রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়: নূরুল হুদা
নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
শনিবার, জুন ৪, ২০২২ ৩:২১ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
শনিবার, জুন ৪, ২০২২ ৩:২১ অপরাহ্ণ

রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন সদ্য বিদায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। তিনি আরও বলেছেন, বিএনপি দেশের একটি বড় রাজনৈতিক দল। বিএনপিকে বাদ নিয়ে নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।
শনবিার রাজধানীর তেজাগাঁওয়ে এফডিসিতে (চলচিত্র উন্নয়ন করপোরেশন) ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত এক ছায়া সংসদে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় তিনি সিইসির দায়িত্ব পালন করেন এবং চলতি বছরের ফেব্রুয়ারীতে তিনি পাঁচ বছরের দায়িত্ব শেষ করে বিদায় নেন। চরম রাজনৈতিক বিরোধের মধ্যে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচন নিয়ে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নানা প্রশ্ন রয়েছে। বিএনপিসহ অনেকেরই অভিযোগ ওই নির্বাচনে আগের রাতে ভোটের বাক্স সিল মারা ব্যালটে ভরা ছিল।
ওই নির্বাচনে ফল প্রকাশের পরে দেখা যায়, অনেক কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে। এ নিয়ে নিজের অস্বস্তির কথা উল্লেখ করে কে এম নূরুল হুদা দাবি করেন, দায়িত্ব পালনকালে তার ওপর কোন অদৃশ্য শক্তির চাপ ছিলো না। তবে বেশ কিছু কেন্দ্রে শতভাগ ভোট প্রদান ছিলো তার জন্য অস্বস্তিকর।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণের সভাপতিত্ব অনুষ্ঠিত এই ছায়া সংসদে অংশ নিয়ে সাবেক সিইসি বলেন, নির্বাচন একটি স্পর্শকাতর ও চ্যালেঞ্জিং বিষয়। রাজনৈতিক দল ও প্রশাসনসহ সংশ্নিষ্ট অংশীজনদের সার্বিক সহযোগিতা ছাড়া শুধু নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। বন্দুক ও লাঠি ব্যবহার করে নির্বাচন করা যায় না। তারমতে, বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর কোথাও নির্বাচনে বন্দুক ও লাঠির ব্যবহার হয় না। নির্বাচনকালে যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি করা ঠিক নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিদায়ী নির্বাচন কমিশনের আমলে স্থানীয় সরকার পরিষদ উপজেলা, ইউনিয়ন ও পৌরসভা ভোটে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা প্রসঙ্গে কে এম নূরুল হুদা বলেন, নির্বাচন কেন্দ্রিক সহিংসতায় সম্পদ নষ্ট ও মানুষ খুন কাম্য নয়। নির্বাচনকে অবশ্যই প্রতিযোগিতামূলক হতে হবে।
আগামী নির্বাচন সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেন, রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল। তাই বিএনপিকে বাদ দিয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা হলে সে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং। স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য জেলা প্রশাসকদের পরিবর্তে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে নিজের পূর্ণ আস্থার কথা জানিয়ে সাবেক এই সিইসি বলেন, ইভিএম ব্যবহার করে কারচুপি করা যায় না। তবে ইভিএম মেশিনকে আরো আধুনিক করা যেতে পারে। বাংলাদেশে আগামী ২০ বছর নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা উচিত। ভোট প্রদান কক্ষে সিসিটিভি থাকলে ইভিএমের প্রতি মানুষের আস্থা আরো বাড়বে।
সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে ব্যর্থ হলে সিইসির পদত্যাগের বিষয়ে তিনি বলেন, পদত্যাগ করলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায় না। পদত্যাগ কাপুরুষোচিত বিষয়। এটি তার পছন্দ নয়।
পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে প্রথমবারের মতো গণমাধ্যমের মুখোমুখি হওয়া কে এম নূরুল হুদাকে নিজের ব্যর্থতা চিহ্নিত করার অনুরোধ জানালে তিনি অস্বস্তির কথা জানান। তিনি বলেন, কতগুলো বিষয় নিয়ে তিনি অস্বস্তিতে ছিলাম। কোথাও কোথাও শতভাগ ভোট পড়েছে।
এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, এখান থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র উপায় হলো আদালত। ইসির সীমাবদ্ধতা হলো রিটার্নিং অফিসার যদি আনুষ্ঠানিকভাবে ফল ঘোষণা করে দেন, তাহলে ইসির হাতে আর কিছু থাকে না। সেটা চলে যায় আদালতে। তফসিল ঘোষণার পর থেকে ফলাফল প্রদান পর্যন্ত ইসির নির্বাচন সংক্রান্ত্র কাজ থাকে।
নিজের মেয়াদে অনেক কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দাবি করে কে এম নূরুল হুদা বলেন, আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে অনেক সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। একাধিক মামলা আদালতে পেন্ডিং রয়েছে। কুমিল্লার একটা পুরো নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছিল। বহু নির্বাচনের কেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। ইসির কাছে অভিযোগ আসলেই সঙ্গে সঙ্গে সেটা বন্ধ করা যায় না। তাৎক্ষণিক তদন্ত করতে হয়। সত্য-মিথ্যা যাচাই করে নির্বাচন কমিশন সন্তুষ্ট হয়। তারপর ইসি সিদ্ধান্ত নেয়।
তিনি বলেন, যারা অভিযোগ তুলেছিলেন তাদের আদালতের শরনাপন্ন হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল। কারণ ইসির হাতে কিছু আর নেই। এ ব্যাপারে একটা অস্বস্তি আছে।
সহকর্মী কমিশনারদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মতপার্থক্য ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, সবার সম্মতিক্রমেই তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আলোচিত সাবেক নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার সম্পর্কে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় না এটা নিয়ে বলা ঠিক হবে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে নূরুল হুদা বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন পরিচালনা করা ইসির জন্য কিছুটা চ্যালেঞ্জ। তবে সেটি কমিশন চাইলে অতিক্রম করা সম্ভব।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি না এলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না, পাবে না। তারমতে, বিএনপিকে নির্বাচনী মাঠে আনতে হবে এবং সেই দায়িত্ব সরকারি দলকে নিতে হবে। বিএনপির প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন বর্জন করে, বয়কট করে সমস্যার সমাধান হবে না। আলোচনা করে ঠিক করতে হবে কীভাবে নির্বাচনে যাবেন।
প্রতিযোগিতায় কুমিল্লা ইউনিভার্সিটিকে পরাজিত করে ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর বিতর্কিকরা বিজয়ী হয়। ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে ছায়া সংসদের এবারের বিষয় ছিল-বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন সম্ভব। এই প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস, ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক তানিয়া রহমান ও সাংবাদিক একরামুল হক সায়েম। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলের মাঝে ট্রফি ও সনদপত্র বিতরণ করা হয়।
স্বাধীন খবর ডটকম/আ আ
