা অফিসে গিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে মৌখিক এসব বিষয় জানিয়েও আসেন। এই অবস্থায় ১০ই ফেব্রুয়ারি হঠাৎ করে নগরীর শিবগঞ্জের মেসার্স সুরমা অটো কেয়ার নামের একটি সিএনজি পেট্রোল পাম্পে জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে অভিযান চালানো হয়। বিক্রীত গ্যাসের লোড বেশি হওয়ার অজুহাতে কর্মকর্তারা ওই পাম্পের গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে চলে যান। পরে অবশ্য ২০ হাজার টাকা জরিমানা গ্রহণের মাধ্যমে ওই পাম্পের গ্যাস সংযোগ স্বাভাবিক করে দেয়া হয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে সিএনজি পাম্প মালিকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে দাবি করেছেন সিএনজি ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড কনভার্সন ওয়ার্কশপ ওনার্স এসোসিয়েশন, সিলেট বিভাগের সভাপতি আমিরুজ্জামান চৌধুরী। তিনি জানিয়েছেন, পেট্রোবাংলার নির্দেশানুযায়ী প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত গ্যাস বিক্রি বন্ধ রাখা হচ্ছে। দেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদার কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লোডের অতিরিক্ত গ্যাস বিক্রি করতে হয়। গ্যাসের অনুমোদিত লোড বৃদ্ধির জন্য বারবার আবেদন জানানো হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এদিকে- জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত না পেয়ে বৃহস্পতিবার এ নিয়ে জেলা প্রশাসক মজিবর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন সিলেট চেম্বার এবং সিএনজি ফিলিং স্টেশন এসোসিয়েশনের নেতারা। এ সময় তারা জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপিও পেশ করেন। এতে সিএনজি পাম্প মালিকরা দাবি করেন- বিভিন্ন সময়ে সরকার প্রদত্ত ও প্রকাশিত গেজেট এবং নির্দেশনা অগ্রাহ্য করে জালালাবাদ গ্যাস এ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে। পাশাপাশি অন্যান্য সিএনজি স্টেশনগুলোর সংযোগ বিচ্ছিন্নের ক্রমাগত হুমকি দেয়া হচ্ছে। জালাবাদ গ্যাস থেকে বলা হচ্ছে, ২০১০ সালের গ্যাস আইনের ১২ (২) ধারা বলে বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। কিন্তু আইনের এ ধারায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো উল্লেখ নেই। চিঠিতে বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত গেজেট ও নির্দেশনা মোতাবেক সংযোগ বিচ্ছিনকরণ বন্ধ এবং অন্যান্য গ্যাস বিপণন প্রতিষ্ঠানে ন্যায় জালালাবাদ গ্যাস এর আওতাধীন সিএনজি স্টেশনগুলোর লোড দৈনিক ১২ ঘণ্টার পরিবর্তে ২০ ঘণ্টা এবং মাসে ২৬ দিনের পরিবর্তে ৩০ দিন করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। জেলা প্রশাসক মজিবর রহমান ব্যবসায়ীদের বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিয়ে বলেছেন- ‘জ্বালানি খাত সরকারের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাত। এ খাতের সঙ্গে জড়িত সিএনজি স্টেশন মালিকদের সুবিধা-অসুবিধা দেখা সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। তিনি সিএনজি স্টেশন মালিক এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ কর্তৃক উত্থাপিত সমস্যাসমূহ সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস প্রদান করেন।’ সিলেট চেম্বারের সভাপতি তাহমিন আহমদ জানিয়েছেন- সিলেটের সিএনজি ফিলিং স্টেশন মালিকরা গ্যাসের অনুমোদিত লোড বৃদ্ধির জন্য জালালাবাদ গ্যাস, পেট্রো বাংলাসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ে দীর্ঘদিন থেকে দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করে অতিরিক্ত গ্যাস বিক্রির কারণে বিভিন্ন সিএনজি স্টেশনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হচ্ছে।পেট্রোলিয়াম ডিলার্স, ডিস্ট্রিবিউটর্স, এজেন্ট্স অ্যান্ড পেট্রোল পাম্প ও ওনার্স এসোসিয়েশন, সিলেট বিভাগ শাখার সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট চেম্বারের সাবেক সহ-সভাপতি জুবায়ের আহমদ চৌধুরী জানিয়েছেন- দেশের ক্রমবর্ধমান যানবাহন বৃদ্ধির আলোকে জ্বালানির চাহিদা বিবেচনায় এ হিসাবটি বাস্তবতাবহির্ভূত। দেশের অন্যান্য গ্যাস বিপণন প্রতিষ্ঠানের ন্যায় জালালাবাদ গ্যাসের আওতাধীন সিএনজি স্টেশনসমূহের গ্যাস বিক্রয়ের লোড বৃদ্ধি করা একান্ত আবশ্যক। এ ব্যাপারে জালালাবাদ গ্যাস লিমিটেড’র এমডি প্রকৌশলী শুয়েব আহমদ জানিয়েছেন- পেট্রোবাংলার নিয়ম এখানে পালন করা হচ্ছে। নিয়ম পরিবর্তন করতে ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষের এখানে কিছু করার নেই বলে দাবি করেন তিনি।