• আজ সকাল ৬:৪৮, বুধবার, ২২শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে রজব, ১৪৪৬ হিজরি
  • shadinkhobor24@gmail.com
  • ঢাকা, বাংলাদেশ

সারা দেশেই হঠাৎ বেড়ে গেছে খুনের ঘটনা

নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ: শুক্রবার, এপ্রিল ১, ২০২২ ৭:৪৫ পূর্বাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ: শুক্রবার, এপ্রিল ১, ২০২২ ৭:৪৫ পূর্বাহ্ণ

 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

গত ২৪ মার্চ রাতে শাহজাহানপুরে ব্যস্ত সড়কে মাইক্রোবাসে করে বাসায় ফেরার পথে গুলি করে হত্যা করা হয় আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপুকে। এ ঘটনায় গুলিতে প্রীতি নামে রিকশাযাত্রী এক কলেজছাত্রীও নিহত হন। সম্প্রতি রাজধানীসহ সারা দেশেই হঠাৎ বেড়ে গেছে খুনের ঘটনা। ব্যক্তিগত বিরোধ, পারিবারিক কলহ, আধিপত্য বিস্তার, মাদক বাণিজ্য ও চুরি-ডাকাতিতে বাধা দেওয়ায় ঘটছে এসব হত্যাকাণ্ড। পাশাপাশি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও বেড়েছে ভয়াবহভাবে।

দন্ত্য চিকিৎসক আহমেদ মাহী বুলবুল। গত রবিবার ভোরে নোয়াখালী যাওয়ার উদ্দেশ্যে রাজধানীর শেওড়াপাড়ার বাসা থেকে বের হয়ে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে খুন হন তিনি। দুই সন্তান নিয়ে সবুজবাগের একটি চারতলা বাড়ির দোতলায় থাকতেন গৃহবধূ তানিয়া আক্তার। শনিবার বিকালে এসি মেরামতের কথা বলে কয়েক দুর্বৃত্ত তার ঘরে ঢুকে ডাকাতির চেষ্টা করে। এতে বাধা দিলে স্কচটেপে তার দুই সন্তানের মুখ বেঁধে তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে খুন করে দুর্বৃত্তরা।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তথ্যমতে, ২০০৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১৪ বছরে রাজধানীতে ৩ হাজার ৩৭৫টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। বছরে গড়ে ২৫০টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে এ সময়ে। আবার পুলিশ সদর দফতরের তথ্যে দেখা যায়, ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সারা দেশে ১৫ হাজার ৩০৫টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। গড়ে প্রতিবছর ৩ হাজার ৮২৬টি হত্যাকাণ্ড ঘটে।

অন্যদিকে বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ৬ বছরে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে ৬৭৬টি। এ হিসাবে প্রতিবছর গড়ে ১১২টি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ঘটে। ২০১৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা কমলেও ২০২১ সালে তা আবার কয়েকগুণ বেড়ে যায়। ওই বছর ১৫৭টি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ঘটে, যা পূর্ববর্তী চার বছরের গড় সংখ্যার তিনগুণেরও বেশি।

এদিকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত পুলিশ সদর দফতরের ওয়েবসাইটে অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য দেওয়া হতো। ২০১৯ সালে আংশিক তথ্য দেওয়া হলেও এর পর থেকে চলতি বছর পর্যন্ত আর কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। এতে কী পরিমাণ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে এবং কতগুলোর বিচার সম্পন্ন হয়েছে সে তথ্য পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে। এতে অপরাধের প্রকৃত চিত্রও জানা সম্ভব হচ্ছে না। একে এক ধরনের ‘লুকোচুরি’ বলছেন অনেকে। তবে এটি লুকোচুরি নয় দাবি করে তথ্য অধিকার আইনে নিয়ম মেনে আবেদন করলে নির্দিষ্ট সময়ে প্রকাশযোগ্য সব তথ্য পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দফতর।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক সমাজ ও অপরাধ গবেষক তৌহিদুল হক বলেন, রাজনৈতিক ও স্বার্থগত দ্বন্দ্বের কারণে খুনোখুনিসহ সব ধরনের অপরাধ বেশি হচ্ছে। তিনি বলেন, নাগরিকদের নিরাপত্তা রাষ্ট্রের নাগরিক বিবেচনায় না হয়ে অবস্থানের ভিত্তিতে হয়ে গেছে। একইভাবে রাজনীতি ‘আদর্শের’ বদলে ‘ক্ষমতাকেন্দ্রিক’ হওয়ায় দেশ অপরাধীর সংখ্যা বাড়ছে। তার মতে, অপরাধের সঠিক তথ্য জানা নাগরিকদের অধিকার। এর ফলে অপরাধের প্রকৃত চিত্র জানাসহ বিশ্লেষণের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ করণীয় ঠিক করা সম্ভব হবে। কিন্তু এটা নিয়ে ‘লুকোচুরি’ করা হলে অপরাধীরাই বেশি সুযোগ পাবে।

ডিএমপির এক তথ্যে দেখা গেছে, চলতি বছরের গত দুই মাস ২৭ দিনে রাজধানীতে ৩৪টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ৯ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১২ জন ও মার্চ মাসের প্রথম ২৭ দিনে ১৩ জন খুন হয়। এর মধ্যে কতগুলো রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড সেটির হিসাব নেই। তবে আসকের তথ্যে দেখা গেছে, এ বছর জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে সারা দেশে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে ৩৯টি। শুধু জানুয়ারিতেই এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটেছে ২৯টি। ২০২১ সালে প্রতিমাসে এই হত্যাকাণ্ডের গড় সংখ্যা ছিল ১৩। এ হিসাবে গত জানুয়ারিতে তিনগুণ বেড়েছে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড।

আসকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২১ সালে সারা দেশে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ঘটে ১৫৭টি, ২০২০ সালে ৩১টি, ২০১৯ সালে ৩৯টি, ২০১৮ সালে ৬৭টি, ২০১৭ সালে ৫২টি, ২০১৬ সালে ১৭৭টি ও ২০১৫ সালে ১৫৩টি। এতে আরও দেখা যায়, ২০১৬ সালে ১৭৭টি হত্যাকাণ্ড ঘটলেও ২০১৭ সালে কমে ৫২টিতে দাঁড়ায়। পরে ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২০ সালেও এ সংখ্যা কম ছিল। এই তিন বছর গড়ে ৪৫টি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ঘটে। এর মধ্যে হঠাৎ ২০২১ সালে আবারও রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। ওই বছর ১৫৭টি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ঘটে, যা পূর্ববর্তী তিন বছরের গড় সংখ্যার তিনগুণেরও বেশি।

এ বিষয়ে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) মো. কামরুজ্জামান বলেন, তথ্য লুকোচুরির কোনো সুযোগ নেই। প্রত্যেকটি ঘটনার পর সেটি স্থানীয় বা জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। তবে পুলিশ সদর দফতরের ওয়েবসাইট আপডেট হওয়ায় সেখানে তথ্য দেওয়ার অপশনটি নেই। এ ছাড়া তথ্যগুলো যেখান থেকে একত্রিতভাবে আসত, সেটি না আসায় হয়তো এমনটি হয়েছে। কেউ তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে নির্দিষ্ট সময়ে তথ্য পাবে।

Print Friendly, PDF & Email
 
 
স্বাধীন খবর ডটকম/আ আ
 

জনপ্রিয় সংবাদ

 

সর্বোচ্চ পঠিত সংবাদ