• আজ রাত ১০:০১, রবিবার, ১৯শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে রজব, ১৪৪৬ হিজরি
  • shadinkhobor24@gmail.com
  • ঢাকা, বাংলাদেশ

শীতলক্ষ্যায় কার্গো জাহাজের ধাক্কায় লঞ্চডুবি ৬ জনের লাশ উদ্ধার নিখোঁজ ২০

নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ: রবিবার, মার্চ ২০, ২০২২ ২:১০ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ: রবিবার, মার্চ ২০, ২০২২ ২:১০ অপরাহ্ণ

 

এম আর কামাল, স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জের কয়লাঘাটে এম ভি আশরাফ উদ্দিন নামে মুন্সীগঞ্জগামী একটি লঞ্চ কার্গো জাহাজের ধাক্কায় ডুবে গেছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক লে. কর্নেল জিল্লুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। উদ্ধার অভিযান চলছে। নিহত ৬ জনের মধ্যে ২ জন নারী, ২ জন পুরুষ ও ২ জন শিশু রয়েছে। নিখোঁজ রয়েছে ২০ জন (এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টা)
এরআগে ৬০ বছরের এক বৃদ্ধ এবং ২৫ বছরের এক তরুণী সাতরে তীরে এসে মুত্যুবরণ করেন। পরে উদ্ধারকর্মীরা তাদের মরদেহ উদ্ধার করে। দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ফায়ার সার্ভিস জানান। রবিবার (২০ মার্চ) বেলা ২টা ১০ মিনিটে বন্দর থানার আল আমিন নগর ও সৈয়দপুরের মাঝামাঝি এলাকায় নির্মিতব্য নাসিম ওসমান ব্রিজের কাছে এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে ৬০ বছরের বৃদ্ধের পরিচয় জানা গেছে। তার নাম জয়নাল ভূঁইয়া। সাঁতরে তীরে ওঠার পর স্ট্রোক করে মারা গেছেন। নিহত জয়নাল ভূঁইয়া মুন্সিগঞ্জের উত্তর ইসলামপুর এলাকার বাসিন্দা। তিনি পেশায় একজন ড্রেজার ব্যবসায়ী। তিনি সাইট ভিজিটের জন্য গিয়েছিলেন ডেমরায়। সেখান থেকে নারায়ণগঞ্জ হয়ে মুন্সিগঞ্জ ফিরছিলেন। বাড়ি ফেরার পথে লঞ্চডুবির ঘটনা ঘটে। বিআইডব্লিউটিএ, ফায়ার সার্ভিস, নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের ডুবুরি দল উদ্ধার অভিযান চালায়। নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার ফায়ার সার্ভিস থেকে ডুবুরিরা নিখোঁজদের সন্ধানে কাজ করছে। তবে ওই লঞ্চে মোট কতজন যাত্রী ছিল এখনও সঠিক হিসাব পায়নি ফায়ার সার্ভিস।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মুন্সীগঞ্জগামী লঞ্চটিকে একটি লাইটার জাহাজ (কার্গো জাহাজ) ঠেলে প্রায় একশত ফুট নিয়ে গিয়ে ডুবিয়ে দেয়। এসময় যাত্রীদের চিৎকারের ঘটনাস্থলের বাতাস ভারী হয়ে উঠে। মুহুর্তেই অনেকে প্রাণ রক্ষায় নদীতে ঝাপিয়ে পড়ে। কিন্তু বাকী যাত্রীদের নিয়ে লঞ্চ মাঝ নদীতে ডুবে যায়। অনেককেই সাঁতরিয়ে তীরে উঠতে দেখা গেছে। তবে বেশ কিছু যাত্রী নিখোঁজ রয়েছে। খবর পেয়ে কোস্ট গার্ড, নৌবাহিনীর ডুবরী দল ঘটনাস্থলে পৌছে উদ্ধার কাজ শুরু করেছে।
ডুবে যাওয়া লঞ্চ থেকে সাঁতরে তীরে উঠে বেঁচে যাওয়া কয়েকজন যাত্রী জানান, দুপুর ২ টা ২০ মিনিটে নারায়ণগঞ্জ লিঞ্চ টার্মিনাল থেকে প্রায় অর্ধশত যাত্রী নিয়ে মাঝারি আকারের লঞ্চটি মুন্সীগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। লঞ্চটি সদর উপজেলার সৈয়দপুর কয়লাঘাট এলাকায় পৌঁছলে পেছন থেকে এম ভি রূপসী নামে একটি পণ্যবাহি কার্গো পর পর কয়েকবার ধাক্কা দিলে লঞ্চটি নদীর মাঝখানে ডুবে যায়। এ সময় দশ বারোজন যাত্রী নদীতে লাফিয়ে পড়ে বেঁচে গেলেও অধিকাংশ যাত্রী নিখোঁজ হন। তাদের সন্ধানে নদীর দুই তীরে স্বজনরা এসে আহাজারি করতে থাকেন। কয়েক হাজার নারী পুরুষ এখন নদীর দুই তীরে অবস্থান করছেন। এখন পর্যন্ত ২০ জনের মতো নিখোঁজ রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ নৌ পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. তানজীর জানান, বেলা দুইটা কিংবা আড়াইটার দিকে বন্দর থানার আল আমিন নগর ও সৈয়দপুরের মাঝামাঝি কয়লাঘাট এলাকায় নির্মিতব্য নাসিম ওসমান ব্রিজের কাছে কার্গো জাহাজের ধাক্কায় যাত্রীবাহী একটি লঞ্চ ডুবে যায়। এরপর উদ্ধার অভিযানে এখন পর্যন্ত ৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন জানান, মরদেহ আমাদের হেফাজতে রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মাধ্যমে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) উপপরিচালক বাবু লাল ভুট্টো জানান, এম ভি আশরাফ উদ্দিন লঞ্চটি নারায়ণগঞ্জের ৫ নম্বর ঘাট থেকে অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে যাচ্ছিল। ধারণা করা হচ্ছে লঞ্চডুবির ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২০ নিখোঁজ রয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহজাহান সিকদার বলেন, রবিবার দুপুর আড়াইটার দিকে শীতলক্ষ্যায় নারায়ণগঞ্জে কার্গো জাহাজ এমভি সিটি ৯-এর ধাক্কায় মুন্সিগঞ্জগামী যাত্রীবাহী লঞ্চটি ডুবে গেছে।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোল রুম জানিয়েছে, বন্দর থানার আল আমিন নগর ও সৈয়দপুরের মাঝামাঝি এলাকায় নির্মিতব্য নাসিম ওসমান ব্রিজের কাছে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। এম ভি আশরাফ উদ্দিন লঞ্চটি নারায়ণগঞ্জের ৫ নম্বর ঘাট থেকে মুন্সীগঞ্জের দিকে যাচ্ছিল বলে জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৮ জুলাই শীতলক্ষ্যা নদীর একই স্থানে এক কার্গো জাহাজের ধাক্কায় যাত্রীবাহী লঞ্চ ডুবির ঘটনা ঘটে। এতে নারী ও শিশুসহ ৩৪ জনের মৃত্যু হয়।
ডুবে যাওয়া লঞ্চে কত যাত্রী ছিল জানা যায়নি : শীতলক্ষ্যা নদীতে মালবাহী জাহাজের ধাক্কায় এম এল আশরাফ উদ্দিন নামে যাত্রীবাহী লঞ্চ ডুবিতে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার ফায়ার সার্ভিস থেকে ডুবুরিরা নিখোঁজদের সন্ধানে কাজ করছে (এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত)। তবে ওই লঞ্চে মোট কতজন যাত্রী ছিল এখনও সঠিক হিসাব পায়নি ফায়ার সার্ভিস। তবে তারা জানতে পারে ডুবে যাওয়া লঞ্চটিতে ৫০ জনের মতো যাত্রী ছিল। এর মধ্যে ১৫ থেকে ২০ জন যাত্রী এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। বাকিরা সাঁতার কেটে তীরে উঠেছেন। গতকাল রবিবার বিকেলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, বড় একটি মালবাহী জাহাজের ধাক্কায় যাত্রীবাহী একটি লঞ্চ ডুবির ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা থেকে ডুবুরিরা ঘটনাস্থলে উদ্ধার অভিযানে কাজ করছে। সূর্যের আলো যতক্ষণ আছে ততক্ষণ পর্যন্ত ডুবুরিরা কাজ করবে। বাকিটা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, ডুবে যাওয়া যাত্রীবাহী লঞ্চে কতজন যাত্রী ছিল এখনও সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে আমরা লোক মুখে জানতে পেরেছি ৫০ জনের মতো হতে পারে। এদের মধ্যে ১৫ থেকে ২০ জন যাত্রী নিখোঁজ রয়েছেন। বাকিরা সাঁতার কেটে তীরে উঠেছেন।
এর আগে চর সৈয়দপুর এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীতে জাহাজের ধাক্কায় এমএল আশরাফ উদ্দিন নামে একটি যাত্রীবাহী লঞ্চ ডুবে যায়। দুপুরে চর সৈয়দপুরের আলামিন নগরের ব্রিজের কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তবে লঞ্চে ঠিক কতজন যাত্রী ছিল তাৎক্ষণিকভাবে তা কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ওই লঞ্চের যাত্রী মোহাম্মদ জনি বলেন, একটি কার্গোবাহী জাহাজ পেছন থেকে ধাক্কা দিলে মুহূর্তেই যাত্রীবোঝাই লঞ্চটি ডুবে যায়।

Print Friendly, PDF & Email
 
 
স্বাধীন খবর ডটকম/আ আ
 

জনপ্রিয় সংবাদ

 

সর্বোচ্চ পঠিত সংবাদ