রুশ তেলের ওপর পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞায় লাভবান হচ্ছে যেসব দেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
মঙ্গলবার, জুন ৭, ২০২২ ৮:৫৬ পূর্বাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
মঙ্গলবার, জুন ৭, ২০২২ ৮:৫৬ পূর্বাহ্ণ

সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দেশ ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে আরও কঠোর অবস্থান নিতে রুশ তেল আমদানি নিষিদ্ধ করতে সম্প্রতি ঐকমত্যে পৌঁছেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।
দীর্ঘ আলোচনার পর ব্রাসেলসে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্তে উপনীত হয় জোটের নেতারা। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দুই-তৃতীয়াংশ রুল তেল আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। তবে এক্ষেত্রে হাঙ্গেরি এই নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে রেখেছে ইইউ। নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে চলতি বছরের শেষদিকে।
এদিকে, নিষেধাজ্ঞা এই মুহূর্তে কার্যকর না হলেও তেলের বাজারে কিন্তু নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়া হয়েছে তাৎক্ষণিক। অপরিশোধিত জ্বালানি তেল বা ক্রুডের মূল্য তাতে আরও চড়া হয়ে উঠছে। তাতে যেন, নিজেই নিজের পায়ে কুড়াল মেরেছে পশ্চিমারা।
তেলের বাজার চড়া থাকায় বড় উৎপাদক দেশগুলো চলতি বছর ব্যাপক লাভবান হয়েছে। রাশিয়াও সে তালিকার বাইরে নয়। সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধি মস্কোর জন্য যেন সঠিক সময়ে এলো। এবার ইউক্রেন যুদ্ধের ব্যয়ভার আরও নিশ্চিন্তে মেটাতে পারবে ক্রেমলিন।
অথচ ইইউ নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাশিয়ার তেল অর্থনীতিতে ধস নামাতে চেয়েছিল। হিতে-বিপরীত হয়ে যাওয়াটা তাদের পক্ষে চরম দুর্ভাগ্যের। যুক্তরাষ্ট্রসহ রাশিয়ার যুদ্ধ তহবিলে যারা ধস নামাতে চায় তাদের এখন আগুনমূল্যে জ্বালানি কেনার যন্ত্রণা সহ্য করতে হবে।
রাশিয়া দৈনিক প্রায় ৮০ লাখ ব্যারেল ক্রুড এবং হালকা ধরনের হাইড্রোকার্বন মিশ্রণ (কনডেনসেট) রফতানি করে। এরমধ্যে ২৩ লাখ ব্যারেল যায় ইউরোপীয় ইউনিয়নে। ইইউতে রফতানির ১৬ লাখ ব্যারেল যেত সমুদ্রপথে ট্যাংকার জাহাজে। প্রথমে জাহাজে করে তেল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করবে ইইউ। কিন্তু, বছর শেষের আগে তা হওয়ার সম্ভাবনা কম।
অবশ্য, জার্মানিসহ ইইউ সদস্য কয়েকটি তার আগে থেকেই সমুদ্রপথে রাশিয়ার তেল আমদানি কমিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে।
ঘোষণাটি যেমন বিস্ময়কর তেমন-ই উল্লেখযোগ্য, কারণ জার্মানি একাই দৈনিক ৫ লাখ ব্যারেল রাশিয়ান ক্রুড ব্যবহার করে। রাশিয়ান ক্রুডের প্রতি অতি-নির্ভরশীলতা জার্মানি ও অন্যান্য ক্রেতাদের একমাত্র সমস্যা নয়। তাদের জ্বালানি পরিশোধনাগারগুলো (রিফাইনারি) উরাল মানের ক্রুড পরিশোধনের উপযোগী। সেগুলো সচল রাখতে অন্য উৎস থেকে একই মানের ক্রুড কিনতে হবে। যেমন বুলগেরিয়ার রিফাইনারিগুলো ঠিক এ ধরনের সাওয়ার বা হেভি ক্রুড শোধনের জন্যই নির্মিত হয়েছে।
এরমধ্যেই বিকল্প সরবরাহকারীদের সাথে চুক্তি করছে ইউরোপীয় দেশগুলো। কিন্তু সেখানে প্রতিযোগিতা তীব্র। ইইউ ক্রেতাদের আগ্রহের ফলে জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক মূল্য মহাকাশে পা রাখতে চাইছে।
সবমিলিয়ে বলা যায়- রাশিয়ান ক্রুডের ওপর ইইউ নিষেধাজ্ঞার একমাত্র তাৎক্ষণিক ফলাফল- ক্রুডের দরে আরও চাঙ্গাভাব। এতে রাশিয়ার যুদ্ধের তহবিল আরও ভরে উঠবে।
অবশ্য রাশিয়ার কিছুটা অসুবিধা হবে। ইইউ দৈনিক যে ২৩ লাখ ব্যারেল কিনত তা এখন বিকল্প ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে হবে মস্কোকে। জ্বালানি বাজার চড়া থাকায় অনেক দেশ কম মূল্যে পাওয়া উরাল ক্রুড কিনতে চাইবে। এরমধ্যেই বিপুল পরিমাণ রাশিয়ান ক্রুড কেনার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছে চীন, ভারত ও তুরস্ক। তারা আরও কেনার আগ্রহও পোষণ করছে।
মস্কোর সমস্যা অবশ্য অন্যখানে, চাইলেই রাতারাতি অতিরিক্ত ক্রুডের চালান এসব আগ্রহী ক্রেতার কাছে সরবরাহের উপায় নেই। কারণ ইইউতে রফতানির একটি অংশ যেত পাইপলাইনে। তাছাড়া, রাশিয়া যাতে সমুদ্রপথে অন্যত্র যাতে সহজে তেল রফতানি করতে না পারে- সে ব্যবস্থাও নিচ্ছে ইইউ। এজন্য জাহাজের বীমাকারী সংস্থাগুলোর ওপর রাশিয়ান ক্রুডের চালানবাহী ট্যাংকারকে বিমা না দেওয়ার বিধিনিষেধ দিচ্ছে। এসব বাধা কাটানো অসম্ভব নয়, যদিও তাতে খানিকটা সময় লাগবে রাশিয়ার। দিনশেষে বিশ্বের কোথাও না কোথাও তা রফতানি করতেও পারবে।
বসে বসে সুবিধা পাবে কেবল তুরস্ক, ভারত ও চীন। অবিশ্বাস্য কম দামে উরাল ক্রুড কিনবে তারা এবং পরিশোধনের পর বিশ্বের অন্যান্য দেশের কাছে চড়ামূল্যে বিক্রি করবে। বর্তমান পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবে তাদেরই অনুকূলে। ইইউ’ভুক্ত কিছু দেশও হয়তো তাদের থেকে কিনতে বাধ্য হবে।
ফলত রাশিয়ার যাত্রাভঙ্গ করতে ইইউ নিজের নাক কাটলো; কিন্তু তাতে শত্রুনাশের চেয়ে নিজ ভাবনাই বাড়িয়েছে মাত্র।
স্বাধীন খবর ডটকম/আ আ
