সঠিক পদক্ষেপ না নিলে গণতন্ত্র ধুঁকতে থাকবে
নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
সোমবার, নভেম্বর ৭, ২০২২ ১০:১৯ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
সোমবার, নভেম্বর ৭, ২০২২ ১০:১৯ অপরাহ্ণ
ড. শাহ্দীন মালিক
সংবিধানের ৫০ বছরপূর্তির আলোচনাগুলোতে ১৯৭২ সালের সংবিধান এবং পরবর্তী সময়ে এর ১৭টি সংশোধনীর কথা প্রায়ই আসছে। বিশেষ করে চতুর্থ, পঞ্চম, সপ্তম, ত্রয়োদশ ও ষোড়শ সংশোধনীই বেশি আলোচিত হচ্ছে। অন্যান্য সংশোধনীতেও বিচার বিভাগ-সংক্রান্ত অনুচ্ছেদগুলো বারবার পরিবর্তিত বা সংশোধিত হয়েছে। তবে এ ব্যাপারটি অনেকটা উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। যেমন বিচারপতিদের অপসারণ পদ্ধতিতে বারবার পরিবর্তন আনা হয়েছে।
চতুর্থ সংশোধনী অনুযায়ী বিচারপতিদের নিয়োগ ও অপসারণের ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়েছিল রাষ্ট্রপতির হাতে। পরে বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা দেওয়া হয় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে। পঞ্চম সংশোধনীর এই বিধানটি অপরিবর্তিত ছিল পঞ্চদশ সংশোধনী পর্যন্ত। ষোড়শ সংশোধনীতে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা দেওয়া হয় সংসদকে। এই সংশোধনী আপিল বিভাগের ৭ জন বিচারপতির সর্বসম্মত রায়ে বাতিল করা হয়। এখন অবশ্য সেই রায়টি উল্টে দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপক্ষ খুবই সক্রিয়। বিভিন্নভাবে ৯৬ অনুচ্ছেদটি কাটাছেঁড়া করা হয়েছে ৭ বার।
১৯৭২ সালে অধস্তন আদালতের নিয়ন্ত্রণ ন্যস্ত করা হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টের ওপর। চতুর্থ সংশোধনীতে এই নিয়ন্ত্রণ চলে যায় রাষ্ট্রপতির কাছে। পঞ্চম সংশোধনীতে এ বিষয়টিকে একটি মাঝামাঝি অবস্থানে নিয়ে আসা হয়। অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি এবং সুপ্রিম কোর্ট মিলেমিশে অধস্তন আদালতের ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখবেন। পঞ্চদশ সংশোধনীতেও সেটা বহাল রাখা হয়। অধস্তন আদালতের নিয়ন্ত্রণ সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবার ফিরিয়ে দিতে রাষ্ট্রের ভীষণ শঙ্কা। স্পষ্টতই স্বাধীন ও পৃথক বিচার বিভাগ নিয়ে নির্বাহী সরকারগুলো সব সময়ই দ্বিধাদ্বন্দ্বে থেকেছে। তাই বিচার বিভাগের পৃথক্করণ এখনও পূর্ণাঙ্গভাবে হয়নি।
একইভাবে উচ্চ আদালতের বিচারপতি নিয়োগে সংবিধানের ৯৫ (২গ) অনুচ্ছেদ অনুয়ায়ী এখনও আইন হয়নি। আইন অনুযায়ী বিচারপতি নিয়োগের ব্যবস্থা চালু হলে এ ব্যাপারে সম্ভবত সরকারের প্রভাব ক্ষুণ্ণ হবে। অবশ্য সংবিধান বলছে, প্রধান বিচারপতি উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের নিয়োগ দেবেন। শুধু এক ব্যক্তির হাতে নিয়োগের এই ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত থাকাও এখন আর বাঞ্ছনীয় নয়।
ন্যায়নাল নিয়োগের কথা সংবিধানে বলা হয়েছিল ৫০ বছর আগে। সেই ন্যায়পাল নিয়োগের বিষয়টি সংবিধানের ছাপার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। এ ব্যাপারে একটি আইন হয়েছিল ১৯৮০ সালে। কিন্তু আইনটি কার্যকর করা হয়নি। সেই পুরোনো আইনে এখন আর চলবে না। নতুন করে ন্যায়পাল আইন করা দরকার। তবে আশঙ্কা রয়েছে, বিচারপতি নিয়োগ আইন এবং বিচার বিভাগ পৃথক্করণের মতো ন্যায়পাল নিয়োগও সম্ভবত শিগগির হচ্ছে না। অথবা নখদন্তবিহীন ন্যায়পাল নিয়োগের একটি আইন হলেও হতে পারে।
এসব বিষয়ে উপযুক্ত আইন প্রণয়ন এবং তা কার্যকর না হলে আমাদের গণতন্ত্র আরও বহু বছর ধুঁকতে থাকবে।
লেখক: বিশিষ্ট আইনজীবী