শেখ হাসিনার অধীনে আর নির্বাচন নয়, প্রয়োজন একটি গণঅভ্যুত্থান
নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
রবিবার, অক্টোবর ২৩, ২০২২ ১০:৪৯ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
শনিবার, নভেম্বর ৫, ২০২২ ২:১২ অপরাহ্ণ
সায়েক এম রহমান
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচন। বাকি আছে আর মাত্র ১৪ মাস। রাজনীতির মাঠ এখন উত্তাল রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে গ্রাম গঞ্জে। নির্বাচনকে ঘিরে বাংলাদেশ এখন কঠিন সময়ে উপনীত। ভাগ্য আকাশে অন্ধকার গাঢ় কালো মেঘ! এ পর্যন্ত হাসিনা সরকারের অধীনের কোন নির্বাচনই জাতি মেনে নেয় নাই। সবকটি নির্বাচনকে মানুষ বিনা ভোটের নির্বাচন,তামাশার নির্বাচন ও মধ্যে রাতের নির্বাচন হিসাবে অভিহিত করেছে । এইবার বিএনপি সহ সব বিরোধী দল দৃঢ় প্রতিজ্ঞ নিরপেক্ষ সরকারের অধীন ছাড়া তারা কোন নির্বাচনে যাবে না এবং করতেও দিবে না। অপর দিকে হাসিনা সরকার পূর্বেকার মতই তাদের অধীনেই নির্বাচন করতে চায়। এবার নতুনত্ব যোগ হয়েছে ১৫০টির মতন আসনে ইভিএম মেশিনসহ।
আজ লিখতে চাই শেখ হাসিনার পূর্বেকার নির্বাচনের কিচ্ছা কাহিনী! যদিও অন্য এক লেখায় হাসিনা সরকারের নির্বাচন কিচ্ছা কাহিনী কিছুটা লিখেছিলাম। আজকে এই সময়ে কাহিনিটা লিখা দেশ ও জাতির জন্য আরো জরুরি মনে করছি।
এক. আজ শুনব বাংলাদেশের শেখ হাসিনার নির্বাচনী কিচ্ছা।,,,, “প্রথমেই বলব এই বাংলাদেশের ইতিহাস বলে ২০০৮ সালে মইন- ফখরুদ্দিনের সব কার্যক্রমকে বৈধতা দিয়ে নীল নকশার নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসেন।
অতঃপর বলব ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বাংলাদেশের ইতিহাসের কলঙ্কিত দিনটির কথা। যে দিনটিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ভোটহীন প্রার্থীহীন নির্বাচন। যেই নির্বাচনটি বিশ্ব স্বীকৃত তামাশার নির্বাচন নামে পরিচিতি লাভ করে আছে । অনেকের হয়তো ভুলে যাওয়ার কথা তাই আবারও বলছি যেখানে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৪টি আসন ছিল প্রার্থীশূন্য। বাকি ১৪৬টি আসনে ভোট পড়েছিল শতকরা পাঁচ শতাংশের নিচে! সেই দিনকে ক্ষমতাসীন আঃ লীগ এযাবৎ নির্লজ্জের মত গণতন্ত্রের বিজয় দিবস হিসাবে পালন করে আসছে, আর বিএনপি এই কলঙ্কিত দিনটকে গণতন্ত্রের হত্যা দিবস হিসাবে পালন করে আসছে যদিও এখন আগের মতন মাঠ গরম দেখা যায় না।
দুই. উল্লেখ্য হাস্যরসের নির্বাচনের ছয় মাস পর শেখ হাসিনা বৃটেন গেলেন ২২ জুলাই ২০১৪, তামাশার নির্বাচন পর সম্ববত এটাই ছিল প্রথম সফর।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এর মিটিং হলে, প্রধানমন্ত্রী ক্যামারুন ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে তাঁহার হতাশার কথা প্রকাশ করেছিলেন এবং আলোচনায় গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা স্থান পায় এবং একটা মুক্ত সমাজ ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা গুরুত্বের প্রশ্নে একমত হন দুই প্রধানমন্ত্রী। এই আলোচনার ভিত্তিতে ই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরলেন। অতঃপর দুইমাস অপেক্ষার পর ১৭ অক্টোবর ২০১৪, বৃটেন আনুষ্ঠানিক ভাবে হতাশার কথা প্রকাশ করে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে নিয়ে।
এ ছাড়া বাংলাদেশে প্রাথমিক ভাবে নির্বাচিত যুক্তরাষ্টের রাষ্ট্রদূত মার্সিয়ার্স স্টিফেন্স বম বার্নিকাট যুক্তরাষ্ট পররাষ্ট্র বিষয়ক সিনেট কমিটির সামনে বাংলাদেশ বিষয়ে তাঁর বক্তব্যে বলেছিলেন, ” ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচন নিঃসন্দেহে ক্রটিপূর্ন ছিল এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো জরুরি ভিত্তিতে গঠণমূলক সংলাপে অংশ গ্রহণ করা দরকার। যাতে করে প্রতিনিধিত্ব সরকার গঠণের দিকে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়। তখন ইউরোপিয় ইউনিয়ন ও এ ব্যাপারে একমত প্রকাশ করেছিল। কিন্তু সবই ভেস্তে গেছে! দাদা বাবুদের ইশারায়, খায়েস-ই বড় হয়ে দাঁড়িয়েছিল ।
পাঠক,,মজার ব্যাপার হল,,,কিছু দিন পর আঃ লীগের ২০তম কাউন্সিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে নির্বাচনকে নিয়ে অনেক কথাই বলেছিলেন, একটি কথা ছিল আগামী দিনের নির্বাচন প্রশ্ন বিদ্ধ করলে আর চলবে না! তাঁহার এই কথাটির মাধ্যমে পরিস্কার ভাবে নিজ বাক্য ব্যয়ে প্রমানিত হয় হয়েছিল যে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন সহ তাঁহার অধীনে সব কটি নির্বাচনই প্রশ্ন বিদ্ধ হয়েছিল।
এছাড়া জাতি অবগত, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন পূর্বে শেখ হাসিনা জনগণকে প্রতিশ্রতি দিয়েছিলেন, তিনি না কি সংবিধানিক আইন রক্ষার জন্য এই নির্বাচনটা করছেন। নির্বাচন পর সবাইকে নিয়ে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে শীঘ্রই আরেকটি নির্বাচন দিবেন। এভাবে ই শেখ হাসিনা কলা ঝুলিয়ে ঝুলিয়ে সব কটি কাজ অগণতান্ত্রিক ভাবে করেছেন। এই তথ্য প্রযোক্তির যুগেও তিনি এ কথা বেমালুম-ই ভুলে গেছেন, অস্বীকার করছেন। কিন্তু কথা রয়ে গেছে ইতিহাসের কালো পাতায়!
তিন. এখন চলে আসি ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন অধ্যায়ে,,,,,,,,
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনটি ভোটের দিনের আগের রাতে ভোট সম্পূর্ণ করে শেখ হাসিনা এই নির্বাচনকে ভোট ডাকাতির নির্বাচন বা মিড নাইট নির্বাচন এবং মিড নাইট প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ইতিহাসের পাতায় কালো অধ্যায় হয়ে আছেন।
বিশ্বসহ সারা জাতি অবগত, সেদিন গণতন্ত্রের প্রতীক, তিন বারের প্রধানমন্ত্রী এদেশের মানুষের সব চাইতে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে টুনকো মামলায় বন্দী করে, তার সাথে প্রায় ৭০ হাজারের অধিক নেতাকর্মীদের পরিকল্পিত ভাবে জেলে রেখে এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে পরিকল্পিত ভূয়া সাজা দিয়ে নির্বাসনে রেখে, এখানে ক্লান্ত নয়, কয়েক লক্ষ নেতাকর্মীদের মাথায় গায়েবি মামলার হুলিয়া জারি রেখে, নির্বাচনের মাটকে আকাশ -পাতাল ব্যাবধান করে, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ পৃথিবীর সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে, মন্ত্রীসভা বহাল রেখে, পুরো একটি রাষ্ট্রের বিচার বিভাগ, সিভিল প্রশাসন, একদল নির্বাচন কমিশনার সহ লক্ষাধিক আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের বানিয়ে, সর্ব ক্ষমতায় ক্ষমতাবান হয়ে এই ভূখণ্ডে একটি অভূতপূর্ব সৌখিন নির্বাচন করলেন! ভোট ডাকাতির নির্বাচনে ২৯৯ টি আসনের মধ্যে ২৮০ টিতে বিজয় নিশান উড়ালেন(মহাজোট)।
নির্বাচনের দুই দিন পর ৩রা জানুয়ারি জার্মানীর পার্লামেন্টে পররাষ্ট্র বিষয়ক চেয়ারম্যান নরবার্ট রজেন এই নির্বাচনকে নিয়ে টুইট বার্তায় লিখেছিলেন,” বাংলাদেশের নির্বাচনের কারচুপির মাত্রা দেখে আমি বিস্মিত”! এতে দেশটিতে কার্যকর ভাবে একদলীয় সরকারের শাসন চালু হয়েছে।
আর বিশ্বখ্যাত দ্যা ইকোনমিস্ট (৩রা জানুয়ারি) পত্রিকার প্রতিবেদন ছিল,” একছত্র ক্ষমতা -ই আওয়ামী লীগের জন্য কাল হতে পারে!
এই হলো, ” বাংলাদেশের শেখ হাসিনার নির্বাচনের কিচ্ছা কাহিনি !এখন শেখ হাসিনার আরেকটি নির্বাচনী কিচ্ছা কাহিনীর পালা.তার পরিকল্পনা যাতে ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা।
চার. পাঠক, এই বাংলাদেশের নির্বাচন তো সেই দিন-ই শেষ হয়েছে, যে দিন অধিকাংশ নীতিনির্ধারক ও রাজনীতিবিদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে থাকা সত্ত্বেও, শুধু মাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিপক্ষে থাকায় সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের একটি রায়ের মাধ্যমে নিশ্চিহ্ন করা হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা। সেই দিন থেকে-ই বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ত্ব, গণতন্ত্র হুমকির সম্মুখীন হয়েছে।
পাঁচ. আজ থেকে একান্ন বৎসর আগে আমাদের পূর্ব পুরুষেররা ছেঁড়া জুতা ছেঁড়া কাপড় পড়ে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে বাঁশ লাটি নিয়ে যুদ্ধ করেছিল, গণতন্ত্র, ভোটের অধিকার, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য । তারা কেড়ে এনেছিল একটি পতাকা একটি লাল সূর্য! যার নাম বাংলাদেশ। আজ বড়ই আফসোসের ব্যপার,,,, তাদেরই প্রজন্ম তরুণ যুব সম্প্রদায় পঞ্চাশ বছর পর আবার ভোটের অধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য, স্বাধীননতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য আওয়ামী স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হচ্ছে, লড়াই করতে হচ্ছে । তফাৎ শুধু পঞ্চাশ বছর আগে লড়াই হয়েছিল পাকহানাদারদের বিরুদ্ধে,আজ লড়াই হচ্ছে আওয়ামী স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে। দিকে দিকে মানুষ জেগে উঠছে। বিশাল বিশাল মহাসমাবেশের মাধ্যমে জাতি আলোর মুখ, মুক্তির মুখ দেখছে। তারা চায় নিরপেক্ষ নির্বাচন, মানুষের ভোটের অধিকার, স্বাধীননতা সার্বভৌমত্ব ও ন্যায় বিচার।
এই মহুুর্তে বিভিন্ন জরিপে দেশের শতকরা আশি ভাগ মানুষ মনে করে শেখ হাসিনার অধীনে আর কোন নির্বাচন নয়, এখন প্রয়োজন “একটি গণঅভ্যুত্থান “।
একটি গণঅভ্যুত্থান ই পারবে এদেশের মানুষের মুক্তি, মানুষের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে।
লেখকঃ
লেখক ও কলামিস্ট
সায়েক এম রহমান
উপদেষ্টা সম্পাদক
জনতার আওয়াজ ডট কম