যে কারণে ভয়াবহ বন্যার মুখে সিলেট
নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
শনিবার, জুন ১৮, ২০২২ ৬:২৩ পূর্বাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
শনিবার, জুন ১৮, ২০২২ ৬:২৩ পূর্বাহ্ণ
স্টাফ করেসপন্ডেট
সিলেট: মাত্র এক মাসের ব্যবধানে আবারও ভয়াবহ বন্যার মুখে পড়েছে সিলেট বিভাগ। এই বিভাগের প্রায় ৮০ ভাগ জায়গা তলিয়ে গেছে পানিতে। চারটি জেলার মধ্যে সুনামগঞ্জ ও সিলেটের অবস্থা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। হঠাৎ সিলেট কেন এমন ভয়াবহ বন্যার মুখে পড়ল সেটা নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন। এমনকি বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকেও কোনো আভাস ছিল না।
আবহাওয়াবিদরা এই বন্যার পেছনে বড় কারণ হিসেবে দেখছেন ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ইস্ট খাসি হিল জেলার চেরাপুঞ্জিতে রেকর্ড বৃষ্টিপাতকে। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ৯৭ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা গত ১২২ বছরের মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড।
স্থানীয় আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, চলতি জুনে শুক্রবার পর্যন্ত সর্বমোট প্রায় চার হাজার ৮১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে, গত মঙ্গলবার চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৬৭ দশমিক ৬ সেন্টিমিটার, পরদিন বুধবার ৮১ দশমিক ১ সেন্টিমিটার এবং গত বৃহস্পতিবার রেকর্ড করা হয়েছে ৬২ দশমিক ৬ সেন্টিমিটার।
গত তিন দিনে আসাম ও মেঘালয়ে দুই হাজার ৫০০ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টি হয়েছে, যা গত ২৭ বছরের মধ্যে তিন দিনে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের রেকর্ড। প্রবল বর্ষণে সৃষ্ট ঢল ভাটিতে থাকা বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের প্রায় সব জেলায় প্রবেশ করেছে।
এছাড়া সিলেট বিভাগেও অনবরত বৃষ্টিপাত হচ্ছে। গত কয়েক দিন ধরে অব্যাহতভাবে বৃষ্টি হতে থাকায় এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ভয়াবহ বন্যার মুখে পড়েছে এই অঞ্চলের মানুষ। এর আগে তারা এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি খুব কমই হয়েছেন।
সিলেটে বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। নদনদী ও হাওরের পানি হু হু করে বাড়ছে। সুরমার পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টায় এক থেকে দেড় ফুট করে পানি বেড়েছে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের অর্ধেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সময়ে সময়ে পানি বাড়ায় পুরো শহর প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, আগামী ২০ জুন পর্যন্ত সিলেটে বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। এ কারণে পানি কমার সম্ভাবনা নেই। পানি আরও বাড়লে সিলেটে চরম বিপর্যয় দেখা দেবে।
এদিকে বানভাসি মানুষকে উদ্ধারে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সেনাবাহিনীর সদস্যরা সুনামগঞ্জ ও সিলেটে কাজ শুরু করেছেন।
বিদ্যুৎকেন্দ্রে পানি ঢুকে পড়ায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকায় সুনামগঞ্জে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সিলেটেও যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে পড়তে পারে বিদ্যুৎ সরবরাহ। এতে ওই অঞ্চলের মানুষের ভোগান্তি আরও বেড়েছে।
দুই জেলার মধ্যে সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির বেশি অবনতি হয়েছে। জেলার প্রায় সব উপজেলা পানিতে তলিয়ে গেছে। ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে সদর, ছাতক, দোয়ারাবাজার, তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভপুর উপজেলার প্রায় সব বসতঘরে পানি ঢুকে গেছে। সুনামগঞ্জ ও ছাতক পৌর এলাকার প্রধান সড়ক পানিতে ডুবে আছে। সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের কয়েকটি স্থান ডুবে থাকায় সুনামগঞ্জের সঙ্গে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছে।
সিলেট জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম জানান, জেলার প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তাদের জন্য ৪৪৩টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আছে বলে জানান তিনি। তবে কী পরিমাণ ত্রাণ বরাদ্দ করা হয়েছে সে সম্পর্কে তিনি কিছু জানাতে পারেননি।