শেখ হাসিনার দম্ভ ও দাম্ভিকতা আর নয়, কারাবন্দী ‘মা’ খালেদা জিয়ার শক্তি এখন অকল্পনীয়
নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
শনিবার, নভেম্বর ৫, ২০২২ ১২:৩২ পূর্বাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
শনিবার, নভেম্বর ৫, ২০২২ ২:৪৭ অপরাহ্ণ
গত ০৩ নভেম্বর বিকালে জেলহত্যা দিবস উপলক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণসভায় সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন মানবিক কারণে সাজা স্থগিত রেখে খালেদা জিয়াকে বাসায় থাকার অনুমতি সরকার দিয়েছে। তবে তারা যদি আবার বাড়াবাড়ি করে, তাহলে তাকে (খালেদা জিয়া) আবার জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আবারও জেলে পাঠানোর কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী’।
দেশ যখন নানা সংকটে, সেই সময় প্রধানমন্ত্রী এ ধরণের হুমকিতে দেশ ও জাতি হতবম্ভ । শেখ হাসিনা যদি মনে করে থাকেন, গণতন্ত্রের এ আন্দোলনকে ব্যাহত করবেন বা দমন করবেন, তাহলে দেশের সাধারণ মানুষ মনে করছে তিনি বোকার স্বর্গে বাস করছেন। কারণ জনগণের যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, তা আর দমানো সম্ভব হবে না। মানুষ অধিকার রক্ষার জন্য আন্দোলন করছে, সংগ্রাম করছে। এখানে হুমকি-ধমকি দিয়ে কোনো কাজ হবে না।’
‘রাষ্ট্রের প্রতি বিভাগে আওয়ামী চেতনা সংক্রমিত হয়েছে। বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ তার নিয়ন্ত্রণে। শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের বক্তব্য আবারো প্রমাণ করে মাদার অব ডেমোক্রেসি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কোনো অপরাধে নয়, শেখ হাসিনার নির্দেশেই বন্দী। তার প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই বিচারের নামে প্রহসন মঞ্চস্থ করে দেশনেত্রীকে আটকে রাখা হয়েছে।’
‘আইন-আদালত, প্রশাসন সবকিছু একজনের হুকুমের গোলাম, কেউ স্বতন্ত্রভাবে তাদের কাজকর্ম করতে পারে না। ১৪ বছর আগে ১৫টি মামলা মাথায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। ১৫ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির সেই মামলাগুলো আজ কোথায়? মামলাগুলো উনি চিবিয়ে খেয়েছেন। আর তিন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দুই কোটি টাকার মিথ্যা মামলায় কারারুদ্ধ করে এখন হুংকার দিচ্ছেন আবারো জেলে পাঠাবেন।’
শেখ হাসিনার কথায় আবারো স্পষ্ট হলো দেশে আইন আদালত হাইকোর্ট সুপ্রিম কোর্ট আর প্রশাসন সবই এখন গণভবনে।
কয়দিন আগে প্রধানমন্ত্রী আত্মস্বীকৃতি দিয়েছেন যে বাড়াবাড়ি করলে ‘হেফাজতের মতো বিএনপিকে দমন করা হবে’। এই হুমকিই প্রমাণ করে তিনি আবারো ৫ মে শাপলা চত্বরের মতো ইতিহাসের রক্তাক্ত হত্যাযজ্ঞ চালাবার পাঁয়তারা করছেন। রাতের অন্ধকারে কিশোর মাদরাসা ছাত্রদের ওপর নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালানোর কথা স্বীকার করেছেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কথা স্বীকার করেছেন। এখন বাকি আছে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের স্বীকারাক্তি। তার এই স্বীকারাক্তিগুলো কলঙ্কিত ইতিহাস হয়ে থাকবে- বিশ্ব ইতিহাসে। জনগণের কাঠগড়ায় শেখ হাসিনাকে একদিন দাঁড়াতেই হবে।
রাজনৈতিক প্রতি হিংসার কারনে বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দী করেছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান ও তার সহধর্মিণী ডা. জোবাইদা রহমানের নামে সাজানো মামলায় ক্যাঙ্গারু কোর্টের গ্রেফতারি পরোয়ানা দিয়েছেন। আপনি এসব করে মনে করছেন যে আপনার অবৈধ মসনদ অটল রাখবেন, জনতার স্রোত প্রমান করে আপনার মসনদ এখন নড়বড়ে । আসলে অজানা ভয় থেকেই জনগণের এ মুহূর্তে আশা-আকাঙ্খার প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং দেশনায়ক তারেক রহমানকে হয়রারি করছেন। কিন্তু আপনি এখনো মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন। আপনার দমননীতিকে অগ্রাহ্য করে বিএনপির গণসমাবেশে জনতার ঢলে যে অপরাজেয় জীবনীশক্তির স্ফুরণ ঘটেছে তা দেখে আপনি আরও বেশি প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে উঠেছেন।
‘ক্ষমতার নেশায় আচ্ছন্ন আওয়ামী সরকার একটি অপরাধপ্রবণ সরকার। এরা গুম-খুন-অপহরণ করে গোপন বন্দীশালা আয়নাঘর বানিয়েছে। রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে রেখে শেখ হাসিনা বেপরোয়া দুর্নীতি, লুটপাট আর লাখ কোটি টাকা পাচার করে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করে দিয়েছেন। এত দিন মেকি উন্নয়নের গালগল্প শোনালেও এখন দেখা যাচ্ছে আওয়ামী বাচালতা ছাড়া দেশে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রীরা চাপাবাজির রাজনীতিকরণে ব্যস্ত। দেশে বিরাজ করছে সরব দুর্ভিক্ষ। চারিদিকে শুধু অভাব আর অভাব।
ধর্মের ঢোল আপনি বাজে, সত্য কখনো চাপা থাকে না। গণতন্ত্রের “মা” দেশনেত্রী খালেদা জিয়া যে হাসিনার প্রতিহিংসার শিকার হয়ে তারই আজ্ঞাবহ আদালতের মিথ্যা ফরমায়েশি রায়ে ৭৪ বছরের একজন বৃদ্ধ মহিলা বিনা অপরাধে জেলে কাটছেন তার প্রমাণ নিজে হাসিনা লন্ডন সফর কালে অকপটে বলে ফেলেছেন একটি ফোন আলাপ ভাইরাল হয়েছিল । হাসিনার কথা শুনে সারা বিশ্ববাসী অবাক, সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া একটি ফোনালাপে শেখ হাসিনা তার এক বিশেষ নেতাকে ফোন করে বলেছিলেন বিএনপিকে বলে দিবেন- তারেক রহমান যদি বেশি বাড়াবাড়ি করে তাহলে তার মা কোনদিনও মুক্তি পাবে না। প্রমাণিত হলো দেশ নেত্রী গণতন্ত্রের “মা” বেগম খালেদা জিয়া সহ জিয়া পরিবার হাসিনার ব্যক্তিগত আক্রোশের শিকার।এতেই প্রতীয়মান হয় জিয়া পরিবারের উপর জুলুম নির্যাতনের জন্য শুধু বাংলাদেশের জনগণ না বিশ্ববাসী হাসিনার উপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
বাংলাদেশে এক ভয়ঙ্কর রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজমান। গুম-খুন, লুটপাট, আত্মসাৎ ও দখলের মহাসমারোহে গণতন্ত্রকে বন্দি করা হয়েছে।
বন্দি করা হয়েছে গণতন্ত্রস্বীকৃত বিরোধী দলের অধিকার, কথা বলা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে। সারাদেশ আজ বন্দিশালায় পরিণত হয়েছে। দুঃশাসনের বিষাক্ত বলয়ে বন্দি দেশবাসী। শেখ হাসিনার প্রতিহিংসার কোপানলে এক চরম নিষ্ঠুর অবিচারের শিকার দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তার প্রতি চলছে ভয়াবহ এবং নজিরবিহীন অমানবিক আচরণ। দীর্ঘ তিনযুগ ধরে যিনি দেশে গণতন্ত্র আর সুশাসন কায়েম করার জন্য সংগ্রাম করে আসছিলেন যিনি তার বিরুদ্ধে কেন এ কোন ধরণের বিচার? খালেদা জিয়া তিনবারের নির্বাচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী, সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি রাজনৈতিক দলের চেয়ারপার্সন। একটিবারের জন্যও ভাবা হয়নি তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, বীরউত্তম ও মহান স্বাধীনতার ঘোষকের স্ত্রী। একটিবারের জন্যও ভাবা হয়নি ৭৪ বছর বয়সের একজন বৃদ্ধ মহিলা তাঁর শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। তিনি স্বামীহারা সন্তান হারা, ২৯ বছরের স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি হারা। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কবলে পড়ে পরিবার পরিজন সন্তান স্বজনদের কাছ থেকে দূরে। তাঁর আপনজন দেশের জনগণ।
খালেদা জিয়ার প্রতি এই নির্মমতায় দেশের মানুষ আজ দুঃখে ভারাক্রান্ত। বাংলাদেশের হৃদয়ই যেন ভেঙ্গে গেছে। মানুষের অন্তর কেঁদে উঠছে।
বেগম খালেদা জিয়াকে যে দিন জেলে ঢুকানো হয় ঐদিনই ২০১৮ সালে (৮ ফেব্রুয়ারি ) বরিশালের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দম্ভের সঙ্গেই উচ্চারণ করেন, “কাথায় আজ খালেদা জিয়া? ”দেশপ্রেমিক সিরাজ সিকদারকে খুন করার পর চুয়াত্তর সালে সংসদে দাড়িয়ে শেখ মুজিব দম্ভ করে বলেছিল “কোথায় আজ সিরাজ সিকদার? ” গণতন্ত্র হত্যাকারী পিতা শেখ মুজিবের মতো শেখ হাসিনা একইরকম দম্ভোক্তি করে বিকৃত সুখ অনুভব করে উল্লাসে মেতে উঠেছে। খালেদা জিয়ার গগনচুম্বি জনপ্রিয়তায় নিদ্রাহীন হাসিনার অবিশ্বাস্য নির্মম জুলুমের শিকার বেগম খালেদা জিয়ার জন্য এখন প্রতিটি মানুষের প্রাণোৎসারিত সবটুকু সহানুভূতি, আবেগ, ভালোবাসা অকাতরে উপচে পড়ছে। কারাবন্দি খালেদা জিয়া হয়ে জনগণের প্রাণাধিক প্রিয়।
ইতোমধ্যে এক অভাবনীয়, অভুতপূর্ব জনপ্রিয়তার অনুসঙ্গে গণমানুষের কাছে হয়ে উঠেছেন একজন মাতৃমূর্তিরূপি খালেদা জিয়া। দলের কর্মী সমর্থকই নয়, মানবতাবাদী গণতন্ত্রকামী মানুষের তিনি এখন ‘মা’। মানুষের হৃদয়ে এখন মায়ের আসন। ‘মা’ এখন কারারুদ্ধ। মা’য়ের অপমানে ডুকরে কাঁদছে বাংলাদেশ। কারাবন্দি ‘মা’ খালেদা জিয়ার শক্তি এখন অকল্পনীয়। অসামান্য অনন্য উজ্জ্বল মাতৃমূর্তিতে যেই উচ্চতায় বেগম জিয়া পৌঁছেছেন, অনেক রাজনীতিকের ভাগ্যেই এমন ভালোবাসা জোটে না।
বিএনপির মুক্তির গনসমাবেশে মানুষ আসছে বন্যার স্রোতের মতো। গাড়ি আটকে দিলে আসছে নৌপথে। নৌপথে বাঁধা দিলে হেটে রওনা দিচ্ছে। সাতরে পার হচ্ছে নদী। রাস্তা বন্ধ করে দিলে বিল মাঠ পেরিয়ে আসছে, হোটেল রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে দিলে না খেয়ে থাকছে। সারারাত সমাবেশের মাঠ দখল করে ফ্যাসিবাদীদের থেকে নিজেদের আদায়কৃত জায়গা রক্ষা করছে। তাদের শ্লোগান শুধু শ্লোগান নয়, যেন ১৮ কোটি মানুষের দীর্ঘশ্বাস। এরকম বাংলাদেশ কখনো দেখোনি কেউ। উর্মিমুখর জনস্রোত থেকে উত্থিত ক্ষোভ-দ্রোহের অগ্নি নিঃশ্বাস শেখ হাসিনাকে দগ্ধ করতে শুরু করেছে। এই পরিবেশ-দৃশ্যপট ভোটারবিহিন মাফিয়া সরকারকে রীতিমত নিদ্রাহীন ও অস্থির করে দিয়েছে। বেসামাল হয়ে পড়েছেন শেখ হাসিনা ও তাঁর পারিষদবর্গ। শেখ হাসিনা স্বভাবজাত প্রতিহিংসাপরায়ণতা ও হিংস্রতা প্রদর্শন শুরু করেছেন আবার।প্রধানমন্ত্রী তার শপথের পরিপন্থী আজ। কেননা… তিনি শপথ করে বলেছিলেন, ‘রাগ-অনুরাগ ও বিরাগের বশবর্তী’ হবেন না কোনোভাবেই। প্রতিটি নাগরিকের প্রতি তিনি ন্যায় প্রতিষ্ঠার ওয়াদাবদ্ধ সরকারের প্রধান নির্বাহী, শপথকারী। বেগম জিয়ার ওপর রাগ করে এমন কথা বলে তিনি তারই শপথের বিরুদ্ধে নিজের অবস্থানকে নাজুক করে ফেললেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে কি এটি ঠিক হলো? নাকি শোভন হলো?
লেখকঃ
প্রধান সম্পাদক
জনতার আওয়াজ ডটকম।