রাতের ভোট, এরশাদ এবং টি-টোয়েন্টি ম্যাচ
নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
শুক্রবার, জুন ৩, ২০২২ ৭:৩৯ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
শুক্রবার, জুন ৩, ২০২২ ৭:৩৯ অপরাহ্ণ

সাজেদুল হক
‘আমার ভূমিকা হলো এবং তা হয়তো বাড়িয়ে বলা হবে- মানুষকে দেখানো যে, তারা যেটুকু অনুভব করে তার চেয়েও তারা বেশি স্বাধীন’- মিশেল ফুকো (ফরাসি ইতিহাসবিদ ও দার্শনিক)
ইতিহাসের চাকা ঘুরতে শুরু করেছে। এর গতি অবশ্য এখনো বেশ মন্থর। প্রতিদিনই কিছু না কিছু ঘটছে। ময়দানে এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে। পর্দার সামনে এবং আড়ালে। কৌশলের খেলা। প্রস্তুতি নিচ্ছে দুই পক্ষই। তরজা চলছে বেশ। হুঁশিয়ারি, পাল্টা হুঁশিয়ারি। ছাত্রদলের ওপর দফায় দফায় হামলার পর ক্যাম্পাস এখনো থমথমে।
ছাত্রলীগ পুরোমাত্রায় নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে। যেটা অবশ্য কাউকেই অবাক করেনি। কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন নিয়মিতই শিরোনাম হচ্ছে। মাহবুব তালুকদার ছিলেন ব্যতিক্রম। না হয় বিগত নির্বাচন কমিশনের সবাই ছিলেন ‘অঙ্কের ছাত্র’। তারা অবশ্য একা নন। এক দশকে এমন বেশকিছু ভোট গণিতবিদের আবির্ভাব হয়েছে। তাদেরকে যদি বলা হয় ভোটে অনিয়ম হয়েছে। তারা মুচকি হাসেন। বলেন, কত ভাগ কেন্দ্রে গোলযোগ বা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এক ভাগও হবে না। ৯৯ ভাগ কেন্দ্রেই অভিযোগ নেই। তো! খুব সুন্দর ভোট হয়েছে। আর টুকটাক গণ্ডগোল বলবেন! সেটা আমেরিকাতেও হয়। দেখেন না? অন্ধ নাকি!
কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন প্রতিদিনই কোনো না কোনো আলোচনা তৈরি করছেন। দু’টি ঘটনার কথা বলাই যায়। নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবীব খানের বক্তব্য আমরা পত্রিকায় দেখেছি। তার কথা, ‘ইভিএমে চ্যালেঞ্জ একটাই। এ ছাড়া আর কোনো চ্যালেঞ্জ আমি দেখি না। একটা ডাকাত-সন্ত্রাসী গোপন কক্ষে একজন করে দাঁড়িয়ে থাকে। আপনার ভোট হয়ে গেছে চলে যান। দিস ইজ দ্য চ্যালেঞ্জ।’ তবে এবার কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এমন ঘটনা ঘটবে না বলে জানান তিনি। একই দিনে আরেকটি খবরও আলোচনার জন্ম দেয়। ‘ভদ্রলোক’ চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার চাম্বল ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী। তার একটি ভাষণ ভাইরাল হয়েছে ফেসবুকে। ইভিএমে ভোট যেন তার পরিশ্রম কিছুটা হলেও বাড়িয়ে দিয়েছে। অবশ্য ‘আশ্বস্ত’ করেছেন ভোটারদের! ইভিএম কেন্দ্রে চাপ দেয়ার জন্য তার লোক থাকবে। ইভিএম না থাকলে যেভাবে পারেন ভোট মেরে দিতেন বলেও জানান তিনি। অবশ্য ‘স্মার্ট’ মানুষ। ভোট কাটার অতীত অভিজ্ঞতার কথাও গর্ব ভরে বলেছেন।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে কুমিল্লায় সিইসির মতবিনিময় সভায় ব্যাপক হট্টগোল হয়েছে। সমকালের রিপোর্ট বলছে, “স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন কায়সার বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো ‘রাতের ভোট’ চাই না বলে মন্তব্য করলে ঘটনার সূত্রপাত হয়। আওয়ামী লীগ সমর্থিত একাধিক কাউন্সিলর প্রার্থী তার এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান। কিছু সময়ের জন্য মতবিনিময় সভায় অচলাবস্থা তৈরি হলেও পরে জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।”
তো পরিস্থিতি কী দাঁড়ালো? দুই বছরের কম সময়ের মধ্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সে নির্বাচন কেমন হতে পারে তা ধারাবাহিকভাবে লেখার চেষ্টা করছি। যদিও তা হলফ করে বলা অসম্ভব। কিন্তু ‘রাতের ভোটের’ আলোচনা থেকে একদমই বের হওয়া যাচ্ছে না। প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাতের ভোট না দেখলেও তাকে নিশ্চয়তা দিতে হচ্ছে রাতের ভোট হবে না। আলোচনা হচ্ছে ইভিএম ডাকাতদের নিয়েও।
দেশে খুব বড় আকারে ইভিএমে ভোটগ্রহণ এখনো হয়নি। তবে সাধারণ একটি প্রবণতায় ইভিএমের ক্ষেত্রে আমরা কম ভোট পড়তে দেখেছি। ক্যাডারদের কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণে নেয়ার ঘটনাও রয়েছে। নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবীব খানকে ধন্যবাদ। তিনি এ বিষয়টি ফের আলোচনায় এনেছেন। সমস্যা নিয়ে আলোচনা হলেই কেবল সমাধানের পথ খুলতে পারে। যদিও আরেক নির্বাচন কমিশনার ঘোষণা দিয়েছিলেন, ইভিএমে কেউ ত্রুটি ধরিয়ে দিতে পারলে ১০ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার দিবেন। সিইসি অবশ্য তার বক্তব্য নাকচ করেছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, নির্বাচন নিয়েই যেখানে এতো বিতর্ক সেখানে নতুন বিতর্ক আমদানি কেন? ইভিএম নিয়ে দেশে দেশেই বিতর্ক রয়েছে। এটির খুব একটা সফল প্রয়োগ আমরা দেখি না। অথচ আমাদের বিজ্ঞানীরা দরদ দিয়ে সার্টিফিকেট দিচ্ছেন, ইভিএমে কোনো ত্রুটি নেই। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আলী রীয়াজের মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি লিখেছেন, “কাগজে ব্যালট ছাপলে রাতে ভোট দেয়ার ব্যবস্থা আর ইভিএম থাকলে নিজের লোক দিয়ে বাটন টেপার ব্যবস্থার কারণ কি সেটা নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিবের ভাষা ধার করে বলি, ‘ডাকাত’ থাকা। এই ডাকাতদের কেন নির্বাচন কমিশন ঠেকাতে পারেন না- সেটা আমরা সবাই জানি। তাহলে আসল কথা হচ্ছে নির্বাচন করার আগে ডাকাত না থাকার ব্যবস্থা করা। ‘ডাকাত’ থাকলে প্রযুক্তি বা কাগজে ফারাক হয় না। বাংলাদেশে কাগজের ব্যালটে অংশগ্রহণমূলক, স্বচ্ছ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা গেছে।”
নির্বাচন কী প্রকৃতির হবে তা নিয়ে নানা অনিশ্চয়তা থাকলেও রাজনীতিতে সম্প্রতি এক ধরনের চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল হবে। দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব এরই মধ্যে এ ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দিয়েছে। সহযোগী সংগঠনগুলোর কাউন্সিলও হবে শিগগিরই। মাঠের রাজনীতি নিয়েও বার্তা দেয়া হয়েছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ে। কৌশল নির্ধারণে একের পর এক চলছে বৈঠক। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাও তার উপদেষ্টাদের বক্তব্য শুনেছেন। দলীয় নেতাদের দিয়েছেন প্রয়োজনীয় নির্দেশনা। ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ইতিমধ্যে শক্তি প্রদর্শন করেছে। তারা যে যেকোনো মূল্যে ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে চাইবে তা সহজে অনুমেয়। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, তারা একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চান। তবে পুরনো কথাটিও ফের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। সংবিধানের বাইরে কিছু হবে না।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের তৎপরতা বেড়েছে বহুগুণ। প্রতিদিনই তিনি কোথাও না কোথাও বৈঠক করছেন। আলোচনা করছেন আগামী দিনের আন্দোলন ও জোট কৌশল নিয়ে। বামপন্থি হিসেবে পরিচিত দুটি দলের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন তিনি। যুগপৎ আন্দোলনের ব্যাপারে একমতও হয়েছেন তারা। ভোটের রাজনীতিতে এসব দলের তেমন কোনো প্রভাব না থাকলেও এক ধরনের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। আগামী কয়েক দিনে মির্জা ফখরুলের এ ধরনের তৎপরতা আরও জোরদার হতে পারে।
প্রশ্ন হলো বিএনপি কী চায়? বিষয়টি অবশ্য অনেক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকের কাছে স্পষ্ট নয়। এমনিতে বিএনপির বক্তব্য খোলামেলা। দলটির নেতারা বলছেন, অবাধ ও নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া তারা নির্বাচনে যাবেন না। সে সরকারের কাঠামো কী হবে তা নিয়ে এ দফায় বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো ফর্মুলা হাজির করা হয়নি। বিএনপি আরেকটি কথা বলছে, নির্বাচনের পর জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। যদিও বিরোধী শিবিরের কিছু দল নির্বাচনের আগেই এক ধরনের জাতীয় সরকারের কথা বলছে। প্রশ্ন হলো, বিএনপি যে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের কথা বলে সে সরকার কীভাবে আসবে। দলটির নেতারা আন্দোলনের কথা বলছেন। মাঝেমধ্যে নানা ইস্যুতে কিছু সভা-সমাবেশও করেছেন। কিন্তু নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে তেমন কোনো কর্মসূচি এখনো দেখা যায়নি।
এটা বলা প্রয়োজন, ইতিহাসের একটি সুনির্দিষ্ট ধারা রয়েছে। হুটহাট ইতিহাসের গতি পরিবর্তন হয় না। আরব বসন্তকে ব্যতিক্রম বলা যেতে পারে। এমন ঘটনা খুব বেশি ঘটে না। আর আরব বসন্তের ফল যে টেকসই হয়নি তাওতো সবার জানা। আন্দোলন কোনো টি-টোয়েন্টি ম্যাচ নয়। যে হঠাৎ কয়েক ঘণ্টায় লোকবল জড়ো করেই সফল হয়ে যাবো। বরং আন্দোলনকে টেস্ট ম্যাচের সঙ্গে তুলনা করা যায়। দীর্ঘ লড়াই। রং বদলায় ক্ষণে ক্ষণে। পাঁচ দিনের টেস্টের প্রতিটি মুহূর্তই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এটা ঠিক যে, কয়েকটি সেশনই টেস্টের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয়। রাজনীতিও অনেকটা এমনই।
বিএনপি যখন বিভিন্ন দলের সঙ্গে সংলাপ করছে তখন হঠাৎ করেই খবরে এসেছে তাদের দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী জামায়াত। যদিও বহুদিন ধরেই জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সে অর্থে যোগাযোগ নেই। বিএনপির অনেকে মনে করেন, জামায়াতের সঙ্গে মিত্রতা তাদের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও অনেকেই বিষয়টি ভালো চোখে দেখেন না। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না এলেও ২০ দলীয় জোট তো আসলে নেই-ই। তবুও তিনশ’ আসনে জামায়াতের ভোট করার প্রস্তুতির খবরটি কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। যদিও দলটির সঙ্গে যুক্ত একাধিক সূত্র বলছে, ভোটের রাজনীতি থেকে দীর্ঘ সময়ের জন্য সরে যাওয়ার ব্যাপারেও জামায়াতের ভেতর প্রভাবশালী একটি মত রয়েছে। তারা মনে করেন, প্রচলিত রাজনীতিতে বর্তমান অবস্থায় জামায়াতের অর্জনের কিছু নেই। কোনো দল দ্বারা ব্যবহৃত হয়ে আখেরে লাভ হয় না।
বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে প্রায়শই কথা বলেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। মানবাধিকার ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ইস্যুতেও সরব তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন যে বিষয়টি ভালো চোখে দেখছেন না এটি তার প্রতিক্রিয়াতেই স্পষ্ট। আমাদের সহকর্মী তারিক চয়ন মানবজমিনেই এ নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন। ঘটনা অবশ্য সেখানেই শেষ হয়নি। সর্বশেষ খবর হচ্ছে, মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইসের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে উঠেছিল এসব প্রসঙ্গ। বাংলাদেশ প্রসঙ্গে দু’টি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন মুখপাত্র।
তিনি বলেন, বিশ্বজুড়ে মানুষের সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করার অধিকারকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র। এটা মানুষের সর্বজনীন অধিকার। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এ বিষয়টি সমানভাবে প্রযোজ্য। নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। আরেক প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র বলেন, আমরা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, আইনের শাসন, মৌলিক অধিকারের স্বাধীনতা সুরক্ষিত রাখা, শ্রমিক অধিকার ও শরণার্থীদের সুরক্ষা শক্তিশালী করার জন্য আহ্বান জানাই। এরই মধ্যে ওয়াশিংটনে হয়ে গেল বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র উচ্চ পর্যায়ের অর্থনৈতিক সভা। এ সভার রিপোর্ট যখন অনলাইনে তখনই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। চীন আরও একবার তার অবস্থান খোলাসা করেছে। দেশটি বাংলাদেশকে ‘ব্লক রাজনীতি’ প্রত্যাখ্যান করে স্বাধীনতা সমুন্নত রাখার আহ্বান জানিয়েছে। চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত মাহবুবুজ্জামানকে বুধবার এ কথা বলেন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া বিষয়ক দপ্তরের মহাপরিচালক লিউ জিনসং। তিনি বলেন, বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলের দেশগুলো নিজেদের এবং আঞ্চলিক স্বার্থের কথা মাথায় রাখবে বলে বিশ্বাস করে চীন। তারা নিজেদের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখবে এবং স্নায়ু যুদ্ধ ও ব্লক রাজনীতির মনোভাব প্রত্যাখ্যান করবে।
কথা লম্বা হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের নির্বাচন, আন্দোলন এবং বিশেষত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে নিয়ে লিখতে বসে কেন মিলের ফুকোর কথা মনে এলো? চিন্তার ইতিহাসে ফরাসি এই দার্শনিক সবচেয়ে খ্যাতিমান মানুষদের একজন। স্কুল, কারাগার, হাসপাতাল- এসব বিষয় তার লেখায় বারবার এসেছে। এসব প্রতিষ্ঠান কীভাবে ক্ষমতার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে তাই দেখিয়ে গেছেন তিনি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের নির্বাচনী রাজনীতির অন্যতম কেন্দ্রীয় চরিত্র ছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। স্মার্ট ও চতুর হিসেবে পরিচিতি ছিল তার। দোর্দণ্ড প্রতাপে ৯ বছর শাসন করেছেন দেশ। তবে বিস্ময়কর হলো পতনের পরও নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ করে রেখেছিলেন তিনি। বারবার একাধিক আসনে জয়ী হওয়া অন্তত রংপুর অঞ্চলে তার জনপ্রিয়তার প্রমাণ। নির্বাচন এলেই তাকে নিয়ে শুরু হতো টানাটানি। মামলার তারিখ পড়তো ঘন ঘন। কখনো তার স্থান হতো কারাগারে। কখনোবা হাসপাতালে। কখনো তিনি নিজেকে রক্ষা করতে পেরেছেন, কখনো পারেননি।
প্রশ্ন হচ্ছে, আগামী নির্বাচনে এরশাদ হবেন কে? কাকে প্রয়াত এই স্বৈরশাসকের চরিত্রে দেখা যাবে। নাকি নির্বাচনী রাজনীতিতে এ ধরনের চরিত্রের এখন আর প্রয়োজন নেই। সে যাই হোক, ভোট রাজনীতির হাওয়া বইতে শুরু করেছে। সামনের দিনগুলো হবে ক্রমশ উত্তেজনাপূর্ণ ও শ্বাস রুদ্ধকর।
লেখক: প্রধান বার্তা সম্পাদক, দৈনিক মানবজমিন।
ই-মেইল: sajidhoque@gmail.com
স্বাধীন খবর ডটকম/আ আ
