সরকার একটা গ্রুপকে অধিকার দিচ্ছে, আরেকটা গ্রুপকে বঞ্চিত করছে
নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
সোমবার, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২২ ৩:৪৮ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
সোমবার, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২২ ৩:৪৮ অপরাহ্ণ
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের অপপ্রয়োগ সাধারণ নাগরিক থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদদের পর্যন্ত অস্বস্তির মধ্যে রেখেছে। এই আইনের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তিগত ইস্যুর কোনো উপকারই হচ্ছে না। নাগরিকদের বাকস্বাধীনতা রোধ করার জন্য হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে এই আইন।
আজ সোমবার সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্ট্যাডিজ আয়োজিত ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ : রাজনীতিবিদদের চোখে’ শীর্ষক ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে রাজনীবিদরা এ মত দেন। ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, সকল মানুষের অধিকার রক্ষা করার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু সরকার একটা গ্রুপকে অধিকার দিচ্ছে, আরেকটা গ্রুপকে বঞ্চিত করছে। তথ্য প্রযুক্তি প্রতিবছর হালনাগাদ হচ্ছে, ব্যবহারকারী বাড়ছে। এজন্য নতুন আইন করা দরকার।
কিন্তু আইনের বিধি-বিধান কি উদ্দেশ্যে সেটাই দেখার বিষয়। সেখানে আইন করছে অসৎ উদ্দেশ্যে। সরকার ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের অপপ্রয়োগ করছে। তিনি আরও বলেন, অতীতের বৃটিশ আইন, পাকিস্তানের আইন ও বাংলাদেশের সবগুলো আইন জগাখিচুড়ি হয়ে গেছে। পুরনো আইনগুলো বাতিল বা সংস্কার করতে হবে। নাহলে কেউ স্বস্তি পাবে না।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, দেশে চিন্তার স্বাধীনতা, বিবেকের স্বাধীনতা ও বাকস্বাধীনতা রয়েছে বলে এই ধরনের আলোচনার আয়োজন করা হচ্ছে। দেশে যে গণতান্ত্রিক পরিবেশ রয়েছে- এটা কি তার প্রমাণ নয়? সন্ত্রাসের হাত থেকে জাতিকে রক্ষা করার জন্যই ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন। সিকিউরিটির প্রশ্নে আমেরিকা থেকে আফগানিস্তান পর্যন্ত লড়াই চলে। দেশে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রয়েছে বলে তারা ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন সংশোধনের পর্যবেক্ষণ দিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, দেশে প্রচলিত আইন সংশোধন করে মানহানি বা গোপনীয়তা লঙ্ঘনের অপরাধের বিচার হতে পারে। সরকার নতুন আইন করেছে যাকে ইচ্ছা ধরতে পারে। যে আইন মানুষের কল্যাণে কাজ করে না সে আইন রাখার দরকার নাই। মানুষ যখন গণতান্ত্রিক অধিকার, আইনের শাসন, মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় তখনই সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে থাকে।
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহীম বীরপ্রতীক বলেন, এই আইন পুরোটাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বাক স্বাধীনতা অনেক সময় নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। কতটুকু রাষ্ট্রীয় স্বার্থে, কতটুকু রাজনৈতিক এবং কতটুকু ব্যক্তি স্বার্থে সেটাই বিবেচ্য। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন এই ভারসাম্য রক্ষা করে না। ফলে একচেটিয়াভাবে এর অপপ্রয়োগ হচ্ছে। আমরা চাই আন্দোলন হোক যার লক্ষ্য হবে সংবিধান সমুন্নত রাখা।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী বলেন, বর্তমান সরকার প্রবল কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছে। এই শাসনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে ভয় ও ত্রাস সৃষ্টি করা। যা ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সুস্পষ্ট একটা লক্ষ্য নিয়ে আইনটা করা হয়েছে। ত্রাসের মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকতে এই আইন করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারের কাছে ক্ষমতা কুক্ষিগত করা হয়েছে। দেশের মানুষের অধিকার রক্ষা ও তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এই আইন বাতিল করা হোক।
বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)-এর চেয়ারম্যান ও সাবেক এমপি ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, সবার কথা বলার সময় ফিয়ার ফ্যাক্টর কাজ করে যে, সেটা ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে পড়ে কিনা। সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য এই আইন করেছে।
তিনি আরও বলেন, এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগের মতো অজনপ্রিয় সরকার কখনই ছিল না। গণতন্ত্রের জায়গায় ধনতন্ত্রকে ইম্পর্টেন্স দিয়েছে।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ও সিজিএস-এর নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান বলেন, ভয়ের পরিবেশ তৈরির দায় রাজনৈতিক দলগুলোকেই নিতে হবে। এজন্য ক্ষমতাসীনদের দায়টা সবসময় বেশি। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করতে হবে। আমাদের ইতিহাসকে পর্যালোচনা করা দরকার। সংবিধানকে সংশোধন করে বিতর্কিত বিষয়গুলো সমাধান করা দরকার।
সিজিএস সভাপতি ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, নারী ও শিশু অধিকার আইনের মতো ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের অপপ্রয়োগ হচ্ছে-আইনজীবীরা বলছেন। ডিজিটাল সিকিউরিটির জন্য আইন দরকার আছে। কিন্তু তার জন্য নতুন আইন করতে হবে। বিদ্যমান আইন সংশোধন করতে গেলে এটা আরও কঠিন হতে পারে।