সরকার কালাকানুন আইনের মাধ্যমে মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করছে : বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
বুধবার, জুন ১৫, ২০২২ ৩:৫৭ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
বুধবার, জুন ১৫, ২০২২ ৩:৫৭ অপরাহ্ণ
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
বর্তমান আওয়ামী সরকার পুরনো বাকশালের পুনরুত্থান ঘটিয়েছে, সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের ওপর দমন-পীড়ন অব্যাহত রেখেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ নানা কালাকানুনের মাধ্যমে মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। সংবাদপত্রের কালো দিবস উপলক্ষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বাণী দিয়েছেন।
আজ বুধবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বাণীতে বলা হয়, বাংলাদেশের সংবাদপত্রের ইতিহাসে ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন এক দুর্বিষহ কালিমালিপ্ত দিন। এদিনে তৎকালীন একদলীয় বাকশাল সরকার ফ্যাসিবাদী কায়দায় তাদের অনুগত ৪টি সংবাদপত্র রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে রেখে অন্যসব পত্রিকা বন্ধ করে দিয়ে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করে এবং বন্ধ হয়ে যাওয়া বিভিন্ন সংবাদপত্রে কর্মরত অসংখ্য সংবাদ কর্মীকে বেকার করে হতাশার অতল গহ্বরে ঠেলে দিয়েছিল। পরবর্তীকালে মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এদেশের কাক্সিক্ষত বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তন করেন। বাকশাল সরকারের সকল প্রকার অগণতান্ত্রিক কালাকানুন বাতিল করে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন। বন্ধ হয়ে যাওয়া সকল সংবাদপত্র পুনঃপ্রকাশ করেন। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি সংবাদপত্রের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের অন্তর্নিহিত শক্তি, গণতন্ত্রকে সবল ও শক্তিশালী করতে হলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। পরিতাপের বিষয়, বর্তমান আওয়ামী সরকার তাদের প্রকৃত দর্শন একদলীয় ব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তন করছে নতুন আঙ্গিকে। সেই কারণে সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের ওপর অব্যাহত জুলুম চালাচ্ছে এবং হুমকির সর্বগ্রাসী কর্তৃত্ব কায়েম করেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো একের পর এক কালো আইন প্রণয়ন করে সংবাদপত্র ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর খড়গ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। বর্তমান দুঃসময়ে সকল গণমাধ্যম কর্মীকে শংকা ও ভয়ের মধ্যে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। মানবাধিকার নিয়ে কার্যক্রম চালায় এ রকম অধিকার সংগঠনগুলো বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। সত্য কথা লিখতে গিয়ে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার, গুম ও নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। ‘৭৫-এর এই দিনের বিভীষিকা এখন ভিন্ন মাত্রায় দেশে বিরাজমান রয়েছে। সেইজন্য অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। বিএনপি গণমাধ্যম ও গণমাধ্যম কর্মীদের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। বিএনপি মনে করে-গণমাধ্যমের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের অন্যতম ভিত্তি। আমি আবারো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে বিপন্ন করার যেকোন প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে সাংবাদিক ভাই-বোনদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানাচ্ছি।
সংবাদপত্রের কালো দিবস উপলক্ষে অপর এক বাণীতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কালো দিবস। এদিনে তৎকালীন চরম কর্তৃত্ববাদী একদলীয় বাকশাল সরকার তাদের অনুগত ৪টি সংবাদপত্র সরকারিভাবে প্রকাশ করে এবং বাকিগুলো বন্ধ করে দিয়ে গোটা জাতিকে নির্বাক করে দেয়। স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা তথা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করা হয়। বিভিন্ন সংবাদপত্রে কর্মরত অসংখ্য সংবাদ কর্মী বেকার হয়ে পড়ে। অনিশ্চিত হয়ে পড়ে তাদের রুজি-রোজগার ও সন্তানদের ভবিষ্যৎ। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল চেতনা ছিল বাংলাদেশের ভৌগোলিক স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র। গণতন্ত্রে মানুষের নাগরিক স্বাধীনতা নিশ্চিত হয়। মানুষের স্বাধীনতার মূল শর্ত হচ্ছে বাক, চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা। সংবাদপত্রের স্বাধীনতার মধ্যে যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। কিন্তু স্বাধীনতা-উত্তর ক্ষমতাসীনরা স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল-স্পিরিটের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথচলাকে স্তব্ধ করে দেয় একদলীয় বাকশাল ব্যবস্থা কায়েম করে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ মূলত চিন্তা ও বিবেককে বন্দি রাখা।
তিনি বলেন, মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক এবং আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়ে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেন। বাতিল করেন বাকশালী আমলের সকল কালাকানুন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি বহুমত, পথ ও গণতন্ত্র রক্ষার সংগ্রামে বারবার অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। বহুমাত্রিকতা বিএনপির রাজনৈতিক আদর্শ। বারংবার অবৈধ স্বৈরাচারী গোষ্ঠীর কবল থেকে গণতন্ত্রকে মুক্ত করেছে বিএনপি। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, বর্তমান আওয়ামী সরকার পুরনো বাকশালের পুনরুত্থান ঘটিয়েছে, সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের ওপর দমন-পীড়ন অব্যাহত রেখেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ নানা কালাকানুনের মাধ্যমে মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন গণমাধ্যমের বিকাশ সাধিত হলেও বাংলাদেশে একের পর এক গণমাধ্যম বন্ধ করা হচ্ছে। বর্তমানে সংবাদপত্র এবং ভিন্ন মত ও সত্য প্রকাশের স্বাধীনতার গলা চেপে ধরা হয়েছে। দেশের সকল গণমাধ্যম সত্য প্রচারে শংকিত থাকে, না জানি কখন সরকারের রোষানলে পড়তে হয়। স্বাধীন সাংবাদিকতা ও সত্য প্রকাশ করতে গিয়ে অসংখ্য সাংবাদিককে নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে, মিথ্যা মামলায় কারাবরণ করতে হয়েছে। এমনকি গুম ও হত্যাকান্ডেরও শিকার হতে হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি বর্তমানে বিপন্ন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রামে সাংবাদিক ভাই ও বোনদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার জন্য আহবান জানাচ্ছি।